টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থান দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমান, এই সম্পর্কে সঠিক এবং বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য এই পোস্টটি পড়ে নিন। টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা। এটি ঢাকা বিভাগের অন্যতম বৃহত্তম জেলা। টাঙ্গাইলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং ধর্মীয় স্থানগুলি পর্যটকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে।
টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থান
ঢাকা বিভাগের অংশ টাঙ্গাইল জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি জেলা। এটি অনেক দর্শনীয় স্থানে পরিপূর্ণ। প্রতি বছর তাই লক্ষাধিক মানুষ টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করে থাকেন। চাইলে আপনিও একজন ভ্রমণ পিয়াসী হিসেবে এই জেলা ভ্রমণ করতে পারেন।
মহেরা জমিদার বাড়ি

মহেরা জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার মহেরা গ্রামে অবস্থিত একটি সুন্দর ও যত্নে সংরক্ষিত জমিদার বাড়ি। এটি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী জমিদারদের জীবনযাত্রার একটি নিদর্শন। মহেরা জমিদার বাড়িটি ১৮৯০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি ব্রিটিশ আমলে টাঙ্গাইলের অন্যতম প্রভাবশালী জমিদার পরিবারের বাসস্থান ছিল। জমিদার পরিবারের নাম ছিল মহেরা চৌধুরী। মহেরা জমিদার বাড়িটি স্থাপত্য এর দিক থেকে অত্যন্ত সুন্দর। বাড়িটির দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের নকশা ও ভাস্কর্য রয়েছে। বাড়ির সামনে একটি সুন্দর বাগান রয়েছে। সুতরাং, মহেরা জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইলের একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। আর তাই, প্রতিদিন অনেক পর্যটক এই বাড়িটি দেখতে আসেন।
করটিয়া জমিদার বাড়ি

করটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া উপজেলার করটিয়া গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। এটি টাঙ্গাইলের প্রাচীনতম জমিদার বাড়িগুলির মধ্যে একটি। করটিয়া জমিদার বাড়িটি ১৭৯০ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি ব্রিটিশ আমলে টাঙ্গাইলের অন্যতম প্রভাবশালী জমিদার পরিবারের বাসস্থান ছিল। জমিদার পরিবারের নাম ছিল পন্নী।
করটিয়া জমিদার বাড়িটির মোট আয়তন প্রায় ১০০ একর। বাড়িটি চারপাশে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। বাড়ির মধ্যে রয়েছে একটি বড় হলঘর, একটি দরবার হল, বেশ কয়েকটি শয়নকক্ষ, একটি পুকুর, এবং একটি বাগান। করটিয়া জমিদার বাড়িটি স্থাপত্যগতভাবে অত্যন্ত সুন্দর। বাড়িটির দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের নকশা ও ভাস্কর্য রয়েছে। বাড়ির সামনের বাগানটি দেখতে খুবই সুন্দর। করটিয়া জমিদার বাড়িটি টাঙ্গাইলের অত্যন্ত জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান যা দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসেন।
আতিয়া মসজিদ

আতিয়া মসজিদ টাঙ্গাইলের একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি টাঙ্গাইলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। আতিয়া মসজিদ বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মসজিদটি বর্গাকার আকৃতির, যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ প্রায় ১৮.২৯ মিটার এবং উচ্চতা প্রায় ৭.৬২ মিটার।
মসজিদটির বাইরের দেয়ালের পুরুত্ব ২.২৩ মিটার। মসজিদটির চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে, যার উপরে ছোট ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের মেঝেটি ইট দিয়ে তৈরি। মসজিদের অভ্যন্তরে তিনটি মেহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি সবচেয়ে বড় এবং এটিতে সুন্দর নকশা রয়েছে। মসজিদের দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের পোড়ামাটির নকশা রয়েছে। মসজিদটি সুলতানি ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণে নির্মিত হয়েছে।
পোড়াবাড়ির চমচম

পোড়াবাড়ির চমচম টাঙ্গাইলের একটি বিখ্যাত মিষ্টি। এটি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি নিদর্শন। পোড়াবাড়ির চমচম বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার পোড়াবাড়ি গ্রামে তৈরি একটি বিখ্যাত মিষ্টি। এটি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি নিদর্শন। পোড়াবাড়ির চমচম তৈরির জন্য দেশি গাভীর দুধ, চিনি, এবং ময়দা ব্যবহার করা হয়। দুধ জ্বাল দিয়ে ছানা তৈরি করা হয়। ছানায় ময়দা মিশিয়ে একটি শক্ত ডো তৈরি করা হয়। ডো থেকে ছোট ছোট চমচম তৈরি করা হয়। চমচমগুলোকে চিনির শিরায় ডুবিয়ে জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয়। পোড়াবাড়ির চমচম দেখতে বাদামী রঙের হয় এবং এর স্বাদ অত্যন্ত সুস্বাদু। এটি টাঙ্গাইলের বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায়।
মধুপুর জাতীয় উদ্যান

মধুপুর জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি বিশাল বনভূমি। এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বনভূমি এবং জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চল। মধুপুর জাতীয় উদ্যানটি ১৯৬২ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটি একটি উন্মুক্ত বনভূমি, যার আয়তন প্রায় ৮৪.৩৬ বর্গ কিলোমিটার। এই বনভূমিতে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ও প্রাণী রয়েছে।
মধুপুর জাতীয় উদ্যানের প্রধান গাছপালা হল শাল, বহেড়া, আমলকি, হলুদ, আমড়া, জিগা, ভাদি, অশ্বথ, বট সর্পগন্ধা, শতমূলী, জয়না, বিধা, আজুকি/ হারগাজা, বেহুলা ইত্যাদি। এই বনভূমিতে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, পেঁচা, কাঠ ময়ূর, বন মোরগ, লাল মুখ বানর, বন্য শুকর ইত্যাদি। মধুপুর জাতীয় উদ্যান টাঙ্গাইলের একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। প্রতি বছর অনেক পর্যটক এই বনভূমিটি দেখতে আসেন।
যমুনা বহুমুখী সেতু

যমুনা বহুমুখী সেতু টাঙ্গাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি। এটি টাঙ্গাইলকে ঢাকার সাথে সংযুক্ত করে। যমুনা বহুমুখী সেতু (বাংলা: যমুনা বহুমুখী সেতু) বা বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর এবং সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মাঝে অবস্থিত একটি সড়ক ও রেল সেতু। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম সেতু এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৬ষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু। সেতুটি ১৯৯৮ সালের জুন মাসে উদ্বোধন করা হয়। এটি যমুনা নদীর উপরে নির্মিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের বৃহত্তম নদী। সেতুটি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম। এটি ঢাকা থেকে রাজশাহী এবং খুলনা পর্যন্ত সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপন করেছে।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এঁর মাজার

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এঁর মাজার বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার সন্তোষ নামক স্থানে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থান। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন একজন বিখ্যাত ইসলামী ধর্মীয় নেতা, রাজনীতিবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ সন্তোষ মাজারে সমাহিত করা হয়।
মাওলানা ভাসানীর মাজারটি একটি সুন্দর ও মনোরম স্থান। মাজারের চারপাশে রয়েছে বিশাল সবুজ মাঠ। মাজারের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি বড় সমাধি। সমাধির উপরে রয়েছে একটি গম্বুজ। মাজারের ভেতরের অংশটি সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে মোড়া। মাওলানা ভাসানীর মাজারটি প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দর্শন করে থাকেন। বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। আপনিও যেতে পারেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এঁর মাজার দেখার জন্য। এতে করে আপনার জ্ঞানসীমা বাড়বে এটা বলার অপেক্ষায় রাখে না।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
ঢাকা বিভাগের অন্যতম বৃহত্তম জেলা টাঙ্গাইল বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা। টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং ধর্মীয় স্থানগুলি পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে থাকে।
টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
টাঙ্গাইল জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
পোড়াবাড়ির চমচম, ঐতিহ্যবাহী মসজিদ সমূহ, টাঙ্গাইলের শাড়ি, আনারস, জমিদার বাড়ি এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর কারণে টাঙ্গাইল বিখ্যাত।
টাংগাইল জেলা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
টাঙ্গাইল জেলা ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে এটি ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা ছিল। ১৯৬৯ সালের ১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বুঝতে পারছেন নিশ্চয় কৃষিপ্রধান জেলা টাঙ্গাইল ধান, পাট, আখ, গম, সরিষা, এবং শাকসবজি এর জন্য জনপ্রিয়। বিশেষ করে ‘টাঙ্গাইলের দর্শনীয় স্থান‘গুলো হাজার হাজার দর্শনার্থীর মনকে প্রশান্ত করে। সেই সাথে টাঙ্গাইল জেলায় তাঁত শিল্প, চমচম শিল্প এবং মৃৎশিল্পের মতো কুটির শিল্পগুলিও বিকাশ লাভ করেছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শ্রীমঙ্গল দর্শনীয় স্থান পড়তে পারেন।
আপনি চাইলেই টাঙ্গাইল জেলা ভ্রমণ করে এখানের দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ করতে পারেন। পোস্টটি কেমন লাগলে দয়া করে কমেন্ট করে আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে দিবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।