রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত এই বিষয়টি যদি আপনার অজানা থাকে তবে সঠিক তথ্য আহরণের জন্য আপনি উপযুক্ত জায়গায় এসেছেন। সুতরাং মনোযোগ দিয়ে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন। আশা করছি, পোস্টটি সম্পূর্ণরূপে পড়ার পর রাজশাহী কেন বিখ্যাত এমন প্রশ্ন আর করবেন না। কেননা, রাজশাহী এর জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় স্থান, বিখ্যাত সব খাবার এবং রাজশাহী সম্পর্কে আরো জ্ঞানগর্ভ তথ্য থাকছে আজকের পোস্টে। চলুন শুরু করা যাক-
রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত
বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শহর রাজশাহী তার আম, রেশম, শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। রাজশাহী কিন্তু শিক্ষা নগরী হিসেবে বিশেষভাবে সমাদৃত। কেননা, শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব অন্যান্য জেলা থেকে একে আলাদা আসনে উন্নীত করেছে। চলুন বিস্তারিত জেনে নিই।
রাজশাহী জেলার নামকরণ ও ইতিহাস
রাজশাহী জেলার নামকরণ নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হল, এই নামটি হিন্দু রাজা ও ফারসী শাহী শব্দ দুটির সমন্বয়ে গঠিত। অর্থাৎ, রাজা-শাহী বা রাজা-রাজকীয়। এই জেলায় একসময় অনেক রাজা-জমিদারের বসবাস ছিল বলে এই নামকরণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। রাজশাহী জেলার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। এই জেলাটি প্রাচীনকালে “রামপুর-বোয়ালিয়া” নামে পরিচিত ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে এই জেলাটি মুঘল শাসনের অধীনে আসে। তারপর, উনিশ শতাব্দীতে এই জেলাটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। স্বাধীনতার পর এই জেলাটি বাংলাদেশের একটি বিশেষ অংশ হয়ে ওঠে। তাই, রাজশাহী জেলার ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে।
রাজশাহী জেলার দর্শনীয় স্থান
আপনি হয়তো রাজশাহী গিয়ে থাকবেন। যদি না যান তবে যাওয়ার পর অবশ্যই সেখানে থাকা নিচের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে ভুলবেন না কেমন! এই জেলার শত শত দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আমরা এখানে বেশ জনপ্রিয় কিছু স্থান সম্পর্কে আলোচনা করছি।
পুঠিয়া রাজবাড়ি
পুঠিয়া রাজবাড়ি রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন রাজবাড়ি। এই রাজবাড়িটি রাজা পিতাম্বরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়। পুঠিয়া রাজবাড়ি তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত।
বাঘা মসজিদ
বাঘা মসজিদ রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। এই মসজিদটি ১৫শ শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়। বাঘা মসজিদ তার সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরে অবস্থিত একটি জাদুঘর। এই জাদুঘরে রাজশাহী অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে অনেকগুলি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা
রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা রাজশাহী শহরে অবস্থিত একটি চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে।
পদ্মার পাড়
পদ্মার পাড় রাজশাহী শহরের একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এই স্থান থেকে পদ্মা নদীর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
শহীদ জিয়া শিশু পার্ক
শহীদ জিয়া শিশু পার্ক রাজশাহী শহরে অবস্থিত একটি শিশু পার্ক। এই পার্কে বিভিন্ন ধরনের রাইড ও খেলার সরঞ্জাম রয়েছে।
শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান
শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান রাজশাহী শহরে অবস্থিত একটি উদ্যান। এই উদ্যানটি তার বিশাল এলাকা ও সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত। শাহ মখদুম রুপোশ (রহঃ) এর মাজার রাজশাহী শহরে অবস্থিত একটি দরগাহ। এই দরগাহটি তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত।
এছাড়াও, রাজশাহী জেলায় আরও অনেকগুলি দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জ জমিদার বাড়ি, রাণী ভবানী জাদুঘর, পুঠিয়া দোল মন্দির, পুঠিয়া শিব মন্দির, পুঠিয়া দরগা, গোদাগাড়ী জমিদার বাড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাবাড়ি। রাজশাহী জেলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। এই জেলায় বিভিন্ন ধরনের দর্শনার্থীদের জন্য অনেক কিছু রয়েছে।
রাজশাহী জেলার বিখ্যাত খাবার
আম, রেশম, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অনন্য এক স্থান রাজশাহী। রাজশাহী জেলায় অনেকগুলি বিখ্যাত খাবার রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
কালাই রুটি
কালাই রুটি রাজশাহী জেলার একটি বিখ্যাত খাবার। এই রুটিটি মাষকলাই ও আতপ চালের আটা দিয়ে তৈরি। কালাই রুটি সাধারণত কালাভুনা বা অন্যান্য মাংসের সাথে পরিবেশন করা হয়।
বাটার মোড়ের জিলাপি
বাটার মোড়ের জিলাপি রাজশাহী শহরের একটি বিখ্যাত খাবার। এই জিলাপিটি তার সুস্বাদু স্বাদের জন্য বিখ্যাত। বাটার মোড়ের জিলাপি সাধারণত দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি।
রাজশাহীর কালাভুনা
জিলাপির মতো রাজশাহীর কালাভুনা একটি জনপ্রিয় এবং বিশেষ খাবার। এই মাংস রান্নায় অনেক মশলা ব্যবহার করা হয়। কালাভুনা সাধারণত কালাই রুটি বা ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
গরম গরম মিষ্টি
রাজশাহী জেলার আরেকটি বিখ্যাত খাবার হল গরম গরম মিষ্টি। এই মিষ্টিগুলি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ফলের রসে তৈরি করা হয়। গরম গরম মিষ্টি সাধারণত সকালে বা দুপুরের খাবারের পরে পরিবেশন করা হয়।
বট পরোটা
আপনি কখনো রাজশাহী গেলে বট পরোটা খাবেন। চমৎকার এই বট পরোটা রাজশাহী জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই পরোটাটি বট গাছের পাতায় বেক করা হয়। বট পরোটা সাধারণত মাংসের সাথে পরিবেশন করা হয়।
রাজশাহীর আম
রাজশাহী জেলায় আম উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত জলবায়ু ও মাটি রয়েছে। এই কারণে, রাজশাহী বিভাগের অর্ন্তগত চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বাংলাদেশের “আমের রাজধানী” বলা হয়।
রাজশাহী জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ
রাজশাহী জেলায় আপনি অনেক জনপ্রিয় আর বিখ্যাত ব্যক্তির সন্ধান পাবেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ব্যক্তির একটি তালিকা আপনাদের সুবিধার্থে এখানে দেওয়া হচ্ছে।
শহীদ এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান
শহীদ এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। কামারুজ্জামান ছিলেন একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ ও সৎ মানুষ। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। তার মৃত্যু বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। কামারুজ্জামানের মৃত্যুর পর তাকে বাংলাদেশের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তার নামে রাজশাহীতে একটি কলেজ, একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি উদ্যানের নামকরণ করা হয়েছে।
মাদার বখ্শ
মাদার বখ্শ একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও ভাষা সৈনিক। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।শরৎকুমার রায় ছিলেন একজন সাহিত্যিকও। তিনি অনেকগুলি উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও গল্প রচনা করেন। শরৎকুমার রায়ের অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্বের জনক বলা হয়।
রাজকুমার সরকার
রাজকুমার সরকার একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পুলিশ মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজকুমার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ পুলিশকে একটি বিশ্বমানের বাহিনীর রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
মির্জা মোহাম্মদ ইউসফ আলী
মির্জা মোহাম্মদ ইউসফ আলী ছিলেন একাধারে একজন বাঙালি সাহিত্যিক, সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ। তিনি ছিলেন রাজশাহী জেলার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।মীর্জা মোহাম্মদ ইউসফ আলী বাংলা সাহিত্য, সমাজ সংস্কার ও শিক্ষা ক্ষেত্রে একজন অসামান্য অবদানকারী ব্যক্তিত্ব। তার রচনাগুলি আজও বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ।
কবি শুকুর মাহমুদ
শুকুর মাহমুদ একজন বাংলাদেশী কবি। তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বিবেচিত হন।শুকুর মাহমুদের কবিতায় প্রেমের কথাও আমরা পাই। তার কবিতায় আমরা পাই নারীর সৌন্দর্য, ভালোবাসা ও প্রেমের কথা। শুকুর মাহমুদের কবিতায় মানবতা, সমাজ ও রাজনীতির বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে। তার কবিতায় আমরা পাই সাম্য, ন্যায় ও শান্তির কথা।
মুখলেসুর রহমান
মুখলেসুর রহমান একজন বাংলাদেশী ঐতিহাসিক। তিনি বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখেন।মুখলেসুর রহমান বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখেন। মুখলেসুর রহমানের অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একজন শ্রেষ্ঠ পুরুষ বলা হয়।
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় হলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি ইতিহাসবেত্তা ও সমাজকর্মী। তিনি বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার তৎকালীন নেতৃস্থানীয় আইনজীবী ছিলেন। মানবিক জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায়, বিশেষ করে ইতিহাস, সাহিত্য, ভাষা, সংস্কৃতি, চিত্রকলা এবং প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
কি বুঝলেন বলুন তো, রাজশাী জেলার উন্নয়নে অনেক ব্যক্তি অবদান রেখেছেন যাদের জন্ম রাজশাহীতে না হলেও তাঁরা রাজশাহী জেলার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
রাজশাহী জেলা কোথায় অবস্থিত?
রাজশাহী জেলা বাংলাদেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। এটি রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত। রাজশাহী জেলার উত্তরে বগুড়া জেলা, দক্ষিণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলা, পূর্বে দিনাজপুর জেলা ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অবস্থিত।
রাজশাহী জেলার আয়তন কত?
রাজশাহী জেলার আয়তন ২৪০৭.০১ বর্গ কিলোমিটার।
রাজশাহী জেলার জনসংখ্যা কত?
রাজশাহী জেলার জনসংখ্যা ৩০,২৩,২১৬ জন।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, পুরো পোস্টটি পড়ার পর রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত সেই বিষয়ে নিশ্চয় সম্যক ধারণা পেয়েছেন। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ঝিনাইদহ কিসের জন্য বিখ্যাত এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
‘রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত‘ পোস্টটি আপনাদের বিন্দুমাত্র উপকারে আসলেই আমরা লেখাটিকে স্বার্থক বলে মনে করবো। আপনি কি এই বিষয়ে নতুন কিছু জানেন? তাহলে কমেন্ট করে আমাদেরকেও জানিয়ে দিন আপনার মূল্যবান মতামত। আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ্ হাফেজ।