জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে এই সমন্ধে অবগত হওয়া একজন ব্যক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের অর্জিত সম্পদের মধ্য অন্যতম সম্পদ হলো জমি। মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে যেমন জমি ক্রয় করে আবার অর্থের প্রয়োজন হলে বিক্রয় করে। সেই জমিটি হতে পারে নিজস্ব অথবা অন্য কারও কাছ থেকে ক্রয় করে অথবা উত্তরাধিকার সূত্রে। সম্পদ ক্রয়-বিক্রয় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় বরং একটি সম্পত্তির পরিপূর্ণ সত্যায়িতকরণ করা খুবই প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন জমি খারিজ করা। আজকের এই পোস্টটিতে জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে এই বিষয় নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাই এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।
জমি খারিজ কি?
জমি খারিজ হলো রাষ্ট্রীয় ও প্রজাতন্ত্র আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারা অনুসারে যদি কোন ব্যক্তি কোন জমি ক্রয় করার পর কিংবা ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জমির মালিকানা লাভ করার পর , পূর্বের মালিকের নামের পরিবর্তে নতুন ক্রেতার নাম জমি সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ক্রেতা বা নতুন মালিকের নামে নতুন খতিয়ান খোলার বা রেকর্ড করার হালনাগাদ করণের যে কার্যক্রম রয়েছে তাকে জমি খারিজ বলা হয়।
জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে?
প্রয়োজনের তাগিদের মানুষ জমি ক্রয় করে থাকে। তাই নতুন জমি ক্রয় করলে খারিজ করা প্রয়োজন। এজন্য জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে এই সমন্ধে জেনে রাখা প্রয়োজন। জমি খারিজ বা মিউটেশন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১। জাতীয় পরিচয় পত্র
জমি খারিজ বা মিউটেশন করতে সবচেয়ে যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে জাতীয় পরিচয় পত্র বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড। জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া একজন ব্যক্তি কোন দেশের নাগরিক এটি সত্যায়িত করা অসম্ভব। তাই জমি খারিজ করার জন্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হবে। কেননা জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যেমে একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। বর্তমানে দেশে স্মার্ট কার্ড চালু হওয়ার কারণে জমি খারিজ করতে আরও বেশী সহজ হয়েছে। তাই জমি খারিজের জন্য স্মার্ট কার্ড সাথে রাখবেন। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবে যে ব্যক্তির নামে জমি খারিজ হবে সেই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্র কি না।
২। এক কপি ছবি
জমি খারিজের জন্য অবশ্যই ব্যক্তির এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবির প্রয়োজন হবে। পাসপোর্ট ছবি ব্যতীত অন্য কোন ছবি গ্রহনযোগ্যতা পায় না। পাসপোর্ট সাইজের একটি নির্দিষ্ট ছবি এতটাই প্রয়োজন যে এটি ছাড়া ব্যক্তিটির বাহ্যিক গঠন বা চেহারা সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তাই জমি খারিজ করার জন্য পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন।
৩। দলিলপত্র
জমি খারিজ করার জন্য জমির দলিলপত্র বা ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হবে। দলিলপত্র ছাড়া জমি খারিজ করার সম্ভব নয়। কেননা জমির দলিলপত্র এমন একটা জিনিস যার মাধ্যমে জমির সকল তথ্য পাওয়া যায়।
৪। ব্যক্তি স্বাক্ষর
জমি খারিজের জন্য ব্যক্তির স্বাক্ষর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুধুমাত্র স্বাক্ষর সেই ব্যক্তির হবে যে ব্যক্তিটি জমি খারিজ করতে এসেছে। যে ব্যক্তিটি খারিজ করতে এসেছে যদি সেই ব্যক্তির স্বাক্ষর না দিয়ে অন্য ব্যক্তি স্বাক্ষর দিয়ে থাকে, তবে যে ব্যক্তির প্র্যাপ্য জমির পাওয়ার কথা ছিল সে ব্যক্তিটি পাবে না বরং যে ব্যক্তটি ভুল স্বাক্ষর দিয়েছে সেই ব্যক্তি জমির মালিক হয়ে যাবে। তাই স্বাক্ষরের বিষয়ে খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
৫। খাতিয়ানের ফটোকপি
জমি খারিজ করার জন্য খাতিয়ানের ফটোকপির প্রয়োজন হবে। জায়াগা-জমি পরিমাপের ক্ষেত্রে খতিয়ান “হিসাব” হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। খতিয়ান হলো জমির মালিকানা স্বত্ব নির্ণয়ের জন্য সরকার প্রদত্ত যে দলিল প্রদান করা হয়েছে তাকে খতিয়ান বলা হয়। আমাদের দেশের অঞ্চল ভেদে খতিয়ান-কে ভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন: এস এ খতিয়ান, আর এস খতিয়ান।
৬। বায়া দলিলের ফটোকপি
যার কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করা হবে সেই ব্যক্তির দলিল হচ্ছে বায়া দলিল। শুধু যে বায়া দলিল পর্যন্তই সীমাবদ্ধতা রয়েছে বিষয়টা এরকম নয় বরং বায়া দলিল ছাড়াও জমির আগের সকল দলিল প্রয়োজন হতে পারে। যদিও সর্বক্ষেত্রে বায়া দলিল প্রয়োজন হয় না যদি প্রয়োজন হয় তবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭। ওয়ারিশিয়ান সনদপত্র
এলাকার পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশিয়ান সনদপত্র প্রদান করা হয়। সাধারণত পরিবারের কোন ব্যক্তি মারা গেলে সে ব্যক্তির কাছ থেকে পরিবারের সদস্যদের যে পরিমাণ সম্পদ পাওয়ার কথা ছিল অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের সদস্যরা তারা তাদের প্রাপ্য বঞ্চিত হয়। এক্ষেত্রে ওয়ারিশিয়ান সনদপত্র অনেক ভূমিকা পালন করে। ওয়ারিশিয়ান সনদপত্র এমন একটি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যার মাধ্যেমে পরিবারের কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পরে তার কাছ থেকে যদি কোন সদস্য জমি প্রাপ্য থাকে তবে ওয়ারিশিয়ান সনদপত্রের মাধ্যেমে তার প্রাপ্য জমি বা সম্পদ সহজেই পেয়ে যেতে পারে। সুতরাং জমি খারিজ করতে ওয়ারিশিয়ান সনদপত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮। জমি উন্নয়ন কর পরিশোধের কপি
যেকোন জমি বা সম্পত্তি অর্জনের পর সরকারকে কর প্রদান করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। জমি খারিজ করার জন্য কর প্রদানের রেকর্ড অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ডকুমেন্টস যা জমি উন্নয়েন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর-
জমি খারিজ করতে কত টাকা খরচ হয়?
জমি খারিজ করতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি হলো ১১৫০ টাকা। অর্থাৎ জমি খারিজ করতে আপনার ১১৫০ টাকা খরচ হবে।
জমি খারিজ করতে কত দিন সময় লাগে?
জমি খারিজ করতে ২৮ দিন সময় লাগতে পারে। সহকারী কমিশনার ভূমি বা এ সি ল্যান্ড এই আবেদনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে অফিস সহকারী অনলাইনে এর খতিয়ান প্রস্তুত করে থাকে।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা দিনের জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। বর্তমান সময়ে জমি খারিজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এজন্য জমি খারিজ করার পদ্ধতি ও জমি খারিজ করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে এই সমন্ধে জ্ঞান রাখা প্রয়োজন। জমি খারিজ প্রক্রিয়া ছাড়া জমির মালিকানা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কেউ যদি জমি খারিজ প্রক্রিয়া ছাড়া জমি আদায় করতে চায় তাহলে এটি রাষ্ট্রীয়ভাবে অবৈধ বলে গণ্য করা হবে।
আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে এই সমন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়াও আপনি প্রকৃতি সমন্ধে জানতে ধান কোন মাটিতে ভালো হয়? তা জেনে রাখতে পারেন।
“জমি খারিজ করতে কি কি কাগজ লাগে?” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।