Skip to content
Home » বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি

বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি

Bari Mustard 14 Cultivation Method

বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি গ্রামের মানুষরা ভালোভাবেই জানে। সরিষার বিভিন্ন জাত রয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি ও কৃষিবান্ধব পরিবেশ সরিসার নানা জাত চাষের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।  সরিষার অন্যান্য জাতের তুলনায় বারি সরিষা-১৪ জাতের তুলনামূলক উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা এই জাত চাষ করে লাববান হচ্ছেন। তাই বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সকল কৃ্ষক জানতে চায়। বাংলাদেশের তেল ফসল হিসাবে সরিষা ,সয়াবিন, তিল, তিসি, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী প্রভৃতির চাষ করা হয়ে থাকে। তবে এ দেশের চাষীরা সরিষাকেই প্রধান ভোজ্য তৈল বীজ ফসল হিসেবে বেশি চাষ করে থাকে কারন তুলনামুলক উৎপাদন বেশি আবার খরচও কম। আর সরিষা জাতের মধ্যে বর্তমানে সরিষার উচ্চ ফলনশীল জাত বারি সরিষা ১৪ খুবই জনপ্রিয়। সরিষার এই জাত চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন। তাই আসুন নিম্নে বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা দেখে আসি।

বারি সরিষা কি?

সরিষা এক ধরনের তৈল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম Mustard. সরিষা Cruciferae গোত্রের দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। একবর্ষজীবী সরিষার বৈজ্ঞানিক নাম Brassica napus. এ ছাড়া কালো ও রাই সরিষার বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে Brassica nigra ও B. campestris. সরিষার উৎপত্তিস্থল এশিয়া মহাদেশে। বাংলাদেশে সরিষার চাষ করা হয় সাধারণত বীজ থেকে তেল উৎপাদনের জন্য, যা প্রধানত রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। আচার, চাটনি তৈরিতে এর ব্যবহার করা হয়। শরীরে বিশেষ করে ছোট শিশুদের গায়ে মাখার জন্য সরিষার তেল খুবই ব্যবহার করা হয়। সরিষার কচি পাতা ও ডগা শাক হিসেবে খাওয় যায়। সরিষা বাটা ইলিশ মাছের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। শুকনা গাছ ও পাতা জ্বালানি এবং খৈল মাছের খাদ্য ও জমিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। প্রায় সকল ধরনের ফসলের জন্য আদর্শ মাটির দেশ। সকল ধরনের সরিষা চাষ হলেও বারি সরিষা ১৪ জাতটি চাষের জন্য মাঝারি উঁচু ধরণের জমি খুবই উপযোগী এবং এই জাত চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগি। চাষের উপযোগী মৌসুম হলো রবি মেীসুম এবং এই জাত চাষের উপযোগী সময় হলো মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক মাস। নিচে বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি তুলে ধরা হলো –

জমি তৈরির পদ্ধতি

বারি সরিষা চাষের জন্য জমির প্রকারভেদ অনুযায়ী মাটির “জো” অবস্থায় ৪-৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে জমি তৈরি করতে হয়। সরিষার বীজ ছোট বিধায় ঢিলা ভেঙ্গে মই দিয়ে মাটি সমান ও মিহি করতে হয়। জমির চারদিকে পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে প্রয়োজনে সেচ এবং পানি নিকাশের সুবিধা তৈরি হয়। প্রতি শতকে সরিষা ক্ষেতের বীজতলায় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম বীজ বপন করতে হয়। 

বীজ রোপনের পদ্ধতি

বারি সরিষা ১৪ এর জন্য প্রতি শতকে সরিষা ক্ষেতের বীজতলায় ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম বীজ রোপন করতে হয়। সাধারণত সরিষা বীজ ছিটিয়ে রোপন করা হয়ে থাকে। কিন্তু লাইন করে বুনলে সার, সেচ ও নিড়ানী দিতে সুবিধা হয়। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১ ফুট রাখা ভালো। রোপনের সময় জমিতে প্রয়োজনীয় মাটির রস থাকা দরকার। কারণ, মাটিতে পর্যাপ্ত পারিনর রস থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে চারা গজাবে।

নিড়ানী দেওয়া

আগাছামুক্ত রাখার জন্য বারি সরিষা ১৪ বীজ রোপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর একবার নিড়ানী দিতে হয় এবং ফুল আসার সময় দ্বিতীয়বার নিড়ানি দিতে হয়। এতে ফসল ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

সরিষার জাত, মাটি প্রকার ও মাটিতে পানির রসের তারতম্য অনুসারে সরিষার জমিতে কমপোস্ট সার, ইউরিয়া, টিএসপি,এমওপি, জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট, বোরাক্স বা বোরিক ইত্যাদি সার সঠিক নিয়মে প্রয়োগ করতে হবে। পরিমানমত ইউরিয়া সারের সাথে বাকি সব সার জমি প্রস্তুত করার সময় মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। আবার ফুল আসার সময় ইউরিয়া স্যার এবার জমির উপর প্রয়োগ করতে হয়। সার প্রয়োগের সময় মাটিতে রস থাকলে ফসল ভালো হয়। সারের সঠিক প্রয়োগের উপর ফসলে বৃদ্ধি অনেকটা নির্ভর করে থাকে।

সারের পরিমাণ

সরিষার জাত, মাটির প্রকারভেদ ও মাটিতে রসের তারতম্য অনুসারে সার দিতে হয়। নিম্নে শতক প্রতি সার প্রয়োগের পরিমান দেওয়া হলো। সার কম বা বেশি উভয়ি ফসলের জন্য ক্ষতিকারক।

সারের নাম এবং পরিমাণ

ইউরিয়া ১২০০ গ্রাম টিএসপি ৬৫০ গ্রাম এমওপি ৩৫০ গ্রাম জিপসাম ৬৫০ গ্রাম জিংক সালফেট ২০ গ্রাম বোরাক্স বা বরিক এসিড ২৫ গ্রাম পঁচা গোবর ১৫ টন ।


সেচ প্রয়োগবারি সরিষা-১৪ জাতের বীজ রোপনের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে অথবা গাছে ফুল আসার সময় প্রথম বারের মত সেচ দিতে হবে। পরিমানমত সেচের ব্যবস্থা না করলে আশানুরুপ ফলা পাওয়া যাবে না। তারপর ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর অথবা ফল ধরার সময় দ্বিতীয় সেচ প্রদান করতে হবে।যদি বীজ বপনের সময় মাটিতে রস কম থাকে বারি সরিষা ১৪ জাতের চারা গজানোর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে একটি হালকা সেচ দিলে ফসল ভালো হয়।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি এই বিষয়ে আপনার মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর।

সরিষা ফসলের প্রধান রোগগুলি কি কি?

সরিষা ফসলের প্রধান রোগ হলো পরজীবী উদ্ভিদজনিত রোগ। এইরোগের কারনে সরিষার গাছ দুর্বল হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যাওয়ার সাথে সাথে ফলনও হ্রাস পায়।

বারি স সরিষা ১৪ এর ফলন কেমন?

বারি সরিষা জাতের ফলন অন্যান্য সরিষা জাতের ফলনের তুলনায় তুলনামূলক ভালো হয়। ভালো ভাবে পরিচর্চা করলে বারি সরিষা – ১৪ জাতের শতক প্রতি ৫.৮ কেজি থেকে ৬.৫ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ১.৪ থেকে ১.৬ টন ফলন পাওয়া যায়। এবং এটি অন্যান্য জাতের চেয়ে বেশি রোগ প্রতিরোধক ও সহনশীল।

সরিষা চাষ কিভাবে করতে হয়?

যদিও উপরে চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে তাও বলছি, বারি সরিষা চাষ করতে প্রথমে জমি নির্বাচন করে ভালো মতো জমি তৈরী করে সেখনে বীজ রোপন, সার প্রয়োগ ও সেচ প্রয়োগ করে ভালোমতো পরিচর্চা করতে হয়। ভালোভাবে পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।

উপসংহার

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি জানলাম। বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। সকল কৃষিজ পন্য চাষ হয়ে থাকে এখানে। সরিষা বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল ফসল। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর সাড়ে তিন লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয় এবং প্রায আড়াই লক্ষ টন তেল পাওয়া যায়। বিভিন্ন জাতের সরিষাতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০% তেল থাকে। বাংরাদেশে তিন প্রকা সরিষার চাষ বেশি করা হয়। এগুলি হলো টেরি, শ্বেত ও রাই। এখন কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন সরিষা জাত আবিস্কার করা হয়েছে।


নতুন নতুন জাতগুলো আগের জাতের চেয়ে বেশি ফলনশীল ও বেশি রোগ বালাই শহনশীল। তার মধ্যে বারি সরিষা – ১৪ অন্যতম। সরিষা ফসল ৭০ – ৮০ দিনে পাকে। প্রতি হেক্টরে ১.৪ থেকে ১.৬ টন পর্যন্ত ফসল হয়ে থাকে। আমন ধান কাটার স্বল্প মেয়াদী বারি সরিষা চাষ করা হয় বোরো ধান লাগানোর আগ পর্যন্ত। দিনে দিতে যদিও সরিষার চাষ কমে যাচ্ছে বিকল্প ভোজ্য তেল পামওয়েলের কারনে তারপরেও সরিষার চাহিদা এখনো কম নয়। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে পেঁপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে পড়তে পারেন।


“বারি সরিষা ১৪ চাষ পদ্ধতি” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *