৫ টি মহাসাগরের নাম শীর্ষক আজকের প্রবন্ধে আপনাকে স্বাগতম । পৃথিবী একটি গতিশীল এবং বৈচিত্র্যময় গ্রহ। পাঁচটি বিশাল মহাসাগর দ্বারা সজ্জিত। পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থলভাগ। একভাগ স্থলের মধ্যে ৭টি মহাদেশ রয়েছে। এবং বাকি অংশ জলে পরিপূর্ণ। এই জলটিকেই বিভিন্ন মহাসাগরে ভাগ করা হয়েছে। এবং এদের আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়েছে। পুরো পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে এই মহাসাগরগুলো। মহাসাগর শব্দটি এসেছে গ্রীক ‘ওকিআনোজ’ শব্দ থেকে। মহাসাগরের অর্ধেকেরও বেশি জায়গার গড় গভীরতা ৩,০০০ মিটার বা ৯,৮০০ বর্গফুটেরও বেশি। এই মহাসাগরগুলি পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় ৭০.৯% অংশ জায়গা দখল করে আছে। এই বিশাল জলরাশি আবার অনেকগুলো মহাসাগর ও ছোট ছোট সমুদ্রেও বিভক্ত। মহাসাগরের গড় লবণাক্তের উপাদান ৩.৫% এবং প্রায় সকল সমুদ্রের গড় লবণাক্ততা ৩% থেকে ৩.৮%। ভূগোলবিদরা মহাসাগরকে ৫টি অংশে বিভক্ত করেছেন।
মহাসাগর কাকে বলে?
সহজভাবে বলা যায়, পৃথিবী পৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থিত বিশাল আকৃতির জলরাশিকে মহাসাগর বলে। অন্যভাবে বলা যায়, অতি প্রকাণ্ড ও লবণযুক্ত বিপুল জলরাশি যা পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে তাকেই মহাসাগর বা মহাসমুদ্র বলে। আবার, একটি উম্নুক্ত বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তীর্ণ জায়গায় জল জমা হয়ে থাকলে তাকেও মহাসাগর হয়ে থাকে। মহাসাগর পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় ৭০.৯% স্থান দখল করে আছে। অর্থাৎ পৃথিবীর একভাগ স্থল ও তিনভাগ জল দ্বারা পরিপূর্ণ। যেমন, ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর ইত্যাদি। মহাসাগরের ইংরেজি নাম হচ্ছে Ocean । মহাসাগর পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় ৭০.৯% স্থান দখল করে আছে।
৫ টি মহাসাগরের নামগুলো
বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর জলরাশিকে আলাদা আলাদা পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন এবং আলাদা আলাদা নামকরন করেছেন। একেই পাঁচটি মহাসাগর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিশ্বে মোট পাঁচটি মহাসাগর রয়েছে। সেগুলি হলো, প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর,ভারতীয় মহাসাগর,আর্টিক মহাসাগর বা উত্তর মহাসাগর, অ্যান্টার্কটিক মহাসাগর বা দক্ষিণ মহাসাগর ইত্যাদি। নিচে সংক্ষেপে ৫ টি মহাসাগরের নাম ও এদের বিবরন উল্লেখ করা হলো।
১। প্রশান্ত মহাসাগর
সমুদ্রপৃষ্ঠতলের আয়তন কিংবা গভীরতার দিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর সবথেকে বড় মহাসাগর বলে পরিচিত। এই মহাসাগরটি দেখতে অনেকটা ত্রিভুজের আকৃতির মত দেখায়। পৃথিবীর উপরিভাগের মোট ক্ষেত্রফলের শতকরা প্রায় ৩২ শতাংশ এলাকা নিয়ে অবস্থান এই প্রশান্ত মহাসাগরের। প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিভাগের মোট আয়তন প্রায় ১৬,৫২,৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। সবথেকে বেশি গভীরতা এই পর্যন্ত ১০,৯১১ মিটার বা ৩৫,৭৯৭ ফুট প্রশান্ত মহাসাগরকে বিবেচনা করা হয়েছে ৷ প্রশান্ত মহাসাগরে ধারণকৃত পানির মোট আয়তন প্রায় ৭১,০০,০০,০০০ ঘন কিলোমিটার বা ১৭,০০,০০,০০০ ঘন মাইল। প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর সীমান্তে অবস্থিত আর্টিক মহাসাগর বা উত্তর মহাসাগর যা সুমেরু মহাসাগর নামে পরিচিত। এর দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থান করছে দক্ষিণ মহাসাগর যা কুমেরু মহাসাগর নামে পরিচিত। পশ্চিমে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মহাদেশের অবস্থান। আর পূর্ব দিকের সীমানা মিশে আছে আমেরিকার সাথে।
২। আটলান্টিক মহাসাগর
পৃথিবীর মোট আয়তনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ এলাকাজুড়ে আটলান্টিক মহাসাগর এর অবস্থান। আয়তনের দিক থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর উপরিভাগের অবস্থান অনুযায়ী মোট আয়তন ১০,৬৪,৬০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ৪,১১,০০,০০০ বর্গ মাইল। আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান দুইটি ভাগ রয়েছে। একটি হলো উত্তর আটলান্টিক এবং আরেকটি হলো দক্ষিণ আটলান্টিক। উত্তর আটলান্টিক এর উপরিভাগের মোট আয়তন প্রায় ৪,১৪,৯০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ১,৬০,২০,০০০ বর্গ মাইল। অন্যদিকে দক্ষিণ আটলান্টিক এর উপরিভাগের মোট আয়তন প্রায় ৪,০২,৭০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ১,৫৫,৫০,০০০ বর্গ মাইল। আটলান্টিক মহাসাগরের সবথেকে গভীরতম অঞ্চল বা পয়েন্ট টিকে বলা হয় ‘পুয়ের্তো রিকো ট্রেঞ্চ’। আটলান্টিক মহাসাগরের গড় গভীরতা প্রায় ৩,৬৪৬ মিটার বা ১১,৯৬২ ফুট। এই মহাসাগরে ধারণকৃত পানির মোট আয়তন প্রায় ৩১,০৪,১০,৯০০ ঘন কিলোমিটার বা ৭,৪৪,৭১,৫০০ ঘন মাইল। আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অবস্থিত। পূর্ব প্রান্তে রয়েছে ইউরোপ মহাদেশ এবং আফ্রিকা মহাদেশ এর অবস্থান। উত্তর প্রান্তে উত্তর মহাসাগর। আর দক্ষিণ প্রান্তে দক্ষিণ মহাসাগরের অবস্থান।
৩। ভারত মহাসাগর
আয়তনের দিক থেকে এই মহাসাগরটির অবস্থান তৃতীয়। ভারত মহাদেশের নামানুসারে এই মহাসাগরের নামকরণ করা হয় ভারত মহাসাগর। ভারত মহাসাগরের উপরিভাগের মোট আয়তন প্রায় ৭,০৫,৬০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ২,৭২,৪০,০০০ বর্গ মাইল। ভারত মহাসাগরের সবথেকে গভীরতম স্থানটি প্রায় ৭,২৫৮ মিটার বা ২৩,৮১২ ফুট নিচে অবস্থিত। এর গড় গভীরতা হলো প্রায় ৩,৭৪১ মিটার বা ১২,২৭৪ ফুট। ভারত মহাসাগরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত আফ্রিকা। পূর্ব দিকে ইন্দোচীন, সুন্দাদ্বীপপুঞ্জ এবং অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান। উত্তর দিকে রয়েছে ভারত উপমহাদেশ। দক্ষিণ প্রান্তে দক্ষিণ মহাসাগর অবস্থিত।
৪। আর্টিক মহাসাগর
আর্টিক মহাসাগর যা উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর নামে পরিচিত। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত বলেই মূলত এটি উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর নামে পরিচিত। পৃথিবীর পাঁচটি মহাসাগরের মধ্যে উত্তর মহাসাগর আয়তনে ও গভীরতায় সবথেকে ছোট । কিন্তু পাঁচটি মহাসাগরের মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসাগর হিসেবে বিবেচিত। আয়তনের দিক থেকে উত্তর মহাসাগরের মোট আয়তন প্রায় ১,৪০,৫৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ৫৪,২৭,০০০ বর্গ মাইল। উপকূলীয় অঞ্চলের আয়তন ৪৫,৩৯০ কিলোমিটার বা ২৮,২০০ মাইল। আর্কটিক মহাসাগরের প্রায় পুরোটাই উত্তর আমেরিকা, গ্রিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড,ইউরেশিয়া দ্বারা পরিবেষ্টিত। অন্যান্য মহাসাগরের তুলনায় আর্টিক মহাসাগরের পানিতে লবণাক্ততার পরিমান অনেক কম।
৫। দক্ষিণ মহাসাগর
দক্ষিণ মহাসাগর পৃথিবীর দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থিত সর্বশেষ একটি মহাসাগর। ইন্টারনেশনাল হাইড্রোগ্রাফিক অরগানাইজেশন এটিকে মহাসাগর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দক্ষিণ মহাসাগর অ্যান্টার্কটিক মহাসাগর নামেও পরিচিত। আয়তনের দিক থেকে পাঁচটি মহাসাগরের মধ্যে এর অবস্থান চতুর্থ। এন্টার্কটিকাকে মহাসাগরটির উপরিভাগের মোট আয়তন প্রায় ২,০৩,২৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার বা ৭৮,৪৮,০০০ বর্গ মাইল। দক্ষিণ মহাসাগর সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আবিস্কারের জন্য বিজ্ঞানীরা অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে এই মহাসাগর বিষয়ে। তবে এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ তথ্য ই বিতর্কিত আকারে রয়েছে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
৫ টি মহাসাগরের নাম এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম মহাসাগর কোনটি?
পৃথিবীতে মোট ৫টি মহাসাগর রয়েছে। বিশ্বের গভীরতম মহাসাগর এর নাম হল প্রশান্ত মহাসাগর। যার গভীরতা প্রায় ১০,৯১১ মিটার বা ৩৫,৭৯৭ ফুট ।
মহাসাগরে জোয়ারের কারণ কী?
জোয়ার-ভাটা প্রাথমিকভাবে চাঁদের মহাকর্ষীয় টান এবং সূর্যের কারণেও ঘটে। চাঁদ যখন পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে তখন তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সমুদ্রের জলে স্ফীতি সৃষ্টি করে যার ফলে উচ্চ এবং নিম্ন জোয়ারের সৃষ্টি হয়।
উপসংহার
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা ৫ টি মহাসাগরের নাম এবং প্রতিটি মহাসাগর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য জানলাম। সামগ্রিক দিক থেকে চিন্তা করলে পৃথিবীতে সুবিশাল একটি মাত্র লবনাক্ত জলাধার রয়েছে। কারন পৃথিবীর বুকে অবস্থিত জলরাশি কোনো ভাবেই পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নয়। কোনো না কোনো দিক থেকে সব অঞ্চলের জলরাশির মধ্যেই সংযোগ রয়েছে। এই ছিলো পৃথিবীর পাঁচটি মহাসাগর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য। মহাসাগরের রহস্য প্রতিনিয়ত আবিস্কৃত হচ্ছে। এই সম্পর্কিত তথ্যের পরিধি দিন দিন আরও বাড়তে থাকবে। মহাসাগর সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি না। আবার এমন অনেক তথ্য অজানা আছে। যেমন, সাগরের পানি আদৌ নীল নয় কিংবা মহাসাগরের তলেও আছে ঝর্ণা, হৃদ, নদী, আগ্নেগিরি, গভীর খাদ, সোনাসহ আরও অনেক কিছু। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ৫৭টি মুসলিম দেশের নাম সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“৫ টি মহাসাগরের নাম ” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।