সরকারি কৃষি ডিপ্লোমা কলেজের তালিকা কৃষি ডিপ্লোমা বিষয়ে পড়াশুনা করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য। আমাদের এই দেশ কৃষি প্রধান দেশ। এই দেশে যে পরিমাণ কৃষি সম্পদ রয়েছে এবং কৃষি জমি রয়েছে তাতে যদি সঠিকভাবে চাষাবাদ করা হয় এবং সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাহলে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে খাদ্য চাহিদা খুব সুন্দরভাবে পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা যদি কৃষিতে ডিপ্লোমা করে আসে তাহলে এদেশের কৃষি জমির সঠিক ব্যবহার এবং কিভাবে সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায় তার জন্য তারা কাজ করতে পারবে। দেশের কৃষি সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে পারবে। মোট কথা হলো কৃষি খাতে উন্নতির জন্য কৃষিতে ডিপ্লোমা করা শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আপনারা যারা কৃষিতে ডিপ্লোমা করতে চান তারা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম জেনে নিতে পারলে সেটা আপনাদের জন্য অনেক সুবিধা জনক হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আওতাধীন সারাদেশে ১৮টি সরকারী কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই) সমূহে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার কোর্স চালু রয়েছে।
কৃষি ডিপ্লোমা কি?
কর্মমুখী শিক্ষার অন্যতম একটি ধারা হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা যার মধ্যে কৃষি ডিপ্লোমা অন্যতম। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও জনসংখ্যার তুলনায় আবাদযোগ্য জমির পরিমান খুবই সামান্য। আর এই সীমিত সম্পদ দিয়ে বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য সমস্যা মেটানোর জন্য উন্নত যেসব ফলনশীল শস্য আর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষিবিদরা সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞাই কৃষকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন এবং প্রশিক্ষন দিচ্ছেন এই ডিপ্লোমাধারী কৃষিবিদরা। ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার (Diploma in Agriculture) বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তত্বাবধানে পরিচালিত চার (৪) বছর মেয়াদী শিক্ষাক্রম কোর্স। চার বছর মেয়াদী শিক্ষাক্রম আটটি (৮) পর্বে বিভক্ত যাদের প্রতিটি ভাগকে বলা হয় এক একটি সেমিষ্টার। এক একটি সেমিষ্টারের কার্য দিবস ১৬-১৮ সপ্তাহ হয়ে থাকে। সে হিসেবে প্রতি বর্ষের কার্য দিবস ৩২-৩৬ সপ্তাহ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। প্রায় ৮০ ভাগ মানুষেই এই কৃষির উপর নির্ভরশীল। এই দেশের কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষেই মূলত কৃষি ডিপ্লোমা কোর্সটি চালু করা হয়।
সরকারি কৃষি ডিপ্লোমা কলেজের তালিকা
বাংলাদেশের ১৮ টি এটিআইতে ডিপ্লোমা-ইন-এগ্রিকালচার (৪ বছর মেয়াদী) কোর্সটি পড়ানো হয়ে থাকে।এছাড়াও বেসরকারিভাবে আরও ১৬০ টির মত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা-ইন-এগ্রিকালচার (৪ বছর মেয়াদী) কোসটি পড়ানো হয়। এগুলোতে আবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে দুই রকম। মুখোমুখি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় (যাকে বলে সরাসরি) ইনস্টিটিউটে থেকে পড়াশোনা করতে হয়। আর চাকুরিজীবীদের জন্য দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে সেমিস্টার সিস্টেমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ব্যবহারিক ক্লাস হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে সপ্তাহে একটি ক্লাস ও পরীক্ষায়ই অংশ নিতে হয় শুধু। এই পদ্ধতিতে পড়তে পারবে শুধুমাত্র চাকুরিজীবীরা। অন্যান্য ডিপ্লোমার ন্যায় এ কোর্সটিও ৪ বছর সময়ব্যাপী। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১৮ টি সরকারী কৃষি ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট নিরলসভাবে দক্ষ কৃষিবিদ তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছ। নিচে ছক আকারে সরকারি কৃষি ডিপ্লোমা কলেজের তালিকা উল্লেখ করা হলো।
প্রতিষ্ঠানের নাম | প্রতিষ্ঠার সাল | প্রতিষ্ঠান প্রধানের নাম | অবস্থান | আসন সংখ্যা |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা | ১৯৫৪ | মকবুল আহাম্মদ | শেরে বাংলা নগর, ঢাকা | ২০০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, রংপুর | ১৯৫৭ | মোঃ আফতাব হোসেন | তাজহাট, রংপুর | ২৫০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, গাইবান্ধা | মোঃ শফিকুল ইসলাম | বোনারপাড়া রোড গাইবান্ধা | ২৫০ | |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউউট, পাবনা | ১৯৭৮ | কৃষিবিদ মো: মাহমুদুল ফারুক (ভারপ্রাপ্ত) | ঈশ্বরদী, পাবনা | ২৫০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঝিনাইদাহ্ | ২০১৩ | সুশান্ত কুমার প্রামানিক | সদর, ঝিনাইদহ। | ২০০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, খুলনা | ১৯৩৭ | সত্যব্রত নাগ | দৌলতপুর, খুলনা। | ২০০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বরিশাল | ১৯৮৩ | মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (মুখ্য প্রশিক্ষক) | রহমতপুর, বরিশাল | ২০০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ফরিদপুর | কৃষিবিদ সরকার শফি উদ্দীন আহমদ | সদর, ফরিদপুর | ২৫০ | |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, মানিকগঞ্জ | ২০১৮ | মোঃ ছাইফুল আলম | সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ | ২০০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নারায়ণগঞ্জ | ২০১৪ | মোঃ শফিকুল হাসান (উপাধ্যক্ষ) | আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ | ২০০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, গাজীপুর | মোঃ নোয়াখেরুল ইসলাম | শিমুলতলী গাজীপুর | ১৫০ | |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, শেরপুর | ১৯৫৭ | মোঃ সাইফুল আজম খান (ভারপ্রাপ্ত) | সদর, শেরপুর | ২৫০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সিলেট | মোঃ ছারোয়ারুল আহসান(ভারপ্রাপ্ত) | খাদিমনগর, সিলেট | ২৫০ | |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | মোহাম্মদ ওমর ফারুক (মুখ্য প্রশিক্ষক) | বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | ২০০ | |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা | ২০০৬ | আমিরুল বাহরাইন (ভারপ্রাপ্ত) | হোমনা, কুমিল্লা | ২০০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, নোয়াখালী | ১৯৮১ | শেফামনি (উর্ধ্বতন প্রশিক্ষক) | বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী | ২৫০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম | ১৯৭৯ | মোঃ সামসুল আলম (ভারপ্রাপ্ত) | হাটহাজারী, চট্টগ্রাম | ২৫০ |
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি | ড. মোঃ সফি উদ্দিন | সদর, রাঙ্গামাটি | ১০০ |
শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল থাকা সত্ত্বেও চাকরির বাজারে সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয় প্রতিনিয়ত। এর প্রধান কারন হলো কর্মনির্ভর শিক্ষার অভাব। আবার অনেক সময় বেকারত্বের অভিশাপও বরণ করতে হয়। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা যেভাবে বাড়ছে একইভাবে বাড়ছে উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার অসংখ্য সুযোগও।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
সরকারি কৃষি ডিপ্লোমা কলেজের তালিকা এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
কৃষি ডিপ্লোমা করে বিএসসি করতে কত বছর লাগে?
কৃষি ডিপ্লোমা কোর্সটি চার বছর মেয়াদি। কৃষি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর বিএসসি ইন এগ্রিকালচার করতে ৪ বছর সময় লাগে।৪ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর কোর্স। বিএসসি ইন এগ্রিকালচার কোর্সটি ৪ বছর মেয়াদি।
কৃষি ডিপ্লোমা পাস করে কি কি চাকরি পাওয়া যায়?
সাধারনত এসএসসি পাশ করার পর চার বছরের কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স করতে হয়।। কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স করে আপনি চাইলে সাব এসিস্ট্যান্ট এগ্রিকালচার অফিসার SAAO বা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হতে পারবেন। এখানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠকর্মী ও বলা হয় । তাঁরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন প্রকার সেবা দিয়ে থাকেন । এটা শ্রেনীর সম্মানজনক একটি জব। এছাড়াও অন্যন্যা যে কোন চাকুরীতে আবেদন করা যায় যদি বিশেষ কোন বিষয়ে পড়াশোনা না চায়।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা সরকারি কৃষি ডিপ্লোমা কলেজের তালিকা সম্পর্কে জানলাম। শিক্ষা ব্যবস্থার ভিন্নধর্মী একটি ধারা হচ্ছে কারিগরি শিক্ষা। কর্মদক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পৃথিবীর সব দেশেই কারিগরি শিক্ষার ওপর যথেষ্ট জোর দেয়া হয়েছে। দেরিতে হলেও আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষাকে বর্তমানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ২০০৮ সালে এর দিকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার ছিল শতকরা ১ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশে। যা ২০২০ সালের মধ্যে এই হার ২০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। মোট কথা হলো আমাদের দেশের বর্তমানের শিক্ষার্থীরা কৃষক পরিবারের সন্তান হয়ে এসেও তারা কৃষিকাজে আর আগ্রহ প্রকাশ করছে না। বর্তমানে কৃষি ডিপ্লোমা সম্পন্নকারীদের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সৃষ্টির কারনে অনেকে এখন কৃষি ডিপ্লোমা বিষয়ে পড়াশুনা করতে আগ্রহী হচ্ছে । এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে উন্নত জাতের ঘাসের নাম সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“সরকারি কৃষি ডিপ্লোমা কলেজের তালিকা” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।