মুখে ছোট ছোট কালো তিল দূর করার উপায় নিয়ে অনেককেই চিন্তিত হতে দেখা য়ায়। তিল সৌন্দর্যের প্রতীক হলেও অতিরিক্ত হলে সেটা খারাপ দেখায়। এই অবাঞ্চিত তিল আপনার সৌন্দর্যকে নস্ট করে দেয়। অতিরিক্ত তিল দেখতে বিশ্রী লাগে। মুখের তিল কিসের লক্ষণ ? মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় মাথার উপরে একটি তিল সারা জীবন সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে বলে বিশ্বাস করা হয় । কপালের তিল ভাগ্যকে নির্দেশ করে তবে আত্মীয়দের সাথে দুর্বল সম্পর্ক থাকবে এটাও প্রকাশ করে। বাম গালে একটি তিল অন্তর্মুখীতা এবং একটি স্বল্প মেজাজ নির্দেশ করে। ডান গালে তিল আধিপত্য এবং যৌক্তিক চিন্তাভাবনার লক্ষন প্রকাশ করে। অনেক সময় মুখে ছোট ছোট তিল দেখা যায়। একসময় এটি স্থায়ী হয়ে যায় এবং ত্বকে গুটি দাগের মতো মনে হয়।
মুখের তিল কি?
আমরা সবাই কম বেশি ফ্রিকেলস শব্দটির সাথে পরিচিত যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে তিল বা ক্ষুদ্র গুটি চিহ্ন। এটি এমন ধরণের দাগ যার বর্ণ বাদামী। আকারে ২ – ৪ মিমি বােএর বেশিও হতে পারে। গোলাকার, ত্বকের সমান স্তরে অবস্থান করে এবং মূলত ত্বকের কোন ক্ষতি করে না। তবুও সবাই এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। এটা কোন রোগ বা শারীরিক সমস্যা নয় কিন্তু এটি অনেকের কাছেই অপছন্দের। তাইতো তারা মুখে ছোট ছোট কালো তিল দূর করার উপায় খুঁজে বেড়ায়। ফর্সা ত্বকে এ দাগ পরিস্কার দেখা যায়। এটা অনেক সময় বংশগত, পরিবারের কারো এ সমস্যা থেকে থাকলে আপনার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিল সূর্যের আলোতে আরো বেশি প্রকট আকার ধারণ করে তাই সান এক্সপোজড জায়গা গুলোতে বেশি হতে দেখা যায়। সারা শরীরেই তিল হতে পারে।
মুখে ছোট ছোট কালো তিল দূর করার উপায়
প্রত্যেকের শরীরে তিল বা আঁচিল থাকে। শরীরের যে কোনো জায়গায় তিল দেখা দিতে পারে। অনেক সময় অবাঞ্চিত বা অতিরিক্ত তিল বা আঁচিল আমাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট করে। মুখের মধ্যে একাধিক তিল অনেকেরই অপছন্দ। তারা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তিল বা আঁচিল সারানোর উপায় খুঁজে বেড়ায়। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে বাড়িতে থেকেই তিল বা আঁচিল সহজেই দূর করা যেতে পারে। নিচে মুখে ছোট ছোট কালো তিল দূর করার উপায়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হল-
১। রসুন

স্বাস্থ্যের জন্য রসুন খুবই উপকারী। তিল বা আঁচিল দূর করতেও খুবই কাজ দেয়। তিলের ওপর নিয়মিত রসুনের রস লাগালে তিল আস্তে আস্তে দূর হয়। স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী রসুনের উপাদান। তিল দূর করার জন্য অনেক কার্যকরী রসুন। তিলের ওপর নিয়মিত রসুনের রস লাগালে তিল দূর করা যায়।
২। আলু

ব্লিচের কাজ করে থাকে আলু। আলুর রস ব্যবহারে ত্বক থেকে তিল দূর না হলেও তিলের রং হালকা হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে তিল মিশে যায়।
৩। কলার খোসা

অ্যানজাইম ও অ্যাসিডে ভরপুর কলার খোসা। নিয়মিত কলার খোসা ব্যবহারে তিল দূর হয়। ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও খুব ভালো কাজ করে কলার খোসা।
৪। মধু

মধু ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। মধু ত্বক মোলায়েম করে। মধুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। যা ত্বকের বিভিন্ন উপকার করে। অনেকে মনে করেন, নিয়মিত তিলের ওপর মধু লাগালে এর রং হালকা হয় এবং আস্তে আস্তে তিল মুছে যায়।
৫। লেবুর রস

লেবু এমনিতেই অনেক উপকারী। লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। দিনের বেলায় ত্বকে কয়েকবার লেবুর রস লাগালে ব্লিচের কাজ করে ।
৬। ক্যাস্টর অয়েল ও বেকিং সোডা

দুটি উপাদান ভালো করে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করা যেতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে ত্বকে লাগাতে হবে। টানা কয়েক সপ্তাহ লাগানোর পর নিজেই উপকারিতা বুঝতে পারবেন। বেকিং সোডা তিল শুকানোর জন্য কাজ করে এবং ক্যাস্টর অয়েল ত্বক ভালো রাখে।
৭। টি ট্রি অয়েল

এই তেলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরির বৈশিষ্ট্য আছে। অনেকের দাবি, দিনে কয়েক বার এই তেল ব্যবহার করলে তিল দূর হয়ে যায়। টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যেন এই তেল কোনোভাবেই শরীরের ভেতরে যেন না যায়।
৮। অ্যাপেল সিডার ভিনিগার

অ্যাপেল সিডার ভিনিগার দ্বারা খুব সহজ পদ্ধতিতেই তিল দূর করা যায়। অ্যাপেল সিডার ভিনিগারে ম্যালিক আর টার্টারিক অ্যাসিড থাকে। তিলের উপর দিলে আস্তে আস্তে তিল দূর হয়ে যায়। তুলোতে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার নিতে হবে তারপর সেই ভেজানো তুলার উপর ১ঘণ্টা রেখে দিন। এইটা দুই সপ্তাহ করলেই তিল দূর হয়ে যাবে।
৯। আনারসের জুস

শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করতে নয় ত্বকের ক্রিম হিসাবে ভাল কাজ করে থাকে আনারসের জুস। কিছুটা আনারসের রস নিন তার সাথে সামুদ্রিক লবণ মেশান। মিশ্রণটি ভাল করে তিলের উপর দিন এবং স্ক্রাব করুন। ১৫ মিনিট স্ক্রাব করার পর তিলের উপরের আস্তরণটি উঠতে শুরু করে। এই পদ্ধতিটি এক সপ্তাহ করলে অতি সহজেই অবাঞ্ছিত তিল দূর করা যায়।
১০। পেয়াঁজ

প্রথমে একটি পেয়াঁজ বেঁটে এর রস বের করে নিতে হবে। তারপর এই রস তিলের উপর লাগাতে হবে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি খুব তাড়াতাড়ি তিল দূর করতে সাহায্য করে।
১১। টকদই

টকদই তিল দূর করার পাশাপাশি ত্ব উজ্জল করে। টকদই মুখে লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
মুখে ছোট ছোট কালো তিল দূর করার উপায় এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
মুখে তিল হওয়ার কারণ কি?
ত্বকের কোনো ছোট অংশে যদি মেলানোসাইটস নামে পরিচিত ত্বকের কিছু জীবকোষ (সেল) একসঙ্গে দলা পাকিয়ে থাকে, তখন তা ছোট গুটি আকারে ত্বকের ওপর একটু উঁচু হয়ে থাকে। এর নামই তিল। মেলানোসাইটস ত্বকের রং নির্নয় করে। সেটা সাদা, বাদামি বা কালো হবে?
তিল হলে কিভাবে তা দূর করা যায়?
তিল যেহেতু এমনিতেই কোনো ক্ষতি করে না কিন্তু সৌন্দর্যগত কারণেই এটা অপসারণ করা হয়। ঘরোয়া পদ্ধতি ছাড়াও বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি হচ্ছে ইলেকট্রো সার্জারি। যন্ত্রের মাধ্যমে তিল সরিয়ে ফেলা যায়। এ ক্ষেত্রে দাগও মিলিয়ে যায় খুব দ্রুত। এ ছাড়া লেজার রিসারফেসিং, ফ্র্যাকশনাল লেজারও ব্যবহার করা হয়। এসব চিকিৎসা অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে করাতে হবে।
তিল দূর করার কি কি ঔষধ আছে?
ক। মুখের কালো তিল দূর করার ক্রিমের নাম
- 24k Gold Anti Melasma Facial Cream
- Balit Intensive CICA Cream
- Doctor Speckle Killer
খ। মুখের তিল দূর করার হোমিও ঔষধ
- Oleum Santali Q
- Berberies Aquifolium Q
- Thuja Occidentalis Q
উপসংহার
তিল হয়নি এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া কঠিন। তিল কারো কারো সৌন্দর্য বৃদ্ধি করলেও কারো কারো জন্য আবার সৌন্দর্য নস্টের কারন। নতুন তিল তৈরি এড়াতে হলে যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। রোদে বের হলে ভালো ব্র্যান্ডের সানব্লক ও ছাতা ব্যবহার সরা উচিত। এ ছাড়া সুষম খাবার ও প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। প্রয়োজনে ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মুখে অতিরিক্ত ছোট ছোট তিল হওয়া স্কিন ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণ। এর জন্য আপনি একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অতিরিক্ত এই তিলের দাগ কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে কমানো যেতে পারে। যেনে নিতে পারেন মুখে ছোট ছোট কালো তিল দূর করার উপায় । এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“মুখে ছোট ছোট কালো তিল দূর করার উপায়” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।