যেসব ফসল উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তাদের নাম কৃষি প্রধান দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ফসল ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তিতে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলে থাকে বা বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ হয়ে থাকে। আমরা সকলেই জানি যে, আমাদের বাংলাদেশ সুজলা সুফলা শস্যে শ্যামল একটি দেশ। আমাদের দেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়। এ সকল ফসল আমাদের অর্থনীতিতে এবং আমাদের দেশের চাহিদা পূরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে আবার এসব পণ্যের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক একটি দেশ। এদেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। প্রতিবেলায় আমরা যে ভাত খাই, সেই ভাতের প্রতিটা দানায় মিশে আছে কোনো একজন কৃষকের পরিশ্রমের গল্প। বাংলাদেশে সব এলাকায় আবার সব ধরনের ফসল ফলে না। একই ফলের স্বাদ আবার সব এলাকার মাটিতে একই রকম হয় না। তেমনি সব এলাকার আবহাওয়া ও মাটিরই কিছু বিশেষ গুণাগুণ থাকে যে কারণে সেখানে কোনো নির্দিষ্ট উদ্ভিদ ভালো জন্মে।
ফসল কাকে বলে?
শস্য যার ইংরেজি নাম Crop. শস্য বা ফসল বলতে চাষাবাদযোগ্য উদ্ভিদ অথবা কৃষিজাত উৎপাদিত পণ্যকে বুঝায়। বীজ, শাকসব্জি কিংবা ফলমূল এগুলো সবই শস্যরূপেই বিবেচিত হয়। কৃষির সাথে সম্পৃক্ত কৃষক শস্য উৎপাদন করে থাকেন। উৎপাদিত শস্য কৃষিজাত পণ্যের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। সহজ করে বললে, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে উপকারিতা পাওয়ার জন্য যে সকল উদ্ভিদ সমূহকে যত্ন সহকারে চাষাবাদ করা হয় সে সকল উদ্ভিদকেই ফসল বলা হয়। ফসল হচ্ছে এমন একটি উপাদান যা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শক্তি উৎপাদন করতে পারি এবং পুষ্টি পাই। অন্যভাবে বললে, ফসল হচ্ছে চাষযোগ্য জমিন হতে উৎপাদনকৃত খাদ্যবস্তুর নাম এবং এগুলো সম্পূর্ণভাবে আমাদের শরীরে পুষ্টি দিয়ে থাকে ।
যেসব ফসল উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তাদের নাম
বর্তমানে আমাদের দেশ কৃষিতে অনেক উন্নত তাই আমাদের দেশে অনেক প্রকার কৃষি প্রযুক্তি এবং অনেক প্রকার ফসল দেখতে পাওয়া যায় । বর্তমানে আমাদের দেশের সবচেয়ে বহুল পরিচিত যতগুলো ফসল রয়েছে তার প্রত্যেকটি কঠোর পরিশ্রম করে চাষ করা হয়। আর পরিশ্রমের ফল হিসেবে সর্বশেষে ফলন বৃদ্ধির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করা যায় এবং চাষির মুখে হাসি ফুটে। দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি বিশিষ্ট আমাদের এলাকায় যেসব ফসল বা উদ্ভিদ ভালো জন্মায় তাদের তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু ফসল হলো- রোপা আমন, রোপা আউশ, বোনা আমন, গম, আখ, পাট,বাঁধাকপি, ভুট্টা, ঢেঁড়স, করলা, মিষ্টি কুমড়া, কলা, লিচু, কাঁঠাল, জাম, পিয়াজ, রসুন, টমোটো, মুলা, ফুলকপি, আম, মুগ, গাজর, পেঁপে, আদা, সরিষা,মাসকালাই, মরিচ, শালগম ইত্যাদি। নিচে যেসব ফসল উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তাদের নাম ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।
১। ধান
বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই ধান প্রধান ফসল এবং উভয় দেশেই ধান চাষের দীর্ঘ সম্বৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং সেঁচের সুযোগ এর সাথে অনুকূল জলবায়ু হলে কৃষকরা উচ্চ ফলন অর্জন করতে পারে। ভারতের বাসমতি ধান এবং বাংলাদেশের বোরো ধানের জাতগুলি তাদের ব্যতিক্রমী গুণমান এবং উৎপাদনশীলতার জন্য পরিচিত সকলের কাছে পরিচিত।
২। গম
বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েরই কৃষিক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য ফসল হলো গম। গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য শস্য। বাংলাদেশে শীত মৌসুম গম চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করে। এবং বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল গমের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। সঠিক সেচ,সময়মত বপন এবং আধুনিক কৃষি কৌশল অবলম্বন করে কৃষকরা গমের ফলন অর্জনে সফলতা করতে পারে।
৩। ভুট্টা
ভুট্টা একটি বহুমুখী ফসল যা বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি জলবায়ু অঞ্চলে সফলভাবে উৎপন্ন হচ্ছে। এটির উচ্চ ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি খাদ্য এবং খাদ্যপন্য উভয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গঙ্গা, পাইওনিয়ার এবং ডিকেসি-র মতো হাইব্রিড জাতগুলি ভুট্টার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সফল হয়েছে। মাটির পর্যাপ্ত উর্বরতা, সময়মতো রোপণ এবং কার্যকর কীটপতঙ্গ ও রোগ ব্যবস্থাপনা ভালো হলে ভুট্টার ভালো ফলনের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।
৪। আখ
বাংলাদেশর কৃষি অর্থনীতিতে আখ চাষ দীর্ঘদিন যাবত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু আখ বৃদ্ধির জন্য আদর্শ একটি পরিবেশে। সঠিক সেচ, পুষ্টি ব্যবস্থাপনা এবং কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কৃষকরা চিনি ও ইথানল শিল্পে অবদান রেখে উচ্চ ফলন অর্জন করতে পারে। আখ থেকে চিনি ও গুড় তৈরি করা হয়ে থাকে।
৫। ডাল
মসুর ডাল, ছোলা এবং অড়হর ডাল বাংলাদেশের মানুষের খাবারের প্রোটিনের অত্যাবশ্যক একটি উৎস। ফলন বাড়ানোর জন্য উন্নত জাত, যেমন অড়হর এবং ছোলা উদ্ভাবন করা হয়েছে। সঠিক ফসলের ঘূর্ণন, মাটির উর্বরতা ব্যবস্থাপনা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের ফলে ডাল ফসলের উৎপাদনশীলতা চাইলেই বাড়ানো যায়।
৬। আলু
ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই প্রচুর পরিমানে আলু চাষ হয়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে আলু একটি খুবই পরিচিত খাবার। এটি একটি মূল্যবান অর্থকরী ফসল যা ভাল ফলনের নিশ্চয়তা প্রদান করে। কৃষকরা তাদের নির্দিষ্ট অঞ্চল এবং ক্রমবর্ধমান অবস্থার জন্য উপযোগী বিভিন্ন আলুর জাত বেছে নিতে পারেন। সফল আলু চাষের জন্য পর্যাপ্ত মাটির আর্দ্রতা, সঠিক রোপণ কৌশল এবং কার্যকর কীটপতঙ্গ ও রোগ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
৭। সরিষা
সরিষা বাংলাদেশের একটি অধিক পরিচিত একটি ফসল। বাংলাদেশের মাটি সরিষা চাষের জন্য উপযুক্ত। সরিষা ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই একটি জনপ্রিয় তৈলবীজ ফসল যা ভোজ্য তেল এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজাত সরবরাহ করে। অনুকূল তাপমাত্রা এবং উপযুক্ত আর্দ্রতার কারনে সরিষার ফলন ভাল হয়। বাংলাদেশে BARI Sarisha-14 এবং ভারতে Pusa Mustard 30 এর মত জাতগুলি তাদের উচ্চ উৎপাদনশীলতার জন্য কৃষকের কাছে পরিচিত। ভালোভাবে জমি তৈরি, সময়মতো বীজ বপন এবং সঠিক পুষ্টি ব্যবস্থাপনা সর্বোত্তম সরিষার ফলনে নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
যেসব ফসল উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তাদের নাম এই বিষয়ে আপনার মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
কোন ফসলের ফলন বেশি হয়?
বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের পরিমাণের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী ফসল হল ধান । ভাত বিশ্বের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের জন্য একটি প্রধান খাদ্য হিসাবে পরিচিত। বিশেষ করে এশিয়ায় যেখানে এটি অনেক দেশের জন্য একটি প্রধান খাদ্য।
নিচের কোনটি ফসলের ফলন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে?
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। যে কোন ফসল ভালো উৎপাদনের জন্য উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহার করা জরুরী । আধুনিক সেচ পদ্ধতি ব্যবহার করা যাতে বেশি পরিমাণে পানি পাওয়া যায়। ফসলের আবর্তন করা যাতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা যেসব ফসল উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তাদের নাম সম্পর্কে জানলাম। বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচুর পরিমানে কৃষিজ পন্য উৎপাদিত হয় যা অন্যন্য দক্ষিন এশীয় দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ধান, ভুট্টা, আখ, ডাল, আলু গম এবং সরিষা এই অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে উচ্চ-ফলনশীল ফসল হিসাবে পরিচয় দিয়েছে। যাইহোক স্থানীয় কৃষি-জলবায়ু পরিস্থিতি, মাটির ধরন এবং ফলন অপ্টিমাইজ করার জন্য উপযুক্ত চাষাবাদ পদ্ধতি বিবেচনা করা কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আধুনিক চাষাবাদের কৌশল প্রয়োগ, উপযুক্ত ফসলের জাত নির্বাচন এবং সঠিক শস্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের কৃষকরা তাদের ফসলের উৎপাদনশীলতা সর্বাধিক করতে পারে। উভয় দেশেই খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে মাটি দূষণের ৫টি কারণ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“যেসব ফসল উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তাদের নাম” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।