নবীদের নামের তালিকা অর্থসহ আমরা অনেকই বলতে পারবো না। মানুষ সৃষ্টির পর তাদের হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে মহান আল্লাহ তা’আলা অসংখ্য নবী-রাসূল এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। কি পরিমাণ নবী-রাসূল এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তা শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলাই ভালো বলতে পারবেন। তবে পবিত্র কোরআনে সর্বমোট ২৬ জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ নবীর নামগুলোই আল্লাহ আমাদের নিকট উল্লেখ করেননি। এই দুনিয়ায় কত সংখ্যক নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন তা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালােই সঠিকাভাবে জানেন। হাদিসে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, এই দুনিয়াতে আল্লাহ তা’আলা অনেক নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং তা প্রায় এক লক্ষ্য চল্লিশ হাজার ( ১,৪০,০০০ ) জন এর মত হবে। এর মধ্যে আবার তিনশত তেরজন ( ৩১৩ জন ) ছিল রাসূল। আর বাকি সবাই ছিলেন নবী।
নবী কাকে বলা হয়?
নবী শব্দটি আরবী শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ সংবাদ। নবি বা পয়গম্বর বলতে সেসব ব্যক্তিদেরকে বোঝানো হয় যারা বলেন যে সৃষ্টিকর্তার সাথে তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যোগাযোগ বা বার্তা বিনিময় হয়েছে। এবং তারা নিজেরা যে সকল শিক্ষা লাভ করেন তা নিঃস্বার্থভাবে অন্যান্য লোকদের মাঝে বিলিয়ে দেন। নবিদের অধিকাংশই মানুষকে ধর্মীয় শিক্ষা, সুসংবাদ অথবা সতর্কবার্তা প্রদান করেন। নবীগণ যে বার্তা লাভ করেন তাকে ইসলামে “রিসালাত” বলা হয়। আল্লাহ পাকের তরফ থেকে যাদের উপর কোন শরিয়াত নাজিল হয়নি তাদেরকেই নবী বলা হয়। সাধারনত আমরা জানি, নবীদের উপর আল্লাহ তায়ালা কোন শরিয়ত নাজিল করেননি। তবে তাদের উপর শরিয়ত নাজিল না হলেও তাদের মূল কাজ ছিলো মানব জাতির কাছে ইসলামকে প্রচার করা মানব জাতিকে হেদায়াত এর পথে ডাকা ও ইসলামকে বাস্তবায়ন করা। নবীদের কাছে কোন শরিয়ত নাজিল না হওয়ার কারনে সেই নবীদের পূর্বের বা পরের শরিয়ত মোতাবেক ইসলামকে বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট থাকতেন।
রাসুল কাকে বলা হয়?
রাসুল বলতে সাধারনত আমরা বুঝি যাদের ওপর মহান আল্লাহতায়ালা কোন শরিয়াত নাযিল করেছেন। সেই শরীয়ত মোতাবেক সকল বিধান পৃথিবীর মানুষের মাঝে বাস্তবায়নের জন্য হুকুম করেছেন তাদেরকে মূলত আমরা রাসুল বলে থাকি। তাই বোঝা গেল যে প্রত্যেক রাসূলই নবী ছিলেন কিন্তু প্রত্যেক নবীই রাসূল ছিল না। সহজ করে বললে, রাসূল হলেন মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রেরিত বার্তাবাহী ব্যক্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে রাসূল বলতে মূলত তাদেরকেই বোঝানো হয়, যারা আল্লাহর কাছ থেকে কিতাব বা পুস্তক প্রাপ্ত হয়েছেন। হাদিস সহ অন্যান্য ইসলামী বইয়ে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবীর কথা বলা হয়েছে। এদের মাঝে সকলেই কিতাব প্রাপ্ত হন নি। যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছেন, তারাই শুধু রাসূলের খেতাব পেয়েছেন। অর্থাৎ, সকল রাসূল-ই নবী কিন্তু সকল নবী-ই রাসূল নন। সকল নবী ও রাসূলের মাঝে শ্রেষ্ঠ রাসূল বলে ধরা হয় হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে। ইসলাম ধর্ম অনুসারে তিনিই শেষ নবী এবং তার পরে আর কোনো নবী আসবে না।
নবীদের নামের তালিকা অর্থসহ
যুগে যুগে মহান আল্লাহ তা’আলা অসংখ্য নবী-রাসূল এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের বর্ণনায় সর্বমোট ২৬ জন নবী-রাসূল এর নাম উল্রেখ আছে। এই পৃথিবীতে কত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন তা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে এক হাদীসে প্রিয় নবী সাঃ প্রায় এক লক্ষ্য চল্লিশ হাজার ( ১,৪০,০০০ ) মতান্তরে ২ লক্ষ চল্লিশ হাজার জন নবীর কথা উল্লেখ করেছেনে। আবার এই এক লক্ষ্য চল্লিশ হাজার নবী – রাসূল এর মধ্যে তিনশত তেরজন ( ৩১৩ জন ) ছিল রাসূল। আর বাকি সবাই ছিলেন নবী। নিচে সংক্ষেপে ছক আকারে নবীদের নামের তালিকা অর্থসহ বর্ণনা উল্লেক করা হলো।
নাম | নামের অর্থ | সংক্ষিপ্ত পরিচয় | দেশ | বয়স |
হযরত আদম (আঃ) | মাটির মানুষ, প্রথম মানুষ, মাটির সৃষ্টি। | তিনি এই দুনিয়ার প্রথম মানব ও প্রথম নবী। | শ্রীলংকা | ১০০০ বছর |
হযরত শীষ (আঃ) | আল্লাহর দান | তিনি ছিলেন হযরত আদম (আঃ) এর সন্তান এবং একজন নবী। | উপমহাদেশ | ৯১২ বছর |
হযরত নূহ (আঃ) | বিশ্রাম থেকে মুক্তিনৌকা | কোরআনে বর্নিত মহাপ্লাবন এই নবীর সম্যেই হয়।তিনি নিজ জাতিকে সাড়ে ৯ শত বছর দাওয়াত দিয়েছেন | জর্ডান | ৯৫০ বছর |
হযরত শোআইব (আঃ) | আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ প্রাপ্ত | উনার সম্প্রদায়ের মানুষজন ওজনে কম দিত, তাই তারা আল্লাহ তায়ালার আজাবপ্রাপ্ত হয়। | সিরিয়া | ৮৮২ বছর |
হযরত সালেহ (আঃ) | ধার্মিক, ন্যায়নিষ্ঠ, অটুট, ভালো | লেবানন | ৫৮৬ বছর | |
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) | অন্তরঙ্গ বন্ধু | তিনি মুসলিম জাতির পিতা।তিনি ইসমাঈল আঃ কে নিয়ে কাবা ঘর নির্মান করেন। | ইরাক | ১৯৫ বছর |
হযরত ইসমাঈল (আঃ) | উদার, ভাগ্যবান, উৎসর্গীকৃত | ইসমাঈল আঃ ছিলেন এমন নবী জিনি জন্মগ্রহণ করার পূর্বেই জ্ঞানী বলে সুসংবাদ পান। | সৌদি আরব | ১৩৭ বছর |
হযরত ইসহাক (আঃ) | হাস্যময়ী একজন | তিনি ছিলেন সম্পর্কে ইসমাঈল আঃ এর ভাই। | ফিলিস্তিন | ১৫০ বছর |
হযরত ইয়াকুব (আঃ) | স্থলাভিষিক্ত, দোয়েল পাখি। | ইয়াকুব (আঃ) এর আরেক নাম ছিলো ইসরাইল। উনার নামানুসারেই বনী ইসরাইল গোত্রের নামকরণ করা হয়। | ফিলিস্তিন | ১২৯ বছর |
হযরত ইউসুফ (আঃ) | আল্লাহ বৃদ্ধির দান | উনার নামে পবিত্র কোরআনে একটি সূরা রয়েছে- সূরা ইউসুফ। তিনি এবং তার কয়েক প্রজন্মের পূর্বপুরুষ নবী ছিলেন। | ফিলিস্তিন | ১১০ বছর |
হযরত মূসা (আঃ) | সংরক্ষিত, রক্ষা কর্তা | তিনিই ছিলেন বনী ইসরাইল এর প্রথম নবী। | মিশর | ১২৫ বছর |
হযরত হারুন (আঃ) | পর্বত | তিনি ছিলেন মূসা (আঃ) এর ভাই। | মিশর | ১১৯ বছর |
হযরত লূত (আঃ) | সংজ্ঞা, ভাগ্যবান | সমকামিতার মতো কঠিন পাপের কারনে তার সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহর আজাব নাজিল হয়। | জর্ডান | ১২৪ বছর |
হযরত ইয়াহ-ইয়া (আঃ) | সক্রিয়, গুরুত্ব, আধুনিক, বন্ধুত্বপূর্ণ | ফিলিস্তিন | ৯৫ বছর | |
হযরত আইয়ুব (আঃ) | অন্তর্মূখী, প্রত্যাবর্তনকারী নবী | আইয়ুব (আঃ) কে আল্লাহ তায়ালা কঠিন আসুখের পরীক্ষায় ফেলেছিপেন এবং দীর্ঘকাল তিনি সেই অসুখে জর্জরিত ছিলেন। | সিরিয়া | ১৪০ বছর |
হযরত ইউনুস (আঃ) | সান্ত্বনা, প্রভুর উপহার | ইউনুস (আঃ) কে আল্লাহ মাছের পেটে রেখে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। ৪০ দিন পর তিনি পেটথেকে বেড়িয়ে আসেন | ইসরাইল | ১২৩ বছর |
হযরত হুদ (আঃ) | পথ- প্রদর্শন, নেতৃত্ব | ইয়েমেন | ২৭০ বছর | |
হযরত আল-ইয়াসা (আঃ) | স্বাচ্ছন্দ্য, বিলাসিতা | জর্ডান | ১১০ বছর | |
হযরত দাউদ (আঃ) | প্রিয় বন্ধু, আল্লাহর বন্ধু | হযরত দাউদ (আঃ) কে যাবুর কিতাব দান করা হয়েছিলো।তিনি একদিন রোজা রাখতেন আরেকদিন রাখতেন না।এভাবে পালা করে তিনি আল্লাহর ইবাদত করতেন। | বনি ইসরাইল বংশে | ১২০ বছর |
হযরত ইদ্রিস (আঃ) | শিক্ষায় ব্যস্ত ব্যাক্তি, জ্ঞানী | কোরআনে আল্লাহ তায়ালা উনাকে সিদ্দিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।তিনিই প্রথম কাপড় সেলাই করে পরিধান করা শুরু করেন এবং সর্বপ্রথম কলম দ্বারা লিখেন। | ইরাক | ৩৬৫ বছর |
হযরত ইউশা বিন নুন (আঃ) | নবীদের একজন | তিনি মুসা আঃ এর ভৃত্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বনী ইসরাইল সম্প্রদায়ের রাজা হন।মহান আল্লাহ তায়াল তাকে ইসলামে নবীর সম্মান লাভ করেন। | ফিলিস্তিন | ১৪৭ বছর |
হযরত যুলকিফল (আঃ) | দ্বিগুনের অধিকারী, | তুরস্ক | ৭৫ বছর | |
হযরত সোলাইমান (আঃ) | শান্তিপূর্ণ, শান্তিপ্রিয় | তিনি ছিলেন সমস্ত পৃথিবীর বাদশা। তিনি জীনদের ও বাদশা ছিলেন। তিনি পশুপাখিদের ভাষা বুঝতেন। বাতাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন। | ইসরায়েল | ১৩৭ বছর |
হযরত যাকারিয়া (আঃ) | সৃষ্টি কর্তার স্মরনে | তিনি পেশায় একজন কাঠুরে ছিলেন। | ফিলিস্তিন | ২০৭ বছর |
হযরত ঈসা (আঃ) | পবিত্র, আন্তরিক, | তিনি বনী ইসরাইল সম্প্রদায়ের শেষ নবী।তিনি শেষ জামানায় পূনরায় বিশ্বনবীর উম্মত হয়ে এই পৃথিবীতে আগমন করবেন। | ফিলিস্তিন | পৃথিবীতে ৩৩ বছর অবস্থান করেন |
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) | প্রশংসিত | আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বিশ্বনবীর সম্মানার্থে উনার নাম খুবই কম ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ তায়ালা উনাকে ইয়া আইয়ুহান নাবী বা ইয়া আইয়ুহার রাসূল বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।এ | সৌদি আরব | ৬৩ বছর |
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
নবীদের নামের তালিকা অর্থসহ এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
পৃথিবীর প্রথম নবী কে ছিলেন?
আদম জান্নাত থেকে অবতরণ করার পর, যেখানে তিনি 130 বছর বসবাস করেছিলেন, তিনি আল্লাহর কাছ থেকে নবুওয়াত প্রাপ্ত হন। আদম, প্রথম মানুষ, প্রথম নবী এবং প্রথম রাসুল হয়েছিলেন যাকে আল্লাহ নাযিল করেছিলেন। হযরত আদম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রীর অনেক সন্তান ছিল।
আল্লাহর নবী ও রাসূলদের মধ্যে পার্থক্য কি?
আল্লাহ তায়াল যুগে যুগে মানুষকে হেদায়েতের জন্য অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরন কছেছেন। তাদের প্রকৃত সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ভালো বলতে পারবেন। এর মধ্যে থেকে মাত্র ৩১৩ জন হলেন রাসুল আর বাকী সবাই হলেন নবী। কুরআনে উল্লিখিত আলে সকল রাসুলগন নবী কিন্তু সকল নবী রাসূল নন ।
উপসংহার
রাসূল বলতে আমরা তাদেরকেই বুঝি যেই সকল নবীদের উপর কোনো শরিয়ত নাজিল হয়েছিলো এবং সেই শরিয়ত অনুযায়ী তারা ইসলাম কে বাস্তবায়ন করতে সারাটা জীবন চেষ্টা করে গেছেন। আল্লাহ তায়ালা সেই শরিয়তের মধ্যেই মানব জাতির হিদায়াতের পথ নির্দেশ করে দিয়েছেলেন। এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যারা রাসূল ছিলেন তারা নবীও ছিলেন। কিন্তু সকল নবীই আবার রাসুল ছিলেন না। নবীদের উপর আল্লাহ কোন শরিয়ত নাযিল করেন নি। তবে তাদের গোত্র বা বংশ বা মানুষকে পরিচালনার জন্য আল্লাহ তায়ালা গাইড বা নির্দেশনা প্রেরন করেছেন। উপরে উল্লেখিত ছকে ২৬ জন নবীদের নামের তালিকা অর্থসহ আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে বিজ্ঞানীদের নাম ও আবিষ্কার সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“নবীদের নামের তালিকা অর্থসহ” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।