Skip to content
Home » গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না?

গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না?

What Can Not Be Eaten If Gastric

গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না প্রত্যেকের জানা থাকা খুবই জরুরী। পেটে গ্যাসের সমস্যায় যারা ভুগে থাকেন তারাই বোঝেন এটি কতো যন্ত্রণাদায়ক। একটু ভাজাপোড়া খেয়েছেন অথবা একটু না হয় বেশিই খেয়ে ফেলেছেন তখনই শুরু হয়ে যায় অস্বস্তিকর গ্যাসের যন্ত্রনা। খাবারে ভেজাল মিশানো, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ও ধূমপানসহ বিভিন্ন কারণে গ্যাস্ট্রিক প্রায় ঘরোয়া রোগ পরিনিত হয়েছে। তবে নিয়ম মেনে জীবনযাপান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাদের সব ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না। খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত।

গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি কি?

গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি হল পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং অবশেষে ক্ষতের সৃষ্টি করা। গ্যাস্ট্রিক পরিপাকতন্ত্রের একটি জটিলতা জনিত রোগ। আমাদের দেহে পরিপাকতন্ত্রের কাজ হচ্ছে আমাদের গ্রহণকৃত খাবার বিভিন্ন ধরনের খাদ্য রসের মাধ্যমে ভেঙে হজম করানো। যদি পরিপাকতন্ত্র এই সমস্ত খাদ্য হজমের কাজ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করতে না পারে তখনই গ্যাস্ট্রিকের সৃষ্টি হয়। যকৃতের দীর্ঘদিন প্রদাহ থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সূত্রপাত ঘটে।

গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না?

আপনি কি গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না এ ব্যাপারে জানতে চাচ্ছেন? গ্যাস্ট্রিক হলে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এগুলি পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনার সমস্যাকে আরো জটিল ও লম্বা করতে পারে। চলুন গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না তালিকাটি জেনে নেই।

১। দুগ্ধজাতীয় খাবার

Full-Fat Dairy Products

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ ল্যাকটোজ (দুধ এবং দুগ্ধজাতীয় খাবারে ল্যাকটোজ নামক একটি উপাদান থাকে যা মূলত একটি শর্করা)  ভাঙার ক্ষমতা হারাতে থাকে। এর ফলে ডায়রিয়া, পেটে গ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দেখা যায়। তাই দগ্ধজাত খাবারগুলো এই বয়সের জন্য একটু ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও আপনি গ্যাসের সমস্যায় দুধের পরিবর্তে পনির খেলে কোন ক্ষতি হবে না।

২। কাঁচা ছোলা

Raw Chickpeas

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে অনেকেই পরামর্শ দেন কাঁচা ছোলা খাওয়ার জন্য। ছোলায় থাকা প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। যাদের হজমের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের ছোলা খাওয়া উচিত নয় বা খেলেও খুব কম।

৩। কচুরমুখি

Face

গ্যাস্টিকের সমস্যায় সব সবজি খাওয়া যাবে না। যেমন কচুর মুখির তরকারি গ্যাস্ট্রিকের জন্য খুবই খারাপ। যারা গ্যাস্ট্রিকের রোগে ভুগে থাকেন তাদের এই সবজিটি না খাওয়া।

৪। এঁচোড়

The Pile

এঁচোড় (কাঁচা কাঁঠালকে বলা হয় এঁচোড় ) খেতে সুস্বাদু হলেও গ্যাস্টিকের রোগীদের জন্য এটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত। এটি গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা অনেক পরিমানে বাড়িয়ে দেয়।

৫। মুলা

Radish

মূলার সবজিটি নিয়ে অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা রাখেন যে, মুলা খেলে গ্যাস্ট্রিক কমে। কিন্তু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মুলা গ্যাসের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয় এবং পেট ব্যথা, পেট ফোলা সহ একাধিক সমস্যা সৃষ্টি করে।

৬। কোমল পানীয়

Soft Drink

কোমল পানিও গ্যাস্ট্রিক বাড়িয়ে তোলে। কোমল পানিও পান করলে সরাসরি প্রভাব ফেলে অন্তরে। ভূট ভাট করে শব্দ হয় পেটের ভিতর। এতে থাকা এসিড ও ফ্রুকটুজ (একটি সাদা দানাদার কঠিন পদার্থ। পানিতে সহজেই দ্রবনীয়। ) গ্যাস্ট্রিক বাড়িয়ে দেয়।

৭। বাদাম

Dry Fruit

বাদামে আছে প্রোটিন, চর্বি এবং আঁশ। শরীরের জন্য এগুলো উপকারী হলেও পেটে গ্যাস সৃষ্টির জন্য এগুলোই দায়ী। এইসব হজমে সময় লাগে। বিশেষ করে কাজুবাদাম।

৮।  ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার

Lentils

ডাল, বুট, ছোলা, বীণ ও সয়াবিন ইত্যাদি ধরণের খাবার গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার। এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, সুগার ও ফাইবার যা সহজে হজম হতে চায় না। ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে।

৯। সবজি জাতীয় খাবার

Vegetables

পাতাকপি, ব্রকলি ও বাঁধাকপি এইধরনের সবজিগুলোতে আছে ‘রাফিনোজ’ নামক একধরণের সুগার উপাদান যা পাকস্থলীর ব্যাকটেরিয়া ফারমেন্ট না করা পর্যন্ত হয় হয় না। এবং এই অবস্থায় পেটে গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। 

১০। ফল

Fruit

আপেল ও পেয়ারা।  আপেল ও পেয়ারাতে রয়েছে ফাইবার এবং ফ্রুক্টোজ জাতীয় (একটি সাদা দানাদার কঠিন পদার্থ। পানিতে সহজেই দ্রবনীয়। ) ও সরবিটোল নামক সুগার উপাদান যা সহজে হজম হতে চায় না। এতে করেও পেটে গ্যাস হয়।

১১।  লবন জাতীয় খাবার

Salty Foods

লবণাক্ত খাবার লবণের সোডিয়াম অনেক বেশি পানিগ্রাহী। অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খেলে শরীরে পানি জমার সমস্যা দেখা দেয়। পাকস্থলীতেও সমস্যা শুরু হয় ও সহজে খাবার হজম হতে চায় না।

১২। চর্বিযুক্ত খাবার

Fatty Foods

অনেক সময় যে অনুভূতিকে পেটে গ্যাস হওয়া মনে করা হয়, আসলে তা অনেক বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে ফেলার জন্য হয়। এই খাবারগুলো হজম হতে বেশি সময় লাগে, ফলে পাকস্থলী খালি হতেও বেশি সময় লাগে । এতে মস্তিষ্ক সংকেত পায় পেট  ভরে গেছে।

১৩। মাংস

The Meat

প্রোটিন পাকস্থলীতে থাকে দীর্ঘ সময়, ফলে তৈরি হতে থাকে শর্করা এবং ব্যাক্টেরিয়া। তা থেকেই সৃষ্টি হয় গ্যাস ও পেট ফোলাভাব। মাংস সময় নিয়ে চিবিয়ে খেলে এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। আর এড়াতে না পারলে পরিমাণে কম খেতে হবে গরুর মাংস।

১৪। গম

What Are Carbohydrates Or Sugars

গম থেকে তৈরি যেকোনো খাবার খেলে যদি পেটে গ্যাস হয় । এই খাবারগুলো লম্বা সময় পেটে থাকে।যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের এই খাবারগুলি এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না সমূহ এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।

কেন গ্যাস্ট্রিক হয়?

অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারে এটি বেশি হয়ে থাকে। এসব খাবারকে হজম করতে অতিরিক্ত এসিডের দরকার হয় যার ফলে অনেক হাইড্রোজেন ক্ষরিত হয়ে ক্লোরিনের সঙ্গে মিলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি করে। আর আমাদের পেটে গ্যাস হয়।

কিভাবে বুঝবো আমার গ্যাস্ট্রিক হয়েছে?

গ্যাস্ট্রিক হলে সাধারণত নাভির ওপরে পেটে ব্যথা শুরু হবে। খালি পেটে কিংবা ভোররাতের দিকে ব্যথা তীব্র হয়। গলা,বুক ও পেট জ্বলে। টক ঢেঁকুর ওঠে। 

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় প্রতিদিন কি খাওয়া উচিত?

যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন। দুপুরে ভাতের সঙ্গেও এক কোয়া রসুন বেটে খেতে পারেন। সপ্তাহে দুই তিন দিন খান।

উপসংহার

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না এ বিষয়ে জানলাম। গ্যসট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকি আমরা অধিকাংশ মানুষ। অধিক পরিমানে তেল মশলাযুক্ত খাবার প্রধান কারন। অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন, বেশি জল খাওয়ার পরামর্য দেওয়া হয়ে থাকে যাদের এই সমস্যা দেখা দেয়। সঙ্গে সঠিক মাপে জল খাওয়া তো আছেই। তবে, কিছু সবজি আছে সেগুলো যাদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা আছে তাঁদের খুব বেশি না-খাওয়াই ভালো। কখনও যদি বুঝতে পারেন আপনার হজমের সমস্যা হচ্ছে, তাহলেে ঐসব সবজি ভুলেও খাবেন না। খেলেই ঘটবে বিপদ। 

গ্যাস্ট্রিকের কথা আমরা প্রায় সকলের কাছেিই শুনি। গ্যাস্ট্রিক রোগে ভোগেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারো ক্ষেত্রে গ্যাস্টিকের মাত্রা বেশি থাকে আবার কারো কারও ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা তুলনামুলক কম থাকে। তবে গ্যাস্ট্রিকের উপস্থিতি সকলের শরীরেই আছে। এর মূল কারণ হলো আমাদের বর্তমানে খাওয়া খাবার পদ্ধতি। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত সম্পর্কে পড়তে পারেন।

“গ্যাস্ট্রিক হলে কি কি খাওয়া যাবে না” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *