কেরানীগঞ্জ দর্শনীয় স্থান প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শণ। এখানে যাওয়ার পর চোখ বুজলে সেখানের স্মৃতিগুলো আপনার মনের কোণায় ভাসবে নিশ্চিত। তাহলে কি আপনি সেখানে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করছেন? তবে আপনার জন্য নিচের তথ্যগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সুতরাং চলুন কেরানীগঞ্জের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সর্ম্পকে অগাধ জ্ঞান অর্জন করা যাক।
কেরানীগঞ্জ দর্শনীয় স্থান
কেরানীগঞ্জ বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের একটি উপজেলা। ঢাকার অদূরে অবস্থিত এই উপজেলাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। এ পর্যায়ে আমরা কেরানীগঞ্জ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোকপাত করতে চলেছি। সুতরাং মনোযোগটা একটু এদিকে দিন তো!
সাউথ টাউন মসজিদ

কেরানীগঞ্জের সাউথ টাউন আবাসিক প্রকল্পে অবস্থিত এই মসজিদটি তার অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত। মসজিদটিতে একটি সুন্দর ঝর্ণা ও একটি বিশাল মাঠ রয়েছে। সাউথ টাউন মসজিদ বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাউথ টাউন আবাসিক প্রকল্পে অবস্থিত একটি মসজিদ। মসজিদটি তার অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত। মসজিদটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি একটি বর্গাকার আকৃতির মসজিদ।
মসজিদের চারপাশে চারটি মিনার রয়েছে। মসজিদের ছাদটি সবুজ রঙের টাইলস দিয়ে তৈরি। মসজিদের ভেতরে একটি বড় হল রয়েছে। হলটিতে প্রায় ৬০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের বাইরে একটি সুন্দর ঝর্ণা রয়েছে। ঝর্ণার চারপাশে সবুজ গাছপালা রয়েছে। মসজিদের পাশে একটি বিশাল মাঠ রয়েছে। মাঠটিতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাউথ টাউন মসজিদটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি দেশের স্থাপত্যশিল্পের একটি অনন্য নিদর্শন।
ধলেশ্বরী নদী

ঢাকার অন্যতম প্রধান নদী ধলেশ্বরী কেরানীগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর দুই তীরে রয়েছে বিস্তীর্ণ সবুজ বনভূমি। নদীতে নৌকা ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। ধলেশ্বরী নদী বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। নদীটি ভারতের হিমালয় পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। ধলেশ্বরী নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৬০ কিলোমিটার। এর প্রস্থ প্রায় ১০০ মিটার।
নদীটি বাংলাদেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ধলেশ্বরী নদী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীটি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদীটি দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য পরিবহন করা হয়। এছাড়াও, নদীটি বাংলাদেশের জনজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বসুন্ধরা পার্ক

কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থিত এই পার্কটি তার বিশাল আয়তন ও নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। পার্কে রয়েছে একটি সুন্দর লেক, একটি বিশাল খেলার মাঠ, একটি চিড়িয়াখানা, একটি মিউজিয়াম, একটি থিম পার্ক এবং আরও অনেক কিছু। বসুন্ধরা পার্ক বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের কেরানীগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থিত একটি বিশাল আকারের পার্ক। পার্কটি তার নান্দনিক সৌন্দর্য ও বিনোদনের সুযোগ-সুবিধার জন্য বিখ্যাত। পার্কটি ১৯৯৮ সালে বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল। পার্কটি মোট ১৩৫০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।
পার্কের লেকটি প্রায় ৫০০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। লেকটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। লেকে নৌকা ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। পার্কের খেলার মাঠটি প্রায় ১০০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। মাঠটিতে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সুযোগ রয়েছে। পার্কের চিড়িয়াখানায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী, যেমন: সিংহ, বাঘ, জিরাফ, হাতি, হরিণ, বানর, ইত্যাদি। চিড়িয়াখানায় একটি বড় মাছরাঙা ঝিলও রয়েছে। পার্কের মিউজিয়ামে রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী। পার্কের থিম এ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইড ও আউটডোর গেম। বসুন্ধরা পার্কটি ঢাকার একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পার্কে বেড়াতে আসে।
দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ

কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর ইউনিয়নে অবস্থিত এই মসজিদটি তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত। আর এটি একটি অন্যতম কেরানীগঞ্জ দর্শনীয় স্থান । মসজিদটি ১৮৬৮ সালে নির্মিত হয়েছিল। দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের কেরানীগঞ্জ উপজেলার দোলেশ্বর ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। মসজিদটি একটি বর্গাকার আকৃতির মসজিদ। মসজিদের চারপাশে চারটি মিনার রয়েছে। মসজিদের ছাদটি চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি।
মসজিদের ভেতরে একটি বড় হল রয়েছে। হলটিতে প্রায় ৫০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটি তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত। মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোক্তা ছিলেন দারোগা আমিনউদ্দিন আহাম্মদ। তিনি ছিলেন একজন ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি দেশের স্থাপত্যশিল্পের একটি অনন্য নিদর্শন।
মেরিন শিশু পার্ক

কেরানীগঞ্জের মেরিন শিশু পার্কটি একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। এটি শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইড, খেলাধুলা এবং বিনোদনমূলক ব্যবস্থা। মেরিন শিশু পার্কের প্রধান আকর্ষণ হল এর ওয়াটার পার্ক। ওয়াটার পার্কে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্লাইড, জেট স্প্রে, এবং বাম্প জ্যাক। এছাড়াও পার্কে রয়েছে একটি শিশুদের খেলার মাঠ, একটি বন্যপ্রাণী উদ্যান, এবং একটি মিনি চিড়িয়াখানা। মেরিন শিশু পার্ক প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে। পার্কে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা।
ধলেশ্বরী রির্সোট

ধলেশ্বরী রির্সোট বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের কেরানীগঞ্জ উপজেলার ধলেশ্বরী এলাকায় অবস্থিত একটি বিলাসবহুল রিসোর্ট। রিসোর্টটি তার মনোরম পরিবেশ ও নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। রিসোর্টটি ২০১৫ সালে নির্মিত হয়েছিল। রিসোর্টটি মোট ১০০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। রিসোর্টের মধ্যে রয়েছে একটি সুন্দর লেক, একটি বিশাল খেলার মাঠ, একটি সুইমিং পুল, একটি জিম, একটি স্পা, একটি রেস্তোরাঁ এবং আরও অনেক কিছু।
রিসোর্টের লেকটি প্রায় ৫০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। লেকটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। লেকে নৌকা ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। রিসোর্টের খেলার মাঠটি প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। মাঠটিতে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার সুযোগ রয়েছে। রিসোর্টের সুইমিং পুলটি প্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ ও ৫০ ফুট প্রশস্ত। রিসোর্টের জিমটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের জিম সরঞ্জাম। রিসোর্টের স্পাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্পা ট্রিটমেন্ট। রিসোর্টের রেস্তোরাঁটিতে বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয়। ধলেশ্বরী রির্সোটটি ঢাকার একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ রিসোর্টে বেড়াতে আসে।
ম্যাজিক আইল্যান্ড

ম্যাজিক আইল্যান্ড বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোনাখোলা এলাকায় অবস্থিত একটি বিনোদন কেন্দ্র। এটি ২০১৯ সালে আনোয়ার সিটি গ্রুপের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল। ম্যাজিক আইল্যান্ডে রয়েছে একটি থিম পার্ক, একটি ওয়াটার পার্ক, একটি ডাইনোসর পার্ক, একটি চিড়িয়াখানা, একটি রেস্তোরাঁ এবং আরও অনেক কিছু।
থিম পার্কে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইড ও আউটডোর গেম। ওয়াটার পার্কে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্লাইড ও জলপ্রপাত। ডাইনোসর পার্কে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক সেন্সরবিশিষ্ট ডাইনোসর। চিড়িয়াখানায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী। ম্যাজিক আইল্যান্ডটি ঢাকার একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ম্যাজিক আইল্যান্ডে বেড়াতে আসে।
সারিঘাট

সারিঘাট বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের কেরানীগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এটি ধলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত। সারিঘাট তার সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নদীর সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশাল খোলা মাঠ, কাশফুলের সমারোহ, নৌকা ভ্রমণের সুযোগ এবং আরও অনেক কিছু। সারিঘাট ডে ট্যুরের জন্য একটি আদর্শ স্থান। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বেড়াতে আসে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি উপজেলা হচ্ছে কেরানীগঞ্জ। বহু দর্শনীয় স্থানে ভরপুর এই উপজেলায় প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য যায়।
কেরানীগঞ্জ দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
কেরানীগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত?
ঢাকা শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত কেরানীগঞ্জ তার নদী, কাশবন, ঐতিহাসিক মসজিদ, এবং ইটভাটা শিল্পের জন্য বিখ্যাত।
কেরানীগঞ্জ কিভাবে যাব?
ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ যাওয়ার জন্য অনেক বাস রয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে কেরানীগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ে। বাসের ভাড়া জনপ্রতি ১০-২০ টাকা। আবার, ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ যাওয়ার জন্য ট্রেনও রয়েছে। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কেরানীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ট্রেন ছাড়ে। ট্রেনের ভাড়া জনপ্রতি ২০-৩০ টাকা। এছাড়াও, ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ যাওয়ার জন্য নিজের গাড়ি বা মোটরসাইকেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কেরানীগঞ্জের উদ্দেশ্যে সড়কপথ দিয়ে যাওয়া যায়।
উপসংহার
তো প্রিয় পাঠক, কেরানীগঞ্জ এর জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো আপনার মনে কেমন নাড়া দিয়েছে তা বন্ধুদের জানিয়ে দিন। সেই সাথে, পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কেমন! এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে সাভারের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন।
‘কেরানীগঞ্জ দর্শনীয় স্থান ‘ গুলোতে গিয়ে থাকলে আপনার অভিমত আমাদের সাথে শেয়ার করুন। আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ।