ভাটিয়ারী দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে যারা জানতে চান মূলত তাদের জন্যই আমাদের আজকের আয়োজন। এই পোস্টে ভাটিয়ারী এর জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিশেষ তথ্য তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ্। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি কখনো এই অঞ্চলে যেতে চান তবে নিচের তথ্যগুলো আপনার বিশেষ উপকারে আসতে পারে। চলুন তো অযথা কথা না বলে বরং মূল আলোচনায়…
ভাটিয়ারী দর্শনীয় স্থান
ভাটিয়ারী বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভাটিয়ারীতে রয়েছে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যার মধ্যে রয়েছে সবুজ পাহাড়, স্বচ্ছ জলের লেক এবং সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত গলফ কোর্স। চলুন এবার এই অঞ্চলের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান তথা ভাটিয়ারী দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক-
সানসেট পয়েন্ট

ভাটিয়ারী সানসেট পয়েন্ট চট্টগ্রাম বিভাগের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র যা ভাটিয়ারী লেকের পাড়ে অবস্থিত। এখানে দাঁড়িয়ে পড়ন্ত সূর্যের রঙিন আভা দেখতে পাওয়া যায়। ভাটিয়ারী সানসেট পয়েন্টে চট্টগ্রাম শহর থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা বা বাস এর মাধ্যমে যেতে পারেন। ভাটিয়ারী লেক থেকে সানসেট পয়েন্টের দূরত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার। লেকের পূর্বপাড়ে একটি রাস্তা আছে যেটা সানসেট পয়েন্ট পর্যন্ত বিস্তৃত।
সবচেয়ে মজার বিষয়, সানসেট পয়েন্টে প্রবেশের জন্য কোনো ফি লাগে না। এখানে একটি ছোট্ট ক্যাফে আছে যেখানে চা-কফি পাওয়া যায়। তবে, ভাটিয়ারী সানসেট পয়েন্ট ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময় হল শীতকাল। কেননা, শীতকালে এখানে আবহাওয়া বেশ শীতল আর মনোরম থাকে। এছাড়াও আপনি কিন্তু বর্ষাকালেও এখানে ভ্রমণ করতে পারেন। তবে, বর্ষাকালে এখানে ভ্রমণের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
ভাটিয়ারী লেক

আপনি নিশ্চয় প্রাকৃতিক লেকের কথা শুনেছেন? ভাটিয়ারী লেক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক লেক। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভাটিয়ারী লেক তার স্বচ্ছ জল, সবুজ পাহাড়, এবং মনোরম পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। এই লেকের আয়তন প্রায় ৪০০ হেক্টর। লেকটি পাহাড়ের কোলে অবস্থিত। লেকের চারপাশে সবুজ পাহাড় রয়েছে। এই লেকটির পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার। আপনি চাইলে এখান থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
আরো একটি আকর্ষণীয় বিষয় কি জানেন? ভাটিয়ারী লেকে নৌকা ভ্রমণের জন্য সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি যদি কখনো এই লেক দেখতে যান তবে, লেকের চারপাশে নৌকা ভ্রমণ করে আপনি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন অনায়াসেই। এছাড়াও, লেকে মাছ ধরারও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। তবে, এই লেক ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময় হল শীতকাল। ভাটিয়ারী লেকে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শহর থেকে সিএনজি অটোরিক্সা বা বাস নিতে পারেন। এই দূরত্বে সিএনজি/অটোরিক্সা ভাড়া জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা নিতে পারে। অপরদিকে, বাস ভাড়া জনপ্রতি ১৫-২০ টাকা।
ভাটিয়ারী গলফ কোর্স

ভাটিয়ারী গলফ কোর্স বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক মানের গলফ কোর্স। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভাটিয়ারী গলফ কোর্স তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অত্যাধুনিক এবং আকর্ষণীয় কোর্সের জন্য বিখ্যাত। ভাটিয়ারী গলফ কোর্সের আয়তন প্রায় ৭৫০ একর। কোর্সটি পাহাড়ের কোলে অবস্থিত। কোর্সের চারপাশে সবুজ পাহাড় রয়েছে। কোর্সের ল্যান্ডস্কেপটি অত্যন্ত মনোরম। ১৯৯৪ সালে এই ভাটিয়ারী গলফ কোর্স প্রতিষ্ঠিত হয়। কোর্সটি ১৮টি হোল নিয়ে গঠিত। প্রতিটি হোলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৫০০ গজ। এই কোর্স বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের অধীনে পরিচালিত হয়। কোর্সটি বাংলাদেশী এবং বিদেশী উভয় গলফারের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।
ভাটিয়ারী গলফ কোর্সে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। তবে, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি বাংলাদেশী এবং বিদেশী উভয় গলফারের জন্য উন্মুক্ত। ভাটিয়ারী গলফ কোর্সে একটি রেস্তোরাঁ, একটি বার, এবং একটি সুইমিং পুলও দেখতে পাবেন। তবে, ভাটিয়ারী গলফ কোর্সে প্রবেশের জন্য ফি প্রয়োজন। আর, ফি নির্ভর করে গলফারের সদস্যপদ এবং খেলার সময়ের উপর।
ক্যাফে ২৪ পার্ক

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কখনো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত কোন ক্যাফের কথা শুনেছেন? ক্যাফে ২৪ পার্ক চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে অবস্থিত একটি সেনাবাহিনী পরিচালিত পার্ক। এটি ভাটিয়ারী থেকে হাটহাজারী সড়কের ৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইড, একটি ওয়াটার পার্ক, এবং একটি রেস্তোরাঁ। ক্যাফে ২৪ পার্কের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে উচ্চ গতি সম্পন্ন রোলার কোস্টার যা দর্শনার্থীদের রোমাঞ্চিত করে তোলে।
ক্যাফে ২৪ পার্কের আরেকটি জনপ্রিয় রাইড হল ওয়াটার স্লাইড। এই রাইডিং পানিতে করতে হয় যা দর্শনার্থীদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। ক্যাফে ২৪ পার্কে একটি ওয়াটার পার্ক রয়েছে। ওয়াটার পার্কে বিভিন্ন ধরনের স্লাইড এবং জলের খেলা রয়েছে যা দর্শনার্থীদের জন্য এক আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। ক্যাফে ২৪ পার্কে একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। রেস্তোরাঁয় বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং পানীয় পাওয়া যায়।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ

ভাটিয়ারী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ভাটিয়ারীতে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি ১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে মোঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর নির্দেশে নির্মিত হয়। মসজিদটি একটি বর্গাকার আকৃতির। এর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ প্রায় ১০০ ফুট। মসজিদের ছাদটি গম্বুজ আকৃতির। মসজিদের দেয়ালগুলোতে মার্বেল পাথর খোদাই করা আছে। মসজিদের প্রবেশপথটি একটি সুদৃশ্য তোরণ দিয়ে সজ্জিত রয়েছে। তোরণের উপরে একটি দরজা রয়েছে। দরজাটি কাঠের তৈরি এবং তাতে নকশা করা আছে। দরজাটির দুই পাশে দুটি মিনার রয়েছে।
মিনারগুলো উঁচু এবং এগুলো সুন্দরভাবে খোদাই করা হয়েছে। মসজিদের ভেতরে একটি বড় হল রয়েছে। হলটিতে প্রায় ২০০০ জন মানুষ একসাথে নামাজ পড়তে পারেন। হলটির মেঝে মার্বেল পাথরের তৈরি। হলটির চারপাশে দেয়াল রয়েছে। দেয়ালে কোরআনের আয়াত খোদাই করা আছে। আবার, মসজিদের পাশে একটি মাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসাটি ১৬৬৮ খ্রিষ্টাব্দে শায়েস্তা খাঁ প্রতিষ্ঠিত করেন। মাদ্রাসাটিতে ইসলামী শিক্ষা দেওয়া হয়। ভাটিয়ারী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চট্টগ্রামের একটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র যেখানে, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নামাজ পড়তে এবং মসজিদটি দেখতে আসেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
ভাটিয়ারী দর্শনীয় স্থান মানব মনে এক অজানা ভালো লাগার নাম। এখানে থাকা দর্শনীয় স্থান পরিদর্শণ করে হাজারো দর্শনার্থীর যে মতামত তা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় যে, এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি স্থান।
ভাটিয়ারী দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
ভাটিয়ারী শব্দের অর্থ কি?
ভাটিয়ারী শব্দের অর্থ হল মদের কারখানা। ভাটিয়ারী শব্দটি এসেছে “ভাটি” শব্দ থেকে। ভাটি মানে হল নিম্নভূমি। নদীর নিম্ন প্রবাহকে ভাটি বলা হয়। ভাটিয়ারী শব্দটি মূলত নদীর নিম্ন প্রবাহে অবস্থিত মদের কারখানাকে বোঝায়। বাংলা সাহিত্যে ভাটিয়ারী শব্দটি প্রায়ই মদের কারখানার পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। এই শব্দের কিছু সমার্থক শব্দ হল মদঘর, মদখানা, মদভান্ডার, মদখালা, মদনগর। বুঝতে পারছেন নিশ্চয়?
ভাটিয়ারী কোথায় অবস্থিত?
ভাটিয়ারী বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন। চট্টগ্রাম শহর থেকে ভাটিয়ারীর দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। সীতাকুণ্ড উপজেলা সদর থেকে ভাটিয়ারীর দূরত্ব ২২ কিলোমিটার।
উপসংহার
পুরো পৃথিবীর মাঝে ছোট্ট একটি দেশ আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। আর এই ছোট দেশে রয়েছে হাজারো দর্শনীয় স্থান। এ দেশের দর্শনীয় স্থানগুলো আমাদের ভালো লাগার উৎস। আমরা যারা ভ্রমণপ্রিয় তাদের জন্য এই স্থানগুলো যেন স্বর্গরাজ্যের মত। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে সোনারগাঁও এর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন।
প্রিয় পাঠক, আমরা ইতোমধ্যে ‘ভাটিয়ারী দর্শনীয় স্থান‘ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছি। আশা করছি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এ বিষয়ে আপনার নতুন কিছু জানা থাকলে কমেন্ট করে জানিয়ে দিতে ভুলবেন না কেমন! আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ।