Skip to content
Home » ১০টি মাছের নাম বাংলা

১০টি মাছের নাম বাংলা

10 Fish Names Are Bengali

১০টি মাছের নাম বাংলা শীর্ষক আজকের প্রবন্ধে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের বলা হয় মাছে ভাতে বাঙ্গালী। ধনী-গরিব সকলের খাবারের তালিকায় মাছ থাকে। প্রতিদিনের খাবারে মাছ থাকবে না তা হতে পারে না। নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশে আমরা ছোট থেকেই মাছের সাথে পরিচিত। আমাদের সকলের তাই কিছু না কিছু মাছের নাম অবশ্যই জানা থাকার কথা। তবে বর্তমানে অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা ডিজিটাল যুগের দোহায় দিয়ে বাজারে না যাওয়ায় তাদের অনেকেই মাছের নাম জানে না। যেখানে তারা মাছের নামই জানে না, সেখানে বাংলায় মাছের নাম আশা করা বোকামি। বাংলাদেশে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য নদী। সকল নদীতেই কম বেশি মাছ পাওয়া যায়। এমন সৌভাগ্য বেশিরভাগ দেশের মানুষের হয় না। দেশীয় চাহিদা পূরনের পর মাছ এখন বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।

মাছ বলতে কী বোঝায়?

মাছ হলো একটি শীতল রক্ত বিশিষ্ট জলজ মেরুদণ্ডী একটি প্রাণী যারা পাখনার সাহয্যে সাঁতার কাটে এবং ফুলকার সাহায্য শ্বাস-প্রশ্বাস পরিচালনা করে থাকে। যেমন, কাতলা,রুই, কাতলা,বোয়াল, ইলিশ ইত্যাদি। এদের দেহে সচরাচর আঁইশ থাকে,সাধারণত এরা পানিকেই বসবাসের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। সাধারণত এদের দেহের বহির্ভাগ আঁশ দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে।  তবে আঁশ নেই এমন মাছের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। মাছ এদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে সাহায্য করে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার্জন, পুষ্টিমান উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাছ চাষের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। মৎস্য আমিষের ভূমিকা তাই অনস্বীকার্য।

১০টি মাছের নাম বাংলা

বাংলাদেশে প্রায় ২৬০ প্রজাতির স্বাদুপানির এবং ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও ১২ এর অধিক প্রজাতির চাষকৃত বিদেশী মাছ জলাশয়ে চাষ করা হয় এবং ৭০ এর অধিক জাতের বিদেশী বাহারী মাছ এ্যাকুয়ারিয়ামে পালন করা যায়। নিচে সংক্ষেপে ১০টি মাছের নাম বাংলা বর্ণনা উল্লেখ করা হলো।

১। ইলিশ মাছ

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ। খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণেও ভরপুর।১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে প্রায় ৩১০ গ্রাম ক্যালরি, ২২ গ্রাম প্রোটিন ও ১৯ দশমিক ৫ গ্রাম ফ্যাট থাকে।এছাড়াও মানবদেহের জন্য প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ২৭ ভাগ ভিটামিন সি, ২ ভাগ আয়রন ও ২০৪ ভাগ ক্যালসিয়াম ইলিশ মাছ থেকে পূরন করা হয়।

২। চিংড়ি মাছ

আমাদের দেশে চিংড়ি জনপ্রিয় একটি মাছ। চিংড়ির যেমন পুষ্টি উপাদান রয়েছে তেমনি রয়েছে বিভিন্ন উপকারিতা। তবে চিংড়ি খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এতে থাকা প্রচুর কোলেস্টেরল শরীরের ক্ষতি করে থাকে। প্রোটিনের চাহিদার প্রায় ৪২ শতাংশ চিংড়ি পূরণ করে থাকে। ভিটামিন ও মিনারেলসের পরিমাণও প্রচুর। ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ই, ভিটামিন বি ১২ ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে চিংড়িতে।

৩। কাতল মাছ

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ যোগানদাতা খাদ্য হচ্ছে মাছ। মাছের মধ্যে কাতলা মাছ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতি ১০০ গ্রাম কাতলা মাছে প্রোটিন  রয়েছে প্রায় ১৭.৫ গ্রাম, ফ্যাট প্রায় ২.০, খনিজ প্রায় ১.৫ গ্রাম, ফাইবার প্রায় ১.২ গ্রাম, শর্করা ২.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫১০ মি. গ্রাম, ফসফরাস ২১০ মি. গ্রাম এবং আয়রন ০.৯ মি.।

৪। কৈ মাছ

কৈ পরিচিত একটি মাছ। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুনেও ভরপুর। ১০০ গ্রাম কৈ মাছে পাওয়া যায় শক্তি প্রায় ১৩৯ কিলোক্যালরি, প্রোটিন প্রায় ১৭.৫ গ্রাম, ফ্যাট প্রায় ৭.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম প্রায় ৪১০ মি.গ্রা, ম্যাঙ্গানিজ ৫৩ মি.গ্রা, ফসফরাস ৩৯০ মি.গ্রা, পটাশিয়াম ২১৪ মি.গ্রা। এছাড়াও ভিটামিন এ প্রায় ২১৫ মাইক্রোগ্রাম এবং ভিটামিন ডি প্রায় ৮৫.৬০ আই ইউ।

৫। তেলাপিয়া মাছ

তেলাপিয়া মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-১২। আরও আছে ফসফরাসের মতো অপরিহার্য উপাদান। সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় তেলাপিয়া মাছের বেশ কয়েকটি ক্ষতিকর দিক দেখা ‍দিয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই মাছ খেলে হাড়ের ক্ষয়, হাঁপানি এবং এমনকি ক্যান্সারের মতো জীবননাশক রোগও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।

৬। বোয়াল মাছ

বোয়াল একটি পরিচিত মাছ। বোয়াল মাছ শরীরে শক্তি যোগান দেয়। এই মাছ শরীরের রক্ত ও পিত্তকে বিশুদ্ধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে বোয়াল মাছের শরীরে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড মানুষের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৭। মাগুর মাছ

মাগুর মাছে রয়েছে অনেক উপকারিতা এবং খেতেও সুস্বাদু। চিকিৎসকেরা বলেন, ১০০ গ্রাম মাগুর মাছে আছে প্রায় ৮৬ ক্যালরি, প্রায় ১৫ গ্রাম প্রোটিন, প্রায় ২১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, প্রায় ২৯০ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং শূন্য দশমিক ৭ মিলিগ্রাম আয়রন। দেশি মাগুর মাছে শরীরের উপযোগী লৌহ প্রচুর পরিমাণে থাকে।

৮। শিং মাছ

শিং মাছের পুষ্টিগুণ অন্যান্য মাছের তুলনায় একটু বেশি। এছাড়া শিং মাছ খেতেও অনেক সুস্বাদু। শিং মাছে থাকা আয়রন আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। শিং মাছে থাকা প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় ও দাঁতের জন্য অনেক উপকারি। নিয়মিত শিং মাছ খেলে মায়ের দুধ ও শক্তি বাড়ে এবং শরীরের ব্যাথা কমতে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম শিং মাছে থাকে প্রায় ২২ দশমিক ৮ গ্রাম প্রোটিন ,প্রায় ২ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম আয়রন এবং প্রায় ৬৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।

৯। পুঁটি মাছ

শরীরের প্রোটিনের অভাব দেখা দিলে বেশি বেশি পুঁটি মাছ খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং খনিজ। রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এই পুঁটি মাছ।

১০। টেংরা মাছ 

টেংরা একটি জনপ্রিয় মাছ। মাছটি খেতেও অনেক মজা। ১০০ গ্রাম টেংরা মাছে প্রায় ১৪৪ ক্যালরি শক্তি, প্রায় ১৯.২ গ্রাম প্রোটিন, ৬.৫ গ্রাম চর্বি, ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ২ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়। রক্তশূন্যতার রোগীদের বেশি বেশি টেংরা মাছ খাওয়া উচিত।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

১০টি মাছের নাম বাংলা এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।

পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর মাছ কোনটি?

চিতল বা ফ্ল্যাট ফিশ, কড মাছ, ইল, নীল পাখনার টুনা,সামুদ্রিক কই বা পোয়া মাছ, বিভিন্ন ধরনের স্যামন মাছ সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে অন্যতম। এসব মাছ তাদের পুষ্টিগুণের জন্য বিখ্যাত। তাই অধিক পরিমানে পুষ্টির প্রয়োজন হলে এই মাছগুলো খাওয়া যেতে পারে।

পৃথিবীতে কত প্রকার মাছ আছে?

পৃথিবীতে জীবিত মাছের প্রজাতির মোট সংখ্যা  প্রায় 32,000। এই প্রজাতির মাছগুলো সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিচরন করছে। 

উপসংহার

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা ১০টি মাছের নাম বাংলা সম্পর্কে জানলাম। বাংলাদেশের মানুষকে বলা হয় মাছে ভাতে বাঙালি। নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়ের  কারনে এদেশে হয়তো সেই প্রাচীনকাল থেকেই মাছ খাওয়া হতো।মাছ সাধারনত জলজ একটি প্রাণী। বিজ্ঞানের ভাষায় মাছ বলতে বোঝায় ঠাণ্ডা রক্তের জলজ মেরুদণ্ডী একটি প্রাণী। মাছের মাথার দু’দিকে কানকো ঢাকা ফুলকা আছে।

এ ফুলকার সাহায্যে শ্বাসপ্রশ্বাসের কাজ করে থাকে। জলের ভেতর জলে মিশে থাকা অক্সিজেন নেওয়ার ক্ষমতা মাছের রয়েছে। কোন কোন মাছের বাতাসে থাকা অক্সিজেন নিয়ে অনেকক্ষণ বেঁচে থাকার ক্ষমতাও রয়েছে। মাছ আমাদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অশেষ রহমত। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরন করে থাকে এই মাছ। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শাপলা ফুল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“১০টি মাছের নাম বাংলা” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *