বারোমাসি সবজি তালিকা আমরা অনেকেই জানি না। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। ছয় ঋতুর দেশ হিসাবে পরিচিত আমাদের এই বাংলাদেশ। ঋতু বৈচিত্রের কারনেই এ দেশের মাটিতে চাষাবাদ হয় নানা রকম ফল ও সবজি। আর আমাদের দেশের কৃষির মৌসুম হচ্ছে তিনটি – খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে যদিও কৃষি মৌসুমকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে প্রতি মাসের প্রতিটি দিনই কিছু না কিছু কৃষি চাষ করতে হয়।
বছরের অন্যান্য সময়ে যেপরিমান সবজি পাওয়া যায় সেইসব সবজি থেকে শীতকালের সরবরাহ থাকে বেশি। বারোমাসি সবজিরে চেয়ে মৌসুমী সবজির স্বাদ ও পুষ্টি বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত সবজিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে যা আমাদের ত্বকের বার্ধক্যরোধের পাশাপাশি ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে উপকার করে থাকে। এছাড়াও প্রায় সব ধরনের সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় পরিমান পানির ঘাটতি পূরণ করে থাকে।
বারোমাসি সবজি কাকে বলে?
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সবজির সমারোহ ঘটে থাকে। বছরের প্রতিটি মাসের প্রতিটি দিনই কোন না কোন সবজি চাষ হয়েই থাকে। সারা বছর যে সকল সবজি পাওয়া যায় তাকেই বারোমাসি সবজি বলে। তবে বছরের কোন সময় বেশি আবার কোন সময় পরিমানে কম সবজি পাওয়া যায়। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে সবচেয়ে বেশি প্রকারের সবজির সমারোহ ঘটে থাকে। আমরা সাধারনত এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করি বা এই সময়টাতে উপভোগ করে সবজি খেয়ে থাকি। আমরা যারা অসংখ্য বারোমাসি সবজির মধ্যে থেকে কিছুর নাম উল্লেখ করা হলো বেগুন, লাউ, শসা, মরিচ,ক্যাপসিকাম, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, টমেটো, পেঁপে, ধনে পাতা, ঢেঁড়স, পুঁই শাক, লাল শাক, ডাঁটা শাক ইত্যাদি।
বারোমাসি সবজি তালিকা
বারোমাসি সবজি তালিকা প্রতিটি মানুষের কম বেশি জানা থাকার কথা। পাতা জাতীয় সবজি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পালং শাক, লালশাক, সরিষার শাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, ঝিঙাঝিরি শাক, মটরশুঁটি ইত্যাদি। আবার ফল জাতীয় সবজি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য টমেটো, বেগুন, শিম, মরিচ, ঢেঁড়স, কুমড়া, শশা, ঝিঙা, লাউ ইত্যাদি এবং মূলজাতীয় সবজি গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আলু, গাজর, মূলা, মিষ্টি আলু ইত্যাদি। নিচে বারোমাসি সবজি তালিকা নিয়ে থাকছে বিস্তারিত বিবরন যা আপনাদের সকলের উপকারে আসতে পারে।
১। পুঁইশাক

পুঁইশাক আমাদের দেশের জনপ্রিয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি শাক জাতীয় সবজি। সবুজ ও লাল এই দুই রঙের পুঁইশাক হয়ে থাকে। পুঁইশাকে আছে প্রচুর পরিসানে ভিটামিন ‘বি`, ‘সি` ও ‘এ` পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং আয়রণ আছে। সারাবছর আপনি চাইলে পুঁইশাক চাষ করতে পারেন।
২। লালশাক

লালশাকে প্রচুর পরিমানে আয়রন রয়েছে। নিয়মিত এ শাক খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়। এ ছাড়াও এ শাকের অ্যান্টিক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ ও ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। রক্তে কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। লালশাকে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। মানবদেহের দাঁত ও অস্থি গঠনে, দাঁতের মাড়ির সুস্থতা রক্ষায় এবং মস্তিষ্কের বিকাশে লালশাকের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। লাল শাকের আঁশ বা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বাড়তি ওজন কমাতেও সহায়ক। বাড়ির পতিত জমি বা আনাচে কানাচে খালি জায়গায় সারাবছর লালশাক চাষ হয়ে থাকে।
৩। বেগুন

বেগুনে রয়েছে যে উপাদান, তা জ্বর হওয়ার পরে মুখ ও ঠোঁটের কোণের ঘা, জিভের ঘা প্রতিরোধে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বক ও চুল ভাল রাখে। বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে। বিশেষজ্ঞদের মতে ভিটামিন এ চোখে পুষ্টি জোগায় এবং চোখের যাবতীয় রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বেগুন সারাবছর চাষ করা যায়।
৪। কুমড়া

চোখ ভালো রাখে ভিটামিন ‘এ’। ওজন কমায় কুমড়াতে ক্যালোরি খুব কম থাকে। হার্টের জন্য কুমড়া দারুণ উপকারী। ইমিউনিটি বাড়ায় কুমড়ায় ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায়।
৫। লাউ

শীতকালীন সবজির মধ্যে লাউক বেশি পছন্দের। লাউ দেহের আদ্রতা ঠিক থাকে। দেহের জলের চাহিদা পূর্ণ করে। লাউ এ বেশি পরিমানে পানি থাকে। কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানের জন্য লাউ উপযুক্ত। যাদের চুলে পড়ে যাচ্ছে ও চুল পেকে যাচ্ছে তারা লাউ খেতে পারে। এতে চুল পেকে যাওয়ার থেকে রোধ ও চুলের গোড়া শক্ত হয়।
৬। শিম

শিম সকলের কাছে একটি প্রিয় সবজি। শীমের বীচি অনেকের কাছে পছন্দের খাবার। আবার শুধু শিম অনেকের কাছে প্রিয় হয়ে থাকে। শিমের মধ্যে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, শর্করা ও অন্যান্য উপদান থাকে যা দেহের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করে।
৭। শালগম

শালগমে নানা রকমের ভিটামিন বিদ্যমান থাকে। এই সবজিটি শীতের শুরুতে বেশি পাওয়া গেলেও সারাবছর পাওয়া যায়। শালগমে খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল ও উচ্চরক্ত চাপ কমিয়ে দেয়। হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে এবং পরিপাকের উন্নতি ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
৮। ধনিয়া পাতা

বাঙালিদের কাছে শীতকালে সবচেয়ে পরিচিত একটি সবজি হচ্ছে ধনিয়া পাতা। খাবারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এই ধনিয়া পাতা। সরাসরি তরকারি হিসেবে ব্যবহার না হলেও তরকারিকে সুস্বাধু করে। সারাবছর ইচ্ছে করে ধনিয়া পাতা চাষ করা যায়।
৯। গাজর

উচ্চ বিটা-ক্যারোটিন উপাদানের জন্য গাজর চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য উপকারি। বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত করে। গাজর ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে প্রদান করে। গাজর স্বাস্থ্যকর ত্বক, চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
১০। মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু সুস্বাদুর দিক দিয়ে অন্যতম। পুষ্টির মাত্রা অনুযায়ী স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বিভিন্ন উপকারিতা প্রদান করে। বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজও সরবরাহ করে। ত্বকের স্বাস্থ্য, ইমিউন ফাংশন সহ রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
বারোমাসি সবজি তালিকা এই বিষয়ে আপনার মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
মানবদেহের দৈনিক সবজির চাহিদা কেমন?
চাহিদা মেটাতে এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ার জন্য আপনার কাছে ছোট পরিসরে সবজি চাষ করার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শারীরিক বৃদ্ধির চাহিদার একটি অংশ অবশ্যই সবজি থেকে আসে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দৈনিক ২৫ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন।
সবজি খেলে কি কি উপকার হয়?
সবজিতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি মানুষকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। সবজির আঁশ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান খাদ্যনালির ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সবজিতে কি কি উপকারি উপাদান থাকে?
সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, এন্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ ও ভিটামিন থাকে। তাই এইসব সবজি খেলে আমাদের শরীরের অনেক উপকার হয়ে থাকে।
উপসংহার
আমাদের দেশে বারোমাসি সবজি পাওয়া যায়। বারোমাসি সবজি হল এমন সবজি যা বছরের যেকোন সময় চাষ করা যায়। এই সবজিগুলির বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে। বিভিন্ন জলবায়ু এবং আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে জন্মে। বারোমাসি সবজি চাষের ফলে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো, খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা যায়। খাদ্য তালিকায় বারোমাসি সবজি তালিকা মোতাবেক আপনার সার্বিক পুষ্টিগুন এবং সুস্থতা বাড়াতে পারেন। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“বারোমাসি সবজি তালিকা” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।