ফরাসি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল যা ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ফ্রান্সের জনগন ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে যে বিপ্লব বা বিদ্রোহ ঘটিয়েছিল তা বিশ্ব ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লব নামে পরিচিত। ফরাসি বিপ্লব ছিল ফ্রান্সের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ফ্রান্সের অধিবাসীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য ও ক্ষোভের কারণেই মূলত ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই সংঘটিত ফরাসি বিপ্লব পৃথিবীর ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এ বিপ্লব শুধুমাত্র ইউরোপে নয় বরং সারবিশ্ব ইতিহাসকে নাড়া দিয়েছিল প্রচণ্ডভাবে।
এ বিপ্লবের প্রভাবে ফ্রান্সের পুরাতন সমাজ কাঠামোর ভিত ধসে যায়। যার ফলে চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক নতুন ধারা সূচিত হয়। এ বিপ্লবের মৌলিক আদর্শ ছিল সাম্য, স্বাধীনতা ও মৈত্রী। ফরাসি বিপ্লব হল স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র এবং অভিজাত ও যাজক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতিত, অধিকার বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের এক সশস্ত্র সংগ্রামের স্বর্নালী ইতিহাস। বঞ্চনা, শোষণ, অন্যায়, অবিচারের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ দীর্ঘকাল ধরে ফরাসি বিপ্লবের পিছনে কারন হিসাবে কাজ করেছিল।
ফরাসি বিপ্লব কি?
ফরাসি বিপ্লব হল স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র এবং অভিজাত ও যাজক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অধিকার বঞ্চিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের এক সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাস। শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচারের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ দীর্ঘকাল ধরে ফরাসি বিপ্লবের পিছনে ইন্ধন যুগিয়ে আসছিল। ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্স রাজ্যের প্যারিস কুখ্যাত বাস্তিলে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। মূলত এই বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। সবশেষে বিপ্লবীরা ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করে এবং এর পতন ঘটায়। এবং এ বাস্তিল দুর্গ পতনের মধ্য দিয়েই ফরাসি বিপ্লবের সূচনা হয়। এই আন্দোলন ছিল তৎকালীন ফ্রান্সের শত শত বছর ধরে নির্যাতিত ও বঞ্চিত সাধারন মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
ফরাসি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল
যুগেযুগে বিভিন্ন দেশে এবং নানা কারণে বিপ্লব ঘটেছে। পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বিপ্লব গুলোর অন্যতম হলো ফরাসি বিপ্লব। আমরা অনেকেই ফরাসি বিপ্লবের নাম শুনলেও হয়তো এর ইতিহাস জানিনা। নিচে ফরাসি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফলগুলো তুলে ধরা হলো –
ফরাসি বিপ্লবের কারণ সমূহ
যে কোন বিপ্লব তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হয় না। বিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরি হয় বহু বছর ধরে চলে আসা অসন্তুষ্ঠ ও নিপীড়ন থেকে। ফরাসি বিপ্লব কোন আকস্মিক ঘটনা নয় বা কোনো একটি কারণে ইহা সংঘটিত হয় নাই। সামাজিক,জনৈতিক,অর্থনৈতিক, দার্শনিক প্রভাব ও অন্যান্ন নানাবিধ কারণের একত্রিত সমাবেশের ফলেই এক যুগান্তরকারী বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটেছিল বলে ইতিহাসবিদদের ধারনা। ফরাসি বিপ্লবের জননী বলা হয় প্যারিস শহরকে ।
১। সামাজিক কারন
ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ফরাসি সমাজের শোষণ । বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ তিনটে সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। সামাজিক বিভাজন বিপ্লবে অবদান রেখেছিল কারণ মানুষ সমতা চেয়েছিল । সামাজিক বিভাজন একে অপরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছে এবং সেই সাথে সবাই সমান ছিল না। প্রতিটি সামাজিক শ্রেণী ভিন্ন ভিন্ন অধিকার নিয়ে বিপ্লবে অংশগ্রহন করে। বিপ্লবটি সামাজিক শ্রেণী নির্বিশেষে সবার জন্য সমান অধিকার পাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
- প্রথম শ্রেণী – ফরাসি সমাজবাবস্থায় মূলত যাজকরা ছিল প্রথম শ্রেণীভুক্ত। এরা ছিল অধিক সুবিধাভোগী শ্রেণীর মানুষ। এদের কোন প্রকার কর দিতে হতো না। এরা ছিল সংখ্যায় ফরাসি জনগণের ১ % এরও কম। অথচ এদের দখলে ছিল ফ্রান্সের মোট জমির প্রায় ১০%। এই উচ্চশ্রেণীর যাজকরা মূলত বিলাসবহুল জীবনযাপন করত। এদের দুটি ভাগ ছিল উচ্চ যাজক সম্প্রদায় ও নিম্ন যাজক সম্প্রদায়।
- দ্বিতীয় শ্রেণী – ফরাসি সমাজে অভিজাতরা ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত মানুষ । রাজা বা রানির আত্মীয়পরিস্বজন এবং উচ্চ বংশীয় ব্যক্তিরা অভিজাত হিসেবে গণ্য করা হত । এরা ছিল ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ১.৫%। অথচ ফ্রান্সে এদের জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ২০%। এরা জমির জন্য সরকারকে কোনো প্রকার কর দিত না। আবার সরকারের সামরিক ও অসামরিক বিভাগের উচ্চপদে এদের একচেটিয়া আদিপত্য ছিল।
- তৃতীয় শ্রেণী –প্রথম শ্রেণী ও দ্বিতীয় শ্রেণী ছাড়া অন্যান্য জনসাধারণ ছিল ক্ষমতাহীন। এদের অন্তর্গত ছিল বুর্জোয়া, কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ। এদের মোট জনসংখ্যা ছিল ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ৯৭% এরও বেশি। দেশের করের বোঝার অধিকাংশটাই এদের বহন করতে হতো। যার ফলে এই তৃতীয় শ্রেণীর মানুষেরাই তাদের প্রতি সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের বৈষম্য, শোষণ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে বিদ্রোহের পথ বেছে নিয়েছিল।
২। অর্থনৈতিক কারন
কেবল সামাজিক কারণই নয় ফ্রান্স সরকারের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা ফরাসি বিপ্লবের জন্যে অনেকাংশে দায়ী ছিল । প্রশাসনিক ব্যয় অত্যাধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছিল । এই অর্থনৈতিক সংকটের পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ঐতিহাসিক স্মিথ ফ্রান্সকে ভ্রান্ত অর্থনীতির জাদুঘর বলে আখ্যায়িত করেছেন। ১৭৮০-এর দশকে ফ্রান্সে বিপ্লবী পরিস্থিতি গড়ে ওঠার কেন্দ্রে ছিল রাজা, তথা রাজত্বের ঋণপরিশোধে অক্ষমতা। এই অর্থনৈতিক সংকটের কারণ ছিল সরকারের দ্রুত বেড়ে ওঠা খরচ এবং দুটি মুখ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার ফলে বিপুল খরচ হয়। এই খরচ রাজ্যের স্বাভাবিক রাজস্ব থেকে পূরণ করা যেতনা।
- বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা – ফরাসি রাষ্ট্রের কর ব্যবস্থা ছিল ভ্রান্তমূলক ব্যবস্থা। যাজক ও অভিজাতরা রাষ্ট্রকে তেমন কোন কর দিতে হতো না কিন্তু এরাই ছিল সর্বাধিক সুবিধাভোগী শ্রেণীর মানুষের কাতারে। অপরদিকে সরকারের মোট রাজস্বের ৯৬% দিতে হতো তৃতীয় সম্প্রদায়কে । এই অত্যাধিক হারে কর প্রদানের বোঝা মূলত তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের বিদ্রোহের পথে হাটতে বাধ্য করেছিল ।
- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি – ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে মুদ্রাস্ফীতির জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম প্রায় ৬৫% বৃদ্ধি পেয়েছিল কিন্তু জনগণের কোন ধরনে আয় বাড়েনি। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। মানুষ বিদ্রোহ ছাড়া আর কোন উপায় খুঁজে পায়নি।
- রাজপরিবারের অতিরিক্ত ব্যয় – ফ্রান্সের রাজপরিবারের অত্যাধিক বিলাসবহুল জীবনযাপন ফ্রান্সের অর্থনীতিকে একেবারে ভেঙে দিয়েছিল । এর ফলে ফরাসি রাজকোষ শুন্য হয়ে যায় । একদিকে এক শ্রেনীর মানুষের বিলাশবহুল জীবন যাপন আর অন্যদিকে সাধারন মানুষের কস্টের জীবন ফ্রান্সের বিপ্লবের মূল কারন হয়ে দাঁড়ায়।
- ব্যয়বহুল যুদ্ধ – চতুর্দশ ও পঞ্চদশ লুই নিজেদেরকে বিভিন্ন যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে ফ্রান্সের রাজকোষ প্রায় ফাঁকা করে ফেলেছিল । অপরদিকে ষোড়শ আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে অর্থ সাহায্য করে ফ্রান্সের রাজকোষ শুন্য করে ফেলে । ফলে শুরু হয় বিপুল অর্থাভাব । তই অর্থনৈতিক কারনটাও বিপ্লবের অনেক বড় কারন হয়ে দাঁড়ায়।
৩। রাজনৈতিক কারন
ফরাসি বিপ্লব ছিল মূলত ফ্রান্সের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত ক্ষোভের একটি বহিঃপ্রকাশ । এই রাজতন্ত্রে রাজা ছিলেন সর্বোচ্চ শাসক । অর্থ-সামাজিক বৈষম্য ও শোষণ রাজনৈতিক দুর্বলতা ও শাসনতান্ত্রিক নীতিহীনতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে এক মহা বিস্ফোরক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যা বিপ্লবে পরিনিত হয়।
- রাজাদের স্বৈরাচারী নীতি – এই বিপ্লবে রাজতন্ত্র ছিল স্বৈরাচারী ও কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার অধিকারী। ফ্রান্সের রাজারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে প্রচার করতেন। রাজা চতুর্দশ লুই বলেছিলেন আমিই রাষ্ট্র, আমিই ক্ষমতা। রাজা ষোড়শ লুই বলেছিলেন আমার ইচ্ছাই আইন এখানে জনগনের কোন প্রাধান্য নেই। প্রজাদের ইচ্ছা অগ্রাহ্য করে ফ্রাসের রাজারা স্বৈরাচারী নীতি প্রয়োগ করলে ফ্রান্সবাসীরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে যার ফলে বিপ্লব সংগঠিত হয়।
- ত্রুটিপূর্ণ আইন – অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটিপূর্ণ আইন প্রচলিত ছিল । সাধারণ মানুষদের জন্যে আইনগুলি এতটাই নির্মম ছিল যে তাদেরকে লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেওয়া হতো ।
- দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থা – এই সময় ফ্রান্সের বিচারব্যবস্থা ছিল এক প্রকার দুর্নীতিগ্রস্ত এবং স্বজনপ্রীতি অর্থাৎ দুর্বলের উপর আইন প্রয়োগ করা হতো। লেতর -দ্য-ক্যাশে নামক গ্রেফতারি পরোয়ানা দ্বারা যেকোনো ব্যক্তিকে বিনাঅপরাধে গ্রেফতার করা যেত। ফরাসি রাজতন্ত্রে বিচারের নামে প্রহসন ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা । ফ্রান্সে বিচারকের পদ ছিল মূলত বংশানুক্রমিক, সাধারন মানুষের জন্য কোন সুযোগ ছিল না।
- ষোড়শ লুইয়ের ভূমিকা – ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সংকট যখন তীব্র, তখন ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুইয়ের উচিত ছিল ফ্রান্সের যাজক ও অভিজাতদের বিশেষ অধিকার বন্ধ করা । এবং তাদের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ হন ফলে ফ্রান্সের জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ফল স্বরুপ বিপ্লব সংগঠিত হয়।
ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল সমূহ
উপরে উল্লিখিত কারণগুলি ফ্রান্সের সাধারণ মানুষকে বিপ্লবের পথে হাঁটতে বাধ্য করেছিল । ফ্রান্সের মানুষ সামাজিক ,অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে এতটাই অবহেলিত ছিল যে তারা ফ্রান্সে বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন ফ্রান্স গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল । ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এটি সমগ্র ইউরোপকে এক প্রচণ্ডরকম নাড়া দিয়েছিল। নিচে ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
১। নতুন প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করেছিল।
বিপ্লবোত্তরকালে ফরাসি সমাজে মানুষ নিজের প্রয়োজনোপযোগী নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে গিয়ে নতুন নতুন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।
২। জাতীয়তাবাদী ধারণার বিকাশ
ফরাসি বিপ্লবের ফলে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের আদর্শ বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। যা বিপ্লবের মাধ্যমেই তৈরি হয়েছিল।
৩। জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের উদ্ভব
সারা ফ্রান্সের মানুষ একত্রিত হয়ে আন্দোলন করছিল। তাই ফরাসি বিপ্লবের ফলে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের আদর্শ বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে।
৪। গণতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি
বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীরা রুশোর গণতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের শ্লোগান দেয়। গণতন্ত্রের পরিধিকে বৃদ্ধি করতে তারা ব্যাপক ভোটাধিকার দাবি করে থাকে এই বিপ্লবের মাধ্যমে।
৫। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সূচনা
ফরাসি বিপ্লবোত্তর যুগে গির্জার প্রভাব ক্ষুণ্ণ কর ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সূচনা হয় এই স্লোগানের মাধ্যমে বিপ্লবীরা জানান দেয় ধর্মনিরপেক্ষতা।
৬। বিচার ব্যবস্থার পরিবর্তন
অতীতে রাজার আদেশ বা ইচ্ছায় আইনের মর্যাদা পেলেও বিপ্লবের পর বিচারকদের পদ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। দরিদ্র ও সাধারণ নাগরিকরা যাতে সুবিচার পায় তার ব্যবস্থা করা হয়। এবং এই ধরনের পদে যেন সকলেই চাকুরী পায় তার দ্বারও উন্মুক্ত হয়।
৭। প্রগতিশীল চিন্তাধারার বিকাশ
ব্যক্তির প্রকৃত মর্যাদার মূল্যায়ন হওয়ায় মানুষ সর্বক্ষেত্রে প্রগতিশীল হয়ে উঠে। নিজেদের চিন্তা চেতনাকে ব্যবহার করে তারা রাষ্ট্রের উন্নয়নে অংশগ্রহনের সুযোগ পা।
৮। সামন্ততন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের পতন
ফরাসি বিপ্লবের নেতৃত্বদানকারীরা সামন্ত ,বুর্জোয়া গোষ্ঠী ও অভিজাতদের সকল ঐশ্বর্য ও ঐতিহ্য ভেঙে চুরমার করে দেয়।
৯। পুঁজিবাদের উত্তরণ
বিপ্লবের পর পুঁজিবাদের দ্রুত প্রসার ঘটে থাকে। এই সুযোগে ছোট ছোট ব্যবসায়ী, কারিগর অর্থ সঞ্চয় করে বুর্জোয়া স্তরে উঠে যায় এবং নতুন পুঁজিবাদী বুর্জোয়া শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। যার ফলে জনগনের মধ্যে সাম্যতা বাড়তে থাকে।
১০। রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা
বিপ্লবোত্তর পরিবেশে সভা-সমিতি, রাজনৈতিক ভোটাধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়।
১১। উগ্র জাতীয়তাবাদ
বিপ্লবের ফলে যে জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয় তা ক্রমে উগ্র জাতীয়তাবাদের রূপ ধারণ করে। ফলে ইউরোপে জাতিগত দাঙ্গা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। নেপোলিয়ন উগ্র জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করেই মহাদেশীয় ব্যবস্থা জারি করেছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ উগ্র জাতীয়তাবাদের ফসল।
১২। বিপ্লবী ভাবধারার উন্মেষ
ফরাসি বিপ্লবীরাই ইউরোপের সর্বত্র বিপ্লবের অমোঘ বাণী সাম্য, স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্ব প্রকাশ করে বিপ্লবী ভাবধারার উন্মেষ ঘটায়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
ফরাসি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল এই বিষয়ে আপনার মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
ফরাসি বিপ্লবের জনক কে?
জনতার অধিকার রয়েছে বিপ্লবের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের পতন ঘটানোর। লা কস্তা সোসিয়াল” গ্রন্থে উল্লেখিত এই বাণী ফরাসি জনগণকে বিপ্লবে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই রুশোকে ফরাসি বিপ্লবের মূল প্রবক্তা বলা হয়ে থাকে।
ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের সম্রাট কে ছিলেন ?
ফরাসি বিপ্লব হয়েছিল ১৭৮৯ সালে । ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন ষোড়শ লুই ।
উপসংহার
ফরাসি বিপ্লবের মূল তিনটি আদর্শ হলো সাম্য ,মৈত্রী ও স্বাধীনতা । ফরাসি বিপ্লব পরম রাজতন্ত্রের সম্পূর্ণ বর্জনের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা বৃহত্তম রূপান্তর হিসাবে পরিচিত হয়। ঐতিহাসিকদের মতের এটি এক দশকের চেয়ে বেশি সময় ধরে চলে। ১৭৮৯ সালে শুরু হওয়া ফরাসী বিপ্লব ইউরোপের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসাবে বিবেচিত। ফরাসী রাজতন্ত্র এবং সামন্ততন্ত্রের মতো প্রাচীন প্রথার লালন করার ফলে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
এছাড়া রাজা ষোড়শ লুই এর দুর্বল অর্থনৈতিক নীতির ব্যাপক অসন্তোষের কারণেই মূলত সংগঠিত হয়েছিল এই বিপ্লব। ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সের তথা ইউরোপের ইতিহাসে এক যুগান্তরকারী ঘটনা। এই মহা বিপ্লপের ভিতর দিয়ে অসাম্য ও অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত ও প্রচলিত রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থ্যার বিরুদ্ধে নিপীড়িত ও শোষিত জনগণের স্বতফুর্ত প্রতিবাদ আত্মপ্রকাশ করেছিলো। উপরে ইতিহাসমূলক আলোচনা পড়ে আাদের আর ফরাসি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে কৌতুহল থাকার কথা না। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৫টি কারণ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“ফরাসি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।