Skip to content
Home » কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা

Carbohydrate Food List

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা দেখুন বিস্তারিতরূপে – কেন আপনার কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত সেই বিষয়ে সঠিক আর তথ্যবহুল আলোচনা থাকছে আমাদের আজকের বিষয়ে। সুতরাং আপনি যদি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে থাকেন কিংবা জানার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে এই পোস্টটি কিন্তু আপনার জন্যই। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা কি?

খাদ্যের মূখ্য উপাদান, কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন নামক তিন ধরণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দ্বারা তৈরী অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জৈব যৌগের নাম হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট তথা শর্করা। আমাদের নিত্যদিনের প্রায় সব ধরণের খাবারেই কমবেশি কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। আর এশিয়ানদের জন্য তো কার্বোহাইড্রেট খুবই মুখরোচক আর জনপ্রিয় খাবার। সুতরাং বলা যেতে পারে, শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট হল এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ যার প্রতিটি অণুতে কার্বনের (C) সাথে হাইড্রোজেন (H) এবং অক্সিজেন (O) যুক্ত থাকে।

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বলতে কি বোঝায়?

What Does Carbohydrate Food Mean

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের পূর্বে চলুন কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বলতে আসলে কি বোঝায় তাই জানা যাক। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার হল এমন খাবার যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির প্রধান উৎস। কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দিয়ে তৈরি কার্বোহাইড্রেট  মূলত দুটি প্রধান উপাদানে বিভক্ত, সরল তথা সিম্পল কার্বোহাইড্রেট এবং জটিল তথা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। 

সরল কার্বোহাইড্রেট হল এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট যা এক বা দুটি মনোস্যাকারাইড দিয়ে তৈরি। এগুলো শরীরের দ্বারা দ্রুত হজম হয় এবং দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। কিছু সরল কার্বোহাইড্রেটের উদাহরণ হল চিনি, মধু, ফল এবং দুগ্ধজাত খাবার। অপরদিকে, জটিল কার্বোহাইড্রেট হল এমন এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট যা তিনটি বা তার বেশি মনোস্যাকারাইড দিয়ে তৈরি। এগুলো শরীরের দ্বারা ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী শক্তি প্রদান করে। কিছু জটিল কার্বোহাইড্রেটের উদাহরণ হল শস্য, ডাল, শাকসবজি এবং ফল। এবার চলুন জেনে নিই কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার সম্পর্কে-

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারগুলো আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সত্যিকার অর্থে এই জাতীয় খাবার নিয়মিত না খেলে আমরা রোগাক্রান্ত হয়ে যাবো নিশ্চিত। 

বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার

Carbohydrates Are The Most Common Foods In Bangladesh

কার্বোহাইড্রেট শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে। এটি শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। কার্বোহাইড্রেটের প্রধান দুটি শ্রেণি হল শর্করা এবং আঁশ। শর্করা হল কার্বোহাইড্রেটের একটি সাধারণ ধরন যা সহজেই শরীর দ্বারা হজম হয়। শর্করার কিছু উদাহরণ হল-

  • ফল
  • শাকসবজি
  • দুগ্ধজাত পণ্য
  • শস্য
  • ময়দা
  • চিনি

অপরদিকে, আঁশ হল কার্বোহাইড্রেটের এমন একটি ধরন যা শরীর দ্বারা হজম হয় না। আঁশের কিছু উদাহরণ হল-

  • ফলের খোসা
  • শাকসবজির খোসা
  • ডাল
  • বাদাম
  • বীজ

শাকসবজি ও ফলমুল জাতীয় কার্বোহাইড্রেট

  • আলু
  • মিষ্টি আলু
  • মটর
  • ভুট্টা
  • ব্ল্যাকবেরি
  • ফুলকপি
  • ব্রকলি
  • বাঁধাকপি
  • কলা
  • আপেল
  • জাম্বুরা
  • খেঁজুর
  • চেরি
  • আঙ্গুর
  • আম
  • কমলা
  • তরমুজ
  • পেঁপে
  • আনারস

শস্য জাতীয় কার্বোহাইড্রেট

Cereal Carbohydrates
  • গম
  • টর্টিলা কর্ন
  • ভাত 
  • রুটি ও
  • গুড়

বাদাম ও ডাল জাতীয় কার্বোহাইড্রেট

  • কাজুবাদাম
  • পেস্তাবাদাম
  • চিনাবাদাম
  • কাঠবাদাম
  • মাশকলাই
  • মটরশুটি
  • মসুর

তরল ও ফাস্টফুড এবং সেই সাথে মাখন জাতীয় কার্বোহাইড্রেট

Carbohydrates Like Liquids And Fast Food As Well As Butter
  • দই
  • গরুর দুধ
  • সয়া দুধ
  • আলুর চিপস
  • মধু
  • সস
  • পপকর্ন

কলাতে ফাইবার, পটাসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফোলেট এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ থাকে। কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ প্রতিটি খাবারে আলাদা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মোটামুটি মাঝারি আকারের একটি কলাতে প্রায় ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে। এটি ১০৫ ক্যালোরি সরবরাহ করে থাকে, যেখানে একই মাপের ব্রোকলিতে প্রায় ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে।

কার্বোহাইড্রেটের স্বাস্থ্যকর পরিমাণ হল প্রতিদিনের ক্যালোরির প্রায় ৪৫-৬৫%। এটি সাধারণত প্রতিদিনের প্রায় ২২৫-৩২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেটের সমান।  কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারগুলো শক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহন করা ওজন বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে। রুটি, চাল, পাস্তা, আলু, বীজ, ডাল, ফল এবং শাকসবজিএই খাবারগুলি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে। তবে, আলোচনা থেকে যেহেতু আমরা বুঝতে পারলাম, কার্বোহাইড্রেটের অতিরিক্ত গ্রহণ ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই, একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের পরিকল্পনায় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ সীমিত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের উপকারিতা হল-

  • শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে
  • মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে
  • হজম ও স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

এবার দেখুন, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের অপকারিতা-

অতিরিক্ত গ্রহণ ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যকর উপায়ে গ্রহণের জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করুন-

  • পুরো শস্যজাতীয় খাবারগুলিকে প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেটের সাথে প্রতিস্থাপন করুন
  • ফল এবং শাকসবজিতে প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করুন
  • অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন
  • কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ সীমিত রাখুন, বিশেষ করে যদি আপনি ওজন কমাতে চান বা ডায়াবেটিস বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হন।

কেন কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়া উচিত?

প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট শরীরে গ্লুকোজ রূপে পরিণত হয়, যা আমাদের মস্তিষ্ক, পেশী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য প্রয়োজনীয়। সুতরাং, কার্বোহাইড্রেট পর্যাপ্ত পরিমাণে না খেলে শরীরে গ্লুকোজ উৎপন্ন হবে না। এর ফলে শরীরে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, চাল, গম, আলু, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি। এগুলি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। ফলে এগুলোর সঠিক ব্যবহার আমাদের সাস্থ্য উন্নত করার পাশাপাশি মনকে রাখে সতেজ।

একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজন প্রায় ৪৫-৬৫%। তবে, এটি ব্যক্তির বয়স, শারীরিক সক্রিয়তা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর নির্ভর করে এই মান পরিবর্তিত হতে পারে। সুতরাং, এতক্ষনে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

প্রিয় পাঠক, আমাদের আলোচনা করা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা সম্পর্কিত এই পোস্ট সম্পর্কে আরো বাড়তি জ্ঞানের জন্য বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর দেখুন।

ওজন কমাতে দৈনিক কী পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা উচিত?

আমাদের মধ্যে অনেকরই ওজন অনেক বেশি। তো, যাদের ওজন একদম বেশি , দ্রুত ওজন কমাতে চান এবং শরীরে মেটাবলিক সমস্যা আছে তারা দৈনিক ২০-৫০ গ্রাম কার্ব বা শর্করা গ্রহণ করতে পারেন। এতে করে আপনাদের কমার সম্ভাবনা রয়েছে। 

হাই কার্বোহাইড্রেট ফুডস বলতে কি বোঝায়?

হাই কার্বোহাইড্রেট ফুডস হল এমন খাবার যাতে কার্বোহাইড্রেট অনেক বেশি থাকে। আমরা অনেকেই মনে করি কার্বোহাইড্রেট বেশি হলেই আমাদের সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রে কথাটা কিন্তু সঠিক নয়। কেননা, কিছু ফলে অনেক বেশি কার্বোহাইড্রেট থাকলেও সেগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। যেমন, কলাতে প্রায় ৩১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট তা স্বত্ত্বেও কলা সুপারফুড। প্রায় সকল ধরণের পুষ্টিগুণের দেখা মেল কলার মাঝে। সুতরাং পর্যাপ্ত পরিমাণ কলা খেতে পারেন।

উপসংহার

আমাদের মনে রাখতে হবে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাদ্যের মৌলিক অংশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই এই জাতীয় খাবার নিয়মিত খেতে হবে সুষম মাত্রায়। অতিরিক্ত খেলে যেহেতু সমস্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই বেশি মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা দরকার। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।

কেমন লাগলো ‘কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা’ নিয়ে লেখা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তা অবশ্যই আপনার মূল্যবান কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আপনাদের সু-সাস্থ্য কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে নতুন কোন বিষয়ে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন। আল্লাহ্ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *