Skip to content
Home » এলার্জি জাতীয় সবজি তালিকা

এলার্জি জাতীয় সবজি তালিকা

List Of Allergenic Vegetables

এলার্জি জাতীয় সবজি তালিকা সবার জন্য জানা জরুরী বিশেষ করে যাদের এলার্জি রয়েছে। এলার্জি সকলের কাছে একটি পরিচিত রোগের নাম। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ এই এলার্জি রোগে ভোগে থাকে।  সব বয়সের মানুষেরই এই এলার্জি সমস্যা থাকতে পারে তবে শিশুদের একটু বেশি। কারো ক্ষেত্রে এলার্জি অতি সামান্য আবার কারো ক্ষেত্রে এলার্জি অনেক বেশি থাকে। ময়লা-আবর্জনা, ধুলাবালির মধ্যে থাকলে এলার্জি দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন খাবার থেকেও এলার্জির সমস্যা হতে পারে। এলার্জির সমস্যায় অনেক সময় প্রচুর চুলকানি হয়। শরীরে লাল লাল চাকা হয়ে ফুলে যায়। যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তারা নিশ্চিত হতে পারেন আপনার অ্যালার্জি রয়েছে কিনা। আমাদের প্রতিদিনকার কিছু কিছু খাবার থেকেও শরীরে এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে অথবা এলার্জি আরও তীব্র হতে পারে। 

যদিও এলার্জি একটি বহুল প্রচলিত রোগের নাম। কিন্তু এই এলার্জি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সঠিক তেমন ধারণা নেই। শ্বাস কষ্ট, এক্জিমার মত অনেক চর্মরোগেরই কারণ এই এলার্জি। ঘরের ধুলোতে মাইট নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র জীবানু থাকে যা শতকরা প্রায় ষাট শতাংশ ক্ষেত্রে এলার্জি সৃষ্টির জন্য দায়ী। যারা হাপানি জনিত এলার্জি সমস্যায় ভোগেন তাদের ঘরের ধুলো সবসময় এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষ করে ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময়। ঘরের কম্বল, পর্দা, তোষক, বালিশ, আপবাবপত্র প্রভৃতিতে যে ধুলো জমে, তা পরিস্কার করার সময়ও দুরে থাকতে হবে।

এলার্জি রোগ কি?

আমাদের শরীর প্রায় সব সময়ই ক্ষতিকর বস্তুকে (পরজীবী, ছত্রাক, ভাইরাস, এবং ব্যাকটেরিয়া) প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে থাকে। এই প্রচেষ্টাকে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বা ইমিউন বলে। কিন্তু কখনও কখনও আমাদের শরীর সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন অনেক ধরনের বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে এলার্জি বলা হয়। এলার্জি হল এমন একটি রোগ যাকে মানব দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ত্রুটি বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। শরীরের ভেতরে প্রবেশকৃত বাইরের কোন বস্তুর বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার একটি প্রতিক্রিয়া হলো এলার্জি। 

এলার্জি জাতীয় সবজি তালিকা

এলার্জি সমস্যা রক্তের গ্রূপ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন খ্যাদের মাধ্যমে বেশি পরিলক্ষিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেয়া যায় একজনের যে সবজিতে এলাজি হচ্ছে অন্যজন সেই অনায়াসে খেয়ে নিচ্ছে। যাদের রক্তের গ্রূপ ‘ও’ তাদের বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাল আলু, বেগুন, ইত্যাদি খেলে এলার্জি বাড়াতে পারে। আবার যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’ তাদের জন্য এলার্জি তৈরী করতে পারে মিষ্টি আলু, বেগুন, পেপে, টমেটো ইত্যাদি। রক্তের গ্রুপ ‘এবি’ এর জন্য এলার্জি যুক্ত খাবার হলো কুমড়া বীজ, মুলা, কলা, ইত্যাদি। নিম্নে এলার্জি জাতীয় সবজি তালিকা ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করা হলো –

১। পুঁইশাক

Puishak

পুঁইশাকের একটি বড় অপকারিতা হচ্ছে এটি খেলে এ্যালার্জি বেড়ে যায়। যাদের এর্লাজির সমস্য রয়েছে তারা বেশি পরিমানে এই শাক খেলে এর্লাজির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। পুঁইশাক অক্সালেটস সমৃদ্ধ, এটি গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের তরল পদার্থে অক্সালেটস এর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এর ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে চোখ উঠলে এই শাক খেলে চোখের চুলকানি বেড়ে যায়। 

২। বেগুন

Eggplant

যাদের এ্যালার্জি আছে তাদের বেগুন না খাওয়াই ভালো। বেগুনে প্রচুর পরিমানে এ্যালার্জি আছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁদের টোম্যাটো, আলু এবং বেল পেপারের মতো সবজি খেলে অ্যালার্জি হয়, তাঁদের বেগুন খেলেও সেই একই রকম সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের সবজিতে ‘স্যালিসাইলেট’ নামক এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে। যা শরীরে বিষের মতো কাজ করে। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে ‘স্যালিলাইলেট টক্সিসিটি’ বলা হয়।

৩। কদু

Gourd

কদু একটি সুস্বাধু ও পুষ্টিকর খাবার যার অপর নাম লাউ। কদুতে এ্যালার্জি আছে। কদু খেলে প্রচুর পরিমানে চুলকানি শুরু হয়। তাই চোখ উঠলে কদু খেতে নিষেধ করে চিকিৎসকরা।

৪। শিম

The Bean

এক তথ্যঅনুসন্ধান করে দেখা গেছে, শিমে এলার্জির সমস্যা রয়েছে। কারো কারো শিম খেলে মাইগ্রেনের তীব্রতা বাড়তে পারে। মাথাব্যথা হতে পারে। এছাড়া শরীরে চুলকানি বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে শিম খাওয়া বাদ দিতে হবে। চোখ উঠলে তো কোনভাবেই শিম খাওয়া যাবে না। 

৫। কলা

Banana

চিকিৎসকের মতে, কলা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। অন্য কোনো খাদ্য যেগুলোতে এলার্জি হয় সেই সব খাদ্যের মত। ডাক্তাররা চারুকলা শিরা, উচ্চ ওজন (কলা, অনেক ক্যালোরি) এবং তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য কলা খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করে থাকেন। 

৬। গাজর

The Carrot

গাজর সবজিটি বিটা ক্যারোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। যাদের এলার্জি আছে তাদের জন্য গাজর ক্ষতিকারক অ্যালার্জেনে পূর্ণ।গাজর রান্না করার চেয়ে কাঁচা খাওয়ার সময় এলার্জির প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রান্নার ফলে গাজরের অ্যালার্জেনিক প্রোটিন ভেঙ্গে যায় এবং ইমিউন সিস্টেমের উপর তাদের প্রভাব কমে যায়।

৭। টমেটো

Tomato

আমরা হয়তো অনেকই জানি না যে টমেটোতে হিস্টামিন নামক একটি যৌগ থাকে, যা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। বেশি পরিমানে টমেটো খাওয়ার ফলে হাঁচি, ত্বকে ফুসকুড়ি এবং গলা চুলকাতে পারে। আপনি যদি আগে থেকেই অ্যালার্জিজনিত রোগে ভুগে থাকেন, তাহলে টমেটো থেকে দূরে থাকাই উত্তম।

৮। বাঁধাকপি

Cabbage

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, শিল্পোন্নত দেশগুলিতে অ্যালার্জির ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন ব্যক্তি যে কোনো খাবারে খাদ্য খেলে অ্যালার্জি হতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা সেই খাবারটি নিয়মিত বা ঘন ঘন খায়।বাঁধাকপি ক্রুসিফেরাস পরিবারের অন্তর্গত। কিছু লোকের ক্রুসিফেরাস শাকসবজিতে অ্যালার্জি হতে পারে।

৯। ফুলকপি

Cauliflower

ফুলকপিতে এলার্জি খুবই বিরল কিন্তু তারপরেও ফুলকপিকে এলার্জির তালিকায় নথিভুক্ত করা হয়েছে । যদি কারও ফুলকপির প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তবে ব্রোকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউট এবং বাঁধাকপির মতো ব্রাসিকেসি পরিবারের অন্যান্য সবজি থেকেও তাদের অ্যালার্জি হতে পারে। ফুলকপির অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে: মুখ এবং হাত ফুলে যাওয়া।

১০। লাল আলু

Sweet Potato

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আলুতে এলার্জি আছে তবে অন্যান্য সবজির তুলনায় কম। তবে আপনাকে আগে আলু খেতে হবে তারপর দেখতে হবে আপনার এ্যালার্জি আছে কিনা। খাওয়ার পর যদি কোন লক্ষন দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার এ্যালাজি আছে। তখন আলু এড়িয়ে চলাই ভালো।

১১। কুমড়া

Pumpkin

হ্যাঁ, কুমড়ো থেকে আপনার এলার্জি হতে পারে। আর যাইহোক এত বেশি নয়। যদি কুমড়া খাওয়ার পর আপনার এলার্জি বেড়ে যায় তাহলে আপনাকে কুমড়াকে বিদায় জানানোটাই শ্রেয়। না। কুমড়োর মাংস খাওয়ার পর অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার মাত্র কয়েকটি ক্ষেত্রে রিপোর্ট পাওয়া গেছে।

১২। পেঁপে

Papaya

যতটুকু জানা যায় পেঁপের বোটা থেকে বের হওয়া সাদা তরল চামড়ায় এলার্জি আছে। কিন্তু পেঁপের মাংসে এলাজি আছে কিনা তা সুস্পস্ট করে বলা যায় না। তা বুঝার জন্য আপনাকে আগে পেঁপে খেতে হবে তারপর দেখতে হবে আপনার এ্যালার্জি আছে কিনা। খাওয়ার পর যদি কোন লক্ষন দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার এ্যালাজি আছে।

১৩। পালং শাক

Spinach

পালং শাকের এ্যালার্জির সমস্যা অন্যাণ্য খাবারের চেয়ে তীব্র। কারন পালং শাকে একধরনের প্রোটিন রয়েছে যা পরাগের (রেণু) মধ্যে পাওয়া প্রোটিনের মত। যাদের পরাগ থেকে এ্যালাজি হয় তাদের অবশ্যই পালং শাক খেলে এ্যালার্জি হতে পারে।

১৪। কঁচু শাক

Little Leaf

কঁচুতে এ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে। যাদের কঁচু খেলে এ্যালার্জি হয়, তাদের কঁচু না খাওয়াই ভালো। 

১৫। মিষ্টি কুমড়ার শাক

Sweet Pumpkin Greens

মিষ্টি কুমড়ার শাকে প্রচুর পরিমানে এ্যালার্জি রয়েছে। মিষ্টি কুমড়া থেকে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বিরল, তবে শাকে এলার্জি রয়েছে। মিষ্টি কুমড়ার মাংস সাধারণত বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয় এবং এটি একটি পুষ্টিকর খাবার । কিন্তু শাক খেলে যাদের এলার্জি বেড়ে যায় তাদের শাক এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।

১৬। লাল শাক

Red Vegetables

তথ্যঅনুসন্ধানে যতটুকু জানা যায় লাল শাকে এ্যালাজি নেই। তবে আপনার যে এ্যালার্জি হবে না তা কিন্তু বলা যায় না। আপনাকে আগে লাল লাশ খেতে হবে তারপর দেখতে হবে আপনার এ্যালার্জি আছে কিনা। খাওয়ার পর যদি কোন লক্ষন দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার এ্যালাজি আছে।

১৭। লাউ শাক

Gourd Greens

তথ্যঅনুসন্ধানে যতটুকু জানা যায় লাউ শাকে এ্যালাজি নেই। তবে আপনার যে এ্যালার্জি হবে না তা কিন্তু বলা যায় না। আপনাকে আগে লাউ শাক খেতে হবে তারপর দেখতে হবে আপনার এ্যালার্জি আছে কিনা। খাওয়ার পর যদি কোন লক্ষন দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার এ্যালাজি আছে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

এলার্জি জাতীয় সবজি তালিকা এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও তার উত্তর।

এলার্জির লক্ষণ গুলো কি কি?

এলার্জির একাধিক লক্ষন রয়েছে যেমন, চামড়ায় চুলকানি, র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া,ফোস্কা পড়া ও চামড়া ঝরে যাওয়া এবং ঠোঁট, জিহ্বা,চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া, শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া। এছাড়াও চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া, শুকনো কাশি, হাঁচি, নাকে ও গলায় চুলকানি এবং  নাক বন্ধ হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

এলার্জির ওষুধগুলি কি কি?

এলার্জির ওষুধের চেয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিই বেশে উপকারী ও কার্যকরী । তারপরেও যদি এলার্জি নিয়ন্ত্রনে না আসে তবে এই ওষুধগুলি খেতে পারেন যেমনঃ Fexofenadine, Desloratadine, Levocetrizine, Bilastine, Hydroxyzine. এদের মধ্যে Desloratadine এবং Fexofenadine সব থেকে বেশি নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন।

উপসংহার

প্রতিরোধ করাই হচ্ছে এলার্জি নিরাময় বা নিয়ন্ত্রন এর ভালো উপায়। তাই খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে কোন ধরণের খাবার থেকে এলার্জির তীব্রতা বেশি হচ্ছে। অবশ্য এটি পরীক্ষা করার জন্য একটি সন্দেহজনক খাবার একদিন খেয়ে তিনদিন পর্যন্ত দেখতে হবে কোনো খারাপ প্রতিক্রিয়া আছে কিনা। একে বলা হয় ওরাল ফুড চ্যালেঞ্জ। তবে একাধিক খাবারে এলার্জি থাকলে নির্ণয় করা কস্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নেয়া উচিত। এটি কিছু নিদৃষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমেও জানা যায়। পাশাপাশি এলার্জি জাতীয় সবজি তালিকা মনে রাখা জরুরী। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে কোন সবজি খেলে রক্ত হয় এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।

এলার্জি জাতীয় সবজি তালিকা এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *