Skip to content
Home » শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না

What Can't Be Eaten If You Have Shortness Of Breath

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা অবশ্যই শ্বাসকস্টের রোগীদের মেনে চলা উচিত। শ্বাসকষ্ট খুবই গুরুতর একটি রোগ, একে গুরুত্ব না দেওয়ার কোন কারন নেই। শ্বাসকষ্ট হলে মানুষের শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হয়। শ্বাসকস্ট যেকোনো সময় যেকোন মানুষের হতে পারে। এ কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা শ্বাসকষ্টের রোগীদের সব সময় সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়ে থাকেন। শ্বাসকষ্টের রোগীর প্রধান সমস্যা ফুসফুসে থাকে। এই রোগীদের ফুসফুসে ছোট ছোট বায়ু চলাচলের নালী ধীরে ধীরে সরু যায়। এ কারণে বায়ু ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। 

শ্বাসকষ্ট কি?

শ্বাসকষ্ট এমন একটি শারীরিক অবস্থা যখন একজন মানুষ মনে করেন যে, সে যথেষ্ট ভাল করে ও আরামদায়কভাবে শ্বাস গ্রহন করতে পারছেন না। একে ইংরেজি চিকিৎসাবৈজ্ঞানিক পরিভাষায় ডিসপ্নিয়া (Dyspnoea) বলা হয়। শ্বাসকষ্টের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হার্ট বা ফুসফুসের অবস্থার কারণে হয়ে থাকে। আমাদের হৃদপিন্ড ও ফুসফুস আমাদের টিস্যুতে অক্সিজেন পরিবহন ও কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণের সাথে জড়িত এবং এই প্রক্রিয়াগুলির যেকোনো একটির সাথে সমস্যাগুলি আমাদের শ্বাসকে প্রভাবিত করে থাকে। শ্বাসকষ্ট বলতে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে না পারা, শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া, রেসপিরাটরি ডিসট্রেস ইত্যাদি বুঝায়। 

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না

অনেক রোগ রয়েছে যাদের কিছু কিছু খাবারের সাথে সাংঘর্ষিক। সেই নির্বাচিত খাবারগুলো খেলে রোগটি বেড়ে যায়। তখন সেই খাবারগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হয়। গ্যাস হলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরও বাড়ে। তাই এমন কোনও খাবার যাবে না যার থেকে গ্যাস হতে পারে বা গ্যাসের পরিমান বাড়তে পারে। কড়াইশুটির কচুরি, ঘুগনি, ছোলার ডাল, রাজমা-চাউল এসব শ্বাসকস্টের রোগীদের এড়িয়ে চলতে হবে। চা, কফি- দুধ দিয়ে বানানো চা আর কফিও শ্বাসকস্টের অন্যতম কারণ। নিচে সংক্ষিপ্ত করে শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না আলোচনা করা হলো –

১। প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাদ্য

Lemon Juice

যে কোনও ধরনের প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষ করে সালফাইট যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা মানে গলায় অ্যালকোহল ঢালার মতোই বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আচার, বোতলবন্দি লেবুর রস, শুকনো ফলে ইচ্ছামত সালফাইট মেশানো হয় । শ্বাসকস্টের রোগী সালফাইটযুক্ত খাবার খেলে তার শ্বাসকস্টের অ্যাটাক বেড়ে যেতে পারে। 

২। পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে এমন খাদ্য

Garlic And Onion

পাকস্থলীতে গ্যাস তৈরি করে এমন খাদ্য কখনওই একজন শ্বাসকস্টের রোগীর খাওয়া উচিত নয়। এই ধরনের খাদ্য শ্বাসকস্ট হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। তাই সম্ভব হলে বাঁধাকপি, কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস, পিঁয়াজ, রসুন, বীনস এবং মাত্রাতিরিক্ত ভাজা ও পোড়া খাদ্য খাওয়া এড়িয়ে চলুন। 

৩। ডিম

The Egg

স্বাস্থ্যকর ও প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবারটি শ্বাসকস্টের সময় না খাওয়াই ভালো। ডিমের সাদা অংশে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে আর এই প্রোটিন অ্যালার্জির উদ্রেক করে শ্বাসকস্টের সমস্যার বৃদ্ধি করে থাকে।

৪। দুধ

The Milk

ক্যালসিয়ামের প্রধাণ উৎস হলো দুধ। দাঁত ও হাড় মজবুদ করার জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু দুধে থাকা প্রোটিন শ্বাসকস্টের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। যখন শ্বাসকস্টের সমস্যা বেশি পরিমাণে দেখা দিবে তখন দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫। চিংড়ি

Shrimp Fish

চিংড়িতে সালফাইটের পরিমাণ প্রচুর পরিমানে থাকে। তাই শ্বাসকস্টের রোগীদের সাধারণত চিংড়ি খেতে নিষেধ করেন ডাক্তাররা। শীতকালে ঠাণ্ডা চিংড়ি খেলে শ্বাসকস্টের আক্রমনের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই বিশেষ করে শীতকালে চিংড়ি না খাওয়াই ভালো।

৬। চিনা বাদাম

Chinese Almonds

স্বাস্থ্যকর আরেকটি খাবার হলো চিনা বাদাম। শ্বাসকস্টের রোগীদের জন্য এই চিনা বাদাম খুবই ক্ষতিকর। গবেষণা থেকে জানা যায় যে, চিনা বাদাম শ্বাসকস্টের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে সহায়তা করে থাকে।

৭। ফ্রোজেন আলুর চিপস

Frozen Potato Chips

দোকানে ফ্রোজেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিনতে পাওয়া যায়। এই ফ্রোজেন আলুর চিপস খাওয়া ত্থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ ফ্রিজে থাকার কারোনে আলু ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। যা শ্বাসকস্টের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

৮। সয়া

Soy

প্রোটিন সমৃদ্ধ আরেকটি খাবার হলো সয়া। সয়াতে অ্যালার্জিক প্রোটিন রয়েছে যা শ্বাসকস্ট বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। শ্বাসকস্টের রোগীদের অন্য সবার থেকে বেশি সচেতন থাকতে হবে। এসব রোগীদের ঠান্ডা ও ধুলোবালি এড়িয়ে চলতে হবে। এমনকি আপনার পোষা প্রাণীগুলর কারণেও শ্বাসকস্টের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই শ্বাসকষ্ট বাড়লে ঐসব প্রাণীর কাছেও যাওয়া ঠিক নয়।

৯। কৃত্রিম উপাদান

কৃত্রিম উপাদান যেমন, ফুড ফ্লেবার, ফুড কালার, ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত এবং ফাস্ট ফুডগুলোতে পাওয়া যায়। শ্বাকস্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই খাবারগুলো না খাওয়াই ভালো।

১০। সালফাইটস

Dry Fruit

সালফাইট শুকনো ফল,আচারযুক্ত খাবার,ওয়াইন, চিংড়ি, লেবুর জুসে পাওয়া যায়। এটি শ্বাসকস্টের লক্ষণগুলো আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

১১। ফাস্টফুড

Fatty Foods

ফাস্টফুড শুধু দেহের ওজনের জন্যই ক্ষতিকর নয়, ফুসফুসেও মারাত্মক করে এই খাবার। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গ্রহণে শিশুদের শ্বাসকস্ট বা অ্যাজমা প্রবণতা ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়। গবেষকরা মনে করেন, ফাস্টফুডের উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট অস্থায়ীভাবে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। ফলে শ্বাসকস্ট বা অ্যাজমা অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

১২। ঠাণ্ডা দুগ্ধজাত খাবার

The Milk

শ্বাসকস্টের রোগীদের উচিত বিভিন্ন ঠাণ্ডা দুগ্ধজাত খাবার যেমন- ঠাণ্ডা দুধ, আইসক্রিম, দই, পনির ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। এসব খাবার শ্বাসকষ্টের জন্ম দেয় এবং যাদের শ্বাসকস্টের সমস্যা রয়েছে তাদের আরও বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও সর্দি-কাশির সম্ভাবনা বাড়ায়।

১৩। টক জাতীয় ফল

Consume Foods Rich In Vitamin C

টক জাতীয় কিছু ফল আছে যেগুলোতে সিট্রাস (Citrus) বিদ্যমান। যেমন- কমলালেবু, মাল্টা, লেবু ইত্যাদি। এসব ফল ভিটামিন-সি’তে পরিপূর্ণ হলেও অ্যালার্জি ও অ্যাজমা অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। যাদের শ্বাসকস্ট আছে তাদের শুধু শীতকালে এ ধরনের ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

১৪। চা ও কফি

Coffee And Tea

চা ও কফিতে স্যালিসাইলেট জাতীয় উপাদান থাকে যা শ্বাসকস্ট বাড়িয়ে দেয়। তাই চা ও কফি কম করে পান করতে হবে। চা ও কফি কম করে পান করলে শ্বাসকস্ট থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।

শ্বাস কষ্টের ঔষধের নাম কি?

শ্বাস কষ্টের তাৎক্ষনিক উপশমের জন্য কয়েক রকম ঔষধ ইনহেলারের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। তারমদ্যে যেমন, সালমেটেরোল,সালবুটামল এবং ফোরমোটেরোল । শ্বাসকস্টের আক্রমণ যেন না হয় তার জন্য ব্যবহার করা হয় স্টেরয়েড ইনহেলার। সাধারনত ফ্লুটিকাস্ন ও বুডিসোনাইড স্টেরয়েড ইনহেলার হিসাবে পাওয়া যায়।

হঠাৎ সমস্যা হলে কি করবো?

হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে আমাদের করনীয় হলো বালিশ দিয়ে মাথার দিকটা উঁচু করে কাত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। তখন হাঁটু সামান্য ভাঁজ করা যেতে পারে। চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর বালিশ রেখে তাতে মাথা নিচু করে শুলে ভালো বোধ করবেন।

উপসংহার

বিভিন্ন কারণে অনেকের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির সমস্যা বাড়ছে। এর পিছনে যেমন রয়েছে দূষণের প্রভাব,তেমনই এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে শরীরচর্চা বিহীন জীবনযাপনেরও বিষয়টি। অনেকের মধ্যে বংশগত কারণেও এই সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে কী করে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়? প্রথমত, চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু তার পাশাপাশি কয়েকটি ফল এবং আনাজ নিয়মিত খেলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। এর সাথে শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না ভালোভাবে মেনে চলতে হবে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায় সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“শ্বাসকষ্ট হলে কি কি খাওয়া যাবে না” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *