ব্লগিং কি? ব্লগ থেকে কি ধরনের আয় হয়? বিষয়গুলো ব্লগিং শুরু করার আগে জানা অপরিহার্য। জানা-অজানা বিভিন্ন বিষয়গুলো, অথবা সাম্প্রতিক কোন বিষয়সমূহ নতুন করে সহজে ও বোধগম্য ভাবে জানানো, অথবা নিজের অভিব্যক্তি ও চিন্তাভাবনা প্রকাশ করার একটি মিডিয়া হলো ব্লগিং। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, বিভিন্ন স্পনসরসিপ, অ্যাফিলিয়েশন ও অ্যাডভারটাইসমেন্ট থেকে আয়ের উৎস সৃষ্টি হওয়ার কারনে সারা পৃথিবী তথা বাংলাদেশেও ব্লগিং এর চাহিদা ক্রমেই বেড়েই চলেছে।
ইন্টারনেটে মত প্রকাশ, বিভিন্ন ধরনের তথ্য শেয়ার ও দৈনন্দিন জীবনের নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করার অন্যতম একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ব্লগিং (Blogging)। বর্তমানে ব্লগিং এর মাধ্যমে টাকা আয় করা যায় বলে এর চাহিদা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। যে কোন শ্রেনী পেশার মানুষ যে কোন জায়গা থেকেই ব্লগিং শুরু করতে পারেন।
ব্লগ কাকে বলে?
ব্লগ শব্দটি এসেছে ইংরেজী Weblog থেকে। সহজ ভাষাতে বললে, ব্লগ আপনার ব্যক্তিগত ডায়েরির মতন। এটা এমন একটা ডায়েরি যেখানে আপনি আপনার মন মতো যা খুশি তাই লিখতে পারবেন। আপনি, Stories , Tutorials , SMS, কবিতা, পত্রিকা এবং আর্টিকেল বা যেকোনো জিনিসের বিষয়ের উপরে লিখতে পারবেন। ব্লগ হচ্ছে এক ধরনের ওয়েবসাইট যেখানে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নিয়মিত আর্টিকাল প্রকাশ করা হয়। এটিকে ব্যাক্তিগত ডায়েরিও বলা যেতে পারে। বিভিন্ন প্রকারের ব্লগ আছে যেমন পার্সোনাল ব্লগ, নিউজ ব্লগ, টেক ব্লগ, হেলথ ব্লগ, লাইফস্টাইল ব্লগ, ইত্যাদি। যিনি নিয়মিত ব্লগ পোস্ট করেন তাকে বলা হয় ব্লগার। আর এই সম্পূর্ন প্রক্রিয়াকে বলা হয় ব্লগিং।
ব্লগিং কি ?
ব্লগ হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন বা একাধিক ব্যক্তির দ্বারা তৈরি করা এমন একটি ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজ যেটাকে নিয়মিত আপডেট করা হয়। এই ব্লগ ওয়েবসাইট গুলোকে মূলত অনানুষ্ঠানিক বা কথোপকথন এর ধরণে লিখা হয়। Blogging হলো সেই প্রক্রিয়াটি যেখানে একজন বা একাধিক ব্যক্তি অনলাইনে নিয়মিত কনটেন্ট গুলোকে প্রকাশ করে থাকেন। ব্লগিং এর প্রক্রিয়াতে, একজন ব্যক্তি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে নিয়মিত নিজের ওয়েবসাইটের জন্যে কিছু বিশেষ কাজ গুলো করে থাকেন। যেমনঃ Content Research, Article Writing, Content Update, SEO এবং Online Media Publishing.
ব্লগ থেকে কি ধরনের আয় হয়?
ব্লগ থেকে প্যাসিভ ইনকাম (Passive Income) হয়ে থাকে। Passive Income বলতে বুঝায় একটা সময় কাজ করে কোনো কিছু তৈরি করার পর আজীবন সেটা থেকে টাকা আয় হওয়াকে। প্যাসিভ ইনকাম হলো এমন এক ধরনের ইনকাম যেখানে একটা সময় কাজ করার পর আর কোনো কাজ করতে হয় না। আপনি একটি ১০ তালা বাড়ি তৈরি করে ভাড়া দিয়ে দিলেন। তাহলে এখানে কি হচ্ছে লক্ষ করুন। বাড়িটা তৈরি করার সময় আপনাকে কাজ এবং টাকা ইনভেস্ট করতে হচ্ছে। কিন্তু যখন বাড়িটি তৈরি করে ফেললেন তখন আর কাজ করতে হচ্ছে না, কাজ ছাড়াই বাড়ি ভাড়া থেকে আপনি ইনকাম করতে পারছেন। একটি বাড়ি তৈরি করে সে বাড়ি ভাড়া দিয়ে ইনকাম করা খুব সুন্দর একটি প্যাসিভ ইনকামের উদাহরণ। ব্লগিং কি? ব্লগ থেকে কি ধরনের আয় হয়? নিম্নে তা তুলে তুলে ধরা হলো।
১। বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন খুব জনপ্রিয় একটি আয়ের উপায়। প্রতিটি ব্লগেই বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে প্যাসিভ ইনকাম করা যায়। যদি আপনার একটি ব্লগ থাকে এবং সে ব্লগে ভালো ভিজিটর থাকে তাহলে আপনি আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দিয়ে আজীবন প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন।
গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense)
এটি একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন প্রোগ্রাম। যা ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রদান করে এবং ভিউয়ার বা ক্লিকের উপর ভিত্তি করে আয় দেয়। ব্লগে Google AdSense ব্যবহার করে আপনি অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন কোড ও প্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন মুলক বিষয়গুলি প্রদর্শন করতে পারেন। এটি ভিউয়ার বা ক্লিকের উপর ভিত্তি করে আপনার আয় উপার্জন করে।
স্পনসর বিজ্ঞাপন
আপনি আপনার ব্লগে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদানকারী কোম্পানিদের বিজ্ঞাপন প্রদান করতে পারেন। আপনি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক বা কোম্পানিদের সাথে যোগাযোগ করে এই ধরনের স্পন্সরশিপ বিজ্ঞাপন এর ব্যবস্থা করতে পারেন।
২। এফিলিয়েট মার্কেটিং
এফিলিয়েট মার্কেটিং কি? এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো বাংলা ভাষায় দালালি করা বা মিডিয়া হিসাবে কাজ করা। অন্য কম্পানির প্রোডাক্ট সম্পর্কে আপনার ওয়েবসাইটে ব্লগ পোস্ট করবেন এবং সে পোস্টে উক্ত প্রোডাক্টের লিংক দিয়ে দিবেন। কেউ যদি আপনার এই লিংকে ক্লিক করে সে কম্পানির প্রোডাক্ট ক্রয় করে তাহলে আপনি কমিশন পাবেন। এটাই হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রক্রিয়া। ব্লগে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করাকে প্যাসিভ ইনকামে মধ্যে ধরা হয়। একবার আর্টিকাল লিখে র্যাংক করানোর পর সেখানে আর কোনো কাজ করার থাকে না। অটোমেটিং লিংকে ক্লিক আসে এবং সেল থেকে কমিশন পাওয়া যায়।
৩। স্পনসর পোস্ট
বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান আছে যারা বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্লগ এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট বিষয়ে লেখা পোস্ট করার মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন সেবা কিংবা প্রোডাক্ট এর প্রচার করতে চাই। যা স্পনসর পোস্ট বলে পরিচিত। এইভাবে স্পনসর পোস্ট এর মাধ্যমেও ব্লগ থেকে আয় হয়।
৪। কনটেন্ট সাবস্ক্রিপশন
যদি আপনার ব্লগের কোনও অ্যাক্টিভ কমিউনিটি থাকে যারা আপনার বিষয় সম্পর্কে আরও জানতে চায়। সেইক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে উপার্জনের জন্য পেইড মেম্বারশিপ বা সাবস্ক্রিপশন মডেল হল আপনার মূল্যবান কন্টেন্ট ব্যবহারের অন্যতম উপায় বা মিডিয়া। এই ধরনের ব্যবসায়িক মডেলে পাঠকরা নিয়মিতভাবে, মাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পেমেন্ট করে। এইভাবে পাঠকদের কাছ থেকে মেম্বারশিপ বা সাবস্ক্রিপশন ফি সংগ্রহ করে আপনি বার বার আয় করতে পারেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
ব্লগিং কি? ব্লগ থেকে কি ধরনের আয় হয়? এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
ব্লগ থেকে কি পরিমান আয় হয় ?
আপনি নিজের ব্লগ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা মাসে আরামে আয় করতে পারবেন। কিন্তু ব্লগিং করে অনেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম আয় করছে।
ব্লগ কি লাভজনক?
হ্যা, ব্লগ এখনো লাভজনক একটি পেশা এবং এই পেশার সাথে জড়িয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন মানুষ। ব্লগ লাভজনক এই কারনেই বলছি এখানে কম টাকা বিনিয়োগ করে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব।
উপসংহার
বর্তমান সময়ে ভিডিও কন্টেন্ট বেশি জনপ্রিয় হওয়ার কারনে অনেকের ভুল ধারনা যে ব্লগ মনে হয় এখন আর বেশি মানুষ পড়ে না। সত্যিটা হলো এখনো সারা বিশ্বের মানুষ কোনো কিছু জানার জন্য ব্লগ পড়ে থাকে। মানুষ এখনো বিভিন্ন বিষয়ে জানার জন্য গুগলে সার্চ করে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় প্রতিদিন গুগলে 8.5 Billion সার্চ হয়ে থাকে। বুঝতেই পারছেন প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্ন জিনিস জানার জন্য গুগলে সার্চ করছে এবং সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের ব্লগ পড়ছে। তাই ব্লগ এখনো মারা যায় নি। আপনি নিশ্চয় ব্লগিং কি? ব্লগ থেকে কি ধরনের আয় হয়? বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। তাহলে দেরী না করে আপনিও শুরু করুন আপনার ব্লগ ওয়েবসাইট। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে ভিডিও মার্কেটিং কি? ভিডিও মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ? সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“ব্লগিং কি? ব্লগ থেকে কি ধরনের আয় হয়?” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।