Skip to content
Home » খাদ্য সংরক্ষণের ৫টি উপায়

খাদ্য সংরক্ষণের ৫টি উপায়

5 Ways To Preserve Food

খাদ্য সংরক্ষণের ৫টি উপায় শীর্ষক আজকের প্রবন্ধে আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি। বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ ও অপচয়  প্রতিরোধের জন্য এখনও সেই আগের পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিনি, সিরকা,লবণ, ধোঁয়া ইত্যাদির ব্যবহার এবং শুকিয়ে খাদ্য উপাদান সংরক্ষণ। বর্তমানে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে এখন অনেক ধরনের খাদ্যসামগ্রী সংরক্ষণের বহুবিদ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার প্রধান উপায়গুলির মধ্যে রয়েছে অতি ঠান্ডায় খাদ্য মজুদকরণ, রোদে শুকানো, তাপের ব্যবহার, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার এবং তেজস্ক্রিয় বিকিরণ প্রয়োগ। খাদ্যের গুণগতমান ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন একটি নিয়ামক হলো তাপমাত্রা। মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রায় খাদ্যের গুনগতমান নষ্ট হয়ে যায়। পোকামাকড়সমূহ ২৬ থেকে ৩০০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় জন্মায় এবং এগুলো খাদ্য খেয়ে ফেলে ও তাদের মলমূত্র দ্বারা ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬৫% এর বেশি হলে খাদ্যে ছত্রাক পোকামাকড়ও জন্মাতে পারে। ফলে খাদ্যের পুষ্টিমান নষ্ট হয়।

খাদ্য সংরক্ষণ বলতে কী বোঝায়?

খাদ্যের গুণাগুণ সঠিক রাখার জন্য এবং পুষ্টিমান ঠিক রেখে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য খাদ্যকে প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দেওয়াকেই খাদ্য সংরক্ষণ বলে। আমরা জানি খাদ্যদ্রব্য রেখে দিলে ব্যাকটেরিয়া বা অণুজীব আক্রমণ চালায় এবং খাদ্যে টক্সিন তৈরি করে। ফলে খাদ্যকে পঁচনের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বাণিজ্যিক এবং গৃহে উভয়ভাবেই খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়। খাদ্য সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তবে সকল পদ্ধতি অবার সমানভাবে কাজ করে না। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ভাবে এই সংরক্ষন পদ্ধতিগুলো কাজ করে থাকে।

খাদ্য সংরক্ষণের ৫টি উপায়

বাংলাদেশে খাদ্য সংরক্ষনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরন করা হয়ে থাকে। তারমধ্যে হিটিং, কুলিং, কিউরিং, পিকলিং, ফ্রিজিং ইত্যাদি খাদ্য সংরক্ষণের কয়েকটি অনুসিত পদ্ধতি। এছাড়াও পূর্বে বেশকিছু প্রক্রিয়া অনুসরন করা হতো। এ প্রক্রিয়াগুলোতে তুলনামূকলভাবে বর্তমানের চেয়ে কম শক্তিপ্রয়োগ করলেও হত এবং তা অনেক কম কার্বন নিঃসরণ করত। মূলত খাদ্যের অপচয় এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান দিতে খাদ্য সংরক্ষন করা হয়ে থাকে। একটি দেশের খাদ্যের যোগানের নিশ্চয়তার উপর নির্ভর করে সেই দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি। বাংলাদেশের খাদ্যের প্রকারভেদের কারনে বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। নিচে খাদ্য সংরক্ষণের ৫টি উপায় সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

১। শুকানো

 খাদ্য সংরক্ষনের একটি প্রচলিত পদ্ধতি হলো রোদে শুকিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ করা । এতে খাদ্যের উপর পানির পরিমাণ কমে গিয়ে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির পরিমান কমে যায়। ডাল, গম, চাল ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। ফল, মাছ, মাংস, শস্য, গুঁটি, শাক, সবজি এসব খাবারও শুকিয়ে সংরক্ষন করা যায়। খাদ্য রোদে শুকানোর ফলে অনুজীব কোষের পানি বেরিয়ে অনুজীবের জীবন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। সংরক্ষনের জন্য প্রখর রোদের তাপ প্রয়োজন। বড় ডালা বা বাঁশের চালনিতে, চাটাই এ খাদ্য হালকাভাবে ছড়িয়ে মাটি থেকে উচু জায়গায় রেখে রোদে শুকাতে হয়। শুকানোর সময় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর পর খাবার নেড়ে ছড়িয়ে দিলে ভালভাবে এবং তাড়াতাড়ি শুকায়। এক সাথে পরিমানে অনেক খাবার অল্প জায়গায় শুকাতে দিলে শুকাতে দেরী হয়। খাদ্য ভালোভাবে না শুকালে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এভাবে ৪ থেকে ৫ দিন খাদ্য ঝরঝরে শুকনা করে শুকাতে হবে যেন ১০% এর বেশি পানি না থাকে। শুকাবার পর পরিষ্কার শুকনা মুখ বন্ধ পাত্রে রাখতে হবে, না হলে বাতাসের সংস্পর্শে এসে খাদ্যে ছত্রাক জন্মাতে পারে।

২। ভ্যাকুয়ামপ্যাকিং পদ্ধতি

খাদ্য সংরক্ষনের আরেকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো ভ্যাকুয়ামপ্যাকিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে  খাদ্যদ্রব্য বায়ুশূণ্য পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। যার ফলে অণুজীব মারা যায় এবং খাদ্য সংরক্ষিত অবস্থায় নিরাপদ থাকে। ফল থেকে তৈরি জেলি, আচার, জ্যাম, ইত্যাদি বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।

৩। পিকলিং

পিকলিং খাদ্য সংরক্ষনের আরেকটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। এটি হচ্ছে খাদ্যকে কোনো Anti-microbial তরলে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় খাদ্যকে কোনো তরলে ডুবিয়ে রাখা হয় যাতে ব্যাকটেরিয়া এবং অণুজীব জন্মাতে না পারে এবং জন্মালেও ধ্বংস হয়। সাধারণত সরিষার তেল, অ্যালকোহল, ব্রাইন এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৪। কিউরিং

খাদ্য সংরক্ষণের আরেকটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি  হলো কিউরিং পদ্ধতি। একে সল্টিংও বলা হয়ে থাকে। ফ্রিজ আবিষ্কারের পূর্বে এই পদ্ধতিটিই ছিল জনপ্রিয় সংরক্ষন পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লবণের দ্রবণ ব্যবহার করে মাছ ও মাংস প্রভৃতি খাদ্যকে দীর্ঘদিন অবিকৃতভাবে সংরক্ষণ করা যায়। দীর্ঘসময় সংরক্ষণ করার জন্য এই দ্রবণের সাথে সামান্য পরিমাণে ল্যাকটিক এসিড মিশানো হয়। ল্যাকটিক এসিড অণুজীবগুলোকে বংশবিস্তার করতে বাধা সৃষ্টি করে থাকে যার ফলে খাদ্য গুনাগুন বজায় রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষন করা যায়।

৫। হিমায়ন পদ্ধতি

খাদ্য সংরক্ষনের জন্য হিমায়ন পদ্ধতিটি বর্তমান সময় পর্যন্ত সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় সংরক্ষন পদ্ধতি। অর্থনৈতিক এবং ঘরোয়া উভয়দিক থেকেই এই পদ্ধতি অত্যন্ত পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের রান্না করা কিংবা রান্না না করা খাবার এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায়। হিমায়নের জন্য দেশে বাণিজ্যিকভাবে হিমাগার ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে এক সময়ের খাবার অন্য সময়ে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। মাছ, মাংস, শাক ও সবজি ইত্যাদি হিমাগারে সংরক্ষণ করে বছরের বিভিন্ন সময় বাজারে সরবরাহ করা হয়।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

খাদ্য সংরক্ষণের ৫টি উপায় এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।

কিভাবে খাদ্য সবচেয়ে বেশি সময় সংরক্ষণ করা যায়?

ভবিষ্যতে ব্যবহার ও খাদ্যের অপচয় বন্ধের জন্য খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষন খুবই জরুরী। খাদ্যদ্রব্য দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষনের জন্য ডিহাইড্রেটিং সর্বোত্তম সংরক্ষণ পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি পদ্ধতি । বায়ুরোধী পাত্রে খাদ্য সংরক্ষণ করা হলে, ডিহাইড্রেটেড খাবারগুলি কয়েক বছর, কখনও কখনও এমনকি কয়েক দশকও সংরক্ষন করা যায়। ডিহাইড্রেটিংয়ের আরেকটি সুবিধা হল যে খাবারটি তার মূল পুষ্টি উপাদানের প্রায় ৯৭ শতাংশ ধরে রাখতে পারে।

খাদ্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন কেন?

খাদ্য সংরক্ষণের প্রথম উদ্দেশ্য হল খাদ্যের অপচয় বন্ধ করা। মৌসুমী ফসল উৎপাদন তাৎক্ষনিক চাহিদার কয়েকশতগুন বেশি হয়ে থাকে যা সমগ্র জনগনের বাৎসরিক চাহিদার যোগানের সমান। যদি তা সংরক্ষন না করা হয় তাহলে বছরের একটি সময়ে গিয়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে। খাদ্য সংরক্ষণ করলে সারা বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের খাবারের খাওয়ার সুযোগ থাকে।

উপসংহার

খাদ্য সংরক্ষন খুবই গরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সময়মত খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষন না করলে দেশের খাদ্যপন্যের ঘাটতি সৃষ্টি হবে যা দুর্ভিক্ষ এর মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ মৌসুমি খাদ্যপন্যের দেশ। সেই খাদ্যদ্রব্য এই বিশাল জনসংখ্যার চাহিদা পূরনের জন্য বাধ্যতামূলকভাবেই সংরক্ষন করতে হয়। খাদ্যদ্রব্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিউদ্যেগেও সংরক্ষন করা হয়ে থাকে। বিভন্নি ধরনে খাদ্য পন্য বিভিন্নভাবে সংরক্ষন করা হয়। সংরক্ষনের পদ্ধতিগুলোও আবার সব খাদ্য পন্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন।

তাছাড়া খাদ্যের অপচয় রোধ করে সারা বছর সরবরাহ নিশ্চিত করতে খাদ্য সংরক্ষণ অপরিহার্য। সব খাদ্যদ্রব্য সব দেশে হয় না। কিন্তু এমন অনেক খাদ্যদ্রব্য আছে যা সারা বছরই প্রয়োজন হয়। তাই সব দেশেই প্রায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করতে হয়। তাই খাদ্য সংরক্ষণের ৫টি উপায় আমাদের সবারি জানা উচিত। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে মোটা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“খাদ্য সংরক্ষণের ৫টি উপায়” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *