গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা কি তা আমরা অনেকেই জানি না। খাবার গ্রহনে একটু ভুল বা অসতর্কতার কারণে আপনার এবং অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ বিপদের মুখে পরতে পারে। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের সতর্কতাই পারে একজন সুস্থ সবল এবং স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে। গর্ভাবস্থায় নারীরা সবথেকে কঠিন সময় পার করে থাকে। গর্ভাঅবস্থার শেষের সময়টা আরও কঠিন হয়ে থাকে যে কারনে মায়েদের অনেক কিছু বেছে খেতে হয় বা বুঝে শুনে চলতে হয়। একজন গর্ভবর্তী মায়ের খাবার তার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার রয়েছে যা গর্ভবর্তী মায়েদের সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত।
সন্তান জন্মদান প্রত্যেকটি মেয়েরই একটি শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। সন্তান জন্মদানেই নারীর পূর্ণতা। একজন মেয়ের জীবনের অন্যতম একটি সময় হচ্ছে গর্ভাবস্থা। এই সময়ে নারীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। গর্ভাবস্থায় প্রতিটি নারীরই কিছু না কিছু সমস্যা দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় সাবধানতার সাথে চলাফেরা করা উচিত এবং নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া করা উচিত। কারণ তখন তার ভেতরে বেড়ে উঠে নতুন আরেকটি প্রাণ।
গর্ভাবস্থা কি?
গর্ভাবস্থা যা গর্ভধারণ হলো এমন একটি বিশেষ সময় যখন কোনো নারীর শরীরের মধ্যে এক বা একাধিক সন্তান বড় হতে থাকে। একবার গর্ভধারণের ক্ষেত্রে এক বা একের বেশিও সন্তান থাকতে পারে যেমন যমজ সন্তান। গর্ভধারন যৌনসঙ্গম অথবা সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটতে পারে। এই সময়ে শারীরিক এবং মানসিক বড় পরিবর্তন আসে। এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে অপেক্ষা করতে সন্তান আসার কমপক্ষে ৯ মাসের বেশি সময়।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা প্রতিটি মায়ের জানা থাকা উচিত। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া মা ও সন্তান উভয়ের পক্ষেই বেশ উপকারী।গর্ভাবস্থায় শিশু গর্ভে থাকার ফলে গর্ভবতী নারীর খাবারের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়। গর্ভবতী মা এবং অনাগত শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য কিছু সবজি এড়িয়ে চলা উচিত যা উভয়কে নিরাপদ রাখতে পারে পাশাপাশি বেশি বেশি কলা খাওয়ার উপকারিতা কি তাও জানা থাকা দরকার। আজকে আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা কি।
১। পুষ্টি উপাদানে পূর্ণ
কলায় আছে পটাসিয়াম, ভিটাম সি ও বি-সহ বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল। এইগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবারও আছে।
২। মর্নিং সিকনেসে কমাতে সাহায্য করে
কলা খেলে পেট ভাল থাকে এবং বমি বমি ভাব কমে যায়। অনেক গর্ভবতী মহিলারা বলেছেন যে সকালে একটি কলা খেলে তা তাঁদের মর্নিং সিকনেস কমাতে সাহায্য করেছে।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভালো করে
কলায় থাকে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। এই উচ্চ ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে সাহায্য করে। যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাঁদের উচিত প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনটি কলা খাওয়া।
৪। বুকের জ্বালা কমাতে করে
কলাকে বলা হয় প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড। তাই কলা বুক-জ্বালা কমাতে সাহায্য করে। এটি গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লাক্স ডিজিস বা জিইআরডি (একটি হজমের ব্যাধি) হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে।
৫। ওজন বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে
কলাতে প্রচুর পরিমান স্বাস্থ্যকর ক্যালোরি থাকে এবং এটি ওজন বৃদ্ধি আটকাতে সাহায্য করতে পারে। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন এবং পাশাপাশি কলা খাওয়া। এগুলা স্বাস্থ্যকর ডায়েটের কাজ করতে পারে।
৬। শিশুর মধ্যে জন্মগত ত্রুটির সম্ভাবনা হ্রাস করে
কলা ফোলেটের একটি ভাল উৎস যা শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের বিকাশের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার ফলে শরীরে ফোলেটের (পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বি নাইন এর রূপ) মাত্রা উন্নত হয়। ফলে ফোলেটের ঘাটতির সম্ভাবনা কমে যায় যা শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দেয় বলে জানা যায়।
৭। রক্তচাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে
কলা পটাসিয়ামের প্রধান উৎস। ২২৫ গ্রাম ওজনের এক কাপ খোসা ছাড়ানো কলাতে ৮০০ মিলিগ্রামেরও বেশি পটাসিয়াম থাকে। এটি একটি প্রয়োজনীয় খনিজ যা শরীরে রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই গর্ভাবস্থায় পরিমানমতো কলা খাওয়া রক্তচাপের স্তরে ওঠানামা রোধে সহায়তা করতে পারে।
৮। হাড়ের বিকাশে সহায়তা করে
কলা যেহেতু ক্যালসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস যা শিশু এবং মা উভয়েরই হাড়ের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। শরীরে পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যালসিয়াম খুবই প্রয়োজনীয়। তাই গর্ভাবস্থায় পরিমানমতো কলা খাওয়া উচিত।
৯। স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখতে সহায়তা করে
কলা ভিটামিন সি এর একটি উৎস। এই ভিটামিন সি যাকে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডও বলা হয়। এটি শরীরের আয়রন শোষণের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি হাড়ের বৃদ্ধি, টিস্যুগুলি মেরামত এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় ধরে রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া শিশু এবং মা-কে ভিটামিন সি এর সকল সুবিধা দিয়ে থাকে।
১০। ক্ষুধা জাগায়
কলা ক্ষুধার উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে। গর্ভবতী মহিলারা যাদের ক্ষুধা কমে যায় তাদের কলা খাওয়া উচিত, কারণ এটি ক্ষুধা বৃদ্ধি করে এবং হজমে সহায়তা করতে পারে।
১১। দ্রুত এনার্জি বুস্ট দেয়
কলাতে অনেক বেশি পরিমানে শর্করা থাকে কারণ এগুলিতে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ জাতীয় সাধারণ শর্করা থাকে যা তাৎক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য শরীর দ্বারা দ্রুত বিপাক হতে পারে। গর্ভাবস্থার শেষ তিনমাসে, আপনার শক্তির স্তর সঠিক থাকা খুবই প্রয়োজন। কলা খেলে আপনাকে দ্রুত শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। সুতরাং, এই ফলটি হাতের কাছেই রাখুন। কলা খাওয়া আপনাকে ক্লান্তির সাথে লড়াই করতে এবং আপনার শক্তির স্তর বাড়াতে সাহায্য করবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা এই বিষয়ে আপনাদের মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে তাই না? তবে চলুন জেনে নেই সেই সকল সমস্ত সকল প্রশ্ন ও উত্তর।
দিনে কতগুলি কলা খাওয়া উচিত ?
কলার খাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই যে আপনার গর্ভাবস্থায় কি পরমান খাওয়া উচিত বা উচিত নয়। তবে, বেশিরভাগ ডাক্তাররা দৈনিক দুই থেকে তিনটি কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই পরিমাণ শরীরে যথাযথ পুষ্টিউপাদান সরবরাহ করে, যা অতিরিক্ত হয় না। গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে অন্যান্য ফল ও সবজি খাওয়া উচিত।
কোন কোন খাবারে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
কলা, তরমুজ, খেজুর, আনারস, আঙ্গুর, পেঁপে, তেঁতুল ও দীর্ঘদিন ধরে শুকানো যেকোন ফল খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
উপসংহার
পতিদিন পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া প্রত্যেক মানুষের জন্যই খুব দরকারি এবং গর্ভাবস্থায় আরও বেশি প্রয়োজনীয়। খাবারের মঝে অবশ্যেই যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি, ভিটামিন থাকতে হবে যা থেকে গর্ভের সন্তান পর্যাপ্ত পুষ্টি, মিনারেল এবং ভিটামিন পেয়ে থাকে। আমরা না বুঝে অনেক ধরনের খাবার খেয়ে ফেলি যা গর্ভের সন্তান এবং মা উভয়ের জন্যই ক্ষতির কারন হতে পারে অথবা মায়ের ওজন বাড়িযে দিতে পারে।। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার সময় কয়েকটি বিষয় মনে রাখা জরুরী । কলায় বেশি পরিমাণে পুষ্টিউপাদান আছে এবং এটি মর্নিং সিকনেস, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বুক-জ্বালা কমাতে সাহায্য করে। তবে, অনেক কলাতে মিষ্টি ও ক্যালোরির পরিমাণ বেশি। আপনি যদি ওজন বাড়াতে না চান তাহলে কলা খাওয়া কমাতে পারেন। তবে আপনার শরীর কী চায় তা বোঝা এবং যা শরীর গ্রহন করতে পারে তা খাওয়া। এছাড়াও আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করতে টাইফয়েড জ্বর হলে কি কি খাওয়া উচিত এ সম্পর্কে পড়তে পারেন।
“গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা” এই বিষয়ে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তবে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।