কোন সবজি খেলে রক্ত হয় তা স্বাস্থ্য সচেতন প্রতিটি নাগরিকের জানা জরুরী। সুস্বাস্থ্য মানুষ সুস্থ্য মনের অধিকারী। সকল খাবার কম বেশি শরীরের জন্য উপকারী। যে খাদ্য শরীরের জন্য উপকারি নয় তা খাওয়ার কোন অর্থই হয় না। খাদ্য মানুষের শরীরে শক্তির উদ্রেক করে। সবজি আমাদের শরীরের জন্য বেশি উপকারি। কারণ এই শাক সবজিগুলোতে আয়রনের পাশাপাশি ফলিক এসিড আছে যেগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সাযাহ্য করে। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ‘সবুজ সবজি ও সবুজ শাক’ খুবই উপকারী। সবুজ শাক সবজি সহজে হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালশিয়াম ও শর্করা জাতীয় পুষ্টিগুন। যে কোনও ঋতুতে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শাকসবজির যে জুড়ি মেলা ভার, সে কথা সবাই জানে। সবুজ শাক সবজি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী। সবুজ শাক সবজি সহজে হজমে সহায়তা করে থাকে। তাছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালশিয়াম ও শর্করা – মানে প্রচুর পুষ্টি গুণ। তাছাড়া রঙ্গিন শাকসবজি তে রয়েছে হরেক গুণ। হার্টের রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে যে যে কারণগুলো দায়ি থাকে, তার মধ্যে থেকে অন্যতম হল শাক-সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকা।
শাক সবজি কি?
শাক সবজি মূলত উদ্ভিদ জাতীয় খাবার। ভেজেটেরিয়ান জাতীয় খাদ্য হচ্ছে এই শাক সবজি। আমরা যারা সবজি প্রিয় বা ভেজেটেরিয়ান তারা তো অনেক খাবারের পরিবর্তে শুধু সবজিই খেয়ে থাকি। তার উপর সবজির পুষ্টিগুনও অন্যান্য খাবারের চেয়ে বেশি। অপরদিকে দেশীয় পদ্ধতিতে সহজে চাষ আবার দামে সস্তা। দরিদ্র থেকে শুরু করে ধনী সকল শ্রেনীর কাছে সহজলভ্য এবং হাতের নাগালেই প্রাপ্য। অসংখ্য শীতকালিন সবজির মধ্যে থেকে লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শালগম, পালংশাক, টমেটো, গাজর, ধনিয়া পাতা, শিম, ব্রকলি, মুলা, পেঁয়াজকলি, লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, ব্রকলি, মুলা, পেঁয়াজকলি, মটরশুঁটি, ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।
কোন সবজি খেলে রক্ত হয়
কোন সবজি খেলে রক্ত হয় এই বিষয়ে সাধারন মানুষের তেমন জানা থাকার কথা নয়। একমাত্র যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারাই এই বিষয়ে ধারনা রাখেন। সবজি যেমন সুস্বাধু তেমনি পুষ্টিগুনে ভরপুর। ছোট থেকে বড়, রোগী থেকে সুস্থ্য কারো জন্য কোন ধরনের ক্ষতিকর দিক নেই। নিচে কোন সবজি খেলে রক্ত হয় নিয়ে থাকছে সংক্ষিপ্ত বিবরন যা আমাদের সকলের উপকারে আসতে পারে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষাবাদ হয়ে থাকে। একেক ধরনের সবজিতে একেক ধরনের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন বিদ্যমান। যেমন কচু শাক, কচুর লতি, কচু, পালং শাক, বিট, লেটুস, ব্রকোলি, ধনিয়া পাতা এবং পুদিনা পাতা নিয়ম করে খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
১.পালং শাক (Spinach)

শাকের মধ্যে সবচেয়ে আয়রণ সমৃদ্ধ হল পালং শাক। এটি খেলে এতে রক্তে আয়রণের মাএা বেড়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের যেকোন সমস্যায় পালং শাক বেশ উপকার। পালং শাকের রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই রয়েছ। পালংশাক খেতেও সুস্বাধু।
২.কচুশাক (Arum Spinach)

আয়রণ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই শাক অত্যন্ত পুষ্টিকর। উচ্চ রক্তচাপ কমায় এই শাক। রক্ত বৃদ্ধি করে। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে। কচু শাক খেতেও খুব মজা। বিভিন্নভাবে এই কচুশাক খাওয়া যায়।
৩। বিট

বিট বা বিটরুট ওজন কমানোর জন্য সেরা বলে মনে করা হয়। তবে অত্যধিক পরিমাণে এই সবজি খেলে প্রস্রাবের রং লাল বা গোলাপি হতে শুরু করে। তাই তো সীমিত পরিমাণে বিটরুট খাওয়া উচিত। বিটরুট রক্তের হিমোগ্লোবিন সৃষ্টিতে কাজ করে ফলে দেহে রক্ত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৪। কচুর লতি

কুচুর লতিতে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমান পরিমানে খুবই বেশি থাকে। যা খাবার হজমে সাহায্য করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে। কচুর লতিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে যা সংক্রামক রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে। নিয়মিত কুচির লতি খেলে শরীরে জলীয় ভাব বজায়। কচুর লতি শরীরে প্রচুর পরিমানে রক্ত তৈরি করে।
৫। পুদিনা পাতা

এই পাতায় উচ্চমাত্রায় ‘স্যালিসাইলিক অ্যাসিড’ থাকে যা ব্রণ দূর করে । ত্বক পরিষ্কার করতেও এটি বেশ কার্যকরি ভূমিকা রাখে। মৃত কোষ দূর করতে এবং কড়া পড়া অংশ স্বাভাবিক করতেও পুদিনা পাতা ভালো অপদান রাখেয। মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কাজে পুদিনা পাতা আদর্শ উপাদান। এই পুদিনা পাতা রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে থাকে যা রক্ত বৃদ্ধি করে।
৬। ধনিয়া পাতা

কিডনি সুস্থ রাখে। ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রক্তস্রাবের সমস্যা দূর করতে ধনিয়া পাতা বেশ সহায়ক। এতে ক্যালসিয়াম, ফাইবার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ, বি-ক্যারোটিনয়েডস, পলিফেনলসের মতো উপকারী ভেষজ গুণ বিদ্যমান থাকে। সেই সাথে ধনিয়া বীজ ও পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। ধনিয়া পাতা নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বেড়ে যায়। এবং রক্ত বৃদ্ধিতে ধনিয়া পাতা খুবই উপকারি।
৭। ব্রকলি

দেখতে অনেকটা ফুলকপির মতই। তবে এটি ফুলকপি নয়। এই সবজিটির নাম ব্রকলি। ব্রকলি বা ব্রোকোলি ক্রসিফেরী গোত্রের অন্তর্ভুক্ত শীতকালীন সবজি। এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, আঁশ আছে। এতে Phytonutrients থাকায় হৃদরোগ, বহুমূত্র এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।ব্রকলিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। ব্রকলি বহুমূত্র, হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। ব্রকলি খেলে শরীরে রক্ত বৃদ্ধি পায়।
৮। লেটুস

লেটুস প্রায়শই সালাদে ব্যবহার করা হয়। এটি অন্যান্য ধরনের খাবার যেমন স্যুপ, স্যান্ডউইচ ও র্যাপেও দেখা যায়। এটা গ্রিল করাও যায়। এর একটি জাত সেলটুস (অ্যাসপারাগাস লেটুস), কাণ্ডের জন্য চাষ করা হয়, যা কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া হয়। লেটুস খেলে শরীরে নতুন রক্ত তৈরি হয়।
৯। কচুঁ

কচুঁতে আছে প্রচুর ফাইবার, ফোলেট ও থায়ামিন যা মানব শরীরের জন্য অনেক দরকারি উপাদান। কচু খেলে রক্তের কোলেস্টরল কমে তাই উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের জন্য ওল কচুর রস বেশ উপকারী। নিয়মিত কচু খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। কচুতে আছে অক্সলেট নামক উপাদান। কচঁ প্রচুর পরিমানে রক্ত তৈরি করে থাকে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
কোন সবজি খেলে রক্ত হয় এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
কোন কোন সবজিগুলি খেলে রক্ত বেশি হয়?
সবধরনের সবজিই দেহের জন্য উপকারি। তারপরেও যেমন কঁচু শাক, কঁচুর লতি, কঁচু, পালং শাক, বিট, লেটুস, ব্রকোলি, ধনিয়া পাতা এবং পুদিনা পাতা নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
যেসকল সবজি খেলে রক্ত বৃদ্ধি পায় সেইসকল সবজি কি আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জের মাটিতে চাষাবাদ হয়?
হ্যাঁ, এসকল সবজির সবগুলিই আমাদের দেশের মাটিতে হয়।
উপসংহার
আমাদের দেশে বছরের বারোটি মাসই সবজি পাওয়া যায়। তবে শীতকালীন সবজির প্রতি মানুষের আগ্রহ ও চাহিদা বেশি থাকে। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুনের জন্য আলাদা টান কাজ করে এই সবজির প্রতি। সবজি আমাদের দেহের বিভিন্ন ভিটামিন সরবরাহের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের অনেক উপকার করে থাকে। খাদ্য তালিকায় শীতকালীন সবজি থাকবে না তা হতে পারে না। খাদ্য তালিকায় কোন সবজি খেলে রক্ত হয় রাখাটা খুবই জরুরী যদিও আমরা জানি না কোন কোন সবজিতে কোন কোন গুনাগুন বিদ্যমান। কারণ একাধিক গবেষণায় জানা গেছে, বেশি মাত্রায় সবজি খেলে রক্তে জমতে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে দেয়। শাক সবজি দুটোই নিরামিষ পদ অর্থ্যাৎ ভেজেটেরিয়ান। তবে সবজি আমাদের নিত্য আহারের একটি অপরিহার্য অংশ। একটি বেলা চলে না শাকসবজি ছাড়া। মূলত শাক-সবজির বেশি খাওয়া সুস্বাস্থ্যের প্রতীক হিসেবে মানা হয়। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“কোন সবজি খেলে রক্ত হয়” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।