১২ মাসের নাম ইংরেজিতে একনজরে দেখে নিন। আমরা অনেক সময় বাংলাতে ইংরেজি মাসের নাম গুলো বলে থাকি। সে ক্ষেত্রে বোঝার ক্ষমতা নেই যে আমরা বাংলা বলছি নাকি ইংরেজি বলছি। কেননা ইংরেজি যে মাসের নামগুলো আমরা বাংলায় বলে থাকি সেই একই ধরনের সেন্টেন্সে ব্যবহৃত নামই আবার ইংরেজিতে লেখা হয়। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ইংরেজি বর্ষ উদযাপন হয়ে থাকে। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি বা ক্যালেন্ডারের আগে জুলিয়ান বর্ষপঞ্জির প্রয়োগ ছিল এই পৃথিবীতে। জুলিয়ান বর্ষপঞ্জিরও পূর্বে ভ্যাটিক্যান পোপের অনুসারী খ্রিস্টান ধর্মসম্প্রদায় বিশেষ অর্থাৎ রোমের অধিবাসীরা গ্রিক পঞ্জিকা অনুসারে ৩০৪ দিনে বছর হিসাব করতো। যা ১০ মাসে বছর হিসাব করা হতো। বর্তমান ইংরেজি বছরের প্রথম দুই মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির জন্ম তখনও হয়নি। ওই বারো মাসের ক্যালেন্ডারটি আগের থেকে ভাল হলেও তাতে কিছু সমস্যা থেকেই যাচ্ছিল। দীর্ঘদিন ওই ব্যবস্থাই বজায় ছিল। অনেক দিন পর খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে রোম-সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নির্দেশে ক্যালেন্ডারকে তারিখ অনুসারে সাজানো হয় এবং জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় মাস করা হয়। সিজারের সময়কালে নির্মিত এই ক্যালেন্ডারকে ‘জুলিয়েন ক্যালেন্ডার’ নামেও বলা হয়ে থাকে।
ইংরেজি মাস কিভাবে হলো?
১৫৮২ সালে পোপ গ্রেগরি পুরানো রোমান ক্যালেন্ডারকে সংশোধন করে নতুন ক্যালেন্ডার এর রুপ দেন। তাঁর নামেই ক্যালেন্ডারের নাম করা হল গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পূর্বে ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারেরও অনেক আগে রোমানরা গ্রিক পঞ্জিকা অনুযায়ী বছর হিসাব করতো ৩০৪ দিনে। সেই বছরকে আবার ১০ মাসে ভাগ করা হয়েছিল। এক সময় রাজা পম্পিলিয়াস দেখলেন ৩০৪ দিন হিসাবে বছর করলে প্রকৃতির সঙ্গে মিলছে না। খৃস্টপূর্ব ৭০০ সালে তিনি বছরের সাথে যোগ করলেন আরও ৬০ দিন। বছরের দিন বৃদ্ধি পেল ঠিকই কিন্তু সাথে সমস্যাও বৃদ্ধি পেল যে, ঋতুর চেয়ে সময় এগিয়ে আছে তিন মাস। তখনই জুলিয়াস সিজার ঢেলে সাজালেন বছরকে। নতুন দু’টি মাস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে এলেন বছরের প্রথম দিকে। এভাবেই সৃষ্টি হলো ইংরেজি ১২ টি মাসের নাম।
১২ মাসের নাম ইংরেজিতে
বাংলা বছরের মতো ইংরেজি বছরেও বারটি মাস রয়েছে। কারণ ১২ মাস নিয়ে হয় এক বছর। আবার বারটি মাসের আলাদা আলাদা ইংরেজি নাম দেওয়া হয়েছে। এবং এর সাথে সাথে বাংলা উচ্চারণ গুলিও যোগ করে দেওয়া হলো। বাংলা মাসের নাম গুলো তো আমরা আগে থেকেই জানি। এখন জেনে নিন ১২ মাসের নাম ইংরেজিতে –
মাসের নাম ইংরেজিতে | ইংরেজি মাসের নাম বাংলায় |
---|---|
January | জানুয়ারি |
February | ফেব্রুয়ারি |
March | মার্চ |
April | এপ্রিল |
May | মে |
Jun | জুন |
July | জুলাই |
August | আগষ্ট |
September | সেপ্টেম্বের |
October | অক্টোবর |
November | নভেম্বর |
December | ডিসেম্বর |
১। January
ইংরেজি ক্যালেন্ডার এর প্রথম মাস হলো জানুয়ারি। এই মাসটিকে নববর্ষের প্রবেশ দ্বারও বলা হয়। ‘জানুয়ারি’ এই নামটিে সেছে প্রাচীন দু-মাথাওয়ালা রোমান দেবতা ‘জানুস থেকে। পুরাণে অনুসারে এই দ্বাররক্ষক বা প্রবেশ পথের দেবতা। রোমান পুরাণে বলা হয়েছে, জানুস একটি মাথা দিয়ে অতীতের দিকে যেমন দৃষ্টি রাখেন আবার তার অন্য মাথার দৃষ্টি আবার ভবিষ্যতের দিকে প্রসারিত।
২। February
ইংরেজি বছরের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারি। ফেব্রুয়ারি শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ফেব্রুয়ারিয়াস’ থেকে যার অর্থ শুদ্ধ করা। রোম-সম্রাট পম্পিলিউস প্রবর্তিত প্রাচীন রোমান ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারি বছরের শেষ মাস হিসাবে চিহ্নিত ছিল। প্রথম দিকে ফেব্রুয়ারি মাসের দিন সংখ্যা ছিল তিরিশ। জুলিয়াস সিজার তার থেকে একটি দিন কেটে নিয়ে বছরের মাঝের দিকের একটি মাস কুইন্টিলিস এর সঙ্গে যুক্ত করেন পরে ওই মাসটিকে সিজারের নামানুসারে ‘জুলাই’ নামে চিহ্নিত করা হয়।
৩। March
ইংরেজি বছরের তৃতীয় মাস মার্চ। রোমান যুদ্ধদেবতা মারস এর নামানুসারে মার্চ মাসের নামকরণ করা হয় বলে জানা যায়। যুদ্ধদেবতার নামে এ মাসের নামকরণ হওয়াতে অনেকেই আবার এ মাসকে সামরিক কুচকাওয়াজের মাসও বলে থাকেন।
৪। April
বছরের চতুর্থ মাস এপ্রিল এর নামকরণ নিয়ে আছে মতানৈক্য। অনেকের মতে এ মাসটি রোমানদের প্রেমের দেবী ভেনাস এর কাছে উৎসর্গ করা হয়েছে এমন একটি মাস। ‘ভেনাস’ শব্দটিকে গ্রিক ভাষায় ‘অ্যাফ্রোডাইটি বলা হয় যা থেকে এপ্রিল শব্দটির জন্ম। এছাড়া অন্য মতও আছে। বসন্তের প্রবেশ পথ খুলে দেওয়াই এপ্রিলের কাজ। তাই কারও-কারও ধারণা, ল্যাটিন শব্দ ‘এপিরিবি’ (যার অর্থ খুলে দেওয়া) থেকে ‘এপ্রিল’ শব্দটি এসেছে।
৫। May
ইউরোপে বসবাসরত রোমানদের দেবী ‘মায়া বা মেইয়া এর নামানুসারে মাসটির নামকরণ হয় মে। এই মায়া ছিলেন গ্রিকপুরান অনুসারে বর্ণিত পৃথিবী ধারণকারী এটলাস এর আত্মজা।
৬। Jun
ইংরেজি সালের ষষ্ঠ মাস জুন। জুন মাসের নামকরণের উৎস নিয়েও আবার মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন জুনিয়াস নামে কোনও একটি রোমান পরিবারের নাম থেকে জুন শব্দটির আবির্ভাব। তবে এটা সত্য যে সবচেয়ে বেশি চলিত মত হলো, ‘জুন’ নামটি এসেছে গ্রিক দেবরাজ জুপিটারের রানি জুনো-এর নাম থেকে।
৭। July
গ্রেগোরীয় বর্ষপঞ্জির সপ্তম মাস হলো জুলাই। জুলিয়াস সিজারের নামে এ মাসের নামকরন করা হয়েছে জুলাই।
৮। August
ইংরেজি বছরের অষ্টম মাস হলো আগস্ট। সম্রাট জুলিয়াস সিজারের পর রোম সাম্রাজ্যের সম্রাট হন তাঁরই ভাই এর ছেলে অগাস্টাস সিজার। তাঁরই নামে এ মাসটির নাম রাখা হয় আগস্ট মাস।
৯। September
সেপ্টেম্বর শব্দের ব্যাকরণসম্মত অর্থ হলো সপ্তম। কিন্তু সম্রাট জুলিয়াস সিজার কর্তৃক বছরের মাসগুলো সাজানোর পর তা এই মাসের অবস্থান দাঁড়ায় নবম মাসে।
১০। October
ইংরেজি বছরের দশমতম মাস হলো অক্টোবর। কিন্তু এ মাসের ব্যাকরণ অনুমোদিত অর্থ হলো অষ্টম। সেই মতে এটা অষ্টম মাস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে এ মাস আমাদের খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জিতে দশম মাসে স্থান পেয়েছে ।
১১। November
নভেম্বর হচ্ছে ইংরেজি বছরের এগারোতম মাস। এটাও কিন্তু ‘নভেম’ শব্দের অর্থ ‘নয়’। সে যুক্তিতে সুদূর অতীতেও নভেম্বর মাসের অবস্থান ছিল নবম মাস। কিন্তু জুলিয়াস সিজারের কারণে নভেম্বরের স্থান নয়ের বদলে পরিবর্তিত হয়ে এগারোতে চলে যায়।
১২। December
শেষ মাস অর্থ্যাৎ ডিসেম্বর মাস ইংরেজি বছরের দ্বাদশ বা শেষ মাস। কিন্তু ল্যাটিন শব্দ ‘ডিসেম’ অর্থ মানে দশম। সম্রাট জুলিয়াস সিজারের বর্ষ সাজানোর আগে অর্থানুসারে এটি ছিল দশমতম মাস। কিন্তু আজ আমাদের কাছে এ মাসের অবস্থান ক্যালেন্ডারের শেষভাগে অর্থ্যাৎ বারোতম।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
১২ মাসের নাম ইংরেজিতে এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
প্রতি মাসে কত দিনে হয়?
বছরের প্রতিটি মাসে দিনের সংখ্যা নির্দিষ্ট। ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাস ৩১ দিনে ও ৪ মাস ৩০ দিনে এবং ফেব্রুয়ারি মাস সাধারনত ২৮ দিনে হয় কিন্তু চার বছর পর পর ২৯ দিনে হয়।
বাংলা মাস ও বছর কে আবিস্কার করেন?
সম্রাট আকবরের সময়ে কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের জন্য চন্দ্র মাসের হিসাব করা হতো। কিন্তু চন্দ্র মাসের হিসাবের সাথে ফসল কাটার সময়ের পার্থক্য হয়ে যেত। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সম্রাট আকবর বাংলায় সময় হিসাব করার জন্য বাংলা বারো মাসের নিয়ম প্রচলনের নির্দেশ দেন।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা ১২ মাসের নাম ইংরেজিতে জানলাম। সাধারনত মিশরীয়রাই প্রথম সৌর ক্যালেন্ডার ব্যবহার করেন। তারাই প্রথম বছরের দৈর্ঘ্য নির্ভুলভাবে পরিমাপ হিসাব করতে পেরেছিলে। মিশরীয়রা তখন তাদের বছরকে ১২ মাসে ভাগ করলেন প্রতিটি মাসে আবার ৩০ দিন রেখেছিল। বছর শেষে পাঁচটি অতিরিক্ত দিন যোগ করে হিসাব মেলানো হয়। মিশরীয় ক্যালেন্ডার ছিল প্রাচীনতম সৌর ক্যালেন্ডার। রোমান শব্দ ‘ক্যালেন্ডস’ থেকে মূলত ক্যালেন্ডার শব্দটি এসেছে।
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭৩৮ সালে রোমান ক্যালেন্ডার চালু করেছিলেন রোমের প্রথম সম্রাট রমুলার। তখন বছর গণনা করা হতো ১০ মাসে এবং তাতে থাকতো ৩০৪ দিন। পরে খ্রিস্টপূর্ব ৭১৩ সালে রোমান শাসক ন্যুমা পম্পিলিয়াস জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস দু’টি যুক্ত করেন। সে সময় ফেব্রুয়ারি অবস্থান ছিল বছরের শেষ মাস। খ্রিস্টপূর্বে ৪৬ সালে বিখ্যাত রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার চালু করলেন নতুন ক্যালেন্ডার। এতে মিশরীয়দের আদলে সৌরবর্ষ ব্যবহার করা হলো এবং নাম দেওয়া হলো ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’। এ ক্যালেন্ডারেই প্রথম সপ্তাহের সাত দিনের নাম দেওয়া হলো। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“১২ মাসের নাম ইংরেজিতে” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।