ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী দলের তালিকা তে নিজ দেশের নাম লেখাতে কোন দেশের ফুটবলাররা না চায়? কিন্তু চাইলেই তো সম্ভব না, এর জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা ও গুনগতমানের অনুশীলন। নিঃসন্দেহে তারাই বিশ্বকাপ জয়ী দল হিসেবে নিজেদের তুল ধরবে যারা তাদের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারবে। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ৮ টি দেশ ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ীদের তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন ও জনপ্রিয় খেলা। পৃথিবীর সর্বাধিক মানুষ সহজে ফুটবল খেলাটা বুঝতে পারে এবং ফুটবলকে তাদের বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। ফুটবল কমবেশি পৃথিবীর প্রায় সব দেশই খেলে থাকলেও ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী দলের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশি নয়। ফুটবলের উৎপত্তিস্থল বা আবিস্কারক হিসেবে চীনের নাম শোনা গেলেও, উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে সর্বপ্রথম ফুটবল খেলার প্রচলন শুরু হয় ইংল্যান্ডে। আধুনিক ফুটবলের বিকাশ ঘটেছে ইংল্যান্ডে। মধ্যযুগের শেষের দিকে ইংরেজ ক্রীড়াবিদ জে.সি, থ্রিং এই খেলার প্রথম নিয়ম তৈরি করেন।
ফুটবল বিশ্বকাপ কি?
ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা দ্বারা অনুষ্ঠিত ৪ বছর পর পর ফুটবলের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টকে FIFA World Cup বা ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ বলা হয়। ১৯৩০ সাল থেকে ফিফা এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আসছে। পৃথিবীর ৫ টি মহাদেশ বা অঞ্চল থেকে প্রতিটি দেশের দলগুলো একটি নির্ধারিত বাছাই প্রক্রিয়া অতিতক্রম করে মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে থাকে। এতদিন যাবত গ্রুপ পর্ব খেলে তারপর ১৬, তারপর কোয়ার্টার ফাইনাল , সেমিফাইনাল অবশেষে ফাইনালের মাধ্যমে টুর্নামেন্টের বিজয়ী ধল নির্ধারিত হয়। এই খেলাটি বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ সরাসরি বা র্ভাচুয়ালি অংশগ্রহনের মাধ্যমে উপভোগ করে থাকে। তাই এই খেলাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেলা বিবেচনা করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বিশ্বকাপে ৩২ টি দল অংশগ্রহন করে থাকলেও ২০২৬ বিশ্বকাপে দল সংখ্যা নির্ধারন করা হয়েছে ৪৮ টি।
ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী দলের তালিকা
১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ পর্যন্ত সর্বমোট ২২ টি ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছে। এই ২২ টি বিশ্বকাপে সর্বমোট ৮ টি দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। একই দল আবার একাধিকবার জয়ী হয়েছে। বিশ্বযুদ্ধের কারনে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে কোন বিশ্বকাপ আয়োজন করা হয়নি। আজকের বিষয় ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী দলের তালিকা এবং দলগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হল-
দেশের নাম | বিশ্বকাপ জয়ের সংখ্যা | বিশ্বকাপ জয়ের সন |
---|---|---|
ব্রাজিল | ৫ টি | ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২ |
জার্মানি | ৪ টি | ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ ও ২০১৪ |
ইতালি | ৪ টি | ১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৮২ ও ২০০৬ |
আর্জেন্টিনা | ৩ টি | ১৯৭৮, ১৯৮৬, ২০২২ |
উরুগুয়ে | ২ টি | ১৯৩০ ও ১৯৫০ |
ফ্রান্স | ২ টি | ১৯৯৮ ও ২০১৮ |
ইংল্যান্ড | ১ টি | ১৯৬৬ |
স্পেন | ১ টি | ২০১০ |
১। ব্রাজিল
ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ জয়ীর তালিকায় সফলতম দেশ হচ্ছে ব্রাজিল। অনেকে তো ব্রাজিলকে ফুটবলের শ্রেষ্ঠ দল হিসেবে বিবেচিত করে থাকেন। ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২ সালের বিশ্বকাপসহ মোট ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। ব্রাজিলের ফুটবলার পেলে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় মনে করা হলেও অন্যরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই । যদিও পেলে ৩টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন এবং বিশ্বকাপে নিজে ১২ টি গোল করেছেন। । এছাড়াও ব্রাজিল ১৯৫০ ও ১৯৯৮ ফুটবল বিশ্বকাপে রানার্সআপও হয়।
২। জার্মানি
ফুটবলের আরেক পরাশক্তির যাকে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ দল বলা হয় জার্মানি। ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালসহ সর্বমোট চারবারে তারা বিশ্বকাপ জয় করে ব্রাজিলের পরেই তারা বিশ্বে দ্বিতীয় ফুটবল পরাশক্তি হিসাবে পরিচয় করে নেয়। ১৯৬৬, ১৯৮২, ১৯৮৬ ও ২০০২ সালের বিশ্বকাপও রানার্সআপ হয় দলটি। বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা জার্মানির স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসা। মোট ৬টি বিশ্বকাপ খেলেন তিনি।
দ্রতুগতির সাথে আক্রমনাত্মক জার্মান ফুটবলের উপাধি। ইস্পাত কঠিন পরিশ্রমের মানসিকতার জন্য দলটি বরাবরি ছিল প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি। যার ফলে জার্মান দল বিশ্বকাপ জয়ী দলের তালিকায় যৌথভাবে দ্বিতীয়।
২। ইতালি
আরেক ইউরোপীয় পরাশক্তির নাম ইতালি। ১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৮২ ও ২০০৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে জয় লাভ করে। এছাড়াও দলটি ১৯৭০ ও ১৯৯৪ সালে রানার্সআপ হয়। ইতালির ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের সেরা গোলকিপার হচ্ছে বুফন। গ্লি আজ্জুরি” নামে ডাকা হয় ইতালিয়ান ফুটবল দলকে।
৪। আর্জেন্টিনা
ব্রাজিলের চিরপ্রতিদ্বন্দী নামে পরিচিত দল আর্জেন্টিনা। বিশ্বজয়ী দলের তালিকায় আছে অবস্থান চতুর্থ। ১৯৭৮, ১৯৮৬ ও ২০২২ এই তিনটি বিশ্বকাপ জয় করে দলটি। এছাড়াও ১৯৩০, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে রানার্সআপও হয় দলটি। ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে লিওনেল মেসিকে বিবেচনা করা হয়। শৈল্পিক পাসিং ফুটবল খেলে বিশ্ব ফুটবলে রাজত্ব করেছে আর্জেন্টিনা।ফুটবল ঈশ্বর খ্যাত দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ হিসেবে পরিচিত আর্জেন্টিনা ফুটবল দল।
৫। উরুগুয়ে
বিশ্বকাপের প্রথম জয়ী দলটির নাম হচ্ছে উরুগুয়ে। ১৯৩০ ও ১৯৫০ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। লাতিন আমেরিকা ফুটবলের অন্যতম প্রাচীণ পরাশক্তি হচ্ছে উরুগুয়ে। ফুটবল ইতিহাসের চমক জাগানো ও উরুগুয়ের সেরা ফুটবলার হচ্ছে লুইস সুয়ারেজ।
অনেকদিন যাবত দলটি বড় কোন ট্রপি ঘরে নিতে না পারলেও সর্বশেষ ২০১১ সালে উরুগুয়ে আঞ্চলিক আসর কোপা আমেরিকার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছিল। তারপর থেকেই উরুগুয়ের ফুটবলে ট্রানজিশন চলছে। হারিয়ে নিজেদের খুঁজে বেড়াচ্ছে দলটি।
৬। ফ্রান্স
ফুটবলে ইতিহাসে এবং ইউরোপের নতুন পরাশক্তির নাম হচ্ছে ফ্রান্স। ১৯৯৮ ও ২০১৮ এই ২ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ফ্রান্স ফুটবল দল। স্বাগতিক দল হিসেবে ফ্রান্স বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল ১৯৯৮ সালে। ১৯৫৮, ২০০৬ ও ২০২২ বিশ্বকাপে রানার্সআপও হয় ফ্রান্স। ফ্রান্সের সর্বকালের সেরা ফুটবলার হচ্ছেন জিনেদিন জিদান।
দ্রুতগতির ফুটবল খেলাই ফ্রান্সের মূল অস্ত্র। তারুন্যে ভরা দলটি দিনে দিনে নিজেদের নিয়ে যাচ্ছে অনন্য উচ্চতায়। ফ্রান্সকে বলা হচ্ছে ইউরোপের নতুন ও স্থায়ী পরাশক্তি। গতির সাথে ক্ষিপ্রতায় যার নাম জনপ্রিয় হয়ে উছেছে বিশ্বে তিনি সবার পরিচিত কিলিয়ান এমবাপ্পে। যাকে মেসির পর সেরা খেলোয়াড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
৭। ইংল্যান্ড
ফুটবলের খেলার জনক হিসেবে পরিচিত ইংল্যান্ড ১৯৬৬ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। দলটি মাত্র ১ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ফুটবলের সবচেয়ে পুরাতন ও অভিজাত হিসেবে পরিচিত এই দলটি বরাবরই বিশ্ব ফুটবলে আলো ছড়িয়েছেন। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ফুটবলার হচ্ছে স্যার ববি চার্লটন। ব্রিটিশ ফুটবল হল ফুটবল দুনিয়ার এক আভিজাত্যের নাম।
প্রতিটি বিশ্বকাপে শিরোপা জয় করার মতো দল নিয়ে আসরে গিয়েও শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফেরা দলটির এক প্রকার অভ্যাসে পরিনিত হয়ে গেছে। দারুণ দারুন সব প্রতিভান ফুটবলার নিয়ে অংশগ্রহন করে দলটি।
৮। স্পেন
ইউরোপীয় ফুটবলের উদিয়মান ও শৈল্পিক এবং ছন্দময় পাসিং এর জন্মদাতা হচ্ছে স্পেন। ইউরোপের আরেক পরাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হলেও পরবর্তীতে আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০১০ সালে ছন্দময় পাসিং বা খেলাটাকে শিল্প বানিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। জাভি, ইনিয়েস্তা, রামোস, ডেভিড ভিয়ার মতো ফুটবলারদের মানুষ অনেকদিন মনে রাখবে।
একটি নির্দষ্ট সময় পর্যন্ত স্পেন বিশ্ব ফুটবল শাসন করে জয় করেছিল মানুষের মন। তবে কিছুটা অবস্থার ভাঁটা পড়লেও অসংখ্য তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারদের হাত ধরে স্পেন আবার স্বমহিমায় আবির্ভূত হতে চলেছে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
“ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী দলের তালিকা” এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তবে চলুন জেনে নেই সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপ কোথায় অনুষ্ঠিত হবে?
২০২৬ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপে মোট ৪৮ টি দল অংশগ্রহণ করবে।
বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ একক পুরস্কারের নাম কি?
ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ একক পুরস্কারের নাম গোল্ডেন বুট এবং সেই সেরা পুরস্কারটি বেশি জিতেছেন লিওনেল মেসি (২০১৪ ও ২০২২)।
উপসংহার
ফুটবল বিশ্বকাপ বিশ্বে যে আলোড়ন ও বিনোদনের সৃষ্টি করে তা খুবই উপভোগ্য ও মনোমুগ্ধকর। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো খেলাই মনে হয় এরুপ উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পারে না। ফুটবল অতি পরিচিত ও আমাদের জীবনের একট অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। ঠিক তেমনই ভাবে এর জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে অসংখ্য বিশ্বনন্দিত ফুটবলাররা বিশ্বকাপ জয় করে নিজের নাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন সর্বত্র। দেশকে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন বিশ্ব দরবারে৷ এরুপ অজানা আরও তথ জানতে আপনি একপলক ঘুরে আসতে পারেন ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী দলের তালিকা থেকে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় পরাজয়গুলো সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ী দলের তালিকা” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন।