জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৫টি কারণ শীর্ষক আজকের প্রবন্ধে আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি। জনসংখ্যা যে কোন একটি দেশের জন্য আর্শীবাদ ও অভিশাপ দুটিই হতে পারে। যদি দেশের সম্পদ দেশের জনগণের তুলনায় কমে যায় আর তখনই দেশে জনসংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি হয় এবং এই বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যদিও কঠিন কিন্তু খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সকলের সমান ভূমিকা রয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখতে হলে প্রথমে তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে হবে।
সমাজে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, ছেলে সন্তানের লোভে অধিক সন্তানের জন্ম দেওয়ার মতো কুসংস্কার রয়েছে যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপকভাবে দায়ী। এছাড়াও দেশের মানুষের গড় আয়ু কম হলে এবং শিশু মৃত্যুর হার বেশি হলে তখনও দেশের জনগণ অধিক সন্তানের প্রতি আগ্রহী হয়। দারিদ্র্যতার হার বেশি আর নারীর মতামতের প্রাধান্য না থাকাও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারন হিসেবে কাজ করে। নারীদের অশিক্ষা ও অজ্ঞতাও জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য মারাত্বকভাবে দায়ী। অশিক্ষিত নারী অপরিকল্পিতভাবে অধিক সন্তান জন্ম দেয়।
জনসংখ্যা কাকে বলে?
জনসংখ্যা মূলত কোন সার্বভৌম ভূখন্ডে দলগতভাবে বসবাসকারী জনগনকেই বুঝিয়ে থাকে। কোন দেশের নারী পুরুষ একত্রে মিলে যে মোট লোকসংখ্যা হয় তাকেই ওই দেশের জনসংখ্যা বলে। অর্থাৎ, কোন একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডের একক জনগোষ্ঠীকে ওই ভূখন্ডের জনসংখ্যা বলে থাকে। আরও বুঝয়ে বললে, কোনো নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ও দলবদ্ধভাবে বসবাসরত বিভিন্ন বয়সের নারী ও পুরুষের সমষ্টিকে জনসংখ্যা বলে। আবার কোন একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডের একক জনগোষ্ঠীকেও ওই ভূখন্ডের জনসংখ্যা বলে থাকে। জনসংখ্যা মূলত একটি দেশের চালিকা শক্তি। দক্ষ জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করেই সেই দেশর সার্বিক বিষয় পরিচালিত হয়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৫টি কারণ
বাংলাদেশ একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশ। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বিবেচনায় জনসংখ্যাকে এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জনসংখ্যা সমস্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবং তা দেশকে ক্রমেই জনবিস্ফোরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনেক কারন রয়েছে। যেমন, বাল্য বিবাহ, দারিদ্রতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং নারী শিক্ষার অভাব ইত্যাদি। এর মধ্য থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৫টি কারণ সংক্ষেপে নিচে আলোচনা করা হলো।
১। জন্মহার ও মৃত্যুহারের অসামঞ্জস্যতা
বছরে যদি জন্ম নেওয়া শিশুর চেয়ে মৃত্যুবরন করা শিশুর পরিমান বেশি হয় তকে বলে জন্ম ও মৃত্যুহারের অসামজস্যতা। বাংলাদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনের ফলে মৃত্যুহার আস্তে আস্তে হ্রাস পেলেও জন্মহার সে অনুপাতে কমছে না। বর্তমানে যেখানে প্রতি বছর ২.৫২% হারে জন্মগ্রহণ করে সেখানে মারা যাচ্ছে ১.৯৬% হারে। জন্মহার ও মৃত্যুহারের এ অসঙ্গতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। যা প্রতিনিয়ত দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে চলেছে। বিভিন্ন কারনে এই অসঙ্গতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি অন্যতম।
২। অশিক্ষা ও অজ্ঞতা
শিক্ষাকে একটি জাতির মেরুদন্ড বলা হয়ে থাকে। অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত জাতি বেশি দূর এগুতো পারে না। বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসরতা ও অজ্ঞতার সাথে প্রজনন হার বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে নারী সমাজের শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসরতা বা অশিক্ষা ও অজ্ঞতা এ দেশের জন্মহারকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে গোবেষনায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশে এখনও শতভাগ শানুষকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। যদিও প্রতিনিয়ত এই খাতে উন্নতি করে চলেছে বাংলাদেশ। তবে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সময় বিবেচনায় বাংলাদেশে চোখে পড়ার মত উন্নতি করেছে।
৩। বাল্য বিবাহ
বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ বছর এবং মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর নির্ধারন করা হয়েছে। এই সময়ের পূর্বে বিয়ে দেওয়াকেই বলে বাল্য বিবাহ। বাল্য বিবাহরের মূল কারন অসেচতনা ও দারিদ্রতা। দারিদ্রতা ও অশিক্ষার কারনে বিশেষ করে গ্রামগঞ্জে মেয়েদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বেই বিয়ে দেওয়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির আরেকটি প্রধান কারন। ধর্মীয় রীতিনীতির কারনেও মেয়েদের অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। সমাজে প্রচলিত এসব ধারণার কারণে এদেশের গ্রামীণ সমাজে বাল্য বিবাহের প্রচলন এখনও বিদ্যমান। এ বাল্য বিবাহও জন্মহারকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক অসেচতন শিক্ষিত পরিবারেও মেয়েদেরকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে দেখা যায়।
৪। দারিদ্র্য
দারিদ্রতার কারনে সন্তানদের পড়াশোনা করাতে না পাড়ায় একদিকে মেয়ে সন্তানকে অল্পবয়সে বিয়ে দেওয়া আর অন্যদিকে ছেলে সন্তানকে অল্পবয়সে কাজে দেওয়াও জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। দারিদ্র দূরীকরনে এবং অধিক আয়ের জন্য অনেক সময় একাধিক সন্তান নেওয়া হয় যা জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার এখনও একটা বড় অংশ দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে রয়েছে। যেখানে মানুষের মৈৗলিক চাহিদাগুলো পূরন হয় না সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে সচেতনাতা তাদের জন্য বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না।
৫। নারী শিক্ষার অভাব
বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় যেসব দেশে নারীশিক্ষার হার বেশি সেসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। জনসংখ্যা বৃদ্ধির আরেকটি অন্যতম প্রধান কারণ হল নারীশিক্ষার অভাব। প্রকৃত শিক্ষা না থাকায় তারা জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে বুঝতে পারে না। শিক্ষা ঝামেলা না থাকায় অল্পবয়সে বিয়ে দেওয়া হয় এবং পরিবার পরিকল্পনার ধারনা না থাকায় অধিক সন্তান গ্রহন করে থাকে। তারা মনেই করেন, সন্তান জন্ম দেওয়া ও লালন পালন করাই তাদের একমাত্র কাজ। এখনও বাংলাদেশের নারীদের একটা বড় অংশ প্রতিবছর শিক্ষার আলো থেকে ছিটকে যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ এই খাতে সম্প্রতি ব্যাপক উন্নতি করেছে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৫টি কারণ এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
বাংলাদেশে প্রতি বছর কতজন শিশুর জন্ম হয়?
প্রতি হাজারে জন্মহার ও মৃত্যুহারের পার্থক্যকে জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার বলে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্মহার ছিল প্রতি ১০০০ জনে ১৬.৭৪৪ জন যা 2022 থেকে ১.৮৯% হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের জন্মহার ছিল ১৭.0৬৭ জন প্রতি ১০০০ জনে। ২০২১ থেকে ১.৮৬% হ্রাস পায়। বাংলাদেশে জন্মহার ছিল ২০২১ এ প্রতি ১০০০ জনে ১৭.৩৯১ জন যা ২০২০ থেকে ১.৮২% হ্রাস পায়।
২০২৩ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত?
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে অনুমান করা হয়েছে ১৭,২৯,৫৪,৩১৯ জন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.১৫% এর সমান। জনসংখ্যার ভিত্তিতে দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ৮ নম্বরে।
উপসংহার
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় জনসংখ্যা সমস্যার বেড়াজালে আমরা আটকে যাচ্ছি। জনসংখ্যা বন্যার পানির মতো বেড়ে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বেশ উদ্বেগজনক। বিবিসি এবং ইউএনএফপির প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর হলো ঢাক শহর। জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রতিরোধে সমাজের সব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সমাজে এখনো কিছু কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। কুসংস্কার দূর করে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। না হলে সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় রুপ নিবে। উপরের আলোচনা থেকে আমরা জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৫টি কারণ আমরা জানলাম কিন্তু এরকম আরো অসংখ্য কারন রয়েছে যা আমাদের জানতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে মানুষের মৌলিক অধিকার ৬টি কি কি সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৫টি কারণ” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।