পড়াশোনায় মন বসানোর ৫টি উপায় শীর্ষক আজকের প্রবন্ধে আপনাকে স্বাগতম। পড়াশোনা করা সহজ ও কঠিন উভয় বিষয়। যেকোনো বিষয় নিজের আয়ত্তে আনার জন্য দরকার হয় কঠিন পরিশ্রম আর অধ্যবসায়। শুধু কঠিন পরিশ্রম করলেই হবে না কৌশলগতভাবে পরিশ্রম করতে হবে। আমরা সবাই চাই পড়াশোনা বা কোনো কাজ মনোযোগের সাথে খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের পড়াশোনা বা কোনো কাজ শুরু করতে না করতেই আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। নিয়মিত বা সুচারুভাবে একটানা বেশিক্ষন কোনো কিছু করতেই পারিনি না । নানা বাধা-বিপত্তি, অলসতা বা অনাগ্রহ এসে ভর করে। পড়াশোনায় অনিয়মিত হয়ে পড়ি। অতিব জরুরী বা ঠেকে না গেলে তখন আর পড়ার টেবিলে বসতে চাই না। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষা মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়। তাই এই শিক্ষা আনন্দের সহিত গ্রহন করতে চাই শিক্ষায় মনোনিবেশন।
পড়াশোনায় মন বসানো কি?
পড়াশোনার সঙ্গে মনের ভালোবাসাকে বা আগ্রহকেই পড়াশোনায় মন বসানো বলে। পড়া্শোনা করে উদ্দেশ্যপূরণের জন্য যখন কোনাে লক্ষ্যকে আমরা নির্দিষ্ট করে সেই দিকে যাত্রা করি তখনি মূলত পড়াশোনায় মন বসানো বলা হয়ে থাকে বা বলা যেতে পারে। অর্থাৎ কোনাে পড়াশোনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে মনকে নিবিষ্ট করার দৈহিক ও মানসিক প্রক্রিয়াকে পড়াশোনায় মনোনিবেশন বা মন বসানো বলে। স্বেচ্ছায় পড়াশোনায় আগ্রহ তৈরি হওয়া ব্যক্তি স্বশিক্ষিত ব্যক্তি। স্বশিক্ষিত ব্যক্তি মানেই সুশিক্ষিত। ব্যক্তি তথা জাতির উন্নয়নের জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
পড়াশোনায় মন বসানোর ৫টি উপায়
পড়াশোনা করা একজন মানুষের জন্য খুবই গরুত্বপূর্ণ। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। এই শিক্ষা আবার এমনি এমনি আসে না। এর জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা আর অধ্যবসায়। তার আগে যে জিনিসটা বেশি জরুরী তা হলো পড়াশোনায় মন বসানো। নিচে সংক্ষেপে পড়াশোনায় মন বসানোর ৫টি উপায় আলোচনা করা হলো।
১। লক্ষ্য স্থির করা
যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই আমাদের প্রধান ভাবনা হওয়া উচিত আমরা ঠিক কোন উদ্যেশ্যে নিয়ে সামনে এগোচ্ছি। নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল অজানা থাকলে চলার রাস্তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যাবে। তাই প্রথমে একটি লক্ষ নির্ধারন করা উচিত। আর সেই লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে সেভাবেই নিজেকে পরিচালনা করতে হবে। লক্ষ্যভ্রষ্ট ব্যক্তি কখনোই পড়াশোনায় মন বসাতে পারেনা। আবার লক্ষ্যটি ছোট এবং অর্জনযোগ্য হওয়া উচিত। অবশ্যই পড়তে বসার আগে পড়ার উদ্দেশ্য এবং কী কী পড়বেন তা ঠিক করে নিতে হবে। তাই যেকোনো কাজের আগে লক্ষ্য স্থির করুন। আপনি কেন পড়ছেন, পড়ালেখা করে আপনি কী হতে চান, এই লক্ষ্য আগে ঠিক করে নিতে হবে, না হলে উদ্দেশ্যহীন পড়ালেখায় মন বসবে না এটাই স্বাভাবিক।
২। সঠিক পরিবেশ নির্বাচন করা
যে কোন কাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজের সাফল্য বা ব্যর্থতা কাজের পরিবেশের উপরও অনেকটাই নির্ভর করে। পড়াশোনা খুব সহজ কাজ নয়। মাথা খাটিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। আর এর জন্য চাই নিরিবিলি ও শান্ত বা কোলাহলমুক্ত পরিবেশ। শব্দহীন একটা পরিবেশ তৈরি করে পড়তে বসার চেষ্টা করতে হবে। যতটা সম্ভব নিরিবিলি ও ঠান্ডা পরিবেশে পড়ার চেষ্টা করবেন। যেখানে মন বা চিন্তা অন্যকোন দিকে যাওয়ার সুযোগ না থাকে। তাই অনেকে ভোর রাত বা ৪ টা বা ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসেন। সেই সময় মস্তিস্ক যেমন থাকে নির্ভার তেমন চারিপাশের পরিবেশ থাকে নিঝুঁম ও শান্ত।
৩। সঠিক পরিকল্পনা করা
যেকোনো বিষয়ে সফলতার জন্য প্রথমে একটি সুন্দর ও সঠিক পরিকল্পনা করতে হয়। যে কাজে পরিকল্পনা বা চিন্তা করা হয় বেশি সেই কাজে সফলতা পাওয়ার জন্য পরিশ্রম হয় কম। পড়াশোনা করে সফলতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই পড়াশোনার একটি পরিকল্পনা থাকা চাই। কিভাবে পড়লে অল্প সময়ে ভালো ফলাফলা করা যাবে, লক্ষ্য অর্জন করা যাবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পাঠ বা পরিচ্ছেদ শেষ হবে। এই ধরনের সঠিক পরিকল্পনা করে এগুলো পড়াশোনা তখন একদম সহজ মনে হবে যার ফলে পড়াশোনায় মন বসানো কোন সমস্যা হবে না।
৪। রুটিন করে পড়ার অভ্যেস
পড়াশোনার ক্ষেত্রটা অনেক বড়। আর যাতে রয়েছে অসংখ্য শাখা-প্রশাখা। তাই এত বিশাল বড় এরিয়ায় রাজত্ব করতে হলে অবশ্যই আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগুতে হবে। যার জন্য প্রয়োজন সুন্দর ও গোছানো একটি নিয়মিত পড়ার রুটিন। এই পৃথিবীর সমস্ত জিনিস এমনকি প্রকৃতি পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটি নিয়মে বা রুটিনে চলছে। নির্দিষ্ট সময়ে সূর্য ওঠে আবার অস্তও যায়। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চললে সেক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া সম্ভাবনাই বেশি। আস্তে আস্তে পড়াশোনার বিশাল ক্ষেত্র বা এরিয়া কমতে থাকে। এবং মনের মধ্যে সাহস বাড়তে থাকে এবং হতাশা ও ভয় কমতে থাকে। তখন পড়াশোনায় মন বসানো সহজ হয়ে যায়।
৫। টেবিলে বসে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
ছোট থেকেই পড়াশোনা করার অভ্যেস টেবিলে বসে করা উচিত। শোয়ার বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে আরাম করে পড়তে বসার বদভ্যাস একেবারেই ত্যাগ করতে হবে। টেবিলে বসার আগে অবশ্যই নিজের প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস নিয়ে বসতে হবে যাতে করে পড়ার মাঝে কোন বিরতির সৃষ্টি না হয়। পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সহজ উপায় গুলোর মধ্যে টেবিলে বসে পড়া সবারি উপরে।অনেকে বিছানায় পড়তে বসে যার জন্য পড়ায় ঠিক মাঝখানে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসায় পড়াশোনায় মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। অলসতা কাজ করে। যার জন্য অবশ্যই টেবিল চেয়ারে পড়তে বসতে হবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
পড়াশোনায় মন বসানোর ৫টি উপায় এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
পড়াশোনা করার সঠিক সময় কখন?
পরীক্ষা যারা ভালো ফলাফল করতে চায় বা যারা পড়াশোনায় শতভাগ মনোনিবেশন করতে চায় তাদের উচিত ভোরবেলা বা রাত ৪টা বা ৫টার সময় পড়তে বসা। সকাল ৪টায় ঘুম থেকে উঠার পর অবশ্যই আপনার মাইন্ড ফ্রি থাকে, পরিবেশ কোলাহলমুক্ত থাকে। আর সেই সময় কোন আজেবাজে চিন্তা ভাবনা মাথায় থাকে না বা ঢোকে না।
আসরের নামাজের পর পড়াশোনা করা যাবে কি?
আসরের পড় পড়তে কোথাও নিষেধ করা হয়নি। কিন্তু আসরের পর যেহেতু আলোর স্বল্পতা থাকে, তাই আগেকার ডাক্তার ও চিকিৎসাবিদগন আছরের পর লেখা পড়া করতে নিরুৎসাহিত করতেন। কারন স্বল্প আলোর কারণে চোখের ক্ষতি হতে পারে।
উপসংহার
পড়াশোনায় মনোযোগ বা মনোনিবেশন করা খুবই জরুরী। কোন কাজে মন না বসলে সেই কাজের সুফল বা উদ্দেশ্য পূরন হয় না। পড়াশোনার ক্ষেত্রে আরও বেশি ক্ষতি হয়। কারন পড়াশোনা একজন ব্যক্তির ক্যারিয়ারের পাশাপাশি একটা জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। তাই পড়াশোনায় মন বসানের জন্য বিভিন্ন উপায় বা পথ অবলম্বন করা উচিত যাতে পড়াশোনার সেই কাঙ্খিত ফল লাভ করা সম্ভব হয়। তাই পড়াশোনায় মন বসানোর জন্য বিভিন্নভাবে পড়াশেনার কৌশল তৈরি করে পড়া উচিত যাতে করে পড়াশেনার প্রতি আপনার আগ্রহ তৈরি হয়। অনেকের মেধা ভালো থাকা সত্তেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ না থাকার কারনে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারে না। তাই অবশ্যই পড়াশোনায় মন বসানোর ৫টি উপায় একজন শিক্ষার্থীকে মেনে চলা উচিত। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পরীক্ষায় আসা বিভিন্ন দেশের রাজধানীর নাম সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“পড়াশোনায় মন বসানোর ৫টি উপায়” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।