সাভারের দর্শনীয় স্থান গুলো বাংলাদেশের মানুষের নিকট সত্যিই অসাধারণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। আবার এই দর্শনীয় স্থানের কথা মনে আসতেই পার্ক আর স্মৃতিসৌধের বিষয় সর্বপ্রথম মনে নাড়া দেয়। অনেকের কাছে সাভার পার্কের শহরও বলে মনে হয়। এছাড়াও সাভারের মধ্যে যেখানে সবচেয়ে বেশি দর্শক ভিড় জমায় তার নাম হচ্ছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। চলুন সাভারের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানের একটি রূপরেখা মনের মধ্যে অঙ্কন করে নেওয়া যাক।
সাভারের দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্যতম শহর হচ্ছে সাভার। যেখানে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে সাভার মাত্র ২৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এই জেলাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য বিখ্যাত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সাভারের সবচেয়ে পরিচিত আর দর্শনীয় স্থান হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি অত্যন্ত সুন্দর এবং মনোরম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে: জাবি) বাংলাদেশের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পূর্ণরুপে এর কর্যক্রম শুরু করে ১৯৭২ সালে। বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর নাম হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ৬৯৭.৫৬ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। ক্যাম্পাসে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা যেমন: শিক্ষা ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রীনিবাস, ক্যাফেটেরিয়া, খেলার মাঠ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। উল্লেখ্য যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত উচ্চমানের। এখানে বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রতিভাবান ছাত্র-ছাত্রীরা। শিক্ষা ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাভারের অন্যতম জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এই স্মৃতিসৌধটি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছিল। সাভারের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি। এই স্মৃতিসৌধটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সাভার উপজেলায় অবস্থিত। আপনি কি জানেন জাতীয় এই স্মৃতিসৌধের নকশা কে তৈরি করেছিলেন? এর নকশা ও স্থপতি হচ্ছেন, সৈয়দ আব্দুল খালেক।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ একটি ত্রিভুজাকৃতির স্মৃতিসৌধ যার উচ্চতা ১৫০ ফুট। স্মৃতিসৌধের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি উঁচু বেদির উপর একটি লাল বৃত্ত। এই বৃত্তের মধ্যে রয়েছে একটি চিরন্তন শিখা। আর এই লাল বৃত্তটি মনে করে দেয় কোটি মানুষদের মাঝে ৩০ লক্ষ শহিদের কথা। সুতরাং, জাতীয় স্মৃতিসৌধটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখে।
নন্দন পার্ক

সাভারের একটি জনপ্রিয় বিনোদনমূলক স্থান হল নন্দন পার্ক। এই পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক ব্যবস্থা, যেমন: ওয়াটার স্লাইড, জাহাজ, রেলগাড়ি এবং অন্যান্য খেলার ব্যবস্থা। নন্দন পার্ক সাভার বাংলাদেশের ঢাকা জেলার সাভার উপজেলায় অবস্থিত একটি বিনোদন পার্ক। এটি ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইড, ওয়াটার স্লাইড, অ্যাকোয়ারিয়াম, জাদুঘর এবং অন্যান্য আকর্ষণ।
পার্কে থাকা ওয়াটার স্লাইড ঢাকার সবচেয়ে বড় ওয়াটার স্লাইডগুলির মধ্যে একটি। পার্কের অ্যাকোরিয়াম এ বিভিন্ন ধরনের মাছ এবং সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে। সেই সাথে, পার্কে একটি জাদুঘরও আছে, যেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র রয়েছে। পার্কটি পরিবার এবং বন্ধুদের জন্য একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান।
সাভার ওয়াটারপার্ক

সাভার ওয়াটারপার্ক বাংলাদেশের সাভার জেলার একটি বিনোদনমূলক পার্ক। এই পার্কটি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সাভার ওয়াটারপার্কের আয়তন প্রায় ১০ একর। সাভার ওয়াটারপার্কে বিভিন্ন ধরনের জলপ্রপাত, স্লাইড এবং অন্যান্য আকর্ষণ রয়েছে। সাভার ওয়াটারপার্ক সাভারের একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র।
এই পার্কে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়। সাভার ওয়াটারপার্কে ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল গ্রীষ্মকাল। এই সময় আবহাওয়া গরম থাকে এবং পানির যে বিচিত্র ঢেউ তার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সাভার ওয়াটারপার্কের কিছু আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে ওয়েভ পুল, স্যুট ও ফ্যামিলি কার্ভ টিউব স্লাইড। এছাড়াও এখানে ওয়েভ রানার, ডুম স্লাইড, মাল্টি প্লে জোন, ওয়াটার ফল অ্যান্ড মিস্ট ইত্যাদি দেখতে পাবেন।
আশুলিয়া ঐতিহাসিক মসজিদ

সাভারের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হল আশুলিয়া ঐতিহাসিক মসজিদ। আশুলিয়া ঐতিহাসিক মসজিদ বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের সাভার উপজেলার আশুলিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত একটি স্থাপনা। মসজিদটি একটি বর্গাকার পরিকল্পনায় নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ ফুট। মসজিদের ভেতরে চারটি স্তম্ভ রয়েছে। স্তম্ভগুলোর উপরে গম্বুজ স্থাপিত। মসজিদের মেঝে পাথরের তৈরি।
মসজিদের ভেতরে তিনটি খিলান রয়েছে। খিলানগুলোর উপরে রয়েছে সুন্দর কারুকাজ। মসজিদের সামনে রয়েছে একটি লম্বা বারান্দা। বারান্দার ছাদ টিনের তৈরি। এটি বাংলাদেশের মুসলিম স্থাপত্যের একটি অনন্য নিদর্শন। মসজিদটির নির্মাণের সঠিক তারিখ জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয় যে, এটি ১৭ শতকে নির্মিত। মসজিদটি নির্মাণ করেন নবাব আলীবর্দী খাঁর আমলে। মসজিদটি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত একটি স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সাভারে ঘুরতে গেলে আপনি এই দর্শনীয় স্থানগুলি অবশ্যই দেখবেন। এছাড়াও, আপনি সাভারের বিভিন্ন মন্দির, মসজিদ, এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিও দেখতে পারেন।
ফ্যান্টাসি কিংডম

ফ্যান্টাসি কিংডম হল বাংলাদেশের ঢাকার আশুলিয়ায় অবস্থিত একটি বিনোদন পার্ক। এটি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিনোদন পার্ক। পার্কটিতে বিভিন্ন ধরনের রাইড, খেলার মাঠ, রেস্তোরাঁ এবং দোকান রয়েছে। ফ্যান্টাসি কিংডমের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে রোলার কোস্টার পার্কে দুটি রোলার কোস্টার রয়েছে, একটি ছোট এবং একটি বড়। ছোটটি “ম্যাজিক কার্পেট” নামে পরিচিত এবং এটি শিশু এবং পরিবারের জন্য উপযুক্ত। বড়টি “শান্তা মারিয়া” নামে পরিচিত এবং এটি একটি উচ্চ-গতির রোলার কোস্টার যা দর্শনার্থীদের দ্রুত গতিতে ঘুরিয়ে দেয়।
আরও রয়েছে পার্কের পাশে একটি ওয়াটার কিংডম। এতে বিভিন্ন ধরনের স্লাইড, পুল এবং জলপ্রপাত রয়েছে। আর হেরিটেজ কর্নার পার্কের একটি অংশ বাংলাদেশের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। এতে একটি জাদুঘর, একটি থিয়েটার এবং একটি লাইব্রেরি রয়েছে। ফ্যান্টাসি কিংডম প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২৫০ টাকা। ফ্যান্টাসি কিংডম একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান যেখানে প্রতি বছর লাখ লাখ দর্শনার্থী পরিদর্শন করতে যায়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সাভারের দর্শনীয় স্থানগুলো কিন্তু অন্যতম। প্রিয় বন্ধুরা এতক্ষনে নিশ্চয় সাভারের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তর তথ্য পেয়ে গেছেন। সাভারের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
সাভার কিসের জন্য বিখ্যাত?
সাভার এ রয়েছে বড়ছোট অনেক গার্মেন্টস শিল্প এবং সেই সাথে অনেক দর্শনীয় স্থান। মূলত জাতীয় স্মৃতিসৌধ এর কারণেই সাভার বিখ্যাত।
সাভার এর পুরাতন নাম কি?
ঢাকা বিভাগের অন্যতম জেলা সাভার এর পুরাতন নাম হচ্ছে “সাবাহর”। এই নামটি পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে সাভার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
উপসংহার
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের অনন্য আকর্ষণ সাভারের দর্শনীয় স্থান আপনার কেমন লেগেছে তা ২-১ লাইনে কমেন্ট করতে পারেন। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে মহেশখালী দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন।
‘সাভারের দর্শনীয় স্থান‘ সম্পর্কে পড়ে আপনারা যদি এতটুকুও উপকৃত হন যে কিছু জানতে পারছেন তবে আমাদের কষ্ট সার্থক বলে আমরা মনে করবো। আপনার মূল্যবান মতামতটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয় বন্ধুরা অনেক কথা হয়ে গেছে। আজ আর নয়। আপনারা সবাই ভাল থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।