পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য আমাদের সবারই জেনা রাখা উচিত। বাংলা ১২ টি মাসের মধ্যে প্রথম মাস হল বৈশাখ মাস। বৈশাখ মাসের প্রথম দিনকে বলা হয় পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব। তাই প্রতি বছর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ পালিত হয়।
বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে পহেলা বৈশাখকে নববর্ষ নামেও অভিহিত করা হয়। বাঙালিরা পান্তা – ইলিশ খাওয়া এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটিকে বরণ করে নেয়। বাঙালিরা অতীতের সব দুঃখ এবং গ্লানি ভুলে গিয়ে সবাই সুস্থ স্বাভাবিকভাবে থাকার জন্য এই দিনটিকে বরণ করে। পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য জেনে রাখা ভালো। পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে জানা থাকলে যেকোনো পরীক্ষায় পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে প্রশ্ন আসলে সহজেই উত্তর করা যায়।
রমনার বটমূলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাঙ্গালীদের মিলনমেলা তৈরি হয়। ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো হিসাব নিকাশ বন্ধ করে নতুন করে হিসেবের খাতা খুলে সবাইকে মিষ্টি বিতরণ করে। আপনি যদি পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য জানতে চান তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। এই আর্টিকেলে আমরা পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে দশটি বাক্য আলোচনা করবো।
পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য
পহেলা বৈশাখের প্রবর্তন করেন মুঘল সম্রাট আকবর। মুঘল সম্রাটের শাসনামলে তার প্রজারা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার তালুকদার এবং ভূস্বামীর খাজনা পরিশোধ করত। তারপর বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে ভূস্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন মেলা এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। তিনি প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। মুঘল সম্রাট আকবরের সময়কাল থেকেই সারা উপমহাদেশে পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়।
ব্যবসায়ীরা হালখাতা অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ কে স্বাগত জানায়। সারা বছর তারা তাদের গ্রাহকদের বাকিতে যে পণ্য দিয়ে থাকে সেই বাকি টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে পহেলা বৈশাখে হালখাতা অনুষ্ঠান পালন করে। পুরনো খাতার হিসাব মিটিয়ে নতুন খাতা খুলে গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। তবে ভারতে পহেলা বৈশাখ ১৫ই এপ্রিল পালন করা হয়।
পহেলা বৈশাখেকে বাংলাদেশের জাতীয় উৎসবের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কারণ ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকে। পহেলা বৈশাখের দিনে একজন বাঙালি অন্য বাঙালিকে “শুভ পহেলা বৈশাখ” বা “শুভ নববর্ষ” এই শব্দটির মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন। পহেলা বৈশাখ বর্তমানে বাঙালির জীবনে পারিবারিক এবং সামাজিক উভয় দিক থেকে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আছে। তাই বাংলা নববর্ষকে শুভদিন হিসেবে পালন করা হয়। পহেলা বৈশাখের দিনে বাঙালিরা ঘরে ঘরে মিষ্টি বিতরণ করেন। এই আর্টিকেল থেকে আসুন জেনে নেই পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য।
পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য
পহেলা বৈশাখ বাঙালিদের কাছে একটি সার্বজনীন লোক উৎসব এ পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য ব্যবসায়ীরা এই দিনটিকে শুভ দিন বলে মনে করেন। এই উৎসবটি বাঙ্গালীদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব।
রমনার বটমূল সহ আরো বিভিন্ন স্থানের উৎসব প্রাঙ্গনে বাঙ্গালীদের ঐতিহ্যবাহী সংগীত এবং কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথের সুমধুর গানগুলো পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পহেলা বৈশাখ নতুন একটি কৃষি মৌসুমের সূচনা করে। পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে। এই উৎসব বাংলাদেশের ঐতিহ্য কে প্রতিফলিত করে। আপনি যদি বাঙ্গালী হয়ে থাকেন, তাহলে পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য আপনার জেনে রাখা জরুরী। চলুন পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে দশটি বাক্য জেনে নেওয়া যাক:
- বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিরাট উচ্ছাস ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এই পুরো দিনটি পালন করা হয়।
- বাংলাদেশের ১৪ই এপ্রিল এবং ভারতে ১৫ ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালন করা হয়।
- বাংলা ক্যালেন্ডারে প্রথম দিন হল পহেলা বৈশাখ।
- পহেলা বৈশাখের দিন অনেক সকাল থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়ে থাকে যা আনন্দ শোভাযাত্রা বা মঙ্গল শোভাযাত্রানামে পরিচিত।
- পুরুষেরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক সাদা কুর্তা অথবা পাঞ্জাবি পরিধান করে এবং মহিলারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরিধান করে থাকে।
- বৈশাখী মেলায় সবার রঙিন সাজের মাধ্যমে রাজধানীর রাস্তাগুলোও যেন রঙিন হয়ে ওঠে।
- “মঙ্গল শোভাযাত্রা” কে পহেলা বৈশাখের আইকনিক প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়।
- পহেলা বৈশাখের দিন ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করা হয় ও বাঙালিরা ঘরে ঘরে সেদিন ইলিশ পান্তার আয়োজন করে থাকে।
- পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে সাধারণত বাংলাদেশের কিছু বড় বড় শিল্প অনুষদ উল্লেখযোগ্য হল: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, নজরুল ইনস্টিটিউট মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ, ছায়ানট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান।
- পহেলা বৈশাখ সম্পূর্ণ বাঙালি জাতির জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে প্রতিপালিত হয়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তবে চলুন জেনে নেই সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব কোনটি?
বাঙালি সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব পহেলা বৈশাখ।
হালখাতা অনুষ্ঠানটি কেন পালন করা হয়?
হালখাতা অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা তাদের পুরানো গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করে। নতুন করে হিসাবের খাতা খোলে। বকেয়া পরিশোধকারীদের ব্যবসায়ীরা মিষ্টিমুখ করিয়ে থাকেন। তাই পহেলা বৈশাখ ব্যবসায়ীদের অন্যতম উৎসবের দিন।
পহেলা বৈশাখ মানে কি?
পহেলা বৈশাখ হল বাংলা পঞ্জিকার বৈশাখ মাসের প্রথম দিন। এই দিনটিকে বাংলা নববর্ষও বলা হয়।
উপসংহার
পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব এবং জাতীয় উৎসব। এই দিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সপরিবারে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। সবাই সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে এই দিনটিকে পালন করার চেষ্টা করেন। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে জাতীয় পতাকা সম্পর্কে ৫টি বাক্য পড়তে পারেন।
এই দিনটি শুধুমাত্র বাঙালির জাতীয় উৎসব নয়। বাঙালির ঐতিহ্য এবং জাতীয়তাকে নতুন করে চিনতে এবং জানতে সাহায্য করে পহেলা বৈশাখ। আপনারা যারা পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে ১০টি বাক্য জানতে চেয়েছিলেন, আশা করি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে তারা উপকৃত হবেন।