Skip to content
Home » রাতের আকাশে কি কি দেখা যায়?

রাতের আকাশে কি কি দেখা যায়?

visible in the night sky

রাতের আকাশে কি কি দেখা যায় এই বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করার মাধ্যমে রাতের আকাশ সম্পর্কে আমরা ধারনা রাখতে পারি। আমরা জানি, দিনের আকাশে যা কিছু দৃশ্যমান তার অনেক কিছুই রাতের আকাশে দেখা যায় না। রাতের আকাশে অসংখ্য নক্ষত্রের অপূর্ব মিলনমেলা। দিনের আকাশ উজ্জ্বল হলেও রাতের আকাশ যেন রহস্যময় অসংখ্য আলো, আঁধারের লুকোচুরি খেলার মাঠ। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে টেলিস্কোপের সাহায্য নিয়ে থাকেন অনেকেই। আবার এই সূর্য, চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্রগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে। আজকের আর্টিকেলে আমরা রাতের আকাশে কি কি দেখা যায় সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

রাতের আকাশে কি কি দেখা যায়?

পৃথিবীর মাটি থেকে রাতের আকাশে কি কি দেখা যায় তা উপভোগ করতে হলে অবশ্যই মরুভূমিতে রাতের আকাশ দেখা উচিত। কেননা আলো বিহীন অন্ধকার রাতের আকাশে নক্ষত্র, গাল্যাক্সি ও মিল্কিওয়ের মিলন মেলা বসে। তাছাড়া উল্কাপিন্ড, গ্রহ, উপগ্রহ ও পূর্ণিমায় চাঁদ দেখা যায়। রাতের আকাশে দেখা জিনিস গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-

১। চাঁদ

চাঁদ হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। একই সাথে চাঁদ সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ গুলোর মধ্যে পঞ্চম। চাঁদের আয়তন ২.১৯৫৮×১০১০ কিমি³ ও ওজন ৭.৩৪২×১০২২ কেজি। পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব হচ্ছে ৩৮৪, ৪০০ কি.মি। চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। ২৯.৫২ দিনে চাঁদ সমগ্র পৃথিবীর পাশে একবার ঘুরতে পারে। ১৯৬৬ সালে প্রথম বার চাঁদের কক্ষপথে রাশিয়ান যান লুনা ৯ ঘুরতে সক্ষম হয়।

পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১ অভিযানের মাধ্যমে প্রথম মানুষ বাহী নভোযান চাঁদে অবতরণ করতে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্র। নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন এই দুজন প্রথম চাঁদের মাটিতে অবতরণ করেন।

২। নক্ষত্র বা তারকা

তারকা হচ্ছে মহাকাশে অবস্থিত বিভিন্ন রাসয়নিক পদার্থ দিয়ে গঠিত বস্তু, যা নিজের অভ্যন্তরীণ রাসয়নিক পদার্থ ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে জ্বালিয়ে নিজেদের উজ্জ্বলতা প্রদর্শন করে। প্লাজমা দশায় অতি উজ্জ্বল অবস্থায় সাধারণ তারা আকাশে থাকে। জ্যোতি র্বিজ্ঞানীরা তারার গঠন, অবস্থা, তাপ, চাপ, দীপন ক্ষমতা, বর্ণালী, রাসয়নিক শক্তি সম্বন্ধে বিস্তারিত ধারণা প্রদান করেন। তারা সাধারণত আট প্রকার হয়। মহাবিশ্বে আবিস্কৃত এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বৃহত্তম তারা হচ্ছে ইউওয়াই স্কুটি (UY Scuti), যেটি পৃথিবীর চেয়ে ১০০০ গুণ বড়।

৩। গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ

মহাকাশে থাকা তারা, গ্যাস, ধুলিকণা ও অন্যান্য ডার্ক ম্যাটারের পদার্থ সমূহ মহাকর্ষীয় বলের দ্বারা যে একটি গোলাকার অবস্থায় আবদ্ধ থাকে, তাকেই গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ বলে। গোলকার, উপবৃত্তাকার, সর্পিলাকার সহ বিভিন্ন আকৃতির গ্যালাক্সির দেখা পাওয়া যায়। একটি গ্যালাক্সিতে শত শত কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে। ইতালীয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও সর্বপ্রথম ছায়াপথ বর্ণনা করেন ১৬১০ সালে।

পৃথিবী যেই ছায়াপথে অবস্থান করছে, তার নাম আকাশগঙ্গা। আকাশগঙ্গা ছায়াপথ কে মিল্কিওয়েও (Milky Way) বলা হয়ে থাকে। আকাশ গঙ্গায় ২০০-৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র আছে। প্রতিটি নক্ষত্র, গ্রহ কিংবা উপগ্রহ নিজেদের মাঝে কয়েক হাজার আলোক বর্ষ দূরে অবস্থান করে।

৪। ধুমকেতু

বরফ ও গ্যাস দিয়ে তৈরি এক প্রকারের মহাজাগতিক বস্তুই হলো ধুমকেতু। এটি সাধারণত সূর্যের খুব কাছ দিয়ে চলাচল করে। পরিভ্রমণের সময় এর পিছনে একটি লেজের মতো অংশ দেখা যায়। এগুলো কয়েক শত কি.মি লম্বা ও কয়েক কি.মি প্রস্থ বিশিষ্ট হয়। একটি ধুমকেতু প্রায় কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত সচল থাকতে পারে। নেপচুনের কক্ষপথ ও ওরট মেঘ থেকে সাধারণত ধুমকেতুর উৎপত্তি হয়।

২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬৬১৯ টি ধুমকেতু দেখা গেছে। কিছু ধুমকেতু পরিভ্রমণের পর আবার আগের জায়গায় ফেরত আসে, যেমন হ্যালির ধূমকেতু। বিজ্ঞানী হ্যালি দেখান যে, একটি ধুমকেতু ৭৫-৭৭ বছর পর পর আবার দেখা যায়। এজন্য একে হ্যালির ধুমকেতুও বলা হয়। সৌরজগত ছেড়ে চলে যাওয়া, উদ্বায়ী পদার্থ শেষ, খন্ড খন্ড অথবা সংঘর্ষের মতো ঘটনায় ধুমকেতুর পর্যায়কাল শেষ হয়।

৫। উল্কাপিন্ড

উল্কাপিন্ড হলো যেকোনো ধ্বংসাবশেষ থেকে উৎপন্ন একটি কঠিন টুকরো। পৃথিবীতে বা চাঁদে এই প্রকারের কোনো উল্কাপিণ্ড আঘাত করার পূর্বেই সেটি সাধারণত বাতাসের ঘর্ষণে ধ্বংস হয়।

৬। গ্রহ

গ্রহ হচ্ছে মহাবিশ্বের সেই সমস্ত দানবাকৃতির গোলাকার বস্তু, যেগুলোর কোনো নিজস্ব নিউক্লিয় বিক্রিয়া করার মতো পদার্থ নেই এবং নিকটস্থ কোন তারকাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই তারকা সাধারণত তার সব গ্রহ গুলোকে দূরে সরিয়ে দেয়। গ্রহ সমূহ মূলত নক্ষত্র এর ধ্বংসাবশেষ থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছে।

গ্রহ কে ইংরেজিতে প্ল্যানেট (Planet) বলা হয়। বিজ্ঞানী টলেমি সর্বপ্রথম গ্রহের ধারণা নিয়ে আসেন। সৌরজগতের গ্রহের সংখ্যা আটটি। গ্রহদের সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায় তাহলোঃ গ্যাসীয় গ্রহ এবং দানবাকৃতির পাথরের গ্রহ। বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন এই চারটি গ্রহ হচ্ছে গ্যাসীয় গ্রহ। বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গলের মতো ভূপৃষ্ঠ থাকা গ্রহ গুলো হচ্ছে দানবাকৃতির পাথরের গ্রহ। মহাকাশের মোট ছয়টি গ্রহের আবার আলাদা উপগ্রহ আছে। যেমন চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ।

৬। উপগ্রহ

উপগ্রহ হচ্ছে একটি মহাকাশীয় বস্তু যারা একটি বড় গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে। উদাহরণস্বরূপ, চাঁদ পৃথিবীর চারপাশের কক্ষপথে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। পৃথিবীর যেমন চাঁদ, তেমনই মহাকাশের অন্য ছয়টি গ্রহের আরও সর্বমোট ২৪০ টি উপগ্রহের কথা জানা গেছে। বৃহস্পতির গ্যানিমেড, মঙ্গলের টাইটান এর মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম উপগ্রহ। আবার বামুন গ্রহ যেমন প্লুটো, এরিসেরও আলাদা উপগ্রহ আছে। উপগ্রহ সমূহ বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে।

আবার এসব প্রাকৃতিক উপগ্রহ ছাড়াও কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাচ্ছে বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন পরিষেবার জন্য। যোগাযোগ, গবেষণা, দিকনির্ণয়, পরিদর্শন, মহাকাশ স্টেশন সহ বিভিন্ন কাজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ অনেক উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছে। এইসব উপগ্রহ গুলো পৃথিবী কে কেন্দ্র করে ঘুরছে। স্পুটনিক পিএস হলো ১৯৫৭ সালে রাশিয়ার পাঠানো পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ।

৭। মেঘ

আকাশে দেখা যায় এমন দৃশ্যমান ক্ষুদ্র, ঠান্ডা তরলের ফোটার স্ফটিক-ই হচ্ছে মূলত মেঘ। অনেক সময় মেঘ গ্রহাণু দ্বারাও গঠিত হয়। স্ট্রাটোস্ফিয়ার, হেমিস্ফিয়ার ও ট্রাপোস্ফিয়ার এই তিনটি স্তর থেকে সাধারণত আমরা মেঘদের দেখতে পায়। মেঘের ইংরেজি হচ্ছে ক্লাউড (Cloud)। মেঘ সাধারণত জলকণা দ্বারা গঠিত হয়। রাতের আকাশে উজ্জ্বল চাঁদের সাথে ট্রাফোস্পিয়ার অঞ্চলে থাকা প্রতিফলিত হয় চাঁদের আলোয়। ফলে পূর্ণিমা রাতেও আকাশ জুড়ে সাদা মেঘ দেখা যায়।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

রাতের আকাশে কি কি দেখা যায় এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর-

নক্ষত্র বা তারা কাকে বলে?

হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দ্বারা পূর্ণ বিশাল মহাকাশীয় বস্তু যাদের মধ্য নিউক্লিয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ উৎপন্ন হয়ে জ্বলন্ত অবস্থায় থাকে, সেগুলো কে মূলত নক্ষত্র বা তারা বলে।

কয়টি নক্ষত্র আবিস্কৃত হয়েছে এখনো পর্যন্ত?

পৃথিবীতে এখনো পর্যন্ত ৮৪ মিলিয়ন নক্ষত্র আবিস্কৃত হয়েছে।

সবচেয়ে উষ্ণ গ্রহ কোনটি?

সবচেয়ে উষ্ণ গ্রহ হলো শুক্র গ্রহ। এই গ্রহের তাপমাত্রা ৪৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

উপসংহার

রাতের আকাশে কি কি দেখা যায়? এই ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত ধারণা লাভ করলাম উপরোক্ত আর্টিকেল থেকে। চাঁদ, গ্যালাক্সি, গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদির সবগুলোই আমাদের সৌরজগতের অপরিহার্য অংশ। কোন একটি সৌরজগতে না থাকলে সমগ্র সৌরজগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষ পৃথিবী গ্রহের অংশ হিসেবে সৌরজগতেরই অংশ। এই পৃথিবীর পরিবেশ সুন্দর রাখা আমাদের সকলের কর্তব্য। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে দিনের আকাশে কি কি দেখা যায়? এই পোস্টটি পড়তে পারেন।

“রাতের আকাশে কি কি দেখা যায়?” এই বিষয়ে সমন্ধে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তাহলে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *