ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জানলে আমাদের সচেতনতা বাড়বে। ভূমিকম্প হলো এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাতে ভূ-পৃষ্ঠে কম্পন হয়। এই কম্পনটি পৃথিবীর ভূত্বকের নিচে থাকা টেকটনিক প্লেটগুলো নড়াচড়ার কারণে হয়ে থাকে। বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্প প্রবণ দেশ। কারণ বাংলাদেশ ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং মিয়ানমার টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি দেশ। এই প্লেটগুলোর নড়াচড়ার ফলে বাংলাদেশে মাঝেমাঝেই ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করা হয় রিখটার স্কেলের সাহায্যে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ০ থেকে ৯ পর্যন্ত হয়ে থাকে। ০ মাত্রার ভূমিকম্প কখনো অনুভূত হয় না। ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত ৪ থেকে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পই হয়ে আসছে। এই মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও কম হয়। তবে ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে যেমন- ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব সাধারণত কয়েক সেকেন্ড হয়ে থাকে। কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হয়ে যেতে পারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ।
ভূমিকম্প কাকে বলে?
ভূমিকম্প হচ্ছে মূলত ভূমির কম্পন। ভূ অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমি কম্পন সৃষ্টি হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্পন। হঠাৎ যদি ঘরের কোনো জিনিস দুলতে শুরু করে—যেমন, দেয়ালঘড়ি, টাঙানো ছবি বা খাটসহ অন্য যেকোন আসবাব বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। সহজ কথায় পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই হচ্ছে ভূমিকম্প। সারা পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এগুলোর বেশিরভাগই মৃদু, যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে—প্রচণ্ড, মাঝারি ও মৃদু।
ভূমিকম্পের কারণ সমূহ
ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল ২টি বিষয়কে আমরা একটু ভেঙে বুঝতে চেষ্টা করি। প্রথমেই আমরা জন্য ভূমিকম্পের কারণগুলো। ভূ-অভ্যন্তরে থাকা গ্যাস যখন ভূ-পৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে উপরে বেরিয়ে আসে তখন সেই গ্যাসের অবস্থানটি ফাঁকা হয়ে পড়ে আর পৃথিবীর উপরের তলের চাপ ওই ফাঁকা স্থানে দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। তখনই ভূ-পৃষ্ঠে প্রবল কম্পনের সৃষ্টি হয় যা ভূমিকম্প নামে পরিচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন জনিত কারণে, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতি জনিত কারণে। ভূমিকম্পের কারণগুলিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১। প্রাকৃতিক কারণ এবং ২। কৃত্রিম কারণ।
ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণ সমূহ
আমরা তো জানি যে কারনের মধ্যে মানুষের কোন হাত নেই একমাত্র সৃষ্টা কর্তৃক ঘটে থাকে তাকেই প্রাকৃতিক কারন বলে থাকে। প্রাকৃতিক কারণকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ক। ভু-গাঠনিক কারণ এবং খ। অ-ভূগাঠনিক কারণ।
ক। ভু-গাঠনিক কারণ সমূহ
ভূমিকম্প অত্যন্ত মারাত্মক একটি বিষয় পৃথিবী বাসীর জন্য। ভূমিকম্প আসলে অনেক কারণেই হতে পারে। নিচে ভূমিকম্পের ভু-গাঠনিক কারণগুলো তুলে ধরা হল-
১। পাতের চলন
ভূত্বক মূলত কয়েকটি পাতে বিভক্ত। পাতগুলি পরস্পরের কাছে চলে আসায় অথবা দূরে সরে যাওয়ার ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। তিন প্রকার পাত সীমানায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয়।
- প্রতিসারী পাতসীমানা – একটি পাত যখন অপর পাত থেকে দূরে সরে যায় তখন ভূ- অভ্যন্তর থেকে ম্যাগমা উপরে উঠে আসে। ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। আটলান্টিক মহাসাগরের সামুদ্রিক শৈলশিরা বরাবর এই কারণে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
- অভিসারী পাতসীমানা – দুটি পাতের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে অপেক্ষাকৃত ভারী পাতটি হালকা পাতের নিচে প্রবেশ করে। প্রবেশ করা পাতটির ঢালু পাতসীমানা বরাবর ভূমিকম্প কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এই পাতসীমানা বরাবর পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয়। যেমন- জাপানের ভূমিকম্প অভিসারী পাতসীমানা বরাবর সৃষ্টি হয়।
- নিরপেক্ষ পাতসীমানা – আবার দুটি পাত পরস্পরকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবার সময়ও মৃদু ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রের সান আন্দ্রিজ চ্যুতি, নিউজিল্যান্ডের আল্পীয় চ্যুতি অঞ্চল।
২। নবীন ভঙ্গিল পর্বতের উত্থান
গিরিজনি আলোড়নের কারনে প্রচুর পার্শ্বচাপে পলিস্তর ভাঁজ হয়ে উপরে উঠেে এসে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করে থাকে। এর ফলে শিলাস্তরের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। উদাহরণ- হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের ভূমিকম্প সৃষ্টি।
৩। চ্যুতির সৃষ্টি
শিলাস্তরে আবার প্রচন্ড সংকোচন ও প্রসারণজনিত বলের কারনেও চ্যুতির সৃষ্টি হলে তখন ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। যেমন- গুজরাটের ভুজ ও বিহারের ভূমিকম্প এর উৎকৃষ্ট উদাহরন।
৪। অগ্ন্যুদপাত
আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ এবং ছিদ্রপথ দিয়ে ভূ- অভ্যন্তরের ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য ভূত্বকে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এর ফলে ভূমিকম্প হয়ে থাকে। যেমন- প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা অঞ্চলে এই কারণে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
৫। পৃথিবীর তাপ বিকিরণ
আমরা জানি পৃথিবীর সৃষ্টির সময় জ্বলন্ত গ্যাসীয়পিণ্ড ছিল। তারপর থেকে পৃথিবী এখনো পর্যন্ত তাপ বিকিরণ করে ক্রমশ শীতল এবং সংকুচিত হচ্ছে। এর ফলে ভূত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
৬। সমস্থিতিক ভারসাম্য নষ্ট
মালভূমি,ভূত্বকের পর্বত, সমভূমি ভূ-অভ্যন্তরের গলিত স্তরের উপর ভেসে রয়েছে। এরা পরস্পর ভারসাম্য রক্ষা করে অবস্থান করে থাক। এই অংশগুলির বিভিন্ন স্থানে ক্ষয় এবং ক্ষয়িত পদার্থের সঞ্চয়ের ফলে ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়ে থাকে। ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। যেমন- 1949 সালের লাহোরের ভূমিকম্প এর উৎকৃষ্ট উদাহরন।
৭। ভু-অভ্যন্তরের বাষ্প চাপ
ভূ-অভ্যন্তরে অত্যধিক তাপের ফলে পানি ও অন্যান্য পদার্থ বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্প বেরিয়ে আসার জন্য ভূত্বকে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে থাকে। ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
৮। ভূ-আলোড়ন
মহিভাবক এবং গিরিজনি আলোড়নের প্রভাবে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
খ) অ-ভূগাঠনিক কারণ সমূহ
ভূমিকম্প অত্যন্ত মারাত্মক একটি বিষয় পৃথিবী বাসীর জন্য। ভূমিকম্প আসলে অনেক কারণেই হতে পারে। নিচে ভূমিকম্পের অ-ভুগাঠনিক কারণগুলো তুলে ধরা হল-
১। ধস
কাস্ট অঞ্চলে ভৌমজলের ক্ষয়কার্যের ফলে ভূ-অভ্যন্তরে গর্ত সৃষ্টি হয়। এই গর্তের ছাদ ধসে পড়ে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
২। হিমানী সম্প্রপাত
পার্বত্য অঞ্চলে বিশাল বরফের খন্ড পর্বতের ঢাল বরাবর নিচে নামে এবং ভূমিকম্প সৃষ্টি করে থাকে। যেমন- পেরুর ভূমিকম্প এর প্রকৃত উদাহরন।
৩। সমুদ্র তরঙ্গের আঘাত
সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে সমুদ্র এর ঢেউ এর জোরে আঘাতের কারনে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
৪। উল্কাপাত
বিশাল বড় মাপের উল্কা ভূপৃষ্ঠের উপড়ে পড়লে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
৫। জলপ্রপাত
বিশাল বড় মাপের জলপ্রপাত থেকে বিপুল পরিমাণ জল ওপর থেকে নিচে পড়লে তথনও ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
ভূমিকম্পের কৃত্রিম কারণ সমূহ
ভূমিকম্প অত্যন্ত মারাত্মক একটি বিষয় পৃথিবীবাসীর জন্য। ভূমিকম্প আসলে অনেক কারণেই হতে পারে। নিচে ভূমিকম্পের কৃত্রিম কারণগুলো তুলে ধরা হল-
ক। বাঁধ বা জলধার নির্মাণ
নদীতে বাঁধ দিয়ে জলধার নির্মাণ করা হয়। জলাধারে বিপুল পরিমাণ জলসঞ্চিত হলে জলের প্রচন্ড চাপে শিলার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়, ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। যেমন- ১৯৬৭ সালে মহারাষ্ট্রের কয়না জলাধরের জলের চাপে ভূমিকম্প হয়েছিল।
খ। পারমাণবিক বিস্ফোরণ
পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভূগর্ভে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ করলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়। যেমন- ১৯৭৪ এবং ১৯৯৯ সালে রাজস্থানের পোখরানে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছিল।
গ। খনিজ পদার্থ উত্তোলন
আবার ভু-অভ্যন্তর থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলন করলে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। এই গর্তের ধ্বস নামলেও ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
ঘ। ডিনামাইট বিস্ফোরণ
পার্বত্য অঞ্চলের রেলপথ, সড়কপথ, সুরঙ্গ নির্মাণের জন্য ডিনামাইট বিস্ফোরণ করা হয়ে থাকে। এর ফলেও ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
ভূমিকম্পের ফলাফল সমূহ
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর ফলে জান ও মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভূমিকম্পের প্রভাব ভূমিরূপ এবং মানবজাতির ওপর দেখা যায়। নিচে সংক্ষেপে ভূমিকম্পের ফলাফল তুলে ধরা হলো।
ক। ভূমিরূপের ওপর প্রভাব
ভূমিকম্প অত্যন্ত মারাত্মক একটি বিষয় পৃথিবী বাসীর জন্য। ভূমিকম্প ঘটার ফলে নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয়। নিচে ভূমিকম্প ঘটিত হলে ভূমিরূপের ওপর যে প্রভাব পড়ে তা তুলে ধরা হল-
১। ফাটল, চ্যুতি, স্তূপ পর্বত এবং গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি
ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকে ফাটলের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই ফাটলের মধ্যবর্তী ভূ-ভাগ উপরে উঠে স্তূপ পর্বত এবং নিচের দিকে বসে গিয়ে গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি করে থাকে। যেমন- প্তি গ্রস্ত উপত্যকা; বিন্ধ্য, নর্মদা, তা ও সাতপুরা স্তূপ পর্বত এইভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
২। ভঙ্গিল পর্বত গঠন
ভঙ্গিল পর্বত গঠনের করার সময় পলিস্তরে চাপ পড়ায় ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়ে থাকে। পলিস্তর ভাঁজ প্রাপ্ত হয়ে উপরে উঠে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করে।
৩। ভূমির উত্থান এবং অবনমন
ভূমিকম্পের ফলে উপকূলভাগ উপরে উঠে যেতে পারে অথবা নিচে নেমে যেতে পারে। যেমন- ১৮১৯ সালে কচ্ছের রান অঞ্চল নিচে নেমে গিয়েছিল।
৪। কাদা গ্যাস ও বাষ্প নির্গমন
ভূমিকম্পের কারনে ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে গ্যাস, কাদামাটি ও বাষ্প নির্গত হয়।
৫। নদীর গতিপথ পরিবর্তন
ভূমিকম্পের ফলে ভূমির ঢালের পরিবর্তন হয় অথবা নদীপথ বন্ধ হয়ে নদীর গতিপথের পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন- ১৯৫০ সালে আসামের ভূমিকম্পের কারনে দিবং নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছিল।
৬। অগ্ন্যুদগম
ভূমিকম্পের কারনে ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে ম্যাগমা উপরে বেরিয়ে আসে।
৭। হ্রদ সৃষ্টি
ভূমিকম্পের কারনে নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে হ্রদ সৃষ্টি হয়। যেমন- ১৯৫০ সালে আসামের ভূমিকম্পের কারনে নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে মাধুরী হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে।
৮। প্রস্রবণ
ভূমিকম্পের ফলে ভূ-অভ্যন্তরের পানি উপরে বেরিয়ে এসে প্রস্রবনের সৃষ্টি করে।
৯। সুনামি সৃষ্টি
ভূমিকম্পের ফলে উপকূল অঞ্চলে প্রচুর সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়, যা সুনামি নামে পরিচিত। যেমন- ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরের সুনামি এর ভালো উদাহরন।
খ। মানবজীবনে প্রভাব
ভূমিকম্প অত্যন্ত মারাত্মক একটি বিষয় পৃথিবী বাসীর জন্য। ভূমিকম্প ঘটার ফলে নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হয়। নিচে ভূমিকম্প ঘটিত হলে মানবজীবনের উপর যে প্রভাব পড়ে তা তুলে ধরা হল-
১। কৃষি কাজে ক্ষতি
ভূমিকম্পের হওয়ার ফলে আবাদি চাষের জমি এবং কৃষিজ ফসলের জমির ক্ষতি হয়। এর সাথে প্রচুর গবাদি পশু মারা যায়।
২। পরিকাঠামো ধ্বংস
স্থলভাগের সড়কপথ, রেলপথ, সেতু এবং বাড়িঘর প্রভৃতির প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।
৩। জীবনহানি
যদিও ভূমিকম্প অল্প সময়ের জন্য হয় তবু ভূমিকম্পের ফলে প্রচুর মানুষের মৃত্যু ঘটে থাকে
৪। অগ্নিকাণ্ড
ভূমিকম্পের কারনে বিদ্যুতের লাইনে, বড় বড় বিল্ডিং এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। যার ফলে ক্ষতির পরিমান বড় আকারে হয়ে থাকে।
৫। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিপর্যয়
বিদ্যুতের খুঁটি বা লাইন ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
ভূমিকম্প প্রবণ দেশ কোনটি?
জাপানকে ভূমিকম্পের দেশ বলা হয়। কারণ জাপানের ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে দেশটি পৃথিবীর যেই কোনো দেশের চেয়ে বেশি ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়ে থাকে থাকে।
সর্বোচ্চ ভূমিকম্পের মাত্রা কত?
পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯৬০ সালের ২২ মে চিলিতে। ৯ দশমিক ৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পে চার হাজার ৪৮৫ জন মানুষ মারা গিয়েছিল আহত হয়েছিল আরো অনেকে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছিল। এর কারনে সৃষ্ট সুনামিতে চিলি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উপসংহার
ভূমিকম্প সকলের কাছেই পরিচিত একটি শব্দ। ভূমিকম্প কয়েক সেকেন্ডর জন্য হয়ে থাকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটি এলাকার চিত্র পরিবর্তন করে দেয়। পৃথিবীতে যত ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এবং ভয়াবহ হলো ভূমিকম্প। সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেলেও ভূমিকম্পের তেমন কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম এই ভূমিকম্প। এর কারণ হচ্ছে মানুষ দিন দিন অনেক উঁচু স্থাপনা তৈরি করছে যার ফলে একই জায়গায় অনেক মানুষ বসবাস করতে পারছে। কিন্তু ভূমিকম্পের ফলে স্থাপনা গুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। দিন দিন ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। যার ফলে সব সময় সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হচ্ছে। বিশেষ করে বহুতল ভবন থেকে দূরে থাকাই ভালো। বর্তমানে বাংলাদেশ ভূমিকম্পের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে ভূমিকম্প থেকে বাঁচার কৌশল গুলো সকলের মেনে চলা উচিত। ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল জেনে আমাদের করনীয় ঠিক করা উচিত। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পরিবেশ সংরক্ষণের ১০টি উপায় সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।