Skip to content
Home » পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি?

পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি?

What Are The Nutrients

পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি তা সকল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জন্যে জানা জরুরী । খাদ্যে প্রধানত মোট ৬টি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। সেগুলো হলো শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। পুষ্টি ও খাদ্য এমন দু’টি শব্দ যার ব্যবহার প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জন্ম থেকে শুরু হয়ে মৃত্যু অবধি এর প্রয়োজন চলতে থাকে। মানুষের তিনটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি হল খাদ্য। আর এই খাদ্যের মুল উপাদানই হল পুষ্টি। যদিও আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশের বাসিন্দা। তাই শুধু খাদ্য খেলেই চলেনা সময় এসেছে পরীক্ষা করে দেখার যে খাদ্যটি নিরাপদ ও পুষ্টিকর কিনা।

যদি খাদ্য পুষ্টিকর ও নিরাপদ না হয় তাহলে এটি খাওয়ার পর বিভিন্ন রোগের স্বীকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একই সাথে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য আমরা যা খাই তা নিরাপদ কিনা এবং পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি আছে তার বিষয়ে সচেতনও হতে হবে। 

পুষ্টি কি?

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য খাবারের পর দেহের চাহিদা পূরণ করে দেহকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে তাকেই পুষ্টি বলে। খাবারের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন উপাদান যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে তাকেই পুষ্টি বলে। আরও ভালোভাবে বললে, পুষ্টি হল খাদ্য হতে প্রাপ্ত এমন উপাদানের সমষ্টি যা দেহের বৃদ্ধি এবং শরীরের সমস্ত কাজকর্ম যেমন শ্বাসপ্রশ্বাস, খাদ্য হজম এবং দেহ উষ্ণ রাখার জন্য শক্তি প্রদান করে । খাদ্যের পুষ্টিতে রয়েছে শরীরের টিস্যুগুলির বৃদ্ধি, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলির নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পদার্থ। পুষ্টি আমাদের শরীরের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে থাকে।

পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি?

পুষ্টির প্রধানত ছয়টি উপাদান থাকে। শরীরে এই প্রতিটি উপাদানের চাহিদাও কিন্তু একই রকম নয়। বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির সংক্রমণ প্রতিরোধ, শরীরের গঠন প্রকৃতি এবং দৈহিক পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করে আমাদের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদাও হয় ভিন্ন। পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি ও তাদের উৎস ও কাজ নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো –

১। শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট

What Are Carbohydrates Or Sugars

শর্করা বা শ্বেতসারজাতীয় খাবার সাধারনত শরীরে তাপশক্তি সরবরাহ করে,তেল বা চর্বি জাতীয় পদার্থ দহনে সাহায্য করে থাকে। যব,গম, চিড়া, মুড়ি, চিনি,ভাত, রুটি, ভুট্টা, মধু, মিষ্টি ফল, ফলের রস, গুড়, আলু ইত্যাদি শর্করার ভালো উৎস। কার্বোহাইড্রেট আবার তিন প্রকার হতে পারে। যেমনঃ

  • সুগারঃ সিম্পল ‍সুগার যা খুব দ্রুত হজম হয়ে শক্তি তৈরি করে।
  • স্টার্চঃ এরা হল কমপ্লেক্স বা জটিল কার্বোহাইড্রেট যার হজম প্রক্রিয়া ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে থাকে।
  • ফাইবারঃ এরা সাধারণত হজম হয় না, শরীরে শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শুধু শারীরিক কার্যক্রমে সহায়তা করে।

২। আমিষ বা প্রোটিন

Protein Rich Food

আমিষজাতীয় খাদ্য বিশেষ করে দেহ গঠন, বৃদ্ধিসাধন ও দেহের ক্ষয়পূরণের কাজ করে থাকে। প্রোটিন হতে দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন হয়ে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ও অভ্যন্তরীণ ক্রিয়ায় প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরে শক্তির যোগান দেয়, পেশী ও কোষ গঠনে কাজ করে, হরমোনের কাজে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধে কাজ করে, হজম প্রক্রিয়ার কাজে লাগে এবং এনজাইম তৈরিতে কাজ করে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, পনির, ছানা, ডাল, শিমের বিচি, বাদাম, মটরশুঁটি ইত্যাদি প্রোটিনের অন্যতম উৎস। প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের একক হল এমাইনো এসিড। 

৩। স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাট

Fatty Foods

স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাটের প্রধান কাজ দেহে শক্তি সরবরাহ করে, দেহের ত্বককে মসৃণ রাখে, খাবার সুস্বাদু করে ও তেল বা চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন শরীরে কাজে লাগাতে সাহায্য করে থাকে। ফ্যাটজাতীয় খাদ্য হতেই মূলত সর্বাধিক পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়ে থাকে। নারিকেল তেল, অন্যান্য তেল,মাছ ও মাংসের তেল ও চর্বি, ঘি, মাখন, সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, বাদাম, ডিমের কুসুম ইত্যাদি স্নেহজাতীয় খাদ্যের প্রধান উৎস। শরীরে শক্তি যোগানের দ্বিতীয়তম প্রধান উৎস হচ্ছে এই স্নেহ বা ফ্যাট। এরা শরীরে ভিটামিন শোষণে সহায়তা করে এবং দেহের আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুরক্ষা কাজে ভূমিকা রাখে। এরা আবার তিন প্রকার হয়ে থাকে।

  • অসম্পৃক্ত বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
  • সম্পৃক্ত বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট।
  • ট্র্যানস ফ্যাট যা ক্ষতিকর ফ্যাট হিসাবে পরিচিত।

৪। ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ

Eat Foods Rich In Vitamins And Minerals

ভিটামিন ৬ প্রকার। যথা: ভিটামিন এ, বি, সি, ডি, ই এবং কে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে দেহকে সুস্থ ও সবল রাখাই ভিটামিনের প্রধান কাজ। সব ধরনের শাক ও সবজি, ফল, ঢেকি ছাঁটা চাল, তেল বীজ অঙ্কুরিত বীজ ইত্যাদি ভিটামিনের উৎস। । এরা আবার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথাঃ

৫। খনিজ লবণ বা মিনারেল

The Egg

দেহের ভিতরের ক্রিয়া-বিক্রিয়া, হাড় ও দাঁতের গঠন, রক্ত তৈরি, মস্তিষ্কের বিকাশ, দেহের পানি পূরন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনে বিভিন্ন খনিজ পদার্থসমূহ অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য খনিজ লবণ হলো ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ বা আচরণ, আয়োডিন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। মাংস, ডিমের কুসুম, ডাল, দুধ, ছোট মাছ, শাক-সবজি, বিভিন্ন ফল, ডাবের পানি, লবণ ইত্যাদি বিভিন্ন খনিজ লবণের উৎস। মিনারেলস বা খনিজ লবন আবার ১৫ টি। এরা আবার দুই ধরনের। যথাঃ

  • Trace minerals: যেমন কপার, জিন্ক এবং আয়রন।
  • Major minerals: যেমন সোডিয়াম ও পটাসিয়াম। 

৬। পানি

Drink Enough Water

 একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দেহের প্রায় ৭০% পানি থাকে। দেহের অভ্যন্তরের সব ক্রিয়া-বিক্রিয়া সংঘটন, রক্ত সঞ্চালন, পুষ্টি উপাদানসমূহ দেহের এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলাচলে পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেহের সামগ্রিক সজীবতা রক্ষায় পানির বিকল্প নেই। দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, দেহের হারের জয়েন্টের লুব্রিকেন্ট এর মত কাজে সাহয্য করে, শরীরের বর্জ অপসারণে কাজ করে, খাদ্য হজম, শোষণ এবং পরিবহনে কাজ করে। পানি ছাড়া বেঁচে থাকা যায় না। তাই পানির অপর নাম জীবন। পানি, ফলের রস, পানীয় ইত্যাদি পানির ভালো উৎস।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।

সুষম খাদ্য কাকে বলে?

সুস্বাস্থ্যের জন্য দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করার জন্য সঠিক অনুপাতে বিভিন্ন ধরনের খাবারের সমষ্টিকে সুষম খাদ্য বলে। এটি সাধারণত শস্য, প্রোটিন, ফল, শাকসবজি, এবং দুগ্ধজাত খাবারের মিশ্রণ নিয়ে গঠিত। এটি নিশ্চিত করে যে আপনি আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং শক্তি পেয়ে যাবেন।

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক কি পরিমান পানি খাওয়া প্রয়োজন?

আমরা কি জানি সুস্থ জীবনযাপনের জন্য একজন মানুষের প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন? চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি (দুই লিটার) পান করা উচিত।

উপসংহার

পুষ্টির এই উপাদানগুলির মধ্যে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট থেকে আমাদের দৈনিক ক্যালরি চাহিদার শতকরা প্রায় ৮৫% অংশ পূরন হয় এবং প্রোটিন থেকে পূরন হয় ১৫% অংশ।ইতোমধ্যে পুষ্টি কাকে বলে এবং শরীরে এর কাজ কি ? বিষয়টির উপর ধারণা চলে আসার কথা। তাই এর গুরত্ব কিছুটা হলেও আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি। দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ও অন্যান্য দৈহিক উন্নয়নের কাজে পুষ্টির গুরত্ব অপরিসীম। পুষ্টির অভাবের কারণে আমরা অনেক রোগের স্বীকার হতে পারি যেগুলিকে পুষ্টির অভাবজনিত রোগ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। বর্তমান বিশ্বের পুষ্টিবিদগণ ০৫টি খাদ্য গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত খাদ্যকে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য হিসাবে অভিহিত করেছেন। যা সুষম খাদ্য হিসাবেও পরিচিত। এই স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য আমাদেরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টির সরবরাহ করে থাকে। তাই পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জেনে রাখা দরকার। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শীতকালীন সবজির নামের তালিকা সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“পুষ্টি উপাদান গুলো কি কি” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *