বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণীর নাম শীর্ষক আজকের প্রবন্ধে আপনাকে স্বাগতম। ১০০ বছরে বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে প্রায় ৩১ প্রজাতির প্রাণী। আরও ঝুঁকির কাছাকাছি রয়েছে ৯০ প্রজাতির প্রাণী। তবে ৮০৩ প্রজাতির প্রাণী নিয়ে এখনও পর্যন্ত দুশ্চিন্তার কিছু নেই। প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) এর জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। বাংলাদেশের ১ হাজার ৬১৯ প্রজাতির বন্য প্রাণীর কী অবস্থা সে বিষয়ে লাল তালিকা বা রেড লিস্টের হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এটি যৌথভাবে তৈরি করেছে সরকারের বন বিভাগ এবং আইইউসিএন। অন্যদেশে বসত করা অনেক প্রাণী দেখে আপনার মনে হতেই পারে এই প্রানীগুলোর অনেকগুলো আমাদের দেশে নেই কেন? বনগরু,গণ্ডার,ঘরিয়াল আজ আমাদের দেশে নেই। কিন্তু যদি বলা হয় এক সময় ছিল, তাহলে হয়ত চমকেই উঠতে হবে আমাদের।
বিলুপ্ত প্রাণী কাকে বলে?
একটি প্রাণী বা উদ্ভিদ প্রজাতি যখন চিরতরে এই পৃথিবী থেকে নিঃশ্চিন্ন বা ধ্বংস হয়ে যায় তখন তাকে সেই প্রজাতির বিলুপ্ত বলা হয়ে থাকে। একটি প্রজাতি যা আর এই পৃথিবীতে বিদ্যমান নেই। জীববিজ্ঞানে বিলুপ্তি বলতে সাধারণত জীব বা একদল ট্যাক্সন বা একটি প্রজাতির নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বোঝায়। বিলুপ্তি সাধারণত প্রজাতির শেষ প্রাণীর মৃত্যুর মুহূর্তটিকে বলা হয় এরপর সেই প্রজাতির কোনো জীবন্ত নমুনা প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সংরক্ষণাগারে আর দেখা যায় না।
প্রাণী বিলুপ্তির কারণ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চাপ, ব্যাপক হারে বন উজাড়, বন্যপ্রাণী শিকার, নদীর নাব্য হ্রাস, ভারসাম্যহীন পরিবেশ, অবহেলা ও অযত্নের কারণেই বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে নানা প্রজাতির এসব প্রাণী। হারিয়ে যাচ্ছে নানা জাতের গাছ ও মাছ। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে একটা সময় জীববৈচিত্র্য শূন্য হয়ে পড়বে দেশ। যখন এই পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাও কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এখনি সচেতন হয়ে এই বিলুপ্তির হার কমানে চেস্টা করতে হবে।
বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণীর নাম
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু প্রাণীর বিষয়ে যেগুলো একসময় বাংলাদেশের বনে জঙ্গলে বসবাস করতো। সময়ের ব্যবধানে আজ তারা বাংলাদেশ ভূ-খণ্ড থেকে বিলুপ্ত। অবাক করা তথ্য হচ্ছে পৃথিবীতে বর্তমানে টিকে থাকা প্রাণীকূল পৃথিবীর মোট প্রাণীদের মাত্র ৫%। বাকি ৯৫% প্রাণীই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নিচে সংক্ষেপে বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণীর নাম আলোচনা করা হলো।
১। নেকড়ে

নেকড়ের বৈজ্ঞানিক নাম Canis lupus| এদের উচ্চতা প্রায় আড়াই ফুটের মত হয়। লম্বায় প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিনফুট হয়ে থাকে। গড় ওজন প্রায় ১৮ থেকে ২৭ কেজির মত হয়। নেকড়ে দেখতে প্রায় কুকুরের মতো। নেকড়ে জংলী হলেও এরা খোলা প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়। শিকারের জন্য সময়ের অপেক্ষা করে না। যখন তখন মানুষের সামনে থেকেই তুলে নিয়ে যায় ছাগল, ভেড়া। নেকড়ের প্রধান শিকার গবাদিপশু। তবে সুযোগ পেলে মানুষকে আক্রমন করতেও ছাড়ে না। ওদের শিকার মানুষের জন্য এতটাই সমস্যা হয়ে উঠেছিল যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নেকড়ে মারার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। প্রাণীবিজ্ঞানীদের মতে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, রাজশাহী, নোয়াখালী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলেও একটা সময় পর্যন্ত নেকড়েদের অবাধ বিচরণ ছিল। বর্তমানে নেকড়ে দেখা যায় কাশ্মীর,পাকিস্তান, ইরান, ইরাক,ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, তিব্বত উত্তর আরব ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে।
২। ডোরাকাটা হায়েনা

হায়েনার বৈজ্ঞানিক নাম Hyaena hyaena| পুরুষ হায়েনা লম্বায় প্রায় ৫ ফুট, উচ্চতায় প্রায় ৩ ফুট এবং ওজনে প্রায় ৮৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্ত্রী হায়েনার ওজন পুরুষের তুলনায় কিছুটা কম হয়ে থাকে। হায়েনা দেখতে অনেকটা কুকুরের মতই। বন-জঙ্গলের চেয়ে হায়েনাকে খোলা প্রান্তরেই বেশি দেখা যায়। ছোট পাহাড়, ঝোপঝাড়, আখক্ষেতের ভেতর পালিয়ে থাকে হায়েনা। শজারুর করা গর্তকেও নিজের মতো করে বাসা বানিয়ে নেয় এরা। একা অথবা দলবেঁধে শিকার করে বেড়ায়। বাঘের ফেলে দেওয়া শিকারের মাংস বা হাড়গুলো শক্ত চোয়ালের ও দাঁতের সাহায্যে সহজেই ভেঙ্গে গিলে খায় এরা। ভেড়া, ছাগল, ছোট কুকুর ছানাসহ ঘর থেকে মানবশিশু পর্যন্ত নিয়ে পালিয়ে যায় এরা। রাতে হায়েনারা যখন চিৎকার করে ডাকে তখন তাদের সে ডাককে পাগলের হাসির মতো মনে হয়। একেই বলে হায়েনার পাগলের হাসি। বাচ্চা অবস্থা থেকে পুষলে হায়েনা পোষও মানে। প্রাণীবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের রংপুর,দিনাজপুর, সমগ্র রাজশাহী বিভাগ এবং খুলনা বিভাগের কিছু কিছু অংশে হায়েনার বসবাস ছিল। বর্তমানে হায়েনা দেখতে পাওয়া যায় আরব, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল, উত্তর আফ্রিকা, পাকিস্তান, রাশিয়া ও তুর্কিমেস্তানে।
৩। মালয়ী সুর ভাল্লুক

সুর ভাল্লুকের বৈজ্ঞানিক নাম Helorctos malayanus| এরা প্রায় লম্বায় ৩ থেকে সাড়ে ৪ ফুট এবং ওজনে ২৭ থেকে ৬৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাটি থেকে এদের দেহের উচ্চতা প্রায় ২ ফুট। ভাল্লুকদের মধ্যে সুর ভাল্লুক সবচেয়ে ছোট। গায়ের পশম কুচকুচে কালো হয়ে থাকে। কান ছোট আর নাক গোলাকার হয়। এদের জিহ্বা অনেক লম্বা। এরা সাধারণত গহীন পাহাড়ি বনে বাস করে। প্রাণীবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সুর ভাল্লুক ৯ থেকে ১২ হাজার ফুট উঁচুতে এমনকি বরফের কাছেও পাওয়া যায়। শীতকালে এরা নিচে নেমে আসে। এরা একই সঙ্গে মাংশাসী ও তৃণভোজী হয়। খাবার হিসেবে এরা ঘাস লতাপাতা,ফলমুল, মধু ছাড়াও ছাগল, ভেড়া, পাখি এমনকি উঁইপোকাও ধরে খায়। এক সময় সুর ভাল্লুক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে ও গারো পাহাড়ে বিচরণ করত। একটা সময় সিলেটেও এদের বসবাস ছিল । সুর ভাল্লুকের বিলুপ্তির অন্যতম একটি কারণ হলো, ধারণা করা হতো যে এর পিত্তথলি, করোটি দিয়ে তৈরি ওষুধ খেলে সুস্বাস্থ্য ও যৌবন লাভ করা যায়। আর এ ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাই কাল হয়ে দাঁড়ায় সুর ভাল্লুকের জন্য। এছাড়া বন ধ্বংস ও ফসল রক্ষার জন্যও এদের নির্বিচারে মেরে ফেলা হতো।
৪। গণ্ডার

সমগ্র পৃথিবীতে ৫ প্রজাতির গণ্ডারের মধ্যে বাংলাদেশেই তিন প্রজাতির গণ্ডার বসবাস করতো। বাংলাদেশে বসবাস করা প্রজাতিগুলো হচ্ছে বড় একশৃঙ্গী গণ্ডার, ছোট একশৃঙ্গী গণ্ডার ও এশিয়ান দ্বিশৃঙ্গী গণ্ডার। গণ্ডারের উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট বা তার একটু বেশি হয়ে থাকে। তবে এদের গড় উচ্চতা ৫ ফুট এর মত। এদের দেহের ওজন ১৮শ’ থেকে ২২শ’ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। গণ্ডারের শরীর বেশ স্বাস্থ্যবান, চামড়া মোটা, কর্কশ ও লোমবিহীন হয়ে থাকে। নাকের ওপর একটি অথবা দুটি শিং থাকে। পাহাড়ি এলাকা, জলাভূমি ও গিরিখাতে এদের বেশি বসবাস করতে দেখা যায়। গণ্ডার সাধারণত একা চলে। এরা মল ত্যাগ করে একই জায়গায়। মল জমে জায়গাটি উঁচু হয়ে গেলে নিজের শিং দিয়ে ঢুস মেরে তা গুড়িয়ে আবার সমান করে দেয় গণ্ডায়। এরা প্রতি তিন বছর পরপর একটি বা দুটি করে বাচ্চা প্রসব করে। বাংলাদেশের গারো পাহাড়, রংপুর, দিনাজপুর, যশোর, রাজশাহী,ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও সুন্দরবনে এসব জায়গায় গণ্ডারদের দেখা যেত। গণ্ডারের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়ে নানা কুসংস্কারমূলক চিকিৎসার উদ্ভব হয়েছিল। আর সেই কুসংস্কারের কারনে দিনকে দিন গণ্ডার শিকারের মাত্রা বেড়ে যাওয়াই প্রাণীটির বিলুপ্তির প্রধান কারণ—মনে করছেন প্রাণীবিজ্ঞানীরা।
৫। বনগরু

এদের বৈজ্ঞানিক নাম Bos frontalis| এদের গড় উচ্চতা প্রায় সাড়ে ৫ ফুটের বেশি। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি ষাঁড়ের ওজন প্রায় নয়শত কেজি হয়ে থাকে। এরা বিশাল মাথা ও সুঠাম দেহের অধিকারী হয়। চোখের রং বাদামী হয়ে থাকে। তবে মাঝেমাঝে এদের চোখ নীলচে দেখায়। পাহাড়ি বনে বাস করে এরা। তবে ঋতু ভেদে নিচু জমিতেও চলে আসে। দেখতে এদের ভয়ঙ্কর মনে হলেও আসলে কিন্তু মোটেও তা নয়। এদের বাচ্চাদের ধরে পোষ মানানোর অনেক চেষ্টা করা হলেও কিন্ত তিন বছরের বেশি বাঁচানো যায় না। পুরনো নথিপত্র অনুযায়ী, চট্টগ্রামে প্রচুর বনগরুর বসবসা ছিল। ময়মনসিংহ, কুমিলা, সিলেট, টেকনাফ ও ফেনীর ছাগলনাইয়াতেও একসময় বনগরুর দেখা মিলত। লোকালয়ে আসলেই অধিকাংশ সময় মানুষ তাদের ধরে জবাই করে খেয়ে ফেলত। বর্তমানে নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চীন, লাওস, ভারত, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় বনগরু দেখতে পাওয়া যায়।
৬। রাজশকুন

রাজশকুন বিশ্ব প্রেক্ষাপটেই একটি বিপন্ন পাখি। বাংলাদেশে এটি বিলুপ্ত বলেই চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি হিসাবে বিবেচিত করা হতো, তবে বর্তমানে আর দেখা যায় না। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর অবাধ বিচরন ছিল। রাজশকুনের বৈজ্ঞানিক নাম Sarcogyps calvus। ইংরেজি নাম Red-headed Vulture or King Vulture। এর মাথা লাল ও পালক কালো হয়। পুরুষ ও স্ত্রী পাখির চেহারা একই রকম হয়ে থাকে। অন্যান্য শকুনের মতাে এরা দলবদ্ধ ভাবে বসবাস করে না। একা বা কখনো কখনো জোড়ায় জোড়ায় চলতে দেখা যায় এদের । খাবারের তালিকায় মৃত পশুর দেহ প্রধান হিসাবে বিবেচ্য। উঁচু গাছের ডালে পাতা দিয়ে বাসা বানায় এবং একটি মাত্র ডিম পাড়ে তারা। ৪৫ দিনে ডিম ফোটে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এটি সংরক্ষিত প্রজাতি।
৭। ঘড়িয়াল

ঘড়িয়াল বাংলাদেশে একটি অতি বিপদাপন্ন প্রানী হিসাবে চিহ্নিত হলেও এখন তা বিলুপ্ত। ধরে নেয়া হয় বাংলাদেশে এটি প্রায় বিলুপ্ত। যদিও ভারতের উজান থেকে আসা ঘড়িয়াল মাঝেমধ্যেই নদীতে দেখতে পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gavialis gangeticus। এর ইংরেজি নাম Garial। ঘড়িয়াল গভীর ও দ্রুত প্রবাহমান পানিতে বাস করে। এদের প্রধান খাদ্য সাধারনত মাছ। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এদের প্রজনন মাস। বর্তমানে বলতে গেলে ঘড়িয়াল চিড়িয়াখানায় সীমাবদ্ধ। পদ্মা, যমুনায় এখন আর আগের মতো ঘড়িয়াল দেখা যায় না। ঘড়িয়াল দেখতে কুমিরের মতো হওয়ায়ই ঘটেছে যত বিপত্তি। মানুষ কুমির মনে করে এদের দেখা মাত্রই আক্রমণ করে। ঘড়িয়ালের প্রধান খাদ্য মাছ হওয়ায় এদের অন্য নাম মেছোকুমির। বাংলাদেশের পদ্মা ও যমুনায় ঘড়িয়াল পাওয়া যায়। পারতপক্ষে ঘড়িয়ালের কোনো প্রাকৃতিক শত্রু নেই। এ ছাড়া নির্বিবাদে হত্যা ও সরকারের উদাসীনতার কারণে বর্তমানে ঘড়িয়াল আমাদের দেশে বিলুপ্তপ্রায়।
৮। মিঠাপানির কুমির

মিঠাপানির কুমির বর্তমানে বাংলাদেশে থেকে বিলুপ্ত। সত্যি কথা বলতে এটাকে প্রাকৃতিকভাবে আর দেখা যাচ্ছে না। বাগেরহাটের খান জাহান আলী (র) মাজারের সাথের পুকুরে কয়েকটিেএই জাতীয় কয়েকটি কুমির আছে। সম্প্রতি ভারত থেকে সাফারি পার্কে পালনের জন্য কয়েকটি মিঠামানির কুমির আনা হয়েছে। এর ইংরেজি নাম Mugger Crocodile বা Fresswater Crocodile। এর বৈজ্ঞানিব নাম Crocodylus palustris। প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরের দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ থেকে ৫ মিটার। এরা নদী, পুকুর ইত্যাদি মিঠা পানিতে বাস করে থাকে। এরা সাধারণত জোয়ার ভাটা এলাকায় চলাচল করে না। এরা দলবদ্ধভাবে বাস করে থাকে। এরা নদীর তীরে তৈরি করা গর্তে ডিম পাড়ে। ৫০ থেকে ৫৫ দিনে ডিম ফোটে।
৯। নীলগাই

নীল গাই বাংলাদেশের আরও একটি বিলুপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে একটি। ১৯৪০ সালের দিকে বর্তমান বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া অঞ্চলে নীল গাই এর বসবাস ছিল বলে জানা যায়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের আর কোথাও নীল গাই দেখা যায় না। ধরেই নেওয়া যায় বাংলাদেশ থকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এত ইংরেজি নাম Blue Bull। এরা সাধারনত সমতল ভূমিতে বাস করে। নীল গাইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম Boselaphus tragocamelus। প্রজনন সময় ছাড়া এরা সাধারণত বছরের অন্যান্য সময় ষাঁড় ও গাভী পৃথকভাবে চলাচল করে। গাভীর লােম হলুদ-বাদামি। প্রাপ্ত বয়স্ক ষাঁড়ের লােম নীল-ধূসর। দেখতে অনেকটাই বিদঘুটে চেহারার ঘোড়ার মতো দেখায়। ঘাড়ে শুয়োরের কুঁচির মতো গাঢ় লোম থাকে। নীলগাই সাধারনত ছোট পাহাড় ও জঙ্গলে পূর্ণ মাঠে চরতে পছন্দ করে। মহুয়া গাছের রসালো ফুল এদের দারুণ পছন্দ। পানি পান ছাড়াই দীর্ঘসময় কাটিয়ে দিতে পারে এরা। গণ্ডারের মতো নীলগাইও এক জায়গায় মলত্যাগ করে।
১০। শুশুক

বৈজ্ঞানিক নাম Platanista gangetica. আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগেও বাংলাদেশের নদীগুলোতে অনেক শুশুক বা ডলফিন দেখা যেত। এখন আর দেখা যাচ্ছে না। ১৯৯৬ সাল থেকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় এর নাম উঠে গেছে। তবে বর্তমানে এটি বিলুপ্ত। নদীতে বাঁধ দেওয়া এবং সেতু তৈরি ইত্যাদি কারণে নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শুশুকের আবাস ও প্রজননস্থল। আমাদের নদীগুলো প্রতিনিয়ত শুকিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য কারণে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর অনেক জায়গায় পলি পড়ে চর জেগে গেছে। ফলে শুশুকরা এখানে চলে এসে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। শুশুক রক্ষায় আড়াই বছর আগে সুন্দরবনের অন্তর্গত ৩১ কিলোমিটার জলজ এলাকায় অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে সরকার। তবে বাস্তবায়নের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
১১। জলার হরিণ

এদের বৈজ্ঞানিক নাম Cervus duvauceli| অনেকে এদের বারশিঙ্গা বলেও ডাকে। উচ্চতায় প্রায় ৫৪ ইঞ্চি এবং ওজনে প্রায় ১৭৫ কেজি থেকে প্রায় ১৮০ কেজি পর্যন্ত হয়। দেখতে সাধারণ হরিণের মতোই হয়ে থাকে। তবে এদের শিংয়ের গড়নে সাধারন হরিন থেকে আলাদা বৈশিষ্ট বিদ্যমান। জলাভূমির আশেপাশে সবুজ ঘাসে পূর্ণ জায়গা এদের বিচরণের প্রিয় স্থান।বাংলাদেশে দিনাজপুর, সুন্দরবন, নোয়াখালী,রংপুর, বাকেরগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামে জলার হরিণের বসবাস ছিল।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণীর নাম এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
বাংলাদেশ থেকে কত প্রজাতির প্রাণী হারিয়ে গেছে?
১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে আঞ্চলিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অন্তত প্রায় ১৬টি প্রজাতির প্রাণী। আইইউসিএন তাদের ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী বলছে বাংলাদেশে ১৬০০ এরও বেশি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৯০টি প্রজাতিই বিলুপ্তির হুমকির মুখে রয়েছে। এই প্রজাতিগুলোকে আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে।
নীলগাই কেন বিলুপ্ত হয়ে গেছে?
সাধারনত অনিয়ন্ত্রিত শিকার, বাসস্থান ও খাদ্যের অভাবসহ প্রতিকূল পরিবেশের কারণেই প্রাণীটি অনেক আগেই বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রাণীটি সাধারণত দলবেঁধে থাকতো। তবে কয়েক বছর ধরে মাঝেমধ্যে যে কয়েকটি নীলগাই উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়, সেগুলো মূলত ভারত থেকে মাঝে মধ্যেই বাংলাদেমে ঢুকে পড়ে।
উপসংহার
প্রতিনিয়ত বিশ্ব থেকে বিভিন্ন কারনে প্রানী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকতে একটা সময় বশ্বি প্রানী শুণ্য হয়ে পড়বে যখন এই পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। যে জীব প্রজাতিগুলাে সহসা বিপদাপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেগুলােও সংরক্ষণের তালিকায় রাখতে হবে। তবে এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে বিলুপ্তপ্রায় জীব প্রজাতি সংরক্ষণের দিকে।
পৃথিবীর বুক থেকে একবার বিলুপ্ত হয়ে গেলে আর তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। এখনাে সকল জীব প্রজাতির উপকারি দিক আমাদের জানা সম্ভব হয়নি, হয়তাে দেখা যাবে আজকের এ বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিটি হতেই ভবিষ্যতে আমার কোনাে বংশধরের জীবন রক্ষাকারী ঔষুধ আবিষ্কৃত হবে। তাই আমাদের জানতে হবে বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণীর নাম। এবং কি করে বিলুপ্ত রোধ করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে গাভীর দুধ বৃদ্ধির খাদ্য তালিকা সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“বাংলাদেশের বিলুপ্ত প্রাণীর নাম” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।