ধান কোন মাটিতে ভালো হয় চাষিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ধান বাংলাদেশের প্রধান কৃষিজাত ফসল ও প্রধান খাদ্যশস্য। ধান থেকে চাল পাওয়া যায় আবার চাল থেকে ভাত পাওয়া যায়। ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ ভাত খেয়ে জীবন ধারণ করে। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য হলো চাল। বাংলাদেশে মোট আবাদি জমির প্রায় ৭৫ শতাংশেই ধান হয়ে থাকে। কৃষকের প্রচেষ্টায় উৎপাদনের হারও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। তবে সেচ, সার ও কীটনাশকসহ প্রায় সব ধরনের কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমেছে। ফলে কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে সবচেয়ে কম প্রভাব ফেলছে ধান চাষাবাদ। দূর হচ্ছে না এই দরিদ্রতা। ধান বাংলার সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য বিভাগের নির্ধারিত জনপ্রতি দৈনিক চালের চাহিদার পরিমাণ ৪১০ গ্রাম। পৃথিবীর অনেক দেশেই ধান উৎপন্ন হয়ে থাকে। তার মধ্যে জাপান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া,চীন, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, মিশর, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে ধানের চাষ বেশি হয়। ইতালি, আমেরিকার, স্পেন, পর্তুগাল, মেক্সিকো উপসাগরীয় অঞ্চলেও অধিক পরিমাণে ধান জন্মে। বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগে প্রচুর ধান উৎপন্ন হয় বলে একে বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
ধান কাকে বলে?
ধান হলো গ্রামিনি গোত্রভুক্ত ১ থেকে ২ মিটার লম্বা তৃন জাতীয় একটি উদ্ভিদ। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম ও সর্বত্র প্রধান খাদ্যফসল হিসাবে পরিচিত। ধান থেকে প্রাপ্ত চাল বা ভাত পৃৃথিবীর অর্ধেক লোকের প্রধান খাদ্যশস্য হিসাবে পরিচিত। ধান থেকে মুড়কি,চিঁড়ে,খই তৈরি হয়। উৎপাদনের সময় অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে ধান তিন প্রকার যথাঃ আউস ধান , আমন ধান ও বোরো ধান। ধান গাছ এক ধরনের তৃণজাতীয় উদ্ভিদ। একবার ফসল দিয়ে ধান গাছ মরে যায় বলে একে ‘ঔষধি গাছ’ও বলা হয়ে থাকে। ধান গাছ সাধারণত দুই থেকে তিন ফুট উঁচু হয়। তবে বেশি পানির মধ্যে রােপা আমন ধানের গাছ সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ধান গাছের অগ্রভাগে ধানের শীষ বের হয়। ধান গাছ যখন কাঁচা থাকে তখন মাঠের দিকে তাকালে মনে হয় যেন সবুজের মেলা বসেছে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ধানের শীষ পাকলে সারা মাঠ সােনালি ধানে ভরে যায়।
ধান কোন মাটিতে ভালো হয়?
পলি কাদামাটি, পলি দোআঁশ মাটি এবং কাদামাটি এমন কিছু মাটির মিশ্রন বা বিন্যাস ধান চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। ধান চাষের জন্য নদীর উর্বর পলল মাটি আরও বেশি উপযোগী। যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি কিংবা নিচু জমি সেসব অঞ্চলে ধান ভালো হয়ে থাকে। পাহাড় কিংবা পাহাড়ের ঢালেও এর চাষ হয়ে থাকে। ধান চাষ অত্যন্ত শ্রমনির্ভর একটি ফসল। অনেক শ্রমিক প্রয়োজন হয় যার কারণে যেসব এলাকায় শ্রমিক খরচ কম সেসকল অঞ্চলে ধান চাষ করা সহজ। আজ আমরা জানবো ধান কোন মাটিতে ভালো হয় এবং সেই সকল মাটির বৈশিষ্ট্য। নিচে সংক্ষেপে ধান চাষের উপযোগী মাটির কিছু বৈশিষ্ট্য সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।
- কংকর ও বেলেমাটি ছাড়া প্রায় সব মাটিই ধান চাষের জন্য উপযোগী।
- এঁটেল ও এঁটেল দো-আঁশ মাটি ধান চাষের জন্য খুবই ভালো। এসব মাটিতে প্রচুর পরিমানে ধান জন্মে।
- নদ-নদীর অববাহিকা ও হাওর-বাঁওড় এলাকা যেখানে পলি জমে সেখানেও ধান ভালো জন্মে। এই পলি মিশ্রিত মাটি ধান উৎপাদনের জন্য আদর্শ মাটি।
- প্রকারভেদে উঁচু, মাঝারি, নিচু সব ধরনের জমিতেই ধানের চাষ করা যায়। তবে নিচু জমিতে বোরো ও জলি আমন চাষ করা যায়।
- মাটির অম্লাত্মক থেকে নিরপেক্ষ অবস্থা ধান চাষের অনুকূল পরিবেশ।
- যে মাটিতে জৈব পদার্থ কম হলে কমপোস্ট ব্যবহার করে এর মাত্রা বাড়ানো যায় সেখানে ধান চাষ ভালো হয়।
- মাটির নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশ, জিঙ্ক, সালফার ইত্যাদির মাত্রা নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় সার ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যায়। এ ধরনের মাটিতে ধান চাষ ভালো হয়।
- কংকর ও বেলেমাটি ছাড়া প্রায় সব মাটিই ধান চাষের জন্য উপযোগী। এঁটেল ও এঁটেল দোআঁশ মাটি ধান চাষের জন্য খুব ভালো। নদ-নদীর অববাহিকা ও হাওর-বাঁওড় এলাকা যেখানে পলি জমে সেখানেও ধান খুব ভালো হয়।
- প্রকারভেদে উঁচু, মাঝারি, নিচু সব ধরনের জমিতেই ধানের চাষ করা যায়। যেমন, নিচু জমিতে বোরো ও জলি আমন চাষ করা হয়।
- উর্বর ও পলি মাটিতে ধানের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া এঁটেল , বেলে , দোআঁশ , লাল মাটিতেও ধান চাষ ভালো হয়। মাটির নীচে অপ্রবেশ্য কাদার স্তর জমিতে জল দাঁড়াতে সাহায্য করে। তাই সামান্য অম্লধর্মী বা খারীও মাটি ধান চাষে আদর্শ।
- যে সকল মাটিতে নিয়মিত বন্যার পানি উঠে সেই মাটি ধান চাষের জন্য খুবই উপকারি।
- যে সকল জমিতে বৃষ্টিপাতের পরিমান বেশি হয় সেখানে ভালো ধান জন্মে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
ধান কোন মাটিতে ভালো হয় এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
ধান কি উদ্ভিদ?
ধান একটি তৃন জাতীয় উদ্ভিদ। চাষকৃত ধান গাছটি একটি বার্ষিক ফলদানকারী ঘাস এবং উচ্চতায় প্রায় ১.২ মিটার (৪ ফুট) পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। পাতা লম্বা ও চ্যাপ্টা এবং ফাঁপা কান্ডে বহন করা হয়। ধান পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের বেশির প্রধান খাদ্য।
আমরা ভাতের কোন অংশ খাই?
ভাত বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য। চাল সাধারনত ধান গাছে জন্মায় এবং আমরা যে অংশটি খাই তা হল ধানের বীজ । ধানের বীজ আবার পুনরায় রোপণ এবং খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। আর ধানের বীজ থেকে যে অংশটা পাই সেটা হচ্ছে চাল। সেই চাল সিদ্ধ করলে হয় ভাত।
উপসংহার
ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য।খাদ্যশস্যের দিক দিয়ে বাংলাদেশ একসময় স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও চাল রপ্তানি করতো। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এদেশের কৃষককুল এখনাে মান্ধাতার আমলের চাষপ্রণালী অবলম্বন করে চাষাবাদ করে। বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদ করা হলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে সার কীটনাশক ও পানিসেচের ব্যবস্থা করা গেলে খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে এবং বাংলাদেশ থেকে আবারও চাল রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে ধারনা। তাই এর সাথে দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ।
বাংলাদেশ পৃথিবীর ধান উৎপাদনকারী দেশ গুলোর মধ্যে চতুর্থ দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার সাথে মিল রেখে ধানের ফলন বাড়ানো ছাড়া কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও ধানের বৈচিত্র্য দেখলে অবাক হতে হয়। এই ছোট দেশেই কয়েক হাজার জাতের ধান উৎপাদন করা হয়। ১৯৩০ সালের অবিভক্ত বাংলায় ভৌগলিক পরিবেশ অঞ্চল ভেদে পনের হাজার জাতের ধান চাষাবাদ করা হোত বলে বিভিন্ন জরিপে জানা যায়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে আধুনিক কালে ধানের স্থানীয় জাতের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রীডের প্রবর্তনের কারণে অনেক জাত অবহেলায় হারিয়ে গেছে। এছাড়া ধান কোন মাটিতে ভালো হয় এর সঠিক জ্ঞান না থাকার কারনেও ফলন কমে গেচে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে উন্নত জাতের ভুট্টার নাম সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“ধান কোন মাটিতে ভালো হয়” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।