১০ টি রাসায়নিক বিক্রিয়ার নাম যেই বিক্রিয়াগুলো অনবরত ঘটেই চলেছে তার বিস্তারিত তথ্য নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। প্রিয় পাঠক, আপনি কি জানতে চান সেই বিক্রিয়াগুলো কি কি? কেন এই রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো ঘটে? এমনই ১০ টি রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা এখন জানার চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন আর আপনার রাসায়নিক জ্ঞানকে বর্ধিত করুন। আশা করছি এই পোস্টটি পড়ার পর রাসায়নিক বিক্রিয়া কি এবং এগুলো কেন ঘটে এই বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকবে না। তাহলে শুরুতেই জেনে নিই রাসায়নিক বিক্রিয়া কি?
রাসায়নিক বিক্রিয়া কাকে বলে?
দুই বা ততোধিক রাসায়নিক পদার্থ পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে নতুন যৌগ তৈরী করলে তাকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলা হয়। তার মানে বুঝতেই পারছেন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে নতুন মৌল কিংবা যৌগ তৈরী হয়। ১০ টি রাসায়নিক বিক্রিয়ার নাম প্রসঙ্গে আমরা বলতে পারি, এ সকল বিক্রিয়ায় পরমাণু অথবা ইলেকট্রনের আদান-প্রদান ঘটে থাকে। ইলেকট্রন প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া আছে। দেখে নিবেন হয়তো আপনি নিজেও এ বিষয়ে জানেন না। সুতরাং এটি জানুন আর আপনার বন্ধুদের মাঝে চমক তৈরী করুন।
১০ টি রাসায়নিক বিক্রিয়ার নাম
রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক নতুন মৌল কিংবা যৌগ পাওয়া যায়। তাহলে বলা যেতে পারে রাসায়নিক বিক্রিয়া হচ্ছে নতুন মৌল কিংবা যৌগ তৈরীর চমৎকার একটি সিস্টেম। চলুন আমরা এবার দশটি রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পর্কে জানবো।
সংযোজন বিক্রিয়া
সংযোজন বিক্রিয়া এমন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া যাতে দুটি অণু একত্রিত হয়ে একটি নতুন অণু তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন একত্রিত হয়ে পানি গঠন করে। এই প্রক্রিয়ায়, দুটি অণুর মধ্যে একটি দ্বি-বন্ধন বা ত্রি-বন্ধন ভেঙে যায় এবং দুটি নতুন বন্ধন গঠিত হয়। সংযোজন বিক্রিয়াগুলোতে সাধারণত হাইড্রোজেন এবং হ্যালোজেন মৌল জড়িত থাকে।
বিয়োজন বিক্রিয়া
বিয়োজন বিক্রিয়ায় একটি অণু দুই বা ততোধিক ছোট অণুতে বিভক্ত হয়। এই প্রক্রিয়ায়, অণুর একটি বন্ধন ভেঙে যায় এবং দুই বা ততোধিক নতুন অণু তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, পানি বিভক্ত হয়ে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন গ্যাসে পরিণত হয়। নিশ্চয় বুঝতে পারছেন বিযোজন বিক্রিয়া, সংযোজন বিক্রিয়ার সম্পূর্ণ বিপরীত প্রক্রিয়া। বিয়োজন বিক্রিয়াতে সাধারণত একটি তড়িৎ বিশ্লেষক বা তাপের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া
এই প্রক্রিয়ায় কোন যৌগ থেকে কোন মৌলকে অপর কোন মৌল দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, জিঙ্ক সালফিউরিক অ্যাসিডে দ্রবীভূত হয়ে জিংক সালফেট এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। তার মানে, প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া হল একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া যাতে একটি অণুর মধ্যে একটি পরমাণু বা মূলক অন্য পরমাণু বা মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। ১০ টি রাসায়নিক বিক্রিয়ার নাম সম্পর্কিত এই পোস্টের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া এটি। এই প্রক্রিয়ায়, প্রথম অণুর একটি বন্ধন ভেঙে যায় এবং দ্বিতীয় অণুর একটি বন্ধন গঠিত হয়। প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ায় সাধারণত একটি ইলেক্ট্রন-সক্রিয় পরমাণু বা মূলক জড়িত থাকে।
জারণ বিক্রিয়া
কোন বিক্রিয়ায় কোন মৌল থেকে ইলেকট্রনের ত্যাগ ঘটলে সাধারণত তাকে জারণ বিক্রিয়া বলা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, আয়রন অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে আয়রন অক্সাইড গঠন করে অর্থাৎ, জারণ বিক্রিয়া হল একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া যাতে একটি পদার্থ ইলেকট্রন হারায়। এই প্রক্রিয়ায়, পদার্থটি জারিত হয় এবং এর জারণ সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। জারণ বিক্রিয়াতে সাধারণত একটি অক্সিডাইজিং এজেন্ট জড়িত থাকে।
বিজারণ বিক্রিয়া
বিজারণ বিক্রিয়া হল এমন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া যাতে একটি পদার্থ ইলেকট্রন লাভ করে। উদাহরণস্বরূপ, জিংক সালফিউরিক অ্যাসিডে দ্রবীভূত হয়ে জিংক সালফেট এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়ায়, পদার্থটি হ্রাস পায় এবং এর জারণ সংখ্যা কমে যায়। বিজারণ বিক্রিয়াতে সাধারণত একটি রিডাক্টিং এজেন্ট জড়িত থাকে।
জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া
আচ্ছা, জারণ বিক্রিয়ায় আমরা জানলাম ইলেকট্রনের ত্যাগ ঘটে। অপরদিকে, বিজারণ বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের গ্রহন হয়। তাহলে জারণ-বিজারণ বলতে আসলে কি বোঝানো হতে পারে? কোন আইডিয়া? আসছে না তো! তাহলে দেখুন জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া কাকে বলে? তবে তার আগে বলি জারণ ও বিজারণ কিন্তু যুগপৎ বিক্রিয়া। অর্থাৎ, যখনই কোন মৌল ইলেকট্রন ত্যাগ করবে ঠিক তখনই অপর মৌল সেই ইলেকট্রনকে গ্রহন করবে। একইসাথে ঘটার কারণে একে যুগপৎ বিক্রিয়া বলা হয়ে থাকে। বুঝতে পারছেন নিশ্চয়।
অ্যাসিড-ক্ষার বিক্রিয়া – প্রশমন বিক্রিয়া
অ্যাসিড এবং ক্ষার বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) এবং সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH) বিক্রিয়া করে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) এবং পানি (H2O) উৎপন্ন করে। HCl + NaOH -> NaCl + H2O। এই বিক্রিয়াকে প্রশমন তথা নিরপেক্ষ বিক্রিয়াও বলা হয়। অ্যাসিড-ক্ষার বিক্রিয়াতে জড়িত দুটি পদার্থ হল অ্যাসিড এবং ক্ষার। অ্যাসিড হল এমন একটি পদার্থ যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) দান করে।
অপরদিকে, ক্ষার হল এমন একটি পদার্থ যা জলে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রক্সাইড আয়ন (OH-) দান করে। অ্যাসিড-ক্ষার বিক্রিয়াগুলো প্রকৃতিতে এবং শিল্পে ব্যাপকভাবে ঘটে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বৃষ্টিপাত হল একটি অ্যাসিড-ক্ষার বিক্রিয়া যাতে বাতাসে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড এবং পানি বিক্রিয়া করে কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে। এই বিক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি জীববিজ্ঞান, খনিজবিদ্যা এবং পরিবেশ বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতীব প্রয়োজনীয়।
জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া
যে বিক্রিয়ায় একটি যৌগ অন্য একটি অন্য একটি যৌগে পরিণত হয় তাই মূলত জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। উদাহরণস্বরূপ, বেনজিন অ্যাসিড, অ্যাসিটিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো প্রাণী, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জীবিত প্রাণীর সাথে জড়িত। এই বিক্রিয়াগুলো জীবের বৃদ্ধি, বংশ বিস্তার, বিপাক ক্রিয়া এবং প্রজনন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া জীবের জন্য অপরিহার্য।
অনুঘটক বিক্রিয়া
এই বিক্রিয়া এমন এক ধরণের বিক্রিয়া যাতে একটি অনুঘটক উপস্থিত থাকে। একটি অনুঘটক বিক্রিয়াকে দ্রুততর করে কিন্তু নিজে পরিবর্তিত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, পলিমারাইজেশন বিক্রিয়াতে একটি অনুঘটক উপস্থিত থাকে যা পলিমার তৈরির প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে। অনুঘটককে, অনেকটা বাংলার গঁচি মাছের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। কাদার মধ্য দিয়ে যাবে অথচ গায়ে কাদা লাগাবে ন! শুধুমাত্র উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে, দয়া করে কেউ মাইন্ডে নিবেন না।
ও হ্যাঁ একটি কথা বলার ছিল। যার ইঙ্গিত উপরে দেওয়া আছে। আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়? ইলেকট্রন সম্পর্কে একটি প্রশ্ন, ইলেকট্রনকে ভাঙ্গলে কি পাওয়া যায়? এর সঠিক উত্তর হচ্ছে ২টি, ১. ইলেকট্রনকে ভাঙ্গা সম্ভব নয় ২. ভাঙ্গলে স্ট্রিং তত্ত্বানুযায়ী স্ট্রিং বা সুতা পাওয়া যায়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ
রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্নের শেষ নেই। আর এই আগ্রহ থেকেই আমরা রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ে নানবিধ তথ্য জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। আপনাদের জ্ঞান-পিপাসা নিবৃত করার লক্ষ্যে।
আমাদের ১০ টি রাসায়নিক বিক্রিয়ার নাম জানার পরও নিশ্চয় আরও কিছু প্রশ্ন হয়তো আপনার মনে উঁকি দিচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ-
রাসায়নিক বিক্রিয়া কত প্রকার?
অনেক প্রকারের রাসায়নিক বিক্রিয়া রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংযোজন, বিয়োজন ও প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রভাবক কাকে বলে?
যা রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতিকে বৃদ্ধি বা হ্রাস করে তাদেরকে রাসায়নিক প্রভাবক বলে। এগুলো একটি বিক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান।
উপসংহার
রাসায়নিক বিক্রিয়া কিন্তু মানুষের জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সুতরাং এ সকল বিক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের অগাধ জ্ঞান অর্জন করা জরুরী। আর তাই ১০ টি রাসায়নিক বিক্রিয়ার নাম সম্পর্কিত আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের জন্য সামাণ্যতম উপকারে আসলেই আমরা পোস্টটি লেখা স্বার্থক বলে মনে করবো। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ১০ টি তরল পদার্থের নাম পড়তে পারেন।
‘১০ টি রাসায়নিক বিক্রিয়ার নাম‘ এর মধ্যে কোন বিক্রিয়াটি আপনার বেশি ভালো লেগেছে বলুন তো? আপনি যদি এই বিষয়ে নতুন কোন তথ্য জেনে থাকেন তবে আমাদেরকেও কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামণা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ্ হাফেজ।