Skip to content
Home » থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা

থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা

Thalassemia Patient Food List

থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানা তাদের অভিভাবকদের খুবই জরুরী যারা থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। আমরা অনেকেই আছি যারা থ্যালাসেমিয়া নামক রোগের কথাই শুনিনি।  এই  থ্যালাসেমিয়া অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া নামেও পরিচিত।  থ্যালাসেমিয়া হল রক্ত ​​সংক্রান্ত একটি রোগ, যাতে শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।  এটি একটি জেনেটিক রোগ, যা শিশুরা তাদের পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পায়।  থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে শরীরে দুর্বলতা, হাড়ে ব্যথা এবং ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়।  

থ্যালাসেমিয়া কি?

থ্যালাসেমিয়া একটি রক্ত ​​সংক্রান্ত রোগ।  এটি একটি জিনগত রোগ, যাতে হিমোগ্লোবিন গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, অর্থাৎ রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।  এই রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।  দুই ধরনের থ্যালাসেমিয়া রয়েছে – এর মধ্যে রয়েছে মাইনর থ্যালাসেমিয়া এবং মেজর থ্যালাসেমিয়া।  

বাবা-মায়ের শরীরে উপস্থিত দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত ক্রোমোজোমের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়।  উভয় ক্রোমোজোমে ত্রুটি থাকলে তা থ্যালাসেমিয়া মেজর সৃষ্টি করে।  কিন্তু শরীরে যদি একটি ক্রোমোজোম নষ্ট হয়ে যায়, তবে তা মাইনর থ্যালাসেমিয়া।  এ সময় রোগীর শরীরে রক্ত ​​তৈরি হয় না, যার কারণে আরও নানা সমস্যা দেখা দেয়।  এতে রোগীর শরীরে রক্তের অভাব দেখা দেয়, যার কারণে তাকে ঘন ঘন রক্ত ​​দিতে হয়।  

থ্যালাসেমিয়ায় লোহিত রক্তকণিকার আয়ুষ্কাল কমতে থাকে।  শুধু তাই নয়, থ্যালাসেমিয়ার পর রক্তস্বল্পতার সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। তাই এই সময়ে আপনার খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাসের প্রতি অনেক বেশি নজর দিতে হবে।  এই সময়ের মধ্যে, আপনার আরও বেশি খাবার খাওয়া উচিত যা লাল রক্ত ​​​​কোষ বৃদ্ধি করে। তাই থ্যালাসেমিয়া / অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার রোগীদের তাদের ডায়েটে কী পরিবর্তন আনতে হবে তা আমাদের জানা উচিত। যে কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে আমাদের বিসদ জানা দরকার।

থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ

Symptoms Of Thalassemia

 – ক্লান্তি এবং দুর্বলতা

 – হাড় ব্যথা

 – ত্বক হলুদ হওয়া ইত্যাদি 

থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা

থ্যালাসেমিয়ার খাদ্য তালিকায় কয়েকটি বিষয় যেমন এড়িয়ে চলতে হবে, ঠিক তেমনি কিছু কিছু খাদ্য অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।  কিন্তু কিছু খাদ্যদ্রব্য আছে, সেগুলো সেবন করলে থ্যালাসিমিয়ার লক্ষণগুলো কমে যেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে, এমন খাবার খাওয়া উচিত, যা রোগীর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করতে পারে।  তাই এই সময়ে রোগীর খাদ্যাভ্যাসকে একেবারেই অবহেলা করা যাবে না এবং সর্বাবস্থায় থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে হবে।  তাহ‌লে আসুন জেনে নিই থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য কী কী খাবার তাদের তালিকায় রাখতে হবে। 

তৈরিকৃত খাদ্যদ্রব্য

Prepared Food Products

ভাত চাল ময়দা ডাল ইত্যাদি খাবারে অতিরিক্ত লৌহ কম থাকে। যেকারণে এইসব খাদ্য থেকে তৈরি যেকোনো খাদ্যদ্রব্যই থ্যালাসেমিয়া রোগীরা খেতে পারবে। অর্থাৎ আমরা সাধারণত যেসব খাদ্যদ্রব্য বাসায় তৈরি করি তা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য নিরাপদ। এছাড়াও থ্যালাসেমিয়া রোগীরা ডাল খেতে পারবে, বিশেষ করে মসুর ডাল। কেননা মুসুর ডালে লৌহের পরিমাণ কম থাকে, তবে আমাদের দেশে অন্যান্য যে ডাল পাওয়া যায় তা খাওয়া  যাবেনা। কেননা তাতে লোহের পরিমাণ বেশি থাকে তাই ডালের মধ্যে শুধুমাত্র মসুর ডালে থ্যালাসেমিয়া রোগীরা খেতে পারবে। 

মাছ মাংস

Fish Meat

যেসব খাবারে অতিরিক্ত লৌহ থাকে সেসব খাবার থ্যালাসেমিয়া রোগীরা খেতে পারবে না।  আর তাই মাছ মাংস থ্যালাসেমিয়া রোগীদের উপযোগী খাবার নয়। অতিরিক্ত লৌহ থাকার কারণে এসব খাবার রোগীর জন্য ক্ষতিকর। যে কারণে গরুর মাংস, খাসির মাংস, কলিজা, ইলিশ মাছ, কই মাছ, চিংড়ি মাছ সহ বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছসহ শুটকি ভর্তা বা শিং মাছ, টেরা মাছ, ডিমের কুসুম এই সমস্ত খাবার এই রোগীদের দেওয়া যাবে না। তবে রুই, কাতাল,  পাঙ্গাস, বোয়াল, সরপুঁটি, বাছা মাছ ও শোল মাছ ইত্যাদি থ্যালাসেমিয়া রোগীরা খেতে পারবেন।

শাকসবজি

Vegetables

শুধু যে মাছ-মাংসে লৌহ থাকে তা নয়। কিছু কিছু শাক সবজি রয়েছে যেগুলোতে অতিরিক্ত লৌহ থাকে। যে কারণে এইসব শাকসবজিও ডাক্তাররা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের দিতে নিষেধ করেন। বিশেষ করে কচু শাক, পালং শাক, ফুলকপি শাক, ফুলকপি, লাউ শাক, পুদিনা পাতা, ধনেপাতা, টমেটো কাঁচা পেঁপে, সাজনা ইত্যাদি। অতিরিক্ত লোহা থাকার কারণে এইসব শাক-সবজি থ্যালাসেমিয়া রোগীদের এড়িয়ে চলতে হবে।

তবে যে সব শাকসবজি রোগীরা খেতে পারবে না তা নয়।  এসব রোগীরাও চাইলে কিছু কিছু শাকসবজি খেতে পারবে। বিশেষ করে যেসব শাকসবজিতে কম লৌহ থাকে তা রোগীরা খেতে পারবে। যেমন বাঁধাকপি, মুলা, শালগম, ঝিঙ্গা, লাউ, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, মিষ্টি আলু, কাঁচা কলা, ইত্যাদি। এই সমস্ত শাকসবজিতে লৌহ কম থাকায় থ্যালাসেমিয়া রোগীরা নিশ্চিন্তে এইসব খাবার খেতে পারবে।

ফলমূল

Fruit

যে সমস্ত ফলে লৌহ বা লৌহ জাতীয় পদার্থ কম থাকে সেইসব ফল থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সহজেই খেতে পারবে। এই সমস্ত ফলের মধ্যে রয়েছে পেঁপে, বেল, পাকা আম, জামরুল, লিচু আমলকি, কলা, কাগজি লেবু, আঙ্গুর, পেয়ারা ইত্যাদি। এইসব ফলগুলোতে লৌহ কম থাকায় বা অতিরিক্ত লৌহ না থাকায় থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সহজে তা খেতে পারে। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেসব ফলে অতিরিক্ত লৌহ থাকে সেইসব ফল এড়িয়ে যাওয়ার যেমন খেজুর, তরমুজ, বেদনা, আনারস, ইত্যাদি।

ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ

Consume Foods Rich In Folic Acid

এছাড়াও আমাদের চেষ্টা করতে হবে ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করার। কেননা শরীরে নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য ফলিক অ্যাসিডের প্রয়োজন। ফলিক অ্যাসিড পেতে, আপনিমটরশুটি, মটর, কলা, ভুট্টা, নাশপাতি, এবং বিটরুট ইত্যাদি খেতে পারেন।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ

Consume Foods Rich In Vitamin C

থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকায় অবশ্যই ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিন সি শরীরে আয়রনের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। এটি বিশেষভাবে নন-হিম আয়রনের শোষণ বাড়ায়। তাই থ্যালাসেমিয়ার সময় ভিটামিন সি খাওয়া উচিত। সমস্ত সাইট্রাস ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যেমন  কিউই, স্ট্রবেরি, সবুজ সরিষা ইত্যাদিতে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। 

এছাড়াও  কমলা, লেবু, কিউই, স্ট্রবেরি এবং ক্যাপসিকামেও ভিটামিন সি রয়েছে।   অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি শরীর থেকে ফলিক অ্যাসিড নিঃসরণ ঘটাতে পারে। আপনি চাইলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারও খেতে পারেন।

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ

Consume Iron-Rich Foods

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয়।  এমতাবস্থায় তাদের এমন খাবার খাওয়া উচিত, যা হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করে।  এর জন্য আপনি বিটরুট, ডালিম, আপেল, কিশমিশ, ডুমুর এবং বাদাম খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরে লোহিত রক্ত ​​কণিকা বাড়বে।  

এছাড়াও রোগী চাইলে ডাক্তারের পরামর্শে আয়রন সাপ্লিমেন্টও নিতে পারেন।  সম্পূরকগুলি হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতেও উপকারী হতে পারে।  

থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা

আরও যা রাখা উচিত:

Lentils, Soybeans, Chickpeas

সিরিয়াল: পুরাতন শালি চাল, বার্লি, গম, ভুট্টা, ছোলা

ডাল:  মসুর, সয়াবিন, ছোলা

ফল: পেয়ারা, কিউই, স্ট্রবেরি, আঙ্গুর, পেঁপে, আপেল, ডালিম, কলা, নাশপাতি, আনারস, জাম্বুরা, শুকনো এপ্রিকট, শুকনো নারকেল ইত্যাদি।

শাকসবজি: করলা, করলা, জুচিনি, পারওয়াল, কুমড়া, বিটরুট এবং মৌসুমী সবজি টমেটো, মটরশুটি, মটরশুটি, গাজর, ব্রকলি, বাঁধাকপি ইত্যাদি।

অন্যান্য: হালকা, তরল খাবার, অল্প অল্প করে পানি পান করুন, বাদাম, তুলসী, পুদিনা, তেজপাতা।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-

থ্যালাসেমিয়ায় রোগীরা কতদিন বাঁচে? 

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অন্যের রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। বারবার রক্ত নেওয়ার একটি বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে অতিরিক্ত লৌহ জমে যাওয়া। এর ফলে যকৃত বিকল হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে। আর তাই  থ্যালাসেমিয়ায় রোগীরা ৩০-৪০ বছরের বেশি বাঁচে না।

থ্যালাসেমিয়া রোগের অপর নাম কী

থ্যালাসেমিয়া রোগটি আরও বেশকিছু নামে পরিচিত। আর সেগুলো হলো  কনস্ট্যান্ট স্প্রিং, কুলি’স অ্যানিমিয়া বা হিমোগ্লোবিন বার্ট হাইড্রপস ফেটালিস ইত্যাদি

উপসংহার

আমরা জানলাম থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা তে কী কী থাকতে হবে আর কী কী রাখা যাবে না। আশাকরি এই প্রবন্ধটি আপনাদের অবশ্যই কাজে লাগবে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।

তবে আমাদের জেনে রাখা উচিত থ্যালাসেমিয়ার অবস্থা গুরুতর হলে শরীরের যে কোনো অঙ্গের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।  এছাড়াও থ্যালাসেমিয়া রোগীর  হাড়ের বিকৃতি, ধীর শারীরিক বিকাশ, প্লীহা বৃদ্ধি, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে। তাই আসুন আমরা থ্যালাসিমিয়া রোগ সম্পর্কে সচেতন হই এবং রোগীর সঠিক পরিচর্যা করি।

থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা‘আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তা অবশ্যই আপনার মূল্যবান কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আপনাদের সু-সাস্থ্য কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে নতুন কোন বিষয়ে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ্ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *