Skip to content
Home » প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি?

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি?

What Are The Components Of Natural Environment

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমরা সবাই পড়েছি। পরিবেশ মানুষের জীবনে একটি অবিচ্ছেদ অংশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের জীবনযাত্রাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে থাকে। মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে প্রাকৃতিক পরিবেশ এর অবদান অস্বীকার করা যায় না। মানুষের সার্বিক অবস্থা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর সম্পূর্নভাবে নির্ভরশীল। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, কর্মদক্ষতা, আচার-আচরণ, জীবনযাত্রা, রীতিনীতি সবকিছুই পরিবেশের উপর নির্ভর করে থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশ হলো মূলত প্রকৃতি প্রদত্ত পরিবেশ বা মানুষের চারপাশের অবস্থা। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেকখানি নির্ভর করে এবং এর উপর নির্ভর করেই সেই অঞ্চলের বিভিন্ন অবস্থা (অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক) প্রভাব বিস্তার করে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ কি? 

আমাদের চারপাশের যা কিছু আছে সবকিছুই প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রকৃতি প্রদত্ত পরিবেশই হলো প্রাকৃতিক পরিবেশ । পরিবেশ বলতে বুঝায় যে যেসব শক্তি, অবস্থা এবং বস্তু জীবকে বা জীবের জীবনযাপনকে প্রভাবিত করে। আরও সহজভাবে যদি বলা যায় প্রকৃতির দেওয়া পরিবেশকেই প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। আকাশ, পর্বত, বাতাস, পাহাড়, পানি, মাটি, নদ-নদী, পশুপাখি, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র সবকিছুই প্রকৃতির দান। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মানুষের নিজস্ব কোন হাত থাকে না। মানুষে এগুলো তৈরি করতে পারে না। তবে রুপান্তিরিত করে ব্যবহার এর পরিধি বৃদ্ধি করতে পারে। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ভিত্তি করেই মানুষ তার নিজস্ব বুদ্ধি এবং শ্রম শক্তি ব্যবহার করে নানাবিদ পয়োজনীয় উপকরন সৃষ্টি করেছে। 

সমাজবিজ্ঞানী সরোকিনের মতে,  “প্রাকৃতিক পরিবেশ হলো  মহাজাগতিক অবস্থানকে নির্দেশ করে যেগুলি মানুষের সৃষ্টি নয় এবং নিজস্ব নিয়মে পরিবর্তিত হয়। “

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি?

মানব সভ্যতার কার্যক্রমের প্রভাব পরিবেশের সজীব ও অজীব উভয় উপাদনের উপর ক্রিয়াশীল থাকে। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ ও উৎপত্তিতে পরিবেশের উপাদানের ভূমিকা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। পরিবেশের এই উপাদান গুলি সভ্যতার উন্নতি ও বিস্তার করেছে। পরিবেশ হচ্ছে পৃথিবীর মূল ভিত্তি। পরিবেশ কোনো স্থানের যাবতীয় অবস্থা বা পরিস্থিতির সামগ্রিক রূপ। মানবসমাজ ও সমাজবদ্ধ মানবগোষ্ঠী সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ পর্যালোচনার স্বার্থে পরিবেশ সম্পর্কিত আলোচনা অত্যন্ত জরুরি। ব্যক্তিমানুষের ওপর যেমন, মানবসমাজের ওপরও, তেমনি পরিবেশের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আর এসব পরিবেশের রয়েছে সুনির্দিষ্ট উপাদান। নিচে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি তা তুলে ধরা হলো-

১। অজৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান 

যে পরিবেশ অজৈব ( যাদের জীবন নেই) কিছু প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে গঠিত হয় তাকে অজৈব বা জড় প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। অজৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি তা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ

ক। ভৌগোলিক অবস্থান

ভৌগলিক পরিবেশগত দিক দিয়ে পৃথিবী তিন প্রকারের হয়ে থাকে । 1১। উচ্চ অক্ষাংশ, ২। মধ্য অক্ষাংশ এবং ৩।  নিম্ন অক্ষাংশ। আবার মহাদেশীয় অবস্থান, উপদ্বীপীয় অবস্থান, দ্বৈপ অবস্থান সমুদ্র প্রান্তীয় অবস্থান ইত্যাদির ওপরও পরিবেশের বিভিন্ন পার্থক্য দেখা যায়। 

খ। জলবায়ু 

প্রাকৃতিক পরিবেশের আরেকটি অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে জলবায়ু। জলধার এর উপর নির্ভর করে মানুষের শক্তি, সামর্থ্য ও স্বাস্থ্য। ক্রান্তীয় অঞ্চলে অধিক আর্দ্রতা এবং প্রচন্ড উত্তাপ অপেক্ষা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের কৃষি কার্য, আর্দ্রতা ও উত্তাপের উপর জলবায়ুর প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। যথাযথ আদ্রতা স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল। তবে কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। কোন অঞ্চলের মানুষের বাসস্থান, অন্ন,বস্ত্র, পরিবহন ও মৃত্তিকা সবকিছু নির্ভর করে। ফলে মৃত্তিকার গুণগত মানের ওপর ও উর্বরতা শক্তির ওপর নির্ভর করে পরিবেশের তারতম্য ঘটে। 

গ। মৃত্তিকা 

মৃত্তিকা প্রাকৃতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য  অজৈব উপাদান। সকল প্রাণীকুলের খাদ্য উৎপাদিত হয় মৃত্তিকা থেকে। জীবের বাসস্থানের কাজ করে থাকে। ফলে মৃত্তিকার গুণগত মান ও উর্বরতা শক্তির উপর ভিত্তি করে পরিবেশের পার্থক্য হয়ে থাকে। 

ঘ। খনিজ সম্পদ 

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান খনিজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। যার উপর নির্ভর করে সেই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা। খনি হতে প্রাপ্ত সম্পদকে বলে খনিজ সম্পদ।প্রাকৃতিক গ্যাস, রুপা, সোনা,তৈল, তামা, কয়লা প্রভৃতি মানুষের অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যাপকভাবে অবদান রাখে। 

ঙ। নদ-নদী 

বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও এখানে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় নদ নদী। এজন্য এই দেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়ে থাকে। এই নদনদী প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অজৈব উপাদান। নদনদীর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গড়ে ওঠে। এছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদনদীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

২। জৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান 

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলির মধ্যে জৈব উপাদান ( যাদের জীবন আছে) উল্লেখযোগ্য। জৈব উপাদানের মধ্যে রয়েছে প্রাণিজ সম্পদ ও উদ্ভিদ সম্পদ। এগুলোর ভূমিকা বিশেষভাবে পরিবেশে বিদ্যমান। 

ক। প্রাণিজ সম্পদ 

পৃথিবীতে হাজার হাজার প্রজাতির প্রাণি আছে। আর এই প্রাণীগুলি প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম জৈব উপাদান। যেগুলি মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আর্থিক স্বচ্ছলতার সরবরাহ করে থাকে।

খ। উদ্ভিদ সম্পদ 

ভূপৃষ্ঠে প্রকৃতির সৃষ্টি সব প্রকারের গাছপালাকে উদ্ভিদ বলে। আর এই প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো উদ্ভিদ। উদ্ভিদ বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড(CO2) গ্রহন  করে ও অক্সিজেন (O) সরবরাহ করে এর ভারসাম্য সুরক্ষা করে। প্রাণীকুলকে সব রকমের সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে। প্রাণী খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল হয় উদ্ভিদের ওপর। উদ্ভিদ অবদান রাখে জীবিকা নির্বাহের সাথে সাথে আর্থিক কার্যক্রমে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের উপায় 

প্রাকৃতিক পরিবেশের সঠিক ব্যবহার ও সুরক্ষার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ দুই প্রকারের প্রথমটি ভৌত সংরক্ষণ এবং দ্বিতীয়টি জীব সংক্রান্ত সংরক্ষণ। 

১। ভৌত সংরক্ষণ – ভূগর্ভস্থ খনির সোনা তামা রুপা কয়লা সীসা পেট্রোলিয়াম প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি সংরক্ষণ করা। 

২। জীব সংক্রান্ত সংরক্ষণ – বিভিন্ন প্রজাতি বা জীব সংরক্ষণ করা

প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের উপায় সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলোঃ

  • প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করতে মানুষের মাঝে অনেক বেশি জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। 
  • ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে অথবা ডাস্টবিনে ফেলার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হবে। 
  • বাড়ির চারপাশে , রাস্তার পাশে অথবা যেখানে খালি জায়গা থাকবে সেখানে গাছ লাগানোর মাধ্যমে পরিবেশ বাঁচানো সম্ভব। 
  • প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমাতে হবে এবং রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশকে সংরক্ষণ করতে হবে। 
  • প্রাকৃতিক সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে সুরক্ষা করতে হবে। 
  • বৈদ্যুতিক কাজ শেষ হয়ে গেলে ফ্যান বা লাইট বন্ধ করে বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে হবে।
  • মাটি ,শব্দ ,বায়ু  এবং পানি ইত্যাদি দূষণ কমাতে হবে ।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি” এ সম্পর্কে আপনাদের মনে বেশকিছু প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া হোক সেই সকল সকল প্রশ্ন ও তাদের উত্তর।

পরিবেশ সংরক্ষণ কাকে বলে?

প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার ও সুরক্ষাই (অপচয় নয়) হলো পরিবেশ সংরক্ষন। 

প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে?

সহজভাবে বলতে গেলে, যে পরিবেশ মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না (শুধু ব্যবহার করে) প্রকৃতি পদত্ত  তাকেই প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে । আকাশ, বাতাস,পাহাড়,পর্বত, নদ-নদী,পানি, মাটি, পশু-পাখি, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি হলো প্রাকৃতিক পরিবেশ।

উপসংহার 

পৃথিবীর প্রধান বা মূল ভিত্তি হল পরিবেশ।  মানব সমাজ ও সমাজের সব রকমের তথ্যপূর্ণ পর্যালোচনা করার জন্য জানতে হবে পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ হল আমাদের চারপাশের পরিস্থিতি বা সামগ্রিক অবস্থার সমষ্টি। চারপাশের সবকিছুর উপরই পরিবেশের প্রভাব রয়েছে। যেমন রয়েছে মানবসমাজের উপর তেমনি রয়েছে উদ্ভিদকুল বা প্রাণীকুলের উপর। আমরা জানলাম প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে ও এর সংরক্ষণ করার উপায় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি । উপরে এই তথ্যগুলি প্রাকৃতিক সম্পদ ও সুরক্ষার জন্য আমাদের সাহায্য করবে। যেসব অবস্থা, শক্তি এবং বস্তুসমূহ জীবকে প্রভাবিত করে তাই পরিবেশ। মানুষের সার্বিক অবস্থা যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, আচার আচরণ, কর্মদক্ষতা, রীতিনীতি, জীবনযাত্রা প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। এ পরিবেশ একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তাই হেলায় এই উপরের বিষয়গুলি এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শীতকালীন সবজির নামের তালিকা সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *