মোটা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা যারা মোটা হতে চায় তারা মাঝে মধ্যেই জিজ্ঞাসা করে। মানুষ অনেক কারণে মোটা হতে পারে। কায়িক পরিশ্রম না করা, অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা, বংশ পরম্পরায় জিনগত প্রভাবের কারনে, কিছু ক্ষেত্রে জিন গত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হওয়ার কারনে, হরমোন গ্রন্থির গন্ডগোল, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং মানসিক অসুস্থতা থেকেও মানুষ মোটা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় খুব কম খেলেও ওজন বেড়ে যায়। একজন মানুষের দৈনিক যে পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন কেউ যদি সে চাহিদা পূরণ করতে পারে তবেই সে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারবে।
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও নারীর দৈনিক ২৫০০ থেকে ২৭০০ এবং ২০০০ থেকে ২২০০ কিলোক্যালরি শক্তির দরকার পড়ে। কিশোর এবং কিশোরদের ৩০০০ থেকে ৩২০০ কিলোক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয়ে থাকে। আমাদের খাদ্য তালিকায় যদি প্রতিদিন আমরা পুষ্টিকর খাবার রাখতে পারি তবে আমরা সহজেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারব। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় শর্করা, আমিষ, স্নেহজাতীয় খাদ্য, খনিজ লবণ ও পুষ্টিকর খাবার রাখতে পারি। এছাড়াও আমরা প্রতিদিন পরিমিত খাবার ও পানি গ্রহণ করতে পারি।
মোটা হওয়া বলতে কি বোঝায়?
মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চায়। কেউ পাতলা বা চিকন মানুষকে বেশি একটা পছন্দ করে না। সবাই চায় তার পছন্দের মানুষটি সুস্বাস্থ্যের অধিকার হোক বা স্বাস্থ্যবান হোক। আবার অনেকে আরও একটু বেশি স্বাস্থ্যবান হতে চায়। একে অনেকে মোটা স্বাস্থ্যও বলে থাকে। শরীরটা সম্পূর্ণ মাংস দ্বারা ভরাট থাকুক এটাই সবার চাওয়া । যদিও অতিরিক্ত মোটা বা বেশি মোটা স্বাস্থ্য ভালো নয়। যাতে বিভিন্ন রোগজীবানু বাসা বাঁধতে পারে। বিভিন্ন চর্বি জাতীয় খাবার, জাঙ্ক ফুড, চকলেট, শর্করা জাতীয় খাবার, প্রটিন সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলেই শরীর মোটা হতে শুরু করে। তবে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কোন পুষ্টিবিদকে দেখিয়ে তার পরামর্শে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনা বা জীবনযাপন করা।
মোটা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা
সুস্বাস্থ্য বা সুন্দর স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। শরীর সুস্থ থাকলে আমাদের মনও ভালো থাকে। আমরা দেখতে কেউ মোটা আবার কেউ চিকন হয়ে থাকি। আমরা যারা চিকন আছি তারা অনেকেই মোটা হতে চাই। কিন্তু আমরা জানি না কিভাবে খাদ্য গ্রহণ করলে এবং কি কি খাদ্য গ্রহণ করলে মোটা সহজেই মোটা হওয়া যাবে। মোটা হওয়ার জন্য শাকসবজি, ফলমূল, আলু, ডিম, মাংস, দুধ, মধু, ড্রাই ফ্রুটস (খেজুর, বাদাম, পেস্তা, কিসমিস ইত্যাদি), ছোলা, পিনাট বাটার, ফাস্ট ফুড, ভুনা খিচুড়ি, ফলের রস ইত্যাদি বেশি বেশি খাওয়া উচিত। এক কথায় উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার খেলেই অতি তাড়াতাড়ি মোটা হওয়া যাবে। নিচে মোটা হওয়ার খাবারগুলোর পরিচয় ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।
আমরা সবাই চাই নিজেকে অন্যের সামনে সুন্দর ও সুদর্শন করে উপস্থাপন করতে যাতে সবাই আমাদের প্রশংসা করে। এর মূল কেন্দ্রে রয়েছে স্বাস্থ্য। একমাত্র সুস্বাস্থ্যই অন্যের নজর কাড়তে পারে। চাইলেই তো আর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায় না। যার জন্য প্রয়োজন নিয়ম মেনে পুষ্টিকর খাবার গ্রহন। নিচে মোটা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা ও নিয়ম সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হলো।
১। মোটা হওয়ার জন্য সকালের খাবারের তালিকা
মোটা হওয়ার জন্য সকালে নিচের খাবারগুলো খাওয়া যেতে পারে। খাবারগুলির নাম ও গুনাগুনসহ সংক্ষিপ্ত বিবরন উল্লেখ করা হলো।
কিসমিস ও বাদাম

কিসমিস ও কাঠবাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে তা খেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাতে ভিজিয়ে রাখা বাদাম ও কিসমিসসহ পানি খেতে হবে। এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এক থেকে দুই মাস নিয়মিত খেলে আপনার শরীরের পরিবর্তন অবশ্যই ঘটবে। আপনি মোটা হতে শুরু করবেন।
পরোটা

সকালে যদি আপনি ঘি দিয়ে ভাজা পরাটা খান তা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কারন ঘিতে প্রচুর পরিমানে চর্বি থাকে। আপনাকে মোটা করতে সাহায্য করবে। তবে অবশ্যই দোকানের তৈরি পরোটা না খেয়ে বাসার তৈরি পরোটা খেতে হবে।
সবজি

পরোটার সাথে সবজি খাওয়া যেতে পারে। আপনি পরোটার সাথে সবজি খান তবে আপনার এটি ওজন বাড়াতে অবশ্যই সাহায্য করবে। সবজির মধ্যে আলু, শিম, গাজর, ডাল ইত্যাদি আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।
ডিম

ডিমে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ও ক্যালসিময়াম থাকে। এটি ওজন বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। কারণ ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে। তাই দিনে অন্তত দুই থেকে তিনটি ডিম খাওয়া উচিত। তবে ভাজা ডিমের চেয়ে সিদ্ধ ডিম বেশি উপকারী।
নেহেরি ও কলিজা ভুনা
আপনি যদি তাড়াতাড়ি মোটা হতে চান তাহলে রুটি বা পরোটার সাথে কলিজা ভুনা বা নেহেরী খেতে পারেন। এগুলোতে প্রচুর পরিমানে ফ্যাট থাকে যা আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।
এই খাবারগুলো অবশ্য সকালে খেতে হবে। সকালের নাস্তায় এগুলো খাবার থাকতে হবে। সকালের নাস্তা সকাল সাতটা থেকে আটটার মধ্যেই করা উচিত । প্রতিদিন আবার একই সময় নাস্তা করতে হবে। এই নিয়ম আপনার মোটা হওয়ার অনেক প্রভাব ফেলবে। তারপর সকাল দশটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে আবার হালকা কিছু খেতে হবে। হালকা খাবারের মধ্যে সিঙ্গারা, সমুচা, ডালপুরিও খাওয়া যেতে পারে। আবার আপনি চাইলে চা বিস্কুটও খেতে পারেন।
২। মোটা হওয়ার জন্য দুপুরের খাবারের তালিকা
মোটা হওয়ার জন্য দুপুরে নিচের খাবারগুলো খাওয়া যেতে পারে। খাবারগুলির নাম ও গুনাগুনসহ সংক্ষিপ্ত বিবরন উল্লেখ করা হলো।
ভাত

ভাত বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। আবার তার সাথে মাছ তো আছেই । এই জন্যই আমাদের ভাতে বাঙ্গালী বলা হয়ে থাকে। বেশি বেশি ভাত খেলে মানুষের ওজন বাড়ে। সেজন্য দুপুরে পর্যাপ্ত ভাত খেতে হবে। যাতে করে আমাদের মোটা করতে পারে। দুপুরে দুই থেকে তিন প্লেট ভাত খেতে হবে।
মাছ

আগেই বলেছি আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালি। তাই মাছ থেকে আমরা প্রচুর পরিমানে প্রোটিন পেয়ে থাকি। বলা চলে মাছই আমাদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। আমরা তো জানি প্রোটিন মানুষের দেহ গঠনে সাহায্য করে অর্থাৎ ওজন বাড়ায়।
মাংস

মাংসে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন রয়েছে। এই প্রোটিন আমাদের দেহের কোষকে বিকশিত করে থাকে। সেই সাথে আমাদের শরীরকে মোটাও করে থাকে। কম সময়ে যদি মোটা হতে চান তাহলে বেশি বেশি মাংস খেতে হবে। মাংসের মধ্যে রয়েছে খাসির মাংস, গরুর মাংস, মুরগির মাংস ইত্যাদি। মাংসের মধ্যে চর্বি থাকে যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
শাকসবজি

দুপুরের খাবার মেনুতে অবশ্যই শাকসবজি রাখতে হবে। এটি আমাদের ভিটামিনের চাহিদা পূরন করে থাকে। যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাছাড়া শাকসবজিতে খনিজ লবনও থাকে। এটিও আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি।
দুপুরের খাবারের আদর্শ সময় হলো একটা থেকে দুইটার মধ্যে। এই সময়ের মধ্যেই খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত। তারপরে যদি দেড়টা থেকে দুইঘন্টা ঘুমানো যায় তা শরীরের জন্য খুবই উপকারি। দুপুরের খাওয়ার পর ফলমূল খাওয়া যেতে পারে। যা স্বাস্থ্যে জন্য খুবই উপকারি। কথায় বলে, খালি পেটে জল, ভর পেটে ফল। এরপর সন্ধ্যার সময় চায়ের সাথে হালকা নাস্তা বা বিস্কুট, চিকেন ফ্রাই, নুডুলস্ খাওয়া যেতে পারে। এতে বিকালের নাস্তাও হয়ে যাবে অন্যদিকে মোটা হতেও সাহায্য করবে। এছাড়া বিকালে মিষ্টিও খাওয়া যেতে পারে। মিষ্টিতে প্রচুর ফ্যাট রয়েছে যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।
৩। মোটা হওয়ার জন্য রাতের খাবারের তালিকা
মোটা হওয়ার জন্য রাতে নিচের খাবারগুলো খাওয়া যেতে পারে। খাবারগুলির নাম ও গুনাগুনসহ সংক্ষিপ্ত বিবরন উল্লেখ করা হলো।
ভাত

আমরা যারা বাঙ্গালী তারা রাতের বেলা বেশিরভাগই ভাত খেয়ে থাকি। ভাতের সাথে প্রচুর পরিমানে সবজি থাকতে পারে। তবে রাতে বেশি ভাত না খাওয়াই ভালো। পরিমানমত খাওয়া উচিত।
রুটি

আমরা অনেকেই রাতে ভাত না খেয়ে রুটি খেয়ে থাকি। রাতের বেলা সাধারনত দুই থেকে চারটি রুটি খাওয়া ভালো। রুটির সাথে যেকোন মাংস যেমন গরু, খাসি, মুরগী ইত্যাদি বা ডাল হতে পারে।
মাছ অথবা মাংস

রাতের খাবারের সাথে বেশি করে মাছ ও মাংস না খাওয়াই ভালো। পরিমিত পরিমানে মাছ ও মাংস খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। মাছ মাংসে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন থাকে যা আমাদের শরীর গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াতাড়ি মোটা হতে চাইলে মাছ মাংস খেতে হবে
রাতের খাবার অবশ্যই সাতটা থেকে আটটার মধ্যেই খেয়ে নেওয়া ভালো। রাত্রে না খেয়ে ঘুমানো যাবে না। যদি আমার রাত্রে না খেয়ে ঘুমাযই তবে এটি শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে রাতে খেয়ে ঘুমানোর। রাতে ঘুমানোর পূর্বে দুধ ও মধু খাওয়া স্বাস্থ্যর জন ভালো। দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা দেহ গঠনে সহায়তা করে থাকে । দুধকে বলা হয় সুষম খাবার। দুধের মধ্যে খাদ্য উপাদানের ছয়টি উপাদানই রয়েছে। তাই আমাদের নিয়মিত দুধ পান করা উচিত।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
মোটা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
মোটা হওয়ার ঔষধের নামগুলো জানতে চাই?
খুব অল্প সময়ের মধ্যে কেউ যদি মোটাতাজা হতে চান তাহলে এই তিনটি ঔষধ খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। আমরা প্রায় সবাই এই তিনটি ওষুধের নাম জানি যেমন, সিনকারা সিরাপ, পিউটন সিরাপ ও রুচিবেট সিরাপ।
মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি?
মোটা হওয়ার সহজ উপায়গুলো আমরা অনেকই জানি না। অথচ কতই না সহজ এই উপায় বা নিয়মগুলি। যেমন, ব্যায়াম করা, বার বার খাবার গ্রহণকরা, খাবারে রাখুন কার্বোহাইড্রেড, বেশি ক্যালোরি গ্রহন করা, সঠিক প্রোটিন গ্রহণ করা, ড্রাই ফ্রুটস খাওয়া ইত্যাদি।
উপসংহার
হালকা পাতলা শরীরের গঠন প্রকৃতির মানুষকে অনেকেই পছন্দ করে না । সবাই স্বাস্থ্যবান ও স্মার্ট সুন্দর মানুষকে পছন্দ করে । কিন্তু সবাই কি স্মার্ট ,সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান হতে পারে ? অবশ্যই পারবে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন আপনার আমার খাদ্যঅভ্যাসের উপর বিশেষ নজর দেওয়া ও খাদ্যঅভ্যাসের পরিবর্তন করা । কেননা, খাদ্য অভ্যাসের মাধ্যমেই একজন মানুষ তার দেহের গঠন ঠিক রাখতে পারে বা ঠিক করতে পারে । এবং সঠিক খাদ্য মানুষকে তার সঠিক স্বাস্থ্য উপহার দেয় করে তো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
আজকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের মোটা হওয়ার ঔষধ বেরিয়েছে। যেগুলো মানুষের রুচি বাড়িয়ে দেয় এবং তখন খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। সেগুলো ঔষধ খাওয়া যেতে পারে তবে অবশ্যই সেই ওষুধগুলো খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ সব ওষুধই উপকার করে না, কিছু ওষুধ ক্ষতিও করে থাকে। যদি আপনি ভুল ওষুধ খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার উপকারের চেয়ে ক্ষতেই করবে বেশি। তার চেয়ে মাটা হতে চাইলে আমাদের মোটা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা জানা উচিত। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শরীর দুর্বল হলে কি কি সমস্যা হয় এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“মোটা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।