সেরা বাংলা কিবোর্ড নিয়ে মাঝে মধ্যেই সোস্যাল মিডিয়ায় ক্যাপশন দেখা যায়। ইন্টারনেটে আমরা প্রায় সবাই কমবেশি বাংলায় লেখালেখি করে থাকি। হোক সেটা লোকজনের সাথে যোগাযোগের জন্য অথবা বাংলায় কোনো কিছু গুগলে সার্চ করার জন্য। এছাড়াও আমাদের মোবাইলে বা কম্পিউটারে বাংলা টাইপিং এর জন্য সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়। আপনি চাইলে ফোনেটিক পদ্ধতিতে অর্থাৎ কীবোর্ডের মধ্যে ইংরেজি বর্ণে লিখে স্ক্রিনে তা অটোমেটিক বাংলা অক্ষরে পেতে পারেন। অথবা বাংলা কিবোর্ড সফটওয়্যার এ সরাসরি বাংলা অক্ষরে লিখতেও পারেন। উভয় উপায়েই আপনি বাংলা লিখতে পারেন
কি বোর্ড কি?
কী-বোর্ড হলো কম্পিউটার এর একটি অন্যতম ইনপুট ডিভাইস যাতে কিছু বাটন সাজানো থাকে এবং ইলেকট্রনিক সুইচের মতো কাজ করে। স্ক্রিনে কোনো চিহ্ন বা অক্ষর তৈরি করতে হলে এক বা একাধিক কী চাপতে অথবা চেপে ধরে রাখতে হয়। কী- বোর্ডের মাধ্যমে টাইপ করা ছাড়াও এর দ্বারা কম্পিউটারকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের নির্দেশ প্রদান করা যায়।
বাংলা কি বোর্ড কি?
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আজ বাংলার ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বজুড়ে। বেশ কয়েক বছর আগেও আমরা বাংলা শুধুমাত্র হাতে লিখে নিজের মনের ভাব ফুটিয়ে তুলতাম। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যানে আমাদের হাতের লেখার বদলে এখন বাংলা চর্চা হচ্ছে টাইপিং এর মাধ্যমে। মূলত একটি কি বোর্ডকে বাংলা ইন্টারফেসের আলোকে, বাংলা অক্ষরসমূহ সাজিয়ে যে বোর্ড বাজারে পরিচালনা করা হয় সেই কি বোর্ডকেই বলা হয় বাংলা কি বোর্ড। মূলত বাংলা চর্চাকে সহজ, সরল ও বেগমান করতে বাজারে এসেছে বাংলা কি বোর্ড।
সেরা বাংলা কিবোর্ড সমূহ
কম্পিউটারে লেখার জন্য বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় কি বোর্ড এর ফন্ট আবিস্কা হয়েছে। এদিক থেকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। তাদের নিজস্ব ভাষায় লেখার জন্য বাংলা কি বোর্ড আবিস্কার করেছে। নিচে কয়েকটি সেরা বাংলা কিবোর্ড সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
১। বিজয় বাংলা কিবোর্ড
আামদের বাংলা কি বোর্ড সফটওয়্যার এর কথা বলতে গেলে সবার প্রথমে যে কি বোর্ডটির নাম আমাদের সামনে আসে তা হল বিজয় বাংলা কি বোর্ড। জনপ্রিয় বাংলাদেশি প্রকৌশলী জনাব মোস্তফা জব্বার স্যারের সরাসরি অন্তর্ভূক্তিতে রচিত হয়েছিল এই বাংলা কি বোর্ডটি। তিনি ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলা ভাষাভাষি মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করেন এই সফটওয়্যারটি।
বর্তমানে বাংলাদেশের সকল সরকারি কাজে বাংলা লেখার জন্য যে সফটওয়্যারটি বেশি ব্যবহার করা হয় সেটি হচ্ছে এই বিজয় বায়ান্ন । জনাব মোস্তফা জব্বার ২০০৯ সালে ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা লেখার এই সফটওয়্যারটি আবিস্কার করেন । এই সফটওয়্যারটি আপনি চাইলে অনলাইন কিংবা অফ লাইনে ব্যবহার করতে পারেন । আমরা যেসব সাধারণ কিবোর্ড ব্যবহার করি সেখানে বাংলা লিখতে হলে আপনাকে বাংলা কিবোর্ড মুখস্থ করতে হবে । তাছাড়া আপনি লিখতে পারবেন না । কারন এইসব কী – বোর্ডে কোন বাংলা বর্ণ দিয়ে কি নাই।
২। অভ্র বাংলা কিবোর্ড
সময়ের সাথে সাথে বাংলা ভাষার পরিধি ব্যাপক হারে বেড়েছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারে এসেছি বেশ কিছু বাংলা সফটওয়্যার। তার মধ্যে অন্যতম হল অভ্র বাংলা কি বোর্ড। মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি বাজারে নিয়ে আসে এই সফটওয়্যার। আপনি এই সফটওয়্যারটি দিয়ে ইংরেজি বর্ণ চেপেই বাংলা লিখতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়াই।
আমরা বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা কম্পিউটারে বাংলা টাইপিং করি তাদের বেশির ভাগ মানুষই অভ্র কিবোর্ড ব্যবহার করে থাকি । অভ্র কিবোর্ড একদিকে যেমন কম্পিউটার সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা রয়েছে তেমনি মোবাইলের ক্ষেত্রেও একই কাজ করে যাচ্ছে । অভ্রতে লিখতে আমাদের কি বোর্ডের কোন কি মুখস্ত করার প্রয়োজন নেই। বলা যায় এক ধরনের বাংলিশ তার মানে ইংরেজিতে লিখলে সেটা বাংলায় কনভার্ট হয়ে যাবে । এই কিবোর্ড দিয়ে আপনি খুব সহজেই নির্ভুলভাবে বাংলা বানানসহকারে লিখতে পারবেন ।
৩। গুগল ইন্ডিক বাংলা কিবোর্ড
আপনি যদি আপনার প্রত্যাহিক জীবনে ব্যবহার করার জন্য কোন ধরণের সফটওয়্যার খুঁজে থাকেন তাহলে নির্দ্বিধায় বেছে নিতে পারেন এই সফটওয়্যার। এর অসাধারণ সব ফিচার আপনার বাংলা চর্চাকে করে তুলবে সহজ ,সরল ও সাবলীল। বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত এবং আলোচিত একটি সফটওয়্যারের নাম হল গুগল কি বোর্ড। কিন্তু গুগল কি বোর্ডে বাংলা লেখার কোন ধরণের সফটওয়্যার না থাকার কারণে বাংলা লেখা নিয়ে সকলে বেশ হিমশিম খয়। কিন্তু যারা বাংলা লিখতে ইচ্ছুক কিংবা বাংলা লিখতে চান তারা সহজে ব্যবহারর করে নিতে পারেন এই সফটওয়্যারটি।
৪। রিদমিক বাংলা কিবোর্ড ডাউনলোড
বাংলা লেখার ক্ষেত্রে প্রায় সকলেই যুক্তবর্ণের ব্যবহার নিয়ে বেশ হিমশিম খেয়ে থাকে। কিন্তু রিদ্মিক কি বোর্ডের অসাধারণ ফাংশন আপনাকে এই কিবোর্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা থেকে থেকে সহজে মুক্তি দিবে। কি বোর্ড এর ক্ষেত্রে যুক্তবর্ণের টাইপ করতে পারেবন খুব সহজে কোন ধরণের ঝামেলা ছাড়াই। বর্তমান মোবাইলে বাংলা টাইপিংয়ের ম ক্ষেত্রে অন্যতম এক আশা ভরসার নাম হল এই সফটওয়্যার।
৫। স্বরচক্র বাংলা কিবোর্ড
বাংলা টাইপিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি সফটওয়্যারের নাম হল স্বরচক্র বাংলা কি বোর্ড। অন্যান্য কি বোর্ডের তুলনায় বেশ ভিন্নতা রয়েছে এই কি বোর্ডে। তবে ব্যবহারের দিক থেকে বলতে গেলে আপনি চাইলে প্রথমে ব্যবহার শুরু করে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
৬। লিপিঘর কিবোর্ড
লিপিকার একটি ইন্ডিয়ান বাংলা সফটওয়্যার । এখানে আপনি ১৯ টি ভাষায় কনভার্ট করতে পারবেন এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে । এই সফটওয়্যারটি ইন্ডায়ার পাশাপাশি বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় বাংলা লেখার সফটওয়্যার হিসেবে । এটা একটি অনলাইন ইন্টারফেস সফটওয়্যার আপনি চাইলে ইনস্টল না করেই এই সফট্ওয়্যারটি বব্যবহার করতে পারবেন । যেকোনো জায়গায় বাংলা লিখতে আপনি এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন ।
৭। বর্ণ কিবোর্ড
বর্ণ হচ্ছে আরেকটি বাংলা লেখার ফ্রি সফটওয়্যার যা আপনি চাইলেই আজকে থেকেই ব্যবহার করতে পারেন । উইন্ডোজ এবং উইন্ডোজ ভিস্টা ভার্সনে ব্যবহার করতে পারবেন।
৮। সৌমিলি কিবোর্ড
এই বাংলা সফটওয়্যারটিও একটি ইন্ডিয়ান বাংলা সফটওয়্যার। এখানে বাংলা কিবোর্ড সফটওয়্যার এর পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষার জন্যও সফটওয়্যার পেয়ে যাবেন । আপনি এই সফটওয়্যারটি উইন্ডোজ ৭, ৮,১ ও ১০ এ অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন যা ৬৪ বা ৩২ বিটে এর কোন সমস্যা নাই । এই সফট্ওয়্যারটির এক কম্পিউটারের জন্য লাইসেন্স নিতে হলে আপনাকে ১০০০ রুপি খরচ করতে হবে ।
৯। অক্ষর বাংলা কিবোর্ড
২০০৩ সালে টেক্সট টু স্পিস সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে । এটা অনেক টা অভ্র কিবোর্ডের মতই কাজ করে থাকে । আপনি ইংরেজিতে লিখলে বাংলায় কনভার্ট হয়ে যাবে কোনো প্রকার প্যাটার্ন ছাড়াই ।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
সেরা বাংলা কিবোর্ড এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
বিজয় কিবোর্ড কত সালে বাজারে আসে?
বিজয় বাংলা কিবোর্ড ১৯৮৮ সালে বাজারে আসে। যা ইউনিকোড ভিত্তিক অভ্র কী-বোর্ড বাজারে আসার পূর্ব পর্যন্ত বহুল ব্যবহৃত একটি সফট্ওয়্যার ছিল। তথ্যপ্রযুক্তি ও সাধারণ বিষয়ের ওপর অনেকগুলো বইয়ের লেখক তিনি। তথ্যপ্রযুক্তি জগতে বাংলা ভাষা জনপ্রিয়করণে জব্বার একজন পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত হন।
কি বোর্ড কয় ধরনের?
কী-বোর্ডে ৮৪ থেকে ১০১টি বা কোন কোন কী-বোর্ডে ১০৪ টি কী আছে। ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে কী-বোর্ডকে মোটামুটি ৫টি ভাগে ভাগ করা যায়।
উপসংহার
বাংলা ভাষা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম এক ভূমিকা পালন করে আসছে এই বাংলা কিবোর্ড সফটওয়্যারগুলো। আমরা চাইলেই এখন ঘরে বসে বাংলা চর্চাকে আরও ধারালো করতে পারি এই বাংলা কি বোর্ড সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে। । বিশ্বের অন্যন্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও তাদের নিজস্ব ভাষায় লেখালেখির জন্য আবিস্কার কছেছে বেশ কয়েকটি বাংলা কি বোর্ড। যার মধ্যে থেকে উপরে কয়েকটি সেরা বাংলা কিবোর্ড নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ৫টি শিক্ষা প্রযুক্তির নাম সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“সেরা বাংলা কিবোর্ড ” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।