পিরিয়ডের সময় কি কি খাওয়া যাবে না তা জানা প্রতিটি নারীর খুবই দরকার। পিরিয়ড অথবা মাসিক বা ঋতুস্রাব প্রত্যেক নারীর স্বাভাবিক জীবনচক্রের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। একজন নারীর নিয়মিত ও সঠিকভাবে মাসিক হওয়ার অর্থই হলো তিনি সন্তান ধারণে সক্ষম। পিরিয়ড নারীদের প্রজনন প্রক্রিয়াতে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সাধারণত ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সেই মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয়ে যায়। গড়ে ২৮ দিন পরপর এটা হয়ে থাকে। এ মাসিক চক্রটা আবার কারও কারও ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ২১ বা ৩৫ দিন পরপর হতে পারে এবং ৫০ থেকে ৫২ বছর বয়সে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। পিরিয়ড নারীদের প্রতি মাসের একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। তবে এ সময়ে নারীদের খাবারদাবারের প্রতি হওয়া উচিত অধিক যত্নশীল ও সচেতন।
পিরিয়ডে যেমন শরীরে নানা ঘাটতি পূরণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ প্রয়োজন, তেমনি কিছু খাবার থাকে যেগুলো পরিহার করাও খুবই প্রয়োজন। পিরিয়ড চলাকালে ডায়েটের প্রতি হতে হবে অধিক সচেতন। মেয়েদের পিরিয়ডের দিনগুলোতে ব্যথা, অস্বস্তি ও মেজাজের পরিবর্তন হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কারও বেশি খিদে পায়, মিষ্টি খেতে মন চায়, কারও পেট নরম হয়, কারও আবার বমি বমি লাগে। পিরিয়ডকালে এসব সমস্যা কমাতে ডায়েট জরুরি। পিরিয়ডের সময় সব ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না। আর পিরিয়ডের সময় শারীরিক কষ্ট কমাতে ডায়েটের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। এই সময় কী ধরনের খাবার খাওয়া হচ্ছে, তার উপর শরীরের ভালো-মন্দ অনেকাংশেই নির্ভর করে।
পিরিয়ড কি?
প্রতিটি চন্দ্রমাস অন্তর অন্তর হরমোনের প্রভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই মূলত ঋতুচক্র বলে। মাসিক চলাকালীন পিঠ ব্যথা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে। আর এই মাসিক ঋতুচক্র প্রতি মাসে হয়ে থাকে। আর এটাই হচ্ছে পিরিয়ড। সহজ করে বললে, প্রতি চন্দ্রমাস পরপর মেয়েদের জরায়ু চক্র গঠনে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয় একে বলে ঋতুচক্র বা মাসিক। এই ঋতুচক্র হয় হলে মেয়েরা গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারে৷ যখন থেকে ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যায় ঠিক তখন তেকে নারীরা সন্তান ধারনে অক্ষম হয়ে পড়ে। এটি সাধারনত ৫০ থেকে ৫২ বছর পরে ঘটে থাকে।
পিরিয়ডের সময় কি কি খাওয়া যাবে না?
প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের মাসিক হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই সময় মেয়েদের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। যার মধ্যে সঠিক খাদ্য গ্রহন একটি। পিরিয়ডের সময় সব ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না। আবার পিরিয়ডের সময় শারীরিক কষ্ট কমাতে ডায়েটের দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। এই সময় কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত আর পিরিয়ডের সময় কি কি খাওয়া যাবে না তা নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হলো-
১। দুধ, চিজ বা দই
পিরিয়ডের সময় দুধ, চিজ বা দইয়ের মতো ডেইরি খাদ্য বেশি পরিমানে খেলে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে শারীরিক কষ্টের পরিমান কমতে সময় লাগে। তাই এসময় দুধ এবং তা থেকে বানানো খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
২। জাঙ্ক ফুড
জাঙ্ক ফুড খাওয়া যে কোন মানুষের শরীরের পক্ষে ভাল নয়। আর পিরিয়ডের সময় এমন খাবার খেলে তো আরও বিপদ। পিরিয়ডের সময় ফ্রায়েড খাবার খেলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
৩। লবণ
পিরিয়ডের সময় বেশি পরিমানে লবণ থাকে এমন খাবার যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যার কারনে পিরিয়ডকালীন কষ্ট আরো বেড়ে যায়। তাই মাসের এই নির্দিষ্ট সময়ে যতটা সম্ভব কম পরিমাণে লবণ খাওয়া উচিত।
৪। শসা
পিরিয়ডের সময় শসা খেলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। শসায় উপস্থিত কিছু উপাদান এই সময় শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে থাকে।
৫। খালি পেট
পিরিয়ডের সময় খালি পেটে একেবারেই থাকা উচিত নয়। এই সময় যেহেতু মাত্রতিরিক্ত পরিমাণে এনার্জি লস হয় তাই এই ঘাটতি পূরণের ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করাটা খুবই জরুরি। তাই কিছুক্ষন পর পর অল্প অল্প করে খাওয়া উচিত।
৬। কোল্ড ড্রিঙ্ক
পিরিয়ডের সময় কোল্ড ড্রিঙ্ক একেবারেই খাওয়া উচিত না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময় এই ধরনের পানীয় খেলে ইউটেরাইন ওয়ালে রক্ত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এমনটা হতে থাকলে ৫ থেকে ১০ বছর পরে গিয়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়।
৭। ক্যাফেইন
ব্যথা ও ফোলাভাবের কারণে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। ঋতুস্রাবের সময় ক্যাফেইন জরায়ুর পেশিকে সংকুচিত করে থাকে। তাই ব্যথা ও অস্বস্তির সৃষ্টি হয় এ সময়।
৮। মিষ্টি
এই সময়ে শরীরে চিনির চাহিদা হওয়া স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। তবে মনে রাখতে হবে এসময় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিণে রাখাও খুবই জরুরি। চিনিযুক্ত খাবার পানীয় ব্যথা বাড়ায়। তবে এ সময় মিষ্টির চাহিদা পূরণ করতে প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন- খেজুর,গুড়, ডুমুর খাওয়া ভালো।
৯। প্রক্রিয়াজাত খাবার
প্রক্রিয়াজাত বা ক্যানজাত খাবার এই বিশেষ সময়ে ব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এসব খাবারে অতিরিক্ত চর্বি, সোডিয়াম ও চিনিই মূলত ব্যথা বাড়ানোর কারণ হিসাবে কাজ করে। সত্যি বলতে, খাবারগুলো দেখতে খুব সহজ মনে হলেও এগুলোই শরীরের জন্য বেশি খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে থাকে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
পিরিয়ডের সময় কি কি খাওয়া যাবে না এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
পিরিয়ডের সময় কি কি ফল খাওয়া উচিত?
ঋতুস্রাব চলাকালীন স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এ সময় প্রচুর পরিমাণে গোটা শস্য, ফল, কলা, সবুজ শাক-সবজি, দই, স্যামন মাছ, বাদাম ও বীজ খাওয়া উচিত। এসব খাবার ঋতুস্রাব চলাকালীন খিঁচুনি,ব্যথা ও অস্বস্তি ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
পিরিয়ডের সময় সহবাস করলে কি কি সমস্যা হয়?
পিরিয়ড চলাকালীন শারীরিক সম্পর্ক করলে ইনফেকশন হতে পারে। শরীর থেকে প্রভাবিত রক্ত পেটের অন্য কোনো অংশে ঢুকে জমাট বেঁধে হতে পারে নানা বিপত্তি। মাসিকের সময় জরায়ু ও যোনির অম্লভাব থাকে না তাই এটি খুব সহজেই রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। জরায়ুমুখ ঘুরে যেতে পারে যা পরবর্তী সময় মারাত্মক কুফল বয়ে আনতে পারে।
উপসংহার
নারীদের ঋতুস্রাব একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা প্রতিটি মহিলার মধ্যেই হয়ে থাকে এবং এটি শরীরের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে থাকে। মাসিক উপসর্গগুলি কমানোর এবং মাসিক চক্রকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার অন্যতম উপায় হল সঠিক খাদ্য গ্রহন। আপনার মাসিক চক্রে আপনার খাদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি যা খান তা আপনার হরমোনের ভারসাম্য, শক্তির মাত্রা এবং মাসিকের লক্ষণগুলির তীব্রতাকে প্রভাবিত করতে পারে। নারীদের পিরিয়ডের সময়টা একটু বেশি সতর্ক হয়ে চলতে হয়। এই সময়ে শরীরে ও পেটে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক।
অস্বাস্থ্যকর খাবার এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই এই সময় কী ধরনের খাবার খাওয়া হচ্ছে তার উপর শরীরের ভালো-মন্দ অনেকাংশেই নির্ভর করে থাকে। ঋতুস্রাব চলাকালীন নারীকে পোহাতে হয় নানা রকম শারীরিক সমস্যা। যেমন ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, দুর্বলতা, গা-হাত-পা ব্যথা, ক্র্যাম্প, আলস্য, বিরক্তি এবং হজমের সমস্যা হয়। অবশ্য ক্ষেত্রবিশেষে সমস্যার ভিন্নতাও দেখা দেয়। এ সময় নারীদের অনেক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। তাই পিরিয়ডের সময় কি কি খাওয়া যাবে না আমাদের জানতে হবে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“পিরিয়ডের সময় কি কি খাওয়া যাবে না” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।