জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে জন্ম নিবন্ধন করতে আগ্রহীদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জন্ম নিবন্ধন হলো একজন মানুষের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি সে কোন দেশের নাগরিক। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে সরকারিভাবে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মূলত জন্ম নিবন্ধন হলো একজন ব্যক্তির নাম, বয়স, পরিচয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের একটি সরকারি ডকুমেন্ট যা নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্যই বরাদ্দ থাকবে। একটি জরিপ থেকে জানা গেছে আমাদের দেশে বর্তমানে ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন ও জন্ম সনদ তৈরি করা হয়েছে ১৫ কোটি মানুষের। যার ফলে এখনও প্রায় এক কোটি এর উপরের মানুষের জন্ম নিবন্ধন এখনো করা হয়নি। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানা ও সতর্ক হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একান্ত জরুরী। জন্ম নিবন্ধন একজন ব্যক্তির নাগরিকত্বের সর্বপ্রথম নথিপত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে দেশের অন্যান্য নাগরিকদের মতো সমঅধিকার ও সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যায়। শিশুর জন্মের পর জন্ম নিবন্ধন করার অধিকার সম্পর্কে জাতিসংঘের শিশু সনদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
জন্ম নিবন্ধন কি?
জন্মগ্রহণের পর একটি শিশুর পরিচয়বাচক তথ্য দিয়ে সরকারি বা নাগরিকত্বের তালিকায় নিবন্ধন করাই হলো জন্ম নিবন্ধন। জন্ম নিবন্ধন হলো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ এর আওতায় একজন মানুষের নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, বাবা-মায়ের নাম, তাদের জাতীয়তা এবং স্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃক রেজিস্টারে লেখা বা কম্পিউটারে এন্ট্রি প্রদান করা এবং জন্ম সনদ প্রদান করা। নিবন্ধন করার পর নিবন্ধকের কার্যালয় থেকে উক্ত ব্যক্তিকে একটি সনদ প্রদান করা হয়। এই সনদের আলোকেই একটি শিশু তার নাম, বয়স ও তার জাতীয়তার স্বীকৃতি পায়। জন্ম নিবন্ধন সকল বয়সী নাগরিকদের জন্যই একটি মৌলিক অধিকার। এই সনদ অনুযায়ী-ই একজন ব্যক্তি অন্যান্য নাগরিক পরিচয়পত্র ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা লাভ করে থাকে।
জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে?
একজন বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য জন্ম সনদ হলো তার জন্ম, বয়স, পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রাথমিক প্রমাণপত্র। ভোটার আইডি কার্ড হওয়ার আগে সকল সরকারি কর্মকান্ডেই জন্ম নিবন্ধন দেখাতে হয়।। জন্ম সনদ তৈরি করার নিয়ম হলো নির্ধারিত আবেদন ফর্ম পূরণ করে নিবন্ধকের নিকট কিছু দলিল বা প্রত্যয়নসহ গিয়ে আবেদন করা। এছাড়া অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যাবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে।
শিশুর বয়স ০ থেকে ৪৫ দিন হলে জন্ম নিবন্ধন করতে যা যা লাগবে
যে সকল শিশুর বয়স ৪৫ দিনের নিচে অর্থ্যাৎ মাত্র জন্মগ্রহন করেছে তারে জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে যা যা লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- শিশুর বাবা ও মায়ের জতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি অথবা বাবা ও মায়ের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন লাগবে।
- সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি বা যে কোন জন্ম প্র্রমান।
- হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি অথবা ইউ.পি ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি নিয়ে আসতে হবে।
- আবেদনকারীর (শিশুর) ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি। অবশ্যই ল্যাব প্রিন্ট হতে হবে।
শিশুর বয়স ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত হলে জন্ম নিবন্ধন করতে যা যা লাগবে
যে সকল শিশুর বয়স ৪৫ দিনের উপরে আবার ৫ বছরের নিচে সেই সকল শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে যা যা লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- ইপিআই কার্ড বা টিকা কার্ড এর সত্যায়িত ফটোকপি অথবা ইপিআই কর্মীর প্রত্যয়নপত্র সাথে নিয়ে আসতে হবে।
- হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি অথবা ইউ.পি ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি সাথে নিয়ে আসতে হবে।
- শিশুর বাবা ও মায়ের জতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি অথবা বাবা ও মায়ের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন লাগবে।
- আবেদনকারীর (শিশুর) ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ এর ছবি। অবশ্যই ল্যাব প্রিন্ট হতে হবে।
বয়স ৫ বছরের বেশি হলে জন্ম নিবন্ধন করতে যা যা লাগবে
যে সকল শিশুর বয়স ৫ বছরের উপরে তবে অবশ্যই ১৫ বছরের ( এর উপরে হলে প্রাপ্তবয়স্ক ধরা হবে) নিচে তাদের জন্ম সনদ তৈরি করতে যা যা লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- উপযুক্ত চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র, অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, অর্থাৎ পি.এস.সি/জে.এস.সি/এস.এস.সি অনুরূপ পরীক্ষার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি সাথে আনতে হবে।
- হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি অথবা ইউ.পি ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের ফটোকপি লাগবে।
- শিশুর বাবা ও মায়ের জতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি অথবা বাবা ও মায়ের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন লাগবে।
- আবেদনকারীর ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি। তবে অবশ্যই ল্যাব প্রিন্ট হতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন কি কি কাজে লাগে?
জন্ম সনদ একজন নাগরিকের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাগজ বা দলিল যা প্রমান করে যে, সে কোন দেশের নাগরিক। শুধুমাত্র সার্টিফাইড নাগরিককেই দেশ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য। তাই সরকারি ও বেসরকারি সকল সুযোগ সুবিধা লাভের জন্য অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন। জন্ম নিবন্ধনের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সকল সরকারি কাগজপত্র ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যায়। তাছাড়া সরকারি যে কোন কাজে অংশগ্রহনের জন্য অবশ্যই নাগরিকত্তের প্রমান দিয়ে অংশগ্রহন করতে হয় যার প্রথম ধাপই হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন।
- পাসপোর্ট ইস্যু
- বিবাহ নিবন্ধন
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
- সরকারী, বেসরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় নিয়োগদান
- ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু
- ভোটার তালিকা প্রণয়ন
- জমি রেজিষ্ট্রেশন
- ব্যাংক হিসাব খোলা
- আমদানি ও রপ্তানী লাইসেন্স প্রাপ্তি
- গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি
- ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি
- ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি
- বাড়ির নকশা অনুমোদন প্রাপ্তি
- গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্তি
- ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি
- জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
একই ব্যক্তি একাধিকবার জন্ম সনদ তৈরি করতে পারবে কি?
জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম অনুযায়ী একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার জন্ম সনদ তৈরি করা যাবে না। এটি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ এর ২১ ধারা অনুযায়ী একটি দন্ডনীয় অপরাধ।
জন্ম নিবন্ধন ফি কত টাকা?
শিশুর বয়স যদি ৪৫ দিনের কম হয়, তাহলে জন্ম নিবন্ধন ফি দিতে হবে না। বয়স ৪৫ দিন থেকে ৫ বছরের মধ্যে হলে ২৫ টাকা জন্ম নিবন্ধন ফি দিতে হবে। ৫ বছর বয়সের বেশি হলে ৫০ টাকা ফি দিতে হয়। সরকার নির্ধারিত ফি অনুসারে জন্ম সনদের আবেদন করার সময় অবশ্যই ফি জমা দিতে হবে।
উপসংহার
বর্তমানে বাংলাদেশে একটি শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নাগরিকত্বের মর্যাদা পেতে ও সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে জন্ম নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক ও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিশুর প্রাথমিক সুযোগ-সুবিধা ও ভবিষ্যতে সকল সরকারি ও বেসরকারি সুবিধা ভোগ করতে জন্ম সনদ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এই সনদের উপর ভিত্তি করে একটি শিশুকে পূর্ণাঙ্গ ও প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে তৈরি করার জন্য সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে সরকার। এই সনদি প্রমান করে সে কোন দেশের নাগরিক। এটি না থাকলে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি, মর্যাদা ও আইনি সুবিধা পাওয়া যাবে না। কারন প্রতিটি দেশ তার নাগরিকদের মৌলিক সুবিধা দিতে বাধ্য। আর নাগরিক হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্তই হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন। তাই প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকের প্রাথমিক পরিচয়পত্র হিসেবে জন্ম নিবন্ধন করার প্রয়োজনীয়তা অনেক। তাই জন্ম নিবন্ধন করার আগে অবশ্যই জানা দরকার জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে । এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৫টি কারণ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।