Skip to content
Home » পরিবেশ দূষণের ৫টি কারণ

পরিবেশ দূষণের ৫টি কারণ

5 Causes Of Environmental Pollution

পরিবেশ দূষণের ৫টি কারণ শীর্ষক আজকের প্রবন্ধে আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছি। আমরা বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করি। যার ফলে পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে থাকে। এই পরিবর্তন যখন জীবের জন্য ক্ষতিকর হয় তখন তাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলে থাকি। বিভিন্ন ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়লে পরিবেশ দূষিত হয়। পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিল্পায়ন। শিল্পকারখানা চালু রাখতে বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমনঃ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি। এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারই দূষণের প্রধান উৎস। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশ দূষণের আরও একটি অন্যতম কারণ। পরিবেশের প্রতিটা উপাদানের সুসমন্বিত রূপই হলো সুস্থ পরিবেশ। এই সুসমন্বিত রূপের যখন ব্যাঘাত ঘটে তখনি পরিবেশের দূষণ হয় এবং পরিবেশের স্বাভাবিক মাত্রার অবক্ষয় দেখা দেয়। পরিবেশ বিভিন্নভাবে দূষিত হতে পারে। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণও এর জন্য দায়ী। 

পরিবেশ দূষণ বলতে কী বোঝায়?

প্রাকৃতিক নানা উপাদানের সাথে জীবের যে স্বাভাবিক ভারসাম্য বিদ্যমান আছে তা কোনো কারণে ব্যাঘাত ঘটলে বা প্রকৃতিতে তার খারাপ প্রভাব পড়লে তাকেই পরিবেশ দূষণ বলে। আমাদের চারপাশের পরিবেশকে আমরা নানাভাবে ব্যবহার করে থাকি। যার ফলে পরিবেশে বিভিন্ন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। এসব পরিবর্তন যখন আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়, তখন তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ যদি পরিবেশে মিশে যায় এবং মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদকূলের ক্ষতিসাধন করে তখন তাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলতে পারি। পরিশেষে বলা যায় যে, বিভিন্ন কারণে পরিবেশের যখন বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে এবং আমাদের ক্ষতিসাধন করে থাকে তখন তাকে আমরা পরিবেশ দূষণ বলি। পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ গুলো হলো বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, খাদ্য দূষণ, ধ্বংস দূষণ এবং শহরীকরণ।

পরিবেশ দূষণের ৫টি কারণ

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই আমাদের পরিবেশ। যেমনঃ বায়ু, পানি, শব্দ, মাটি ও গাছপালা ইত্যাদি। এই সবকিছু আমাদের দৈনন্দিন সুন্দর জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন। কোন কারনে যদি এই উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যায় বা আমাদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তখন সেটা আমাদের জন্য ক্ষতিকার বা দূষিত পদার্থ হিসাবে গন্য হয়। পরিবেশ দূষণ হলো পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকার পদার্থ বা দ্রব্য নির্গত হলে তাকে দূষিত বলা হয়। পরিবেশ দূষণের অনেক কারন রয়েছে। তার মধ্যে থেকে পরিবেশ দূষণের ৫টি কারণ সংক্ষিপ্তভাবে নিচে আলোচনা করা হলো।

১। বায়ু দূষণ

কলকারখানা, যানবাহন থেকে ধোঁয়া বা দূষিত পদার্থ বায়ূতে মিশে উদ্ভিদ ও প্রাণীজাতির জীবনকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে। বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, হাঁচি-কাশি এবং ক্যান্সারও হতে পারে। ধূলিকণা, ধোঁয়া,  বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস অথবা দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করে তোলে। যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। গাছপালা ও ময়লা আবর্জনা পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার মাধ্যমেও বায়ু দূষিত হয়ে থাকে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা এবং মলমূত্র ত্যাগের ফলে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায় যা বায়ুকে দূষিত করে। বায়ু দূষণের ফলে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও এসিড বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

২। পানি দূষণ

পানির ওপর নাম জীবন। যাকে জীবন বলা হয় সেই পানি যদি দূষিত হয় তাহলে মানুষ বাঁচবে কিভাবে? পানি দূষণের কারণ হলো পানির মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের পদার্থ যেমন কৃমি নাশক ওষুধ, রাসায়নিক সার এবং প্লাস্টিক ইত্যাদি। পানি দূষণের ফলে পানিতে উপস্থিত জীবাণু ও বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়াতে পারে। দেশে পানি দূষণের মাত্রা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষতিকর শিল্প বর্জ্যের কারণে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, রূপসা প্রভৃতি নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্রগুলো নদ-নদীর পানি দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে শিল্প বর্জ্যকেই দায়ী করেছে।

৩। মাটি দূষণ

বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বস্তু মাটির সাথে মেশার ফলে মাটি দূষিত হয়। গৃহস্থালি ও হাসপাতালের বর্জ্য, কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশক, কলকারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও তেল ইত্যাদির মাধ্যমে মাটি দূষিত হয়। মাটি দূষণের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। গাছপালা ও পশুপাখি মারা যায় ও তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়। মাটি দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল খাদ্য হিসাবে গ্রহণের ফলে মানুষ ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পরিবেশের সকল প্রকার কর্মকাণ্ড হয় মাটির ওপরেই। যার ফলে তৈরি হয় ভূমি ব্যবহার। যেমন- নগর ভূমি ব্যবহার, গ্রামীণ ভূমি ব্যবহার, প্ররিবেশভিত্তিক ভূমি ব্যবহার,কৃষিজ ভূমি ব্যবহার, শিল্পজ ভূমি ব্যবহার প্রভৃতি। ভূমির এইরূপ বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারের জন্য তৈরি হয় ভূমি দূষণ।

৪। শব্দ দূষণ

শব্দ দূষণ মানুষ ও জীবজন্তুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে। উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে, বিনা প্রয়োজনে হর্ন বাজিয়ে এবং লাউড স্পিকার বা মাইক বাজিয়ে মানুষ শব্দ দূষণ করছে। কলকারখানায় বড় বড় যন্ত্রপাতির ব্যবহারে উৎপন্ন শব্দ শব্দ দূষণের কারণ। শব্দ দূষণ মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি, কর্মক্ষমতা হ্রাস,অবসন্নতা, শ্রবণ শক্তি হ্রাস ইত্যাদি সমস্যা শব্দ দূষণের ফলে হয়ে থাকে। আমরা যখন তখন হর্ন না বাজিয়ে এবং উচ্চ শব্দ সৃষ্টি না করে শব্দ দূষণ রোধ করতে পারি। এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সবাইকে সচেতন হওয়া।

৫। বন উজাড়

যে কোনো দেশের পরিবেশে রক্ষায় বনভূমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বনভূমির উপর দেশের পরিবেশগত ধরসাম্য বহুলাংশে নির্ভরশীল । কোনো দেশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশের আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন । অথচ সেখানে বাংলাদেশে বনভূমি রয়েছে ৯ শতাংশেরও কম। তার উপর আবার বাড়ী-ঘর নির্মানের জন্য সেই বনভূমিও ধ্বংস করা হচ্ছে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

পরিবেশ দূষণের ৫টি কারণ এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।

পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ কি?

গুরুতর পরিবেশ দূষণের উৎস হল দৈনন্দিন জঞ্জাল-আবর্জনার স্তূপ, পিভিসি কারখানা, দহন-চুল্লি, গাড়ির কারখানা, কেমিকাল প্লান্ট, তৈল শৌধনাগার, পরমাণু বর্জ্য‌ জড়ো হওয়া, প্লাস্টিকের কারখানা, পশুপালনের বড় খামার যেখানে প্রচুর পরিমাণ পশুবর্জ্য‌ নির্গত হয়। এছাড়াও আরও বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষিত হয়ে থাকে। 

পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষার উপায়?

পরিবেশ দূষণ রোধ করার প্রধান উপায় হলো সবাইকে সচেতন হতে হবে। আপনি আপনার গাড়ীতে ভ্রমণের সংখ্যা কমিয়ে দিন। অগ্নিকুণ্ড এবং কাঠের চুলা ব্যবহার হ্রাস বা বাদ দিন। পাতা, আবর্জনা এবং অন্যান্য উপকরণ পোড়ানো এড়িয়ে চলুন। গ্যাস চালিত লন এবং বাগান সরঞ্জাম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।

উপসংহার

পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। দূষণের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেমনঃ ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগ, পানিবাহিত রোগ, ত্বকের রোগ ইত্যাদি। দূষণের ফলে জীবজন্তুর আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। খাদ্য শৃঙ্খল ধ্বংস হচ্ছে। ফলে অনেক জীব পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হিমবাহ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশের  ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে যা ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাই এই পরিবেশ দূষন প্রতিরোধে সবার আগে প্রয়োজন আমাদের সবাইকে সচেতন হওয়া। যেন মানবসৃষ্ট কোন কারনে পরিবেশ দূষিত না হয়। অসংখ্য পরিবেশ দূষনের কারনের মধ্যে থেকে উপরে পরিবেশ দূষণের ৫টি কারণ আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পরিবেশ সংরক্ষণের ১০টি উপায় সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“পরিবেশ দূষণের ৫টি কারণ” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *