মিরসরাই দর্শনীয় স্থান বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র যেখানে আপনি প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্যের ছোঁয়া পাবেন নিশ্চিত। ব্যস্তময় জীবন থেকে নিজেকে একটু জিরিয়ে নিতে কিংবা ছুটি কাটানোর জন্য মিরসরাই হতে পারে আপনার জন্য অন্যতম সেরা গন্তব্য। মিরসরাই এমন একটা জায়গা, যেখানে ভ্রমণে গেলেই মনে হবে দক্ষিণ আমেরিকার কোন এক অপূর্ব সুন্দর স্থানে চলে এসেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক মিরসরাই এর কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।
মিরসরাই দর্শনীয় স্থান
মিরসরাই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি উপজেলা। এটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। মিরসরাই দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে খৈয়াছড়া ঝর্ণা, বাওয়াছড়া লেক, হরিণমারা হাঁটুভাঙ্গা ট্রেইল, সোনাইছড়ি ট্রেইল, ছাগলকান্দা ঝর্ণা, কমলদহ ঝর্ণা, চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির, মহামায়া লেক অন্যতম।
বাওয়াছড়া লেক

বাওয়াছড়া লেক মিরসরাইয়ের একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এটি একটি সুন্দর লেক, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। এই লেকে নৌকা ভ্রমণের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। বাওয়াছড়া লেক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। লেকটি বারমাসি ছড়ার মুখে অবস্থিত বলে এর নাম বাওয়াছড়া লেক।
লেকটি প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। লেকের চারপাশে রয়েছে পাহাড়ি ঢাল। লেকের মাঝখানে রয়েছে একটি ছোট দ্বীপ। লেকের চারপাশের পাহাড়ি ঢালে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা এবং বন্যপ্রাণী। বাওয়াছড়া লেক একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসে। এছাড়াও, লেকের চারপাশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর ট্রেইল।
ঝরঝরি ঝর্ণা

ঝরঝরি ঝর্ণা মিরসরাইয়ের একটি আরেকটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান যেখানে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। ঝরঝরি ঝর্ণা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত। ঝর্ণাটি চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত যার উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। অপরূপ এই ঝর্ণা থেকে নেমে আসা জলধারা পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবাহিত হয় এবং তারপর একটি ছোট পুকুরে এসে সুন্দরভাবে মিলিত হয়ে যায়। ঝরঝরি ঝর্ণা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
ঝর্ণাটির চারপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ি ঢাল, গাছপালা এবং বন্যপ্রাণী। ঝর্ণার জল খুবই ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি কখনো সেখানে যান তবে ঝর্ণার নিচে গোসল করার মধ্যে আলাদা এক প্রশান্তি পেতে পারেন। এছাড়াও, ঝর্ণা থেকে ঝর্ণার উপরে উঠে চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখারও সুযোগ রয়েছে।
সোনাইছড়ি ট্রেইল

সোনাইছড়ি ট্রেইল মিরসরাইয়ের একটি সুন্দর ট্রেইল। এটি একটি জনপ্রিয় হাইকিং ট্রেইলও বটে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় হাইকিং ট্রেইল হচ্ছে সোনাইছড়ি ট্রেইল। এটি একটি সুন্দর ট্রেইল, যেখানে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। ট্রেইলটি চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। ট্রেইলটি প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
ট্রেইলটি পাহাড়ি ঢালের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হয়।ট্রেইলটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। ট্রেইলটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় একটি ছোট নদী। ট্রেইলের চারপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ি ঢাল, গাছপালা এবং বন্যপ্রাণী।সোনাইছড়ি ট্রেইল একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। মজার বিষয় কি জানেন? এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ হাইকিং করতে আসে। ট্রেইলটিতে বাদুইজ্জাখুম নামক একটি সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে।
কমলদহ ঝর্ণা

কমলদহ ঝর্ণা মিরসরাইয়ের একটি সুন্দর ঝর্ণা। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। কমলদহ রূপসী ঝর্ণা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলার ওয়াহিদপুর ইউনিয়নের বড়কমল এলাকায় অবস্থিত। ঝর্ণাটি চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। ঝর্ণাটির উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার।
ঝর্ণা থেকে নেমে আসা জলধারা পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি ছোট পুকুরে মিলিত হয়। কমলদহ রূপসী ঝর্ণা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। ঝর্ণাটির চারপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ি ঢাল, গাছপালা এবং বন্যপ্রাণী। ঝর্ণার জল খুবই ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ। এখানে গোসল করে আপনি মজা উপভোগ করতে পারেন।
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল মিরসরাইয়ের একটি সুন্দর ট্রেইল। এটি একটি জনপ্রিয় হাইকিং ট্রেইল। নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ট্রেইল। এটি একটি আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং পাহাড়ি ট্রেকিংয়ের জন্য বিখ্যাত। ট্রেইলটি মিরসরাই উপজেলার নয়দুয়ারী বাজার থেকে শুরু হয় এবং নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা পর্যন্ত যায়। ট্রেইলটি প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এটি পাহাড়ি ঢাল, ঝর্ণা, এবং জঙ্গলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ট্রেইলে থাকা তিনটি প্রধান ঝর্ণা হচ্ছে কুপিকাটাকুম ঝর্ণা, মিঠাছড়ি ঝর্ণা, বান্দরকুম ঝর্ণা।
কুপিকাটাকুম ঝর্ণা ট্রেইলের শুরুতে অবস্থিত। এটি একটি ছোট ঝর্ণা যা পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবাহিত হয়। মিঠাছড়ি ঝর্ণা ট্রেইলের মাঝামাঝি অবস্থিত যা বড় ঝর্ণা এবং পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি ছোট পুকুরে এসে মিলিত হয়। অপরদিকে, বান্দরকুম ঝর্ণা ট্রেইলের শেষে অবস্থিত একটি ছোট ঝর্ণা যা পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নাপিত্তাছড়া ট্রেইলটি পাহাড়ি ট্রেকিংয়ের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থান। ট্রেইলটি কিছুটা কঠিন, তবে এটি আপনার জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং এবং ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা

খৈয়াছড়া ঝর্ণা মিরসরাইয়ের একটি সুন্দর ঝর্ণা যা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। এখানে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখার সুযোগ। ঝর্ণাটি চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। ঝর্ণাটির উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। ঝর্ণা থেকে নেমে আসা জলধারা পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি ছোট পুকুরে জমা হয়।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। ঝর্ণাটির চারপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ি ঢাল, গাছপালা এবং বন্যপ্রাণী। ঝর্ণার জল খুবই ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ। খৈয়াছড়া ঝর্ণা একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনাথী ভিড় জমায়। ঝর্ণার নিচে গোসল করারও সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও, ঝর্ণা থেকে ঝর্ণার উপরে উঠে চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখার অপূর্ব সুযোগ রয়েছে।
মঘাদিয়া জমিদার বাড়ি

মঘাদিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। এটি ১৮ শতকে নির্মিত হয়েছিল। বাড়িটি একটি দ্বিতল ভবন এবং ভবনের সামনে রয়েছে একটি প্রশস্ত বারান্দা। সেই সাথে, বারান্দার সামনে রয়েছে একটি বিশাল মাঠ আর বাড়ির চারপাশে রয়েছে একটি পরিখা। বাড়িটি তার স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত।
ভবনের বাইরের দেয়ালে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নকশা। ভবনের ভিতরে রয়েছে একটি বিশাল হল। আপনি কি কাঠ নির্মিত ছাদ দেখেছেন কখনো? এই হলটির ছাদটি সম্পূর্ণ কাঠের। বাড়িটিতে ব্রিটিশ আমলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছিল।
মহামায়া লেক

মহামায়া লেক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম লেক। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ। লেকটি ১৯৬৬ সালে নির্মিত হয় যা ৪০০ একর জমিতে অবস্থিত। লেকের আয়তন প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার। এটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। লেকের চারপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ি ঢাল, গাছপালা এবং বন্যপ্রাণী। লেকের মধ্যে রয়েছে অনেকগুলি দ্বীপ। মহামায়া লেক একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। তাই, এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসে। লেকে নৌকা ভ্রমণ, কায়াকিং, সাঁতার এবং ক্যাম্পিং করার সুযোগ রয়েছে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
মিরসরাই দর্শনীয় স্থান এর অপরুপ সৌন্দর্য আশা করি আপনাকে অনেক বেশি পুলকিত করেছে। মিরসরাই দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
মিরসরাই কিসের জন্য বিখ্যাত?
মিরসরাই বিখ্যাত মূলত পাহাড়ী ঝর্ণা আর ইকোনোমিক জোনের জন্য। এছাড়াও বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদের জন্যও মিরসরাই বিখ্যাত।
মিরসরাই এর পূর্ব নাম কি ছিল?
মিরসরাই এর পূর্ব নাম ছিল মেহমান সরাই। সেখানে একজন মীর সাহেব মুসলিম সৈনিক মারা যায় আর তার নামে ওই থানার নামকরণ করা হয় মীরের সরাই বা মিরসরাই।
উপসংহার
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য ভান্ডার হিসেবে মিরসরাই পরিচিত। পোস্টটি পড়ার পর নিশ্চয় মিরসরাই দর্শনীয় স্থান গুলো ভ্রমণের ইচ্ছা মনের কোণে উঁকি দিচ্ছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ভাটিয়ারী দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন।
প্রিয় পাঠক, ‘মিরসরাই দর্শনীয় স্থান‘ বিষয়ে আপনার যদি নতুন কিছু জানা থাকে তবে অব্যশই আমাদেরকে কমেন্ট করে আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে দিন। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।