Skip to content
Home » জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতের নাম

জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতের নাম

Name Of A Variety Of Rice Rich In Zinc

জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতের নাম সমূহ জেনে সেই জাতের ধান চাষ করে মানুষের শরীরের জিংকের চাহিদা পূরণ করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন জিংক সমৃদ্ধ ধানের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশীয় বিজ্ঞানিদের জন্য জিংক সমৃদ্ধ উন্নত জাতের ধান একটি বিপ্লব। বাংলাদেশে একটি বড়ো অংশের মানুষের একটি বড়ো অংশ জিংকের অভাব রয়েছে। ফলে, জিংক সমৃদ্ধ ধানের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশের পুষ্টিগুণের সার্বিক প্রয়োজনীয়তায়৷ জিংকের অভাবে মানুষের শরীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যহত হয় এবং স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতের নাম সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

জিংক সমৃদ্ধ ধান কি? 

বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্রে ১৯৯৫ সালে জিংক সমৃদ্ধ ধান নিয়ে গবেষণা করা হয়। মাটির উপযোগিতা পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পর ধানের জাত নিয়ে গবেষণা শুরু করা হয়। প্রথমে জিংক সমৃদ্ধ ধান বাছাই করা হয়। সাধারণত জিংক মাটি থেকে দানার মধ্যে সঞ্চারিত হয়। আর জিংকের জিনোম থাকে ধানের খোসার মধ্যে। সাধারণ ধানের সাথে জিংক সমৃদ্ধ ধানের ক্রসিং এ জিনোম স্থানান্তরের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়েছে সংকর প্রজাতির নতুন জিংক সমৃদ্ধ ধান উৎপাদিত হয়েছে। বেলে, দোআঁশ ও এঁটেল মাটিতে এধরণের ধান ভালো হয়। লবনাক্ত ও পাহাড়ি অঞ্চলের মাটিতে এই ধানের চাষাবাদ সম্ভব না।

জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতের নাম

ধান আমাদের খাদ্যের অভাব পূরণে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিংক সমৃদ্ধ ধান আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজন। জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতের নাম, বৈশিষ্ট্য, চাষাবাদ পদ্ধতি ও ফলন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

ব্রি ৬২ 

ব্রি ৬২ একটি স্বল্পকালীন জিংক সমৃদ্ধ আমন ধান। ২০১৩ সালে দেশে আবিস্কৃত প্রথম জিংক সমৃদ্ধ ধান এটি। পূর্ণ বয়স্ক ব্রি ৬২ ধানের উচ্চতা ৯৮ সে.মি।  ব্রি ৬২ এর গড় জীবনকাল ১০০ দিন। সাধারণ ধান থেকে ১৪-১৫ গ্রাম জিংক পাওয়া গেলেও ব্রি ৬২ থেকে ২০ গ্রাম জিংক পাওয়া যায়। যা আমাদের দেহের ৪০% জিংকের চাহিদা পূরণ করে। এছাড়া রয়েছে ৯ গ্রাম প্রোটিন। রবি মৌসুমের ১০-১৫ দিন আগে ব্রি ৬২ ধানের ফসল কাটা যায়। স্বল্পকালীন মেয়াদি হওয়ায় সহজেই খরা এড়িয়ে চলতে পারে। গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি, দস্তা ও ফুরাদান সার প্রয়োগ করতে হয়। পোকামাকড় ও পাখি এড়াতে ডালপালা স্থাপন ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি হেক্টরে ৪.৫ টন ধান পাওয়া যায়। 

ব্রি ৬৪

ব্রি ৬৪ একটি মূলত বোরো ধানের জাত। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্র কতৃক এটি বাজারে অনুমোদিত হয় চাষের জন্য। অধিক ও উচ্চ ফলনশীল এই জাতের উচ্চতা হয় ১০০ সে.মি। প্রতি কেজি চালে ২৪ গ্রাম জিংক পাওয়া যায়। শরীরের জিংকের চাহিদা ৪০% পর্যন্ত এটি পূরণ করতে সক্ষম। বাকি অংশে প্রায় ৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ব্রি ৬৪ এর গড় আয়ুকাল ১৫০ দিন। ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও জিংক সালফেট নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রয়োগ করতে হয়। ২৫ দিন পরপর আগাছা পরিষ্কার ও চাল শক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিনিয়ত সম্পুরক সেচ প্রদান করতে হয়। বৈশাখ-জ্যোষ্ঠ মাস বা এপ্রিল-মে মাসের মাঝামাঝি এই ধান কাটতে হয়। প্রতি ৬-৬.৫ টন ধান উৎপাদিত হয়।

ব্রি ৭২ 

ব্রি ৭২ একটি উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের জাত। ২০১৩-২০১৪ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্র থেকে এটি কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা হয়। চওড়া গাড় সবুজ রঙের পাতা যুক্ত এই গাছের উচ্চতা ১১৬ সে.মি। ফলে আকারে বেশ উঁচু। লম্বা মোটা ও সাদা আকৃতির চাল উৎপাদন হয় এই জাতের ধান থেকে। প্রতি কেজি তে ২৩ গ্রাম জিংকের পাশাপাশি রয়েছে আরও প্রায় ৯ গ্রাম প্রোটিন। অন্যান্য জাতের তুলনায় ৩-৬ গ্রাম বেশি। ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিংক ও জিংক সালফেট নির্দিষ্ট হাতে কয়েক কিস্তিতে নির্দিষ্ট দিন পর পর প্রয়োগ করতে হয়। এই জাতের গড় জীবনকাল ১২৫-১৩০ দিন। সাধারণত প্রায় এক মাস পর পর আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। ব্রি ৭২ জাতে পোকামাকড়ের পরিমাণ তুলনামূলক কম হয়৷ ফলে কীটনাশকের পরিমাণ কম হয়। এই ধানে থোড় আসা পর্যন্ত সেচ অব্যাহত রাখতে হয়। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কাটার উপযোগী হয়। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৬-৭.৫ টন ফসল পাওয়া সম্ভব। 

ব্রি-৭৪

ব্রি-৭৪ একটি বোরো জাতের ধান। বাংলাদেশে ২০১৪ সালে ধান গবেষণা কেন্দ্র কতৃক এটি কৃষকের নিকট হস্তান্তর করা হয়। অধিক ফলনশীল এই জাতের উচ্চতা ৯২ সে.মি। ফলে, তুলনামূলক বেশ মজবুত প্রকৃতির হয়। মোটা ও সাদা দানা বিশিষ্ট চালের ধান অনেক খসখসে হয়। ব্রি ৭২ জাতে ব্রি ৬৪ এর চেয়ে তুলনামূলক ৪-৫ দিন আগাম ফলন পাওয়া যায়। এ জাতের গড় ১৪৫-১৪৭ দিন। প্রতি কেজি তে ২৪.২ গ্রাম জিংক পাওয়া যায় এই জাতে। ব্রি ৬৪ এর চেয়ে তুলনামূলক বেশি। আবার সাথে প্রায় ৯ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় একই সাথে। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিংক ও জিংক সালফেট সার নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্দিষ্ট দিন অন্তর অন্তর নির্দিষ্ট কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। চাল শক্ত হওয়া সময় পর্যন্ত সেচ অব্যাহত রাখতে হয়। ২৫-৩০ দিন পরপর আগাছা দমন করতে হয়। রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি কম হলেও সংক্রামিত হলে বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি হেক্টরে ৭-৮.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। 

ব্রি-৮৪

ব্রি ৮৪ একটি উফশী জাতের ধান। উন্নত ফলনশীল জাতের সব বৈশিষ্ট্য ব্রি ৮৪ ধানে বিদ্যমান। ৯৬ সে.মি উচ্চতার এই লালচে ধানে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৫%, প্রোটিন ৯.৭ ভাগ ও আয়রন ১০ গ্রাম রয়েছে। প্রতি কেজি ধানে ২৭ গ্রাম জিংক রয়েছে। সুতরাং ব্রি ৮৪ এর পুষ্টিগুণ আগের ধানের জাত গুলোর চেয়ে তুলনামূলক বেশি। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিংক, দস্তা ও জিপসাম সার কয়েক কিস্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রয়োগ করতে হয়। গাছের আগাছা দমন করা হয় ২৫-৩০ দিন অন্তর। ধানের থোড় হওয়া পর্যন্ত সেচ অব্যাহত রাখার নিয়ম রয়েছে। সাধারণত ১৪০-১৪৫ দিন হচ্ছে এই জাতের জীবন কাল। জীবনকাল শেষে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফসল তোলা হয়৷ রোগ বালাই হলে বালাইনাশক প্রয়োগ করলেই ঠিক হয়ে যায়। প্রতি হেক্টরে ৬.৫-৮ টন ধান উৎপাদিত হয়।

ব্রি-১০০

ব্রি ১০০ দেশের সর্বশেষ উদ্ভাবিত জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত। বোরো ধানের একটি জাত। উফশী জাতের সকল উচ্চ ফলনশীল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান এই জাতে। ২০১৭ সালে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা হলেও ২০২০ সালে এটি মাঠপর্যায়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্র থেকে চাষীদের মাঝে প্রদান করা হয়। খাড়া, প্রশস্ত, লম্বা ও সবুজ পাতার রঙ যুক্ত এই গাছের গড় উচ্চতা ১০১ সে.মি। চাল মাঝারি চিকন ও সাদা রঙের। এই জাতে জিংকের পরিমাণ ২৬ গ্রাম, প্রোটিন ৮% ও বাকি অ্যামাইলোজ ২৫%। অগ্রাহয়নের শুরুতে বা নভেম্বরের শেষ ১৫ দিনে রোপণ করে এপ্রিলের শেষ ১৫ দিনে মোট ১৪৮ দিনে এটি কাটার উপযোগী হয়। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিঙ্ক সালফেট ও জিপসাম নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্দিষ্ট দিন পরপর কয়েক কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। জমির আগাছা দূর করতে হয় ৩০-৪০ দিন পরপর এবং থোড় থাকা পর্যন্ত সেচ দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ৭.৭ থেকে ৮.৮ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। ব্রি ১০০ আগের সকল জাতের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল একটি জাত।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন-উত্তর সমূহ

জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতের নাম এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তর।

জিংক সমৃদ্ধ ধানের চাষ দেশের কোথায় হচ্ছে?

জিংক সমৃদ্ধ ধানের চাষ দেশের ময়মনসিংহ, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের জেলা সমূহে জিংক সমৃদ্ধ ধানের চাষ হচ্ছে।

বাংলাদেশে মানুষের জিংকের ঘাটতি কতটা?

বাংলাদেশের জিংকের ঘাটতি শিশুদের মধ্য ৪৪% ও নারীদের মধ্যে মাত্র ৫৭%। জিংক সমৃদ্ধ ধান জাতের নাম সমূহ থেকে এই অভাব পূরণের উপায় পাওয়া গেছে। 

উপসংহার

জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতের নাম, জাতের বৈশিষ্ট্য ও বিস্তারিত উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বিস্তারিত জেনেছি। আমাদের দেশের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার সাথে পুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রদান করে এই জাতের ধান সমূহ আমাদের দেশ কে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। আবার উচ্চ ফলনশীল জাত হওয়ায় আর্থিকভাবে কৃষক লাভবান হচ্ছে। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে গরু মোটাতাজাকরণ দানাদার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাতের নাম” এ বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *