Skip to content
Home » কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার উপায়?

কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার উপায়?

Ways To Get Rid Of Ringing In The Ears

কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার উপায় জানা দরকার কেননা প্রায়ই আমরা এই সমস্যার মুখোমুখি হয়। যখন আমাদের কানের ভিতর ঝিঁ ঝিঁ শব্দ হয় তখনি আমরা এটা নিয়ে ভাবি। আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়র একটি হলো কান। কান নিয়ে আমাদের অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়। কানের এমনি একটি সমস্যা হলো ঝিঁ ঝিঁ শব্দ হওয়া। বাইরের কোনো কোলাহল ছাড়া অনেকেই হঠাৎ করে কানে এ অর্থহীন ঝিঁ ঝিঁ শব্দ শুনতে পান। কোনো কারণ ছাড়াই কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ শুনে থাকেন তারা। এ শব্দের তীব্রতাও বিভিন্ন রকম হতে পারে। এ শব্দকে বেশির ভাগ সময়ই নিরীহ কিন্তু বিরক্তিকর বিষয় বলে মনে করা হয়। 

কানের মধ্যে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ শুনতে পাওয়ার সমস্যায় অনেকেই পড়েন। কানে ময়লা জমলেই বা অনেকদিন ধরে কান পরিস্কার না করলে এমন হয় বলে প্রথমদিকে মনে করা হয়। কিন্তু সত্যিই কি তাই? কানের ঝিঁ ঝিঁ শব্দ বা রিংগিং অফ দ্যা ইয়ার, যা মেডিকেল এর পরিভাষায় টিনিটাস নামেই অধিক পরিচিত। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত এক বা দুই কানেই বা ঝিঁ ঝিঁ আওয়াজ শুনতে পান।  

ঝিঁ ঝিঁ শব্দ কেন হয়? 

এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে বলে রাখা ভালো, কানে এমন শব্দ শোনার জন্য কিন্তু দায়ী আমাদের মস্তিষ্ক। অনেকেই বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্নভাবে এই শব্দ কিছুটা হলেও শুনেছেন। হুট করে প্রচণ্ড শব্দে কোনোকিছু বিস্ফোরিত হবার পর বা জোরালো শব্দের কনসার্ট থেকে ফেরার পর অনেকেই হুট করে কানে এ ঝিঁ ঝিঁ শব্দ শুনতে পান। অতিরিক্ত হেডফোন ব্যবহার, অপর্যাপ্ত ঘুম বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কানের ভিতর ঝিঁ ঝিঁ শব্দ তৈরি করতে পারে। এসসয় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে তা সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার উপায়?

কানের ভিতর বিভিন্ন কারনে অনাকাঙ্খিত শব্দ হতে পারে। তার মধ্যে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ একটি। কোন শব্দ শোনার পর বা কোন কথা শোনার পর মনে হয় সেই শব্দটি এখনো কানে বাজতেছে এরকম অনুভূতি ঝিঁ ঝিঁ শব্দ ভুক্তভোগীর হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য তারা কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার উপায় জেনে নিতে পারেন।

  1. কটনবার বা যেকোনভােবে কান আগে ভালোভাবে পরিস্কার করে নিবো। এমনভাবে পরিস্কার করে নিবো যেন, কোন ধরনের ময়লা না থাকে।
  2. কান পরিস্কার করা হয়ে গেলে হালকা কিছু নারিকেলের তেল ঢেলে দিবো এবং কিছুক্ষন রেখে দিবো।
  3. তারপর কিছুক্ষন পর কটনবার বা কোনকিছু দিয়ে সেই কান ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে।
  4. অতিমাত্রায় শব্দ পরিহার করে চলতে হবে।
  5. টিভির ভলিওম কমিয়ে টিভি দেখতে হবে।
  6. অ্যালকোহল, নিকোটিন, ক্যাফেইন পরিহার করে চলা বাঞ্ছনীয়।
  7. শারীরিক সমস্যা হলে তা দ্রুত চিকিত্সা করাতে হবে।
  8. যদি কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ অব্যাহত থাকে তবে অবশ্যই কোন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধেই আপনি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  9. বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা, ভয় ভীতি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
  10. কানে টিউমার হলে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ হয় তাই দ্রুত টিউমার সারানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
  11. কানে বাড়তি কোন হাড় বেড়ে গেলে এমন শব্দ হতে পারে । তাই অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
  12. ‘হাইপারথাইরয়েডিজম’-এর সঙ্গে কানের সম্পর্ক আছে। থাইরক্সিন হরমোন যখন প্রয়োজনের তুলনায় কম তৈরি হয়, তখন তা শ্রবণক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। তাই থাইরয়েডের মাত্রা বাড়লে কান থেকে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ শব্দ শোনা যায়।
  13. যে কোন ধরনের মাদক সেবন থেকে দূরে থাকতে হবে। কানে শব্দ শুরু হলে যতদ্রুত সকল ধরনের মাদক সেবন ছেড়ে দিতে হবে।
  14. ঘুমের সমস্যা, কাজে অমনোযোগ,অবসাদ, মানসিক চাপ, স্মৃতিশক্তির সমস্যা, উদ্বেগ, মাথাব্যথা, এমনকি পারিবারিক জীবনে সমস্যা হতে পারে। এই সময় এসব সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে।
  15. সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে হবে। আমরা শরীরে উপরের অঙ্গ যতটা পরিস্কার রাখার জন্য সচেতন থাক ততটা যদি কানের ভিতর পরিস্কার থাকি তাহলে এ সমস্যা থেকে সহজেই বাঁচা যায়। 
  16. কানে যে কোন ধরনের আঘাত পাওয়া থেকে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে এমন শব্দ থেকে দূরে থাকা বা বাঁচা যাবে। যদি কানে ব্যাথা পায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।
  17. সর্দি জ্বর বা এলার্জি এড়িয়ে চলতে হবে। এসব কারনে কান বন্ধ হয়ে থাকতে পারে যা ঝিঁ ঝিঁ শব্দ তৈরি করতে পারে।

কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার ফিজিওথেরাপি

ফিজিওথেরাপিউটিক এক্সারসাইজ মাধ্যমে কানের ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করা যায়। নিম্নে কিছু ফিজিওথেরাপিউটিক এক্সারসাইজ উল্লেখ করা হলোঃ

  • দুই হাত দিয়ে কানের পেছন থেকে সামনের অংশে ৭০-৭৫ বার ঘষতে হবে। নিয়ম করে দিনে কয়েকবার করলে ভালো। 
  • বৃদ্ধাঙ্গুল সোজা রেখে কানের ভেতরে ও বাইরে নিতে হবে। ঝিঁ ঝিঁ শব্দ নির্মূল করতে খুব উপকারি।
  • দুহাত মাথার পেছনে দিকে নিয়ে ঘাড়ের উপরের অংশের গর্তের উপরের উঁচু যায়গায় ইনডেক্স ফিঙ্গার দিয়ে ৭০ থেকে ৭৫ বার মাথায় চাপ দিতে হবে। 
  • এরপর কপালের দুইপাশে ৫ থেকে ১০বার ঘষতে হবে। 
  • মাথার পেছনে, কানের উপরে ও কানের পাশে কিছু ট্রিগার পয়েন্ট রয়েছে, এগুলোতে ডিপফ্রিকশন করলে সাধারণত কিছুদিনের মধ্যেই কানের ঝিঁ ঝিঁ শব্দ ঠিক হয়ে যায়।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার উপায় এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।

কানের ভিতর শব্দ হয় কেন?

সাধারণত কানের মধ্য ভাগের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া, মধ্য কানের হাড় মোটা হয়ে যাওয়া, কানের মধ্যে অতিরিক্ত ময়লা জমে থাকা (ইয়ার ওয়াক্স), কানের ক্যানসার, টিএমজি আর্থাইটিস, নেক ইনজুরি, অ্যান্টিবায়োটিকস, ওয়াটার পিল এবং অ্যান্টিডিপ্রেসিভ ড্রাগ থেকেও কানের মধ্যে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ টিনিটাস হতে পারে।

ঝিঁ ঝিঁ শব্দ কি কোন রোগ?

ঝিঁ ঝিঁ শব্দ কোনো রোগ নয়, বরং এটি রোগের লক্ষণ। সাধারণত ঝিঁ ঝিঁ শব্দ ভুক্তভোগী ছাড়া দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি এ শব্দ শুনতে পান না। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে বড় রোগ হতে পারে।

উপসংহার

প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন কানে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর শব্দে ভুগে থাকেন। বয়সজনিত কারণে কানের সমস্যা, ইনজুরি অথবা সারকুলেটুরি সিস্টেম ডিসঅর্ডার এর লক্ষণ রূপেও কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ বা যেকোন শব্দ হতে পারে । যদি কোনও ব্যক্তি কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ বা বাতাসের শব্দ শোঁ শোঁ , ঘণ্টার ধ্বনি অনবরত শুনতে থাকে তখন এ ধরণের কন্ডিশনকে বলা হয় টিনেটাস। যুক্তরাজ্যে প্রায় ছয় মিলিয়নের মত মানুষ টিনেটাসে ভুগে থাকেন। এ সমস্যায় নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হন তার কারনও আছে। তাই কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার উপায় জানা খুবই জরুরী। বিভিন্ন কারনে আমাদের কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ হতে পারে।

আমাদের কানের ভেতর ক্ষুদ্র লোম আছে যেগুলো শব্দ তরঙ্গের সাথে নড়াচড়া করে থাকে। এই কোষগুলো এক ধরণের ইলেকট্রিকাল সিগন্যাল অষ্টম ক্রেনিয়াল নার্ভের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে পাঠিয়ে থাকে। মস্তিষ্কের এই সিগন্যালের প্রতিক্রিয়া রূপে সিগন্যাল পাঠায়। এজন্য আমরা শব্দ শুনতে পাই। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে পড়তে পারেন।

কানে ঝিঁ ঝিঁ শব্দ দূর করার উপায় এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *