Skip to content
Home » ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?

Bank account opening papers

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে এই প্রশ্নটি নতুন ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় কম বেশি সবারই মনে প্রশ্ন জাগে। আধুনিক যুগে একটি ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া চলা যায় না। বেতন থেকে শুরু করে লেনদেন, সবকিছুই এখন ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে হচ্ছে। কিন্তু অনেকের ধারণা, ব্যাংক একাউন্ট খোলাটা এক জটিল প্রক্রিয়া। কাগজপত্রের ঝামেলা, দীর্ঘ লাইন, অজানা নিয়ম-কানুন – সব মিলিয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন।

তবে এই হতাশা খুব দ্রুত কেটে যাবে, যদি আপনি জানতে পারেন ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি কাগজ প্রয়োজন হয়। আর বর্তমান সময়ে একটি নতুন ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানানোর জন্যই আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা হয়েছে। 

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?

বর্তমান সময়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য বেশ কিছু কাগজপত্র এর দরকার হয়। তবে যারা একবারে নতুন তারা আসলে বুঝতে পারেনা যে, ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে। তো তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা নিচে দেওয়া হলো। যেমন, 

১। পূরণকৃত ফর্ম

ব্যাংক থেকে একাউন্ট ওপেনিং ফর্ম সংগ্রহ করে তা সাবধানে পূরণ করবেন। তবে যৌথ হিসাবের জন্য অতিরিক্ত ফর্মের প্রয়োজন হতে পারে। আর এই ফরম পূরণের সময় আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন, 

  • সাবধানে নির্দেশাবলী পড়বেন এবং সঠিকভাবে তথ্য প্রদান করবেন।
  • স্পষ্ট ও সাবলীল হাতে লিখবেন।
  • ভুল তথ্য দিলে তা সংশোধন করে নিবেন।
  • অসম্পূর্ণ তথ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যথাযথভাবে সংযুক্ত করবেন।
  • স্বাক্ষর করার আগে সকল তথ্য যাচাই করে নিবেন।

২। স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ড

স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ড হল একটি কাগজপত্র যেখানে আপনার স্বাক্ষরের একটি নমুনা থাকে। ব্যাংক আপনার চেক, ডেবিট কার্ড বা অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আপনার স্বাক্ষর যাচাই করার জন্য পরবর্তীতে এটি ব্যবহার করবে।

মনে রাখবেন, স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ড ব্যাংককে আপনার আসল স্বাক্ষরের সাথে তুলনা করবে, যা জালিয়াতি রোধে সাহায্য করবে। আপনার চেক, লেনদেন স্লিপ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে ব্যবহৃত স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করতে স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ড ব্যবহার করা হয়।

৩। পরিচয়দানকারী

ব্যাংক একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে পরিচয়দানকারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, একজন বর্তমান ব্যাংক গ্রাহক যিনি নতুন গ্রাহককে চেনেন তিনি পরিচয়দানকারী হিসেবে কাজ করতে পারবেন। যদি আপনি একজন নতুন গ্রাহক হন এবং ব্যাংকে কোন পরিচিত ব্যক্তি না থাকে, তাহলে আপনাকে একজন পরিচয়দানকারী খুঁজে বের করতে হবে। এই ক্ষেত্রে, নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা পরিচয়দানকারী হিসেবে কাজ করতে পারবেন.

  • সরকারি কর্মকর্তা: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO), সহকারী কমিশনার (AC Land), শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি।
  • স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি: ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কমিশনার ইত্যাদি।
  • ব্যাংকের কর্মকর্তা: ব্যাংকের শাখা কর্মকর্তা।
  • গণ্যমান্য ব্যক্তি: সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি, ধর্মীয় নেতা, ব্যবসায়ী ইত্যাদি।

৪। ছবি

নতুন একট ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে ছবি দিতে হবে এটাতো সাধারন একটি বিষয়। তবে এই ছবি শুধু আপনার নয়, বরং আপনার ব্যাংক একাউন্টের যে নমিনী থাকবে তারও ছবি দিতে হবে। আর এই ছবি গুলো অবশ্যই সত্যায়িত হতে হবে। তাছাড়া ব্যাংক একাউন্টের জন্য প্রায় ২ থেকে ৩ কপি ছবি দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তাই আপনি প্রয়োজনের থেকেও বাড়তি ছবি নিয়ে যাওয়ার চেস্টা করবেন। 

৫। নমিনী 

নমিনী হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আপনার মৃত্যুর পর আপনার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের অর্থ নিতে পারবেন। নমিনী নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ কারণ এটি নিশ্চিত করে যে আপনার মৃত্যুর পর আপনার অর্থ পছন্দের ব্যক্তির কাছে যাবে।

ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব খোলার সময় নমিনী নির্বাচন করা বাধ্যতামূলক। আর আপনি একজন বা একাধিক নমিনী নির্বাচন করতে পারবেন। একাউন্ট খোলার সময় আপনি যাকে নমিনী হিসেবে সিলেক্ট করবেন তাকে যেকোন সময় পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে নমিনী এমন একজন ব্যক্তি হওয়া উচিত যার উপর আপনি পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন এবং আপনার মৃত্যুর পর আপনার সম্পত্তি ন্যায্যভাবে বিতরণ করবেন।

৬। জমাকৃত টাকা

এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ। প্রথমে, আপনার পছন্দের একটি ব্যাংকে যেতে হবে। তারপর, নির্ধারিত জমা স্লিপ পূরণ করতে হবে। স্লিপে আপনার নাম, ঠিকানা, অ্যাকাউন্ট নম্বর (যদি থাকে), জমা দেওয়ার পরিমাণ এবং তারিখ লিখতে হবে। 

সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবের জন্য ব্যাংক ভেদে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা জমা দিতে হয়। ডিপিএস (Fixed Deposit Savings Scheme) এর জন্য প্রতি কিস্তিতে নির্ধারিত পরিমাণ এবং এফডিআর (Fixed Deposit Receipt) এর জন্য এফডিআরের মোট পরিমাণ জমা দিতে হবে।

৭। অন্যান্য কাগজপত্র

অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পরিচয়পত্র হল জাতীয় পরিচয়পত্র এবং কমিশনার/ মেয়র/ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদ। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা নাগরিক সনদ ছাড়াও আরো বেশ কিছু কাগজপত্র ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, চাকরির পরিচয়পত্র, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ইত্যাদি। 

প্রতিষ্ঠানিক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?

আপনি যদি সাধারন ব্যাংক একাউন্ট খুলতে চান তাহলে আপনার উপরোক্ত কাগজপত্র গুলোর দরকার হবে। কিন্তুু আপনি যখন কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাংক একাউন্ট খুলতে যাবেন, তখন আপনার আরো কিছু ডকুমেন্টস এর দরকার হবে। আর এবার আমি সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত বলবো। 

যদি আপনার প্রতিষ্ঠান এখনও ব্যাংকের বাইরে লেনদেন করে, তাহলেই হয়তো আপনি সেই প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন! আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অপরিহার্য। কারন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শুধুমাত্র লেনদেন সহজ করার জন্যই নয়, বরং এটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

তবে যখন আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন ব্যাংকে নতুন একাউন্ট তৈরি করবেন, তখন আপনার আরো কিছু বাড়তি ডকুমেন্টস দিতে হবে। যদিওবা ব্যাংক ভেদে সেই ডকুমেন্টস কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তবে স্বাভাবিক ভাবে সব ব্যাংকে যেসব ডকুমেন্টস চায় সেগুলো নিচে দেওয়া হলো। যেমন, 

প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন

  • ট্রেড লাইসেন্স
  • একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে রেজ্যুলেশন
  • নির্দিষ্ট ব্যাংক শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি 
  • একাউন্ট পরিচালনাকারীদের নাম ও পদবীসহ সিদ্ধান্ত 
  • রেজ্যুলেশনে পর্ষদ/বোর্ড/গভর্নিং বডির সদস্যদের স্বাক্ষর থাকতে হবে

অতিরিক্ত কাগজপত্র (প্রতিষ্ঠানের ধরণ অনুযায়ী):

  • পার্টনারশিপ ফর্ম।
  • সমিতির গঠনতন্ত্র ও রেজিস্ট্রেশন।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনপত্র।
  • এনজিও ব্যুরো থেকে লাইসেন্স।

প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য

  • সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন।
  • মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন।
  • আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন।

পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য

  • সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন।
  • মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন।
  • আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন।
  • সার্টিফিকেট অব কমেন্সমেন্ট অব বিজনেস।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে- সে বিষয়ে উপরের আলোচনায় বিস্তারিত বলা হয়েছে। তবে অনেক ব্যক্তির মনে এই বিষয়টি সম্পর্কে আরো নানা ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। আর সেগুলোর মধ্যে কিছু প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হলো। 

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে?

বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাংকেই এখন জিরো টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে। তবে, অ্যাকাউন্ট খোলার পর প্রাথমিক জমা (Primary Deposit) প্রদান করতে হবে। এই প্রাথমিক জমা ব্যাংক ও অ্যাকাউন্টের ধরণ অনুযায়ী ১০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

ব্যাংকে কত টাকা রাখলে ট্যাক্স দিতে হয়?

আমাদের অর্থনৈতিক জীবনের সাথে ব্যাংকিং ব্যবস্থা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। লেনদেন, ঋণ, সঞ্চয় – সবকিছুর জন্যই আমরা ব্যাংকের উপর নির্ভর করি। কিন্তু, ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। এর মধ্যে একটি হল রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র।

এটি হল একটি আনুষ্ঠানিক নথি যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একজন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে জমা টাকার পরিমাণের সঠিক তথ্য প্রদান করে। সাধারণত, যদি একজন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ ১০ লাখ টাকা অতিক্রম করে, তাহলে ব্যাংকে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দিতে হবে।।

উপসংহার

নতুন কোন ব্যাংক একাউন্ট খোলার আগে আপনাকে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে আপনার যেকোন ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খোলার কাজটি সহজ হবে। আর সেই উদ্দেশ্যে আজকে ব্যাংক একাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয় বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এছাড়াও আপনার ব্যাংকিং জ্ঞানকে আরোও প্রসারিত করার জন্য সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কি কি – নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

“ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে” বিষয় গুলো সম্পর্কে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তাহলে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *