Skip to content
Home » জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়?

জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়?

Problems during jaundice

জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয় এ সম্পর্কে অবগত হওয়া একজন স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অত্যাধিক হারে বেড়ে গেলে প্রস্রাবের রং, চোখের শ্বেতমণ্ডল বা স্ক্লেরা, ত্বক ও মুখের ভেতর হলুদ দেখায়। এই অবস্থাকে আমরা সাধারণত জন্ডিস জন্ডিস বলে জানি। আমাদের রক্তের লোহিত কণিকাগুলো একটা সময়ে স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙ্গে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে যা পরবর্তীতে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে তারপর পিত্তরসের সাথে পিত্তনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। আজকের এই পোস্টটি জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয় তা নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাই আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল।   

জন্ডিস কী?     

জন্ডিস হচ্ছে মানুষের রক্তে যখন বিলিরুবিনের মাত্রা  অত্যাধিক বেড়ে যায় এবং প্রস্রাবের রং, চোখের শ্বেতমণ্ডল বা স্ক্লেরা, ত্বক ও মুখের ভেতর হলুদ দেখায় তখন জন্ডিস বলা হয়।   জন্ডিস মূলত কোন রোগ নয়, এটি একটি রোগের লক্ষণ মাত্র। জন্ডিস  ইংরেজিতে  ইক্টেরাস (icterus) নামেও পরিচিত। রক্তে বিলিরুবিনের ঘনত্ব 1.2 mg/dL এর নিচে থাকে (25 µmol/L এর নিচে)। 3 mg/dL বা 50 µmol/L এর বেশি হলে মানুষের জন্ডিস হয়ে থাকে। জন্ডিস শব্দটি ফরাসি শব্দ jaunisse, থেকে এসেছে যার অর্থ হলুদাভ। 

জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়?

জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়? এই প্রশ্নটি আমাদের বরাবরই উঁকি দেয়। কারণ জন্ডিস এমন এক ধরনের রোগের লক্ষণ যা মানুষের ত্বক ও মুখের ভেতর হলুদ দেখায়। নিম্নে জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে তা উল্লেখ করা হলো-

  • জন্ডিস হলে চোখ হলুদ হয়ে যায় ও প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া আবার সমস্যা বেশি হলে পুরো শরীর গাঢ় হলুদবর্ণ ধারণ করে
  • খাওয়ার রুচি বন্ধ হয়ে যায়
  • বমি বমি ভাব দেখা দেয়
  • মৃদু বা তীব্র পেট ব্যথা হয়
  • শারীরিক দুর্বলতা
  • অনেকসময় পায়খানা সাদা হয়ে যাওয়া
  • শরীর কাঁপানি দিয়ে জ্বর আসে
  • যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া।

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি শরীরে জন্ডিস হলে এ সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই এসব উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ  একজন লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।  চিকিৎসক শারীরিক লক্ষণ এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিসের তীব্রতা ও কারণ নির্ণয় করা হয় এবং প্রয়োজনীয় সকল চিকিৎসার নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

জন্ডিস হওয়ার কারণ সমূহ 

প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের শরীরে যদি রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। সাধারণত লিভারের রোগই জন্ডিসের প্রধান কারণ। আমরা যা কিছু খাই তা লিভারেই প্রক্রিয়াজাত হয়। লিভার বিভিন্ন কারণে রোগাক্রান্ত হতে পারে। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাসগুলো লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে যাকে বলা হয় ভাইরাল হেপাটাইটিস। । উন্নত দেশগুলোতে অতিরিক্ত মদ্যপান জন্ডিসের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। 

জন্ডিস প্রতিরোধের উপায় সমূহ

যদি কোন কারণবশত আমাদের জন্ডিস হয় বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে জন্ডিস প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যেমন-

  • রাস্তাঘাটের অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশের খাবার গ্রহণ না করা
  • বিশুদ্ধ পানি পান করা
  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা 
  • নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করা
  • ধূমপান কিংবা মদ্যপান থেকে দূরে থাকা
  • ড্রেনেজ ব্যবস্থা আর নিরাপদ পানীয় জলের সরবরাহ ব্যবস্থা করা খুবই জরূরী।  কারণ পানিবাহিত হেপাটাইটিস ‘ই’ ছড়ানোর ঝুঁকিটা খুবই বেশি থাকে।
  • হোপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করা।
  • নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করা।
  • দেহের অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস ও ফ্যাটিলিভারের চিকিৎসা গ্রহণ করা।
  • জন্ডিস হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা। 
  • কল কারখানার নির্গত রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। 

জন্ডিসের চিকিৎসা সমূহ  

জন্ডিস হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু জন্ডিস কোন রোগ নয়, তাই এর কোনো ওষুধ নেই। এক সপ্তাহ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস এমনিতেই সেরে যাবে। তবে এই সময়ে আপনাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। এ সময় ব্যথার ওষুধ যেমন: প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ঘুমের ওষুধসহ অন্য কোনো অপ্রয়োজনীয় ও কবিরাজি ওষুধ খাওয়া যাবে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই বাস্তবে সেবন করা উচিত হবে না।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ 

জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয় এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।

জন্ডিস কত প্রকার ও কি কি? 

জন্ডিস সাধারণত ৩ প্রকাররের হয়। যেমনঃ প্রিহেপাটিক জন্ডিস,হেপাটোসেলুলার জন্ডিস ও পোস্ট হেপাটিক জন্ডিস বা অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস।

জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাব? 

যেহেতু জন্ডিস কোন রোগ নয়। তাই জন্ডিসের জন্য এর কোনো ওষুধ নেই। এক সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস এমনিতেই সেরে যায়।

উপসংহার 

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা আঁশযুক্ত জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয় ও কত প্রকার ও জন্ডিস প্রতিরোধের উপায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। জন্ডিস কোন রোগ নয় বরং রোগের লক্ষণ মাত্র। তাই জন্ডিস হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিলে এমনিতেই জন্ডিস সেরে যাবে।  আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয় এই সমন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়াও স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে আপনি আঁশযুক্ত খাবার কি কি? এই পোস্টটি পড়তে পারেন।

জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়?” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *