ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি মুসলমান হিসাবে অবশ্যই আমাদের জানা উচিত। ইসলামের বিধান অনুসারে ওযু হল দেহের অঙ্গ-পতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি উপায়। কোরআন শরীফ পড়তে ও স্পর্শ করতেও ওযু করতে হয়। পবিত্র কোরআনে বলা আছে যাহারা পবিত্র তাহারা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা স্পর্শ করো না। ওযু বা গোসলের মাধ্যমে তাহারাত আর্জন করা যায়।
অযুর মাধ্যমে এক ধরনের পবিত্রতা অর্জন করে মুসলিমরা নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেয়। এমন নয় যে একবার ওজু করলে সেটা দীর্ঘদিন বা অনন্তকাল পর্যন্ত থেকে যাবে। নামাজ পড়ার পূর্বশর্ত হলো শরীর ও মনের পরিশুদ্ধতা। যেহেতু নাজাম বেহেশতের চাবি আর ওযু হলো নামাজের চাবি। আমরা জানি ওজু ছাড়া নামাজ হয় না। তাই অজু করার পর যদি ওযু ভেঙে যায় তখন নতুন করে অজু করে নেওয়া উচিত। ওযুর সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি। ফলে ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি তা জানা জরুরি।
ওযু কাকে বলে?
ওযু শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো উত্তমতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। নামাযের পূর্বশর্তই হলো পবিত্রতা বা শুদ্ধতা অর্জন করা। ওযু আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। আর শরিয়তের পরিভাষায় পরিষ্কার পানি দিয়ে এক বিশেষ পদ্ধতিতে মুখমন্ডল, হাত ও পা ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ্ করাকে ওযু বলে। (সূরা বাকারা,আয়াত:২২২)। আবার অন্যভাবে অযু হল ইসলামের বিধান অনুসারে দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি উপায়। মুসলমানদের নামাজের পূর্বে অবশ্যই অযু করে নেয়া বাধ্যতামূলক। কুরআনে আছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (আল কুরআন ২:২২২)”।
ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি ও কি কি?
নামায পড়তে হলে আপনাকে অবশ্যই ওযু করতে হবে। আর ওযু একটি বিশেষ পন্থায় করতে হয়। ওযু সঠিক না হলে নামায হয় না। তাহলে ওযুর গুরুত্ব অনেক। আবার শুধু ওযু করলেই হবে না। সেই ওযু যেন নামায শেষ করার আগেই নস্ট না হয়ে যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ওযু ভঙ্গ হওয়ার অনেক কারন রয়েছে তার মধ্যে থেকে বেশ কয়েকটি ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।
১। পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া
পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। [হেদায়া-১/৭]। তখন ওযু ভেঙ্গে যাবে। আবার নতুন করে ওযূ করে তারপর নামায পড়তে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ’তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও) (সুরা মায়িদা-৬)
২। শরীরের কোন জায়গা হইতে রক্ত, পুচ, পানি বের হইয়া গড়িয়া পাড়া
নাব বা মুখ থেকে রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে তা শরীর বেয়ে গড়িয়ে পড়লে ওযু ভেঙ্গে যায়। পবিত্রতা অর্জনের জন্য পুনরায় আবার ওযু করতে হয়। [হেদায়া-১/১০] হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো তখন তিনি ফিরে গিয়ে পুনরায় অজু করে নিতেন। [মুয়াত্তা মালিক-১১০]
৩। মুখ বর্তি বমি হওয়া
মুখ ভরে বমি করলে ওযু ভেঙ্গে যায়।হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয় তাহলে ফিরে গিয়ে অবশ্যেই অজু করে নিবে। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১২২১]
৪। থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া
থুথু ফেলার সময় যদি তার সাথে যাওয়া রক্ত পরিমানে বেশি হয় তাহলে ওযু ভেঙ্গে যাবে।হাসান বসরি রহ. এরশাদ করে, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে থাকা রক্তের পরিমান বেশি না হলে তার ওপর অজু করা জরুরী হবে না। [মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস নং-১৩৩০]
৫। চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সিজদা অবস্থায় কেউ ঘুমিয়ে পড়লে অজু ভঙ্গ হয় না কিন্তু চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ওযু ভেঙ্গে যাবে। কারন চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে] (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৩১৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০২)
৬। পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে।
হজরত হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। অন্যথায় পাগল অবস্থায় তার ওযু ভেঙ্গে যাবে। পাগলের জন্য নামায ফরজ নয়। তাই ওযুরও প্রয়োজন নেই।[মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-৪৯৩]
৭। নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে।
হজরত ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হজরত হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। [সুনানে দারা কুতনি, হাদিস নং-৬১২। অতএব উচ্চস্বরে হাসলে ওযু ভেঙ্গে যায়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
ওযু করার সময় কি কথা বলা যায়?
সাধারনত অজুর সময় কথা বলা যায় । তখন অজুর কোনো ক্ষতি হবে না। তবে স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষ যখন একসঙ্গে দুটি কাজ করতে যাবে তখন কোথাও কোন ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ জন্য কেউ কেউ মনে করেন যে, অজু করার সময় কথা না বলাই উত্তম। এছাড়া অজুর সময় কোনো কথা বললে অজু নষ্ট হয়ে যাবে এই ব্যাপারে হাদিসে কোনো বক্তব্য নেই।
ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি?
ওযুর ফরজ হলো ৪ টি তাহলো যথাক্রমেঃ সমস্ত মুখ ভালভাবে ধৌত করা, দুই হাতের কনুইসহ ভালভাবে ধৌত করা, মাথা চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ্ করা, এবং দুই পায়ের টাকনুসহ ধৌত করা।
উপসংহার
ওজু ছাড়া কখনই নামাজ হয় না। তাই নামাজে দন্ডায়মান হওয়ার পূর্বে ওজু করতে হয়। ওজুর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত রয়েছে। পবিত্র হাদিসে অজুকে নামাজের চাবি বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ এর ফলাফল দাঁড়ায় জান্নাতের চাবি হলো অজু যেহেতু অজু ছাড়া নামাজ হয় না। অজুর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো অজু মানুষকে আলোকিত করে থাকে। কিয়ামতের দিন এই উম্মতের অজুর অঙ্গগুলো উজ্জ্বল থাকবে ফলে তাদের অন্য উম্মতদের থেকে আলাদা করা সহজ হবে।
ওযু মানুষকে পবিত্র করে। নামাযের জন্য অবশ্যই একজন মুসলমানকে ওযু করতে হয়। নামায কবুলের প্রথম শর্তই হলো সঠিকভাবে ওযু করা। যার ওযু হয় না তার নামাযও হয় না। উত্তমরূপে করা অজু জান্নাতে যাওয়ার সহজ উপায়। কিয়ামতের দিন উত্তমরূপে অজুকারী ব্যক্তিকে চিনতে কোনো অসুবিধা হবে না। তার অজুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে জ্যোতি চমকাতে থাকবে। তাই আমাদের অবশ্যই ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি তা জানতে হবে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে সেরা ১০ টি ইসলামিক বই সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।