Skip to content
Home » টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত?

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত?

What Should You Eat If You Have Typhoid Fever

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত আমাদের প্রত্যেকের জানা থাকা উচিত। জ্বর যদিও কোনো রোগ নয়, বরং অন্য রোগের লক্ষণ। দেহে কোন জীবাণুর সংক্রমণ হলে জ্বর হতে পারে। অসুস্থ হওয়ার একটি অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। সবচেয়ে সাধারণ রোগ হচ্ছে জ্বর। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদির দ্বারা আক্রান্ত হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সাধারণত জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার দিন তিনেকের মধ্যে সেটি ভালও হয়ে যায়। সময়টা দীর্ঘ হলেই যত চিন্তা বেড়ে যায়।

টাইফয়েড কি?

টাইফয়েড বা টাইফয়েড জ্বর এটি মূলত কোন জ্বর নয় এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত রোগ। এর ইংরেজি নাম: Typhoid fever. টাইফয়েড বা এন্টারিক ফিভার পানিবাহিত সংক্রামক রোগ। Salmonella typhi ব্যাক্টেরিয়ার কারণে টাইফয়েড হয়ে থাকে। স্যালমোনেলা দূষিত পানি ও খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। রোগের লক্ষণ মৃদু থেকে আস্তে আস্তে তীব্র হতে পারে, সাধারণত জীবাণু প্রবেশের ৬-৩০ দিন পর লক্ষণগুলি দেখা যায়। প্রায়ই কয়েকদিনের ব্যবধানে জ্বর এর তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যেকোনো বয়সের মানুষরে টাইফয়েড হতে পারে, তবে শিশু এবং কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বাংলাদেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।

শরীরের তাপমাত্রা অধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া মাথা ব্যথা করা, ডায়রিয়া, সর্দি কাশি হওয়া, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, বমি বমি ভাব হওয়া, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি লক্ষন দেখা দিলেই আমরা ধরে নেই টাইফয়েডের লক্ষণ। এছাড়া টাইফয়েড হলে শরীরে রক্তস্বল্পতাও দেখা দিতে পারে। জ্বরের সঙ্গে ক্ষুধামন্দা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, বমি, কাশি থাকতে পারে। রোগীর পেটে গোলাপি রঙের ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে কাশি, হৃৎস্পন্দন কমে যাওয়া, পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, প্রলাপ বকা, রক্তশূন্যতা ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত

এই সময়টাতে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ও পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট-সহ খাবার খাওয়া উচিত। জলীয় খাবারের পরিমাণ যত বেশি খাওয়া যায় ততই আপনার শরীরের জন্য ভালো। টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত এই বিষয়ে প্রধান ৫ টি খাদ্যা তালিকা তৈরি করেছি যা আমাদের শরীরের প্রয়োজন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক-

১। তরল খাবার

Juice

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে জলের বা তরলের খুব অভাব দেখা দেয়। টাইফয়েড জ্বর হওয়ার ফলে অনেক রোগীর মধ্যে ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দেয় এবং শরীরের তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এই সময় চিকিৎসকরা সাধারণত অধিক পরিমাণে জল পান করতে বলে থাকে। তাই এই পরিস্থিতিতে ডাবের পানি,পাতিলেবু-পুদিনার শরবত, টাটকা ফলের রস, দইয়ের ঘোল বা বাটার মিল্ক খেতে হবে নিয়ম করে। টাইফয়েডে এক দিকে জ্বর ও পেটের সমস্যায় ডিহাইড্রেশন হয়, অন্য দিকে প্রচুর ঘাম হয় বলেও শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। তাই বেশি জলীয় খাবার খাওয়া দরকার। তরমুজ, মোসাম্বি বা বাতাবি লেবু, শসা, জামরুল-সহ সকল পানিযুক্ত ফল খাওয়া উচিত। চিকেন ক্লিয়ার স্যুপ, মাশরুম স্যুপ, গাজর, বিনস স্যুপ, মুগ ডালের স্যুপ খাওয়া যেতে পারে পানির বিকল্প হিসাবে খাওয়া যেতে পারে।

২। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার

Why Should You Eat Enough Carbohydrates

টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অনেক বেশি প্রয়োজন। টাইফয়েডে আক্রান্ত কোনো রোগী যদি রেগুলার কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খায় তাহলে সেগুলো হজম করতে কোন সমস্যা হয় না। যার ফলে রোগীর শরীর প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের মধ্যে সিদ্ধ আলু ,মাছ, চিকেন,সবজি দিয়ে ভাত এসব খাবার রোগীর পেট ভরাতে আর শরীরের পুষ্টি জোগাতে অনেক বেশি সাহায্য করে এবং সাথে এগুলো দ্রুত হজম হয়ে যায় খুব সহজেই।এছাড়াও মুগ ডালের খিচুড়ি সাথে ডিম ও পাকা কলা বেশ উপকারি।

৩। শুকনো আঙ্গুর ও ফল জাতীয় খাবার

Raisins


টাইফয়েড আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর তার স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য শুকনো আঙ্গুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুকনো আঙ্গুর ইউনানী ওষুধ হিসাবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যখন রোগীর প্রচন্ড পরিমাণে জ্বর থাকে সেই সময় শুকনো আঙ্গুর চার পাঁচটি ভিজিয়ে খেতে পারেন। এটা রোগীর শরীরের জন্য খুবই উপকারী খাবার। লেবু, কমলা, মাল্টা, বেদানা ও আনারসের জুস খাবেন। এগুলোয় প্রচুর ভিটামিন সি থাকে

৪। ক্যালরিযুক্ত খাবার

Foods Rich In Fiber


টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীর সুস্বাস্থ্যের জন্য উচ্চ ক্যালোরি সম্পন্ন খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। সাধারণত চিকিৎসকরা টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীদের উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। টায়ফয়েডে আক্রান্ত রোগীর শরীর অনেক বেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং ওজনও কমতে শুরু করে। যার ফলে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার গুলি শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে থাকে। ঘি, মাখন,কলা,খেজুর,মিষ্টি আলু অথবা পিনাট বাটার এর মত খাবার গুলো রোগীকে  খাওয়ানো যেতে পারে এগুলো শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। 

৫। দুগ্ধজাতীয় খাবার

The Milk

টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীর জন্য দুগ্ধজাত খাবারদাবার গুলো  শরীরের জন্য খুবই কার্যকরী। দুগ্ধজাত খাবার রোগীর শরীরের দুর্বলতা দূর করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। রোগীর শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে এই খাবার গুলো অনেক উপকারী। রোগী তার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে। দই, ইয়োগার্ট, লস্যি, ছানা ও পনির খেতে পারেন। মধু দিয়ে বাড়িতে তৈরি পুডিং ও কাস্টার্ড খাওয়া যেতে পারে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।

টাইফয়েড জ্বরের ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি? 

টাইফয়েডে পরিপাকতন্ত্র ছিদ্র এবং রক্তক্ষরণ হতে পারে। অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ, মেরুদণ্ডে সংক্রমণ, মস্তিষ্কে প্রদাহ, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, পিত্তথলিতে সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোড়া এবং স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সর্বোপরি রোগকে ছোট করে দেখতে নেই অতি ছোট রোগও হয়ে যেতে পারে মৃত্যুর কারন।

টাইফয়েডে সাধারনত কি কি ওষুধ খেতে হবে?

পরীক্ষা করে দেহে টাইফয়েডের জীবাণু পাওয়া গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল এবং ১০ থেকে ১৪ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক যেমন অ্যাম্পিসিলিন, ক্লোরাম্ফেনিকল, অ্যামক্সিসিলিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ইত্যাদি টাইফয়েড চিকিৎসায় সাধারনত খাওয়া হয়। 

উপসংহার 

বিভিন্নভাবে টায়ফয়েড রোগ হতে পারে। বিশেষ করে অপরিচ্ছন্নতা, ঘনবসতি, সঠিক নিয়মে হাত ও মুখ না ধোয়া, দূষিত পানি পান বা খাবার খাওয়া, বাহিরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং কম সেদ্ধ খাবার খাওয়ার কারণে এই রোগ বেশি হয়। এ ছাড়াও টাইফয়েড জ্বর হতে আরোগ্য লাভ করার পরেও অনেকের শরীরের পিত্তথলিতে এই জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থেকে যেতে পার। যেসব এলাকায় এ রোগের প্রভাব বেশি থাকে, সেখানে ভ্রমণ করলেও টাইফয়েড হতে পারে। আক্রান্ত রোগীর মলের মাধ্যমে জীবাণু ছড়ায়। 

তাই বলা যায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করে আমরা টায়ফয়েডের আক্রমন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকাই টাইফয়েড থেকে বাঁচার প্রধান উপায়। এ ছাড়া নির্ধারিত ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণ করা যেতে পারে। টায়ফয়েড থেকে আরোগ্য লাভের পর পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত তালিকা কঠোরভাবে মেনে চলবো। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *