আবহাওয়ার উপাদান গুলো কি কি আমরা পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশন ও ইন্টারনেট থেকে চাইলেই দেখে নিতে পারি। আমাদের প্রয়োজনেই প্রতিদিন আমরা আবহাওয়ার সংবাদ সংগ্রহ করে থাকি। আবহাওয়া মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তার করে। আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে অনেক সময় আমাদের দৈনন্দিন কর্মসূচী সাজাতে হয়। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের আবহাওয়া অফিস এ সংক্রান্ত উপাত্ত ও তথ্য প্রচার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সরবরাহ করছে। যে কোনো স্থানের আবহাওয়ার উপাদানগুলো নিত্য পরিবর্তনশীল। পৃথিবীর সব স্থানের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যও কিন্তু একরকম নয়।
আবহাওয়া হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট স্থানের একটি নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর আর্দ্রতা, বায়ুর চাপ, বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি উপাদান সমূহের গড় অবস্থা। আর এই গড় অবস্থাকেই বলা হয়ে থাকে আবহাওয়া। আবহাওয়া প্রতিদিনেরই ঘটনা যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। আবহাওয়া কে বৈজ্ঞানিক ভাবে বলা হয় মেটিওরোলজি অর্থাৎ আবহাওয়া নিয়ে যেখানে আলোচনা বা কথা বলা হয় সেটিই মুলত মেটিওরোলজি।
আবহাওয়া কাকে বলে?
সহজভাবে কোন স্থানের স্বল্প সময়ের অর্থাৎ ১ থেকে ৭ দিনের বায়ু, তাপ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির গড় অবস্থাকে আবহাওয়া বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, আবহাওয়া বলতে কোনাে একটি নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর তাপ, বায়ুর, আদ্রর্তা, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুচাপ, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রভৃতি উপাদানের গড় অবস্থাকে বােঝায়। আবহাওয়া একটি দৈনন্দিন ঘটনা যা প্রতিক্ষণে পরিবর্তিত হয়।কোনো নির্দিষ্ট স্থানের, কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তরের কতগুলো পরিবর্তনশীল উপাদানের অবস্থাকেও আবহাওয়া বলে । আবহাওয়ার পরিবর্তনশীল উপাদান গুলি হল বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর আদ্রতা, মেঘ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত প্রভৃতি
আবহাওয়ার উপাদান গুলো কি কি?
আবহাওয়ার উপাদান হল সেসকল উপাদানয, যাদের পরিবর্তনের ভিত্তিতে কোনো স্থানের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার পরিবর্তন হয়ে থাকে। আবহাওয়ার এমন উপাদানগুলো হলোঃ বায়ুপ্রবাহ,তাপ,চাপ,বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতা। নিম্নে আবহাওয়ার উপাদান গুলো কি কি এবং উপাদানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হল-
১। বায়ুপ্রবাহ
বায়ুপ্রবাহ বা বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালন বলতে বিরাট ক্ষেত্র জুড়ে বায়ুর স্থান পরিবর্তনকে বোঝায়। বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমেই পৃথিবীপৃষ্ঠে উত্তাপের বিতরণ ঘটে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বিবেচনায় সূর্যের তাপ পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে পড়ে। যার ফলে কোনো স্থান যখন সরাসরি উত্তপ্ত হয় তখন তুলনামূলক শীতল স্থানের দিকে উত্তপ্ত বায়ু প্রবাহিত হয়। বায়ুর ধর্মই হলো বায়ু, অধিক উষ্ণ স্থান থেকে শীতল স্থানের দিকে প্রবাহিত হয়। আর একারণেই পৃথিবীতে বায়ুপ্রবাহের ঘটনা ঘটে। এই বায়ুপ্রবাহ যখন সীমাবদ্ধ মাত্রায় হয়, তখন দখিনা হাওয়ার মতো সুখকর অনুভূতি বয়ে আনে। আবার যখন তা মাত্রাতিরিক্ত হয় তখন তা স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড় এবং জলভাগে তৈরি করে জলোচ্ছাস। মূলত উচ্চচাপীয় অঞ্চল থেকে নিমঞ্চাপীয় অঞ্চলে বায়ু প্রবাহিত হয়।
২। তাপ
তাপ এক ধরনের শক্তি যা আমাদের শরীরে ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি সৃষ্টি করে থাকে। তাপগতিবিদ্যা অনুসারে যখন দুটি বস্তুর মধ্যে প্রথমটি থেকে দ্বিতীয়টিতে আরেকটিতে শক্তি স্থানান্তরিত হয় তখন প্রথমটি দ্বিতীয়টির চেয় বেশি গরম হয় । অন্যভাবে বলা যায়, তাপ হলো পদার্থের অণুগুলোর গতির সাথে সম্পর্কযুক্ত এমন এক প্রকার শক্তি, যা কোনো বস্তু ঠান্ডা না গরম তার অনুভূতি সৃষ্টি করে থাকে। তাপগতিবিদ্যার তিনটি সূত্র রয়েছে ।
৩। চাপ
বায়ুর ভর আছে যার জন্য বায়ুর ওজনও আছে। বায়ুর এই ওজনের কারনে সৃষ্ট চাপকে বলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বা বায়ুর চাপ। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে একক ক্ষেত্রফলের (এক বর্গমিটার) ওপর লম্বভাবে বায়ুমণ্ডল তার ওজনের কারনে যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করে তাকেই ওই স্থানের বায়ুর চাপ বলে থাকে। বায়ুর চাপ দু-ধরনের নিম্নচাপ ও উচ্চচাপ। বাতাস উত্তপ্ত হলে প্রসারিত ও হালকা হয়। বাতাসের ঘনত্ব ও ওজন কমে যায় এবং বায়ু কম চাপ দেয় একে বলে নিম্নচাপ। অন্যদিকে, তাপমাত্রা কমে গেলে বাতাস শীতল ও ভারী হয়, বাতাসের ঘনত্ব ও ওজন বেড়ে যায় এবং ভূপৃষ্ঠে বায়ু বেশি চাপ দেয় একে বলে উচ্চচ্চাপ।
৪। বৃষ্টিপাত
স্বাভাবিকভাবে আকাশে ভেসে থাকা মেঘ ঘনীভূত হয়ে পানির ফোঁটা ফোঁটা আকারে মধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠে পতিত হলে তাকে বৃষ্টিপাত বলে। এই বৃষ্টিপাত কখনো বেশি এবং কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আকারে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। বৃষ্টি একধরনের তরল, যা আকাশ থেকে মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূপৃষ্ঠের দিকে পড়ে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। এই ফোঁটাগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ভারি হলে তা পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ে – একেই বলে বৃষ্টি। বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে বৃষ্টি সুপেয় জলের বড় উৎস বিচিত্র জৈবব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি সচল রাখতে ও কৃষি সেচব্যবস্থা সচল রাখতে বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। যদিও সব ধরনের বৃষ্টি ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছায় না। শুকনো বাতাসের মধ্য দিয়ে বৃষ্টি পড়ার সময় কিছু বৃষ্টির বিন্দু শুকিয়ে যায়। ভারগা নামে পরিচিত এই বৈশিষ্ট্যটি মূলত শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে দেখা যায়।
৫। আর্দ্রতা
বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণকে বাতাসের আর্দ্রতা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। দৈনন্দিন জীবনে আর্দ্রতা বলতে আমরা আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে বুঝে থাকি। আপেক্ষিক আর্দ্রতা হল কোন নির্দিষ্ট জায়গার বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের আংশিক চাপ ও ঐ তাপমাত্রায় জলীয় বাষ্পের সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ। নির্দিষ্ট তাপে ও চাপে বাতাসে সর্বোচ্চ কি পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে তা সুনির্দিষ্ট। আর্দ্রতাকে পরম আর্দ্রতা ও নির্দিষ্ট আর্দ্রতাও বলা হয়। আপেক্ষিক আর্দ্রতা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর্দ্রতা বেশি হলে গ্রীষ্মকালে বাইরে গেলে আমরা বেশি গরম অনুভব করি, কারণ তা ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপ বের করে দেবার প্রক্রিয়াটির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাপ সূচক ছকে এই প্রভাব হিসাব করা হয়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
আবহাওয়ার উপাদান গুলো কি কি এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কিছু পশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
বাংলাদেশের জলবায়ু কেমন তা বর্ণনা কর?
বাংলাদেশের জলবায়ু সাধারনত উষ্ণ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন। মৌসুমি বায়ুর প্রভাব এখানে এত বেশি যে, এ জলবায়ু ‘ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু’ নামে পরিচিত।
আবহাওয়া কেন পরিবর্তন হয়?
জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রধান কারন হচ্ছে গ্রিনহাউস এফেক্ট। শক্তি উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন,মিথেন সহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক গ্যাস বৃদ্ধি পায় এবং এই গ্যাস গুলো আমাদের বায়ুমণ্ডলকে উৎতপ্ত করে চলেছে। যার কারনে আমাদের চারপাশের আবহাওয়া পরিবর্তিত হচ্ছে।
উপসংহার
সহজ করে বললে, আবহাওয়া হলো কোনো স্থানের রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, মেঘ, কুয়াশা ও বায়ুপ্রবাহের সাময়িক সময়ের অবস্থা। অন্যভাবে বলা যায়, আবহাওয়া হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সামগ্রিক অবস্থা। আর এই জন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া দিনের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবহাওয়ার উপাদানগুলো হলো তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, বৃষ্টিপাত ও বায়ুচাপ ইত্যাদি। আবহাওয়া কোনো স্থানের স্বল্প সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থাকে নির্দেশ করে থাকে।
সাধারণত এক দিনের এমন রেকর্ডকেই আবহাওয়া বলে থাকে। আবার কোনো একটি বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে আবহাওয়ার উপদানসমূহ যেমন – বায়ুর তাপ,চাপ,আদ্রতা,বৃষ্টিপাত ইত্যাদির অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ বছরের যে সাধারণ অবস্থা (গড় অবস্থা) দেখা যায় তাকে জলবায়ু বলে। আবহাওয়া মূলত পরিবর্তনশীল একটি চলক। তাই আমাদের দৈনন্দিন সকল কাজকর্ম সঠিকভাবে পালনের জন্য প্রতিদিনের আবহাওয়ার প্রতি নজর রাখতে হয়। আবহাওয়ার উপাদান গুলো কি কি এ বিষয়েও ধারনা রাখতে হয়। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে শীতকালীন সবজির নামের তালিকা সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“আবহাওয়ার উপাদান গুলো কি কি” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।