নদী সম্পর্কে ৫টি বাক্য যে কাউকে বলেলেই বলে দিতে পারবে। এর জন্য যে আপনাকে অনেক বেশি শিক্ষিত হতে হবে তা নয়। কারন বাংলাদেশে নদীমাতৃক দেশ। এদেশের প্রায় প্রতিটি নাগরিকের সাথে নদীর সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এদেশের সবুজ ঘাসের বুকের উপর রুপালি জলস্রোত নিয়ে বয়ে চলেছে ছোট – বড় অসংখ্য নদ-নদী । এই নদ-নদীগুলো এই দেশের চারপাশে জালের মতাে জড়িয়ে রয়েছে। তাই নদীর সাথে বাংলাদেশের মানুষের গড়ে উঠেছে গভীর বন্ধুত্ব। তাইতো প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ এদেশের বুকে বয়ে চলা অসংখ্য নদ-নদীর সমাবেশ দেখে একে বলেছেন ‘জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা রুপসী বাংলা। পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ এই বাংলাদেশ।
এই দেশ নদ-নদীর বিধৌত পলিমাটি দ্বারা নিজেকে উর্বর করে তুলেছে। নদ-নদীর অবদানেই বাংলাদেশ আজ সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা রূপসি বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে । এদেশের নদীগুলাে প্রকৃতির রূপের আভরণ, মৃত্তিকার তরল কণ্ঠহার। মানুষের জীবন ও জীবিকার সাথে সম্পৃক্ত এদেশের নদীগুলাে বহু বছর আগে থেকে গ্রামীণ জনপদকে কর্মচঞ্চল ও গতিময় করে রেখেছে। নদী ও জীবন এখানে একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্য। নদী সম্পর্কে ৫টি বাক্য বললে নদীর সম্পর্কে অনেক কথাই অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।
নদী কাকে বলে?
নদী হচ্ছে সাধারণত মিষ্টি জলের একটি প্রাকৃতিক জলধারা যা ঝরনাধারা, বরফগলিত স্রোতধারা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট হয়ে নদী পথ হয়ে বয়ে চলার পর সাগর, মহাসাগর, হ্রদ অথবা অন্য কোন নদী বা জলাশয়ে গিয়ে পড়ে। পার্বত্য এলাকা বা উঁচু কোন ভূমি থেকে উৎপন্ন স্বাভাবিক কোন জলধারা ভূমির ঢালকে অনুসরণ করে একটি নির্দিষ্ট খাতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মহাসাগর, সাগর, নদী, হ্রদ বা অন্যান্য যেকোনো জলাশয়ে মিলিত হলে তাকে নদী বলে। যেমন, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, তিস্তা ইত্যাদি। এই ক্ষেত্রে, নদী একটি গিরিপথ। একটি রাস্তা যা একটি নতুন বিশ্বের দিকে নিয়ে যাওয়ার মত; নদী মূল্যবোধ, ব্যক্তিত্ব এবং নৈতিকতার পরিবর্তনের প্রতীক হতে পারে। এই দুটি উদাহরণ হল এমন কিছু উপায় যা নদী একটি মানুষের গল্প বলতে পারে।
নদী সম্পর্কে ৫টি বাক্য
বাংলাদেশে ছােট -বড় মিলিয়ে প্রায় নয়শত এর উপরে নদ-নদী রয়েছে। এসব নদীর মধ্যে বড় বড় কয়েকটি যেমন, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলি প্রভৃতি প্রধান নদ-নদী। এগুলাের উপনদী ও শাখা নদীগুলাে সারাদেশে জালের মতাে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদী হচ্ছে পদ্মা নদী। এটি বাংলাদেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে প্রবাহিত হয়। এটি বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় নদী হিসাবে গণ্য হয় এবং এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৮ কিলোমিটরের বেশি। এটি বাংলাদেশের মুখ্য নদী হিসাবে চিহ্নিত এবং এর মধ্যে অনেক উপনদী ও খাল রয়েছে। পদ্মা নদী বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনেক অংশকে জীবন ও উপজীবিতা দেয়। নিচে নদী সম্পর্কে ৫টি বাক্য উল্লেখ করা হলো –
- নদীর গঠন অনুসারে নদী বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়। যেমন : প্রধান নদী, উপনদী, নদ, শাখানদী ইত্যাদি।
- কোন কোন স্থান বা অঞ্চলে নদীকে গাঙ নামে অবিহিত করা বা ডাকা হয় হয়।
- নদী হলো প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট জলধারা।
- এ পর্যন্ত বেশির ভাগ নদীর নামকরণ করা হয়েছে মেয়েদের নামে। বলতে গেলে প্রায় সব নদীর নামকরনই করা হয়েছে মেয়েদের নামে।
- নদী একটি দেশের সমৃদ্ধির সাথে জড়িয়ে থাকে ও জাতীয় আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
নদী সম্পর্কে ৫টি বাক্য এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
নদ ও নদী এর মধ্যে পার্থক্য কি?
যে জলস্রোত কোনো পর্বত, হ্রদ, প্রস্রবণ ইত্যাদি জলাধার হতে উৎপন্ন হয়ে ও বিভিন্ন জনপদের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোনো জলাশয়ে পতিত হয় তখন তাকে নদী বলা হয়। যেমন মেঘনা, যমুনা, কুশিয়ারা ইত্যাদি। আবার যখন কোনো নদী হতে কোনো শাখা নদীর সৃষ্টি হয় না তখন তাকে বলা হয় নদ। যেমন কপোতাক্ষ নদ, ব্রহ্মপুত্র নদ, নীল নদ ইত্যাদি।
বাংলাদেশের এ পর্যন্ত কতটি নদ ও নদী আবিষ্কৃত হয়েছে?
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশে। অসংখ্য নদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়েছে এদেশের ভিতরে। জাতীয় নদী সংরক্ষণ কমিশন এর তথ্যমতে বর্তমানে লাদেশে নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ৯০৭ টি। তবে এই সংখ্যা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক।
উপসংহার
নদী একটি দেশের আশিবার্দস্বরুপ। ফসল ফলানো, মাটি উর্বরতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ভারসাম্য রাখার জন্য নদীর কোন বিকল্প নেই।যদিও আগেকার সময় নদী ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম। প্রাচীনকালের যত বড় বড় নগর সভ্যতা সব গড়ে উঠেছিল নদী কেন্দ্রিক। নদীর প্রবাহ পানীর স্তর নিয়ন্ত্রণ করে এবং জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করে। নদীগুলি পরিবহন ও বাণিজ্যিক ব্যবসায়ের উপযোগী হলেও তারা সামরিক ক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। নদীগুলির পরিবেশ একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও সৃষ্টি করে। নদীর জল ও অঞ্চল প্রাকৃতিক পদার্থগুলির সংগ্রহ এবং সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নদী সম্পর্কে ৫টি বাক্য বলা আমাদের কাররি পক্ষে তেমন কোন কঠিন বিষয় নয়। নদী তার রূপের মহিমায় এদেশের প্রাকৃতি পরিবেশকে করেছে মনোমুগ্ধকর। মানুষকে দিয়েছে তার সুন্দর জীবনের হাতছানি। তেমনি মানুষের মনে-প্রাণে জাগিয়ে তােলে বিচিত্র আবেগ-অনুভূতি ও ভালোবাসা। তাই দেখে রুপসী বাংলার প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ মরণের পর নতুন করে নতুন জীবনে ফিরে আসতে চেয়েছেন নদীর পাড়ে পাড়ে । তাঁর ভাষায় “আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায”। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পানি দূষণের ১০টি কারণ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“নদী সম্পর্কে ৫টি বাক্য” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।